আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা যাবে না

স্মরণ করো, ইউসুফ তার পিতাকে বলেছিল, হে আমার পিতা! আমি (স্বপ্নে) ১১টি নক্ষত্র, সূর্য ও চন্দ্র দেখেছি। দেখেছি ওরা আমার প্রতি সিজদাবনত অবস্থায় আছে। [সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৪ (তৃতীয় পর্ব)]

তাফসির : আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, হজরত ইউসুফ (আ.) স্বপ্নে দেখেছেন যে ১১টি নক্ষত্র, সূর্য ও চন্দ্র তাঁকে সিজদা করছে। এ সিজদাটি ছিল সম্মান ও মর্যাদাসূচক সিজদা। এটা ইবাদত বা প্রার্থনার সিজদা নয়। আগের কোনো ধর্মে এমন সম্মানসূচক সিজদা বৈধ ছিল। কিন্তু ইসলাম ধর্মে এমন তাজিমি বা সম্মানসূচক সিজদা বৈধ নয়। হজরত ইউসুফ (আ.) বিষয়টি স্বপ্নে দেখেছেন। নবীদের স্বপ্ন সত্য। এটিও এক ধরনের ওহি। ইউসুফ (আ.)-এর দেখা স্বপ্নে ১১টি নক্ষত্রের ব্যাখ্যা হলো তাঁর ১১ ভাই। সূর্য ও চন্দ্রের ব্যাখ্যা হলো তাঁর পিতা-মাতা। অর্থাৎ তাঁরা সবাই একসময় তাঁর অনুগত হবেন। এটাই সব তাফসিরবিদের অভিমত।

সিজদার উপযুক্ত একমাত্র আল্লাহ তাআলা। আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা সম্পূর্ণ হারাম। ইবাদতের উদ্দেশ্যে কাউকে সিজদা করলে সে মুশরিক হয়ে যাবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা হারাম হওয়ার বিষয়টি কোরআন ও হাদিসের অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং যারা বলে যে ভক্তি-শ্রদ্ধার উদ্দেশ্যে ‘পীর সাহেব’ বা মাজারে সিজদা করা জায়েজ, তাদের কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই সিজদার স্থানসমূহের মালিক আল্লাহ। সুতরাং তোমরা আল্লাহর সঙ্গে কারো ইবাদত কোরো না।’ (সুরা : জিন, আয়াত : ১৮)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রসিদ্ধ তাবেয়ি সাইদ ইবনে জুবায়ের, আতা, তলক ইবনে হাবিব (রহ.) প্রমুখ তাফসিরবিদ বলেন, এ আয়াতে সিজদার স্থান বলতে সিজদার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কথা বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ এগুলোর মালিক আল্লাহ। সুতরাং এগুলো দ্বারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা যাবে না। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৪/৬৭৬; কুরতুবি : ১৯/১৪; রুহুল মা আনি : ২৯/৯১)

এ বিষয়ে হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ ইহুদি ও নাসারাদের ওপর। তারা তাদের নবীদের কবরকে সিজদার স্থান বানিয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৩৯০)

অন্য হাদিসে এসেছে : হজরত জুনদুব (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে তাঁর ইন্তেকালের তিন দিন আগে বলতে শুনেছি, ‘সাবধান! তোমরা কবরকে সিজদার স্থান বানিও না। আমি তোমাদের তা থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করছি।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ৫৩২)

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে : মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কারো জন্য (আল্লাহ ছাড়া) অন্য কাউকে সিজদা করা বৈধ নয়। যদি কারো জন্য (আল্লাহ ছাড়া) অন্য কাউকে সিজদা করা বৈধ হতো, তাহলে আমি স্ত্রীকে আদেশ করতাম তাঁর স্বামীকে সিজদা করতে। কেননা আল্লাহ স্ত্রীর ওপর স্বামীর অনেক বড় অধিকার ন্যস্ত করেছেন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪১৬৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১২৬১৪)। এ হাদিসটি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) ও হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)সহ ২০ জন সাহাবি থেকে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং ভক্তি ও শ্রদ্ধার নিয়তেও মাজার বা কোনো ব্যক্তিকে সিজদা করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে ফতোয়ার গ্রন্থগুলোতেও বিস্তারিত আলোচনা আছে। (দেখুন—ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ১৮/২৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩৬৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ৩/৪২৫; রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৮৩; আলফাওযুল কাবীর : ৬৫)

Last 7 Days Visitors