প্রতিটি মানুষই কোন না কোন উৎপাদনের উপকরণের মালিক। যেমন, শ্রমিক শ্রমশক্তির মালিক, পুঁজিপতি পুঁজির মালিক, ভূস্বামী ভূমির মালিক ইত্যাদি। মানুষ তার মালিকানাধীন উপকরণ বিক্রি করে যে অর্থ পায় তা-ই তার আয়। যেমন, শ্রমিক তার শ্রমশক্তি বিক্রি করে মজুরি পায়, ভূস্বামী ভূমি ভাড়া দিয়ে খাজনা পায়, ভাড়া পায়, পুঁজিপতি তার পুঁজি ধার দিয়ে গতানুগতিক অর্থনীতিতে সুদ পায়, তেমনি উদ্যোক্তার আয় হচ্ছে মুনাফা।
উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় যেসব উপকরণের ব্যবহার হয় তার মধ্যে কতকগুলো স্থির এবং কতকগুলো পরিবর্তনশীল। সনাতন গতানুগতিক অর্থনীতিতে উপকরণগুলোকে মোট চার শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। যেমন, ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন। শেষোক্ত উপাদানটিকে অধুনা উদ্যোগ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হচ্ছে। উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবা থেকে প্রত্যেকটি উপকরণ তাদের প্রাপ্য অংশ পেয়ে থাকে।
ইসলামী অর্থনীতিতে এরূপ শ্রেণীবিভাগ হুবহু গ্রহণ করা হয় না। এর পেছনে যে কারণটি কাজ করে তাহলো মূলধনের প্রাপ্য, যা সনাতন অর্থনীতিতে সুদ নামে পরিচিত। এ সুদ বা রিবা ইসলামে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ, পুরোপুরি অবৈধ, হারাম। সুদ মানব সভ্যতার সবচেয়ে নিষ্ঠুর শত্র“। সুদ শোষণ ও জুলুমের (Injustice) ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি অন্যায় ও অমানবিক ব্যবস্থা। পবিত্র আল কুরআন ও আস্ সুন্নাহ্ মোতাবেক সুদ সন্দেহাতীতভাবে হারাম।
সুদের আরবি পরিভাষা হচ্ছে রিবা। আরবি রিবা শব্দকে উর্দু ও ফারসিতে সুদ বলে। বাংলা ভাষায় সুদ শব্দটি রিবার প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পবিত্র কুরআনেও রিবা শব্দের ব্যবহার হয়েছে। ইংরেজি প্রতিশব্দ Interest, Usury| Interest শব্দের উৎপত্তি মধ্যযুগীয় ল্যাটিন শব্দ Interesse থেকে। এর অর্থ ঋণ দিয়ে আসলের ওপর বেশি নেয়া। Usury ল্যাটিন শব্দ। Usury থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। Usury মানে হচ্ছে প্রদত্ত ঋণ থেকে অর্জিত উপভোগ (enjoyment); ক্যানন ল’তে এর মানে হচ্ছে অর্থ ধার দিয়ে তার বিনিময়ে আসল পাওনার ওপর অতিরিক্ত গ্রহণ করা। অর্থাৎ ঋণ দিয়ে আসলের ওপর বেশি নেয়া। Encyclopaedia of Religions and Ethics এ বলা হয়েছে Usury ও Interest শব্দ দু’টি এক ও অভিন্ন অর্থে অতীতে ব্যবহার করা হতো।
সুদকে ব্যবহারিক অর্থে বাংলায় কুসিদও বলা হয়। ইংরেজিতে যাকে ওহঃবৎবংঃ বলা হয় রিবার অর্থও ঠিক তাই। আল কুরআন ও আস সুন্নাহয় ব্যবহৃত রিবা শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে প্রবৃদ্ধি, পরিবৃদ্ধি, পরিবর্ধন, পরিবর্ধক, সম্প্রসারণ, স্ফীত, আধিক্য, উদ্বৃত্ত, বৃদ্ধি, বিকাশ, অতিরিক্ত বা বেশি হওয়া, মূল থেকে বেড়ে যাওয়া, বিকাশ ঘটা ইত্যাদি। সুপরিচিত আরবি অভিধান লিসান আল আরব রিবার শাব্দিক অর্থ লিখেছে, ‘বৃদ্ধি, বাড়তি, অতিরিক্ত, সম্প্রসারণ বা প্রবৃদ্ধি। আল্লামা ইমাম রাগিব আল ইস্পাহানী লিখেছেন, রিবা শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে প্রবৃদ্ধি, বেশি, স্ফীত, ক্রমশ বড় হওয়া, কয়েকগুণ বেশি হওয়া, আসলের বাড়তি ও বৃদ্ধি হওয়া, বিনিময় ছাড়া বৃদ্ধি ইত্যাদি তাফসিরকার ও ফিকাহবিদগণ রিবার অর্থ করেছেন অতিরিক্ত, বৃদ্ধি, বিনিময়হীন বৃদ্ধি, একদিকে বৃদ্ধি অপর দিকে বৃদ্ধি ছাড়াই ইত্যাদি। বিশিষ্ট কতিপয় বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘প্রতিমূল্য নেই এমন প্রতিটি বৃদ্ধিই হচ্ছে রিবা ড. এম. উমর চাপরা লিখেছেন, ‘রিবার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধি, অতিরিক্ত, সম্প্রসারণ বা প্রবৃদ্ধি। আল্লামা মুহাম্মদ আসাদের (১৯০০-১৯৯২) মতে, ‘ভাষাগত দিক থেকে রিবা শব্দ দ্বারা কোন জিনিসের মূল আয়তন বা পরিমাপের ওপরে বেশি হওয়া বা বৃদ্ধিকে বুঝায়। ড. এম এ মান্নান লিখেছেন, রিবার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধি পাওয়া বা প্রবৃদ্ধি।
তবে ইসলামে সকল বৃদ্ধিকেই ‘রিবা’ বলা হয়নি। এক বিশেষ অর্থে ইসলামে ‘রিবা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। ইসলামে ঐ বৃদ্ধিকে ‘রিবা’ বলা হয় যা প্রদত্ত ঋণের ওপর ঋণের শর্ত হিসেবে অতিরিক্ত কিছু আকারে বা কোন সুবিধা ধার্য করে আদায় করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের ঋণের বিনিময়ে পূর্ব নির্ধারিত হারে বা পূর্ব নির্ধারিত না থাকলেও প্রদত্ত ঋণের অধিক অর্থ বা সুবিধা আদায় করলে এবং সামগ্রিক ক্ষেত্রে সমজাতীয় পণ্যের কম পরিমাণের বিনিময়ে বেশি পরিমাণ নেয়া হলে অর্থ বা পণ্যের ঐ অতিরিক্ত অংশকে রিবা বা সুদ বলা হয়। সুদের ফলে ঋণের আসল পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং সময়ের অনুপাতে আসল বৃদ্ধির পরিমাণ বা হার নির্ধারিত হয়। সুতরাং রিবা, সুদ, Interest, Usury এর অর্থ এক ও অভিন্ন। আল্লাহপাক সুদকে হারাম করেছেন। সুদ মানবতার জন্য এক চরম অভিশাপ, অর্থনৈতিক শোষণের এক জঘন্য হাতিয়ার। সুদি ব্যবস্থা অর্থনীতিকে ভারসাম্যহীন করে। মানুষে মানুষে সৃষ্টি করে বৈষম্য। এ জন্যই সকল মানুষের স্রষ্টা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুদকে সম্পূর্ণ হারাম ঘোষণা করেছেন। সকল নবী-রাসূলই সুদি ব্যবস্থার ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন এবং এর বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছেন।
মহাগ্রন্থ আল কুরআন ‘রিবা’র কোন সংজ্ঞা দেয়নি। এটা শুধু এ কারণে যে, আল কুরআন যাদের সম্বোধন করেছে তারা রিবা বা সুদের সাথে ছিল অতি পরিচিত। তারা সবাই জানত সুদ কী। রিবা পরিভাষা আরববাসীর কাছে মোটেই অপরিচিত ছিল না। তারা পারস্পরিক লেনদেনের ক্ষেত্রে হামেশাই এ শব্দ ব্যবহার করত। শুধু আরববাসী নয়; পূর্ববর্তী সকল সমাজেই মানুষ তাদের আর্থিক লেনদেনে রিবা নিত এবং দিত। রিবার প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে কারও মধ্যেই কোন প্রকার অস্পষ্টতা বা বিভ্রান্তি ছিল না। প্রচলিত অর্থনীতিতে সুদকে বলা হয়েছে ‘পুঁজির মূল্য’। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অবদানের জন্য পুঁজিকে দেয় পারিতোষিক। রিবার পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে ঋণ দিয়ে আসলের ওপর বেশি নেয়া। সুদের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ঋণ দেয়া মূল অর্থে যাই উৎপন্ন করুক না কেন তার বিচার না করে ঐ ঋণের ওপর পূর্ব-নির্ধারিত পরিশোধিতব্য অর্থই হলো সুদ। অন্যকথায় ঋণের ওপর ঋণের শর্ত হিসেবে অতিরিক্ত কিছু লেনদেন করা হলে সে অতিরিক্তকে বলা হয় রিবা বা সুদ। রিবার সংজ্ঞায় হযরত আলী (রা) বর্ণনা করেছেন যে, মহানবী (সা) বলেছেন, ‘যে ঋণ কোন মুনাফা টানে তাই রিবা (সুদ)।’ হযরত আলী (রা) বর্ণনা করেছেন যে, মহানবী (সা) বলেছেন, ‘লাভ (অতিরিক্ত) বহনকারী প্রত্যেক ঋণই রিবা। হযরত হারিস ইবনে আবি উসামাহ্ তাঁর মুসনাদে উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। হযরত উসামা ইবনে যায়েদ (রা) থেকে বর্ণিত মহানবী (সা) বলেছেন, ‘প্রতীক্ষাতেই রিবা রয়েছে …’। আল্লামা ইবনুল আরাবির মতে, ‘রিবার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধি। কুরআন মজিদে ঐ বৃদ্ধিকে রিবা বলা হয়েছে যার বিপরীতে কোন বিনিময় নেই।’
প্রখ্যাত তাফসিরকারক ইমাম ফখরুদ্দীন আল রাযীর মতে, ‘জাহেলিয়াতের যুগে আরববাসী সকলেরই রিবা সম্বন্ধে জানা ছিল এবং তাদের মধ্যে এটি বহুল প্রচলিত ছিল। যে যুগেও তারা প্রথাসিদ্ধভাবে ঋণ দিত এবং শর্ত অনুসারে তার ওপর মাসে মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আদায় করত কিন্তু আসলের পরিমাণ থাকত অপরিবর্তিত। যখন ঋণের মেয়াদ শেষ হতো এবং ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হতো তখন সুদ বাড়িয়ে দেয়ার শর্তে পরিশোধের সময়ও বাড়িয়ে দেয়া হতো’।
আল্লামা আবু বকর আল জাসসাস (মৃ. ৩৮০ হিজরি) এর মতে, ‘একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য প্রদেয় ঋণের পূর্বশর্তানুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আসলের অতিরিক্ত যে অর্থ আদায় করা হয় তাই হচ্ছে সুদ’।
হানাফী মাযহাবে রিবার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘রিবা হচ্ছে ক্রয়-বিক্রয়ে প্রতিমূল্যের (counter value) ওপর ধার্যকৃত অতিরিক্ত যার কোন প্রতিমূল্য নেই।’ Riba is the excess which lacks a counter value in sale’ হানাফী স্কুলের প্রখ্যাত ‘ফকিহ’ ইমাম সারাখসী সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘শরিয়াহ্’তে রিবা হচ্ছে ক্রয় বিক্রয়ে দু’টি প্রতিমূল্যের কোন একটির ওপর ধার্যকৃত অতিরিক্ত যার কোন বিনিময় নেই।’
আল্লামা ইমাম রাগীব আল ইস্পাহানীর মতে, ‘রিবার পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে একদিক দিয়ে বৃদ্ধি পাওয়া, অন্যদিক দিয়ে নয়। ঋণদাতা ঋণগ্রহীতার নিকট থেকে ঋণের শর্ত হিসেবে বা ফেরতের মেয়াদ বৃদ্ধির বিনিময়ে মূল পরিমাণের অতিরিক্ত যাই গ্রহণ করে তাই রিবা’। ছানাউল্লাহ্ পানিপথির মতে, ‘প্রদত্ত ঋণের আসলের চেয়ে বেশি গ্রহণ করাই রিবা।’ সাইয়েদ আমিমুল ইহসানের মতে, ‘চুক্তিবদ্ধ দু’পক্ষের যে কোন এক পক্ষ কর্তৃক পারস্পরিক লেনদেনে শরিয়াহ্ সম্মত বিনিময় ব্যতীত শর্ত মোতাবেক যে অতিরিক্ত আদায় করা হয় তাকে সুদ বলে।’ ফতোয়ায়ে আলমগীরী গ্রন্থে সুদের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “ইসলামী শরিয়াহ্’য় ঐ মালকে সুদ বলা হয় যা মালের পরিবর্তে মালের লেনদেনকালে অতিরিক্ত অংশ হিসেবে প্রদান করা হয়, যার কোন বিনিময় নেই।” প্রখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ আবু ইসহাক আল খাজ্জাগের মতে, ‘কাউকে ঋণ দিয়ে আসলের অতিরিক্ত কিছু নেয়া হলে তাই সুদ।’’ সহীহ বুখারী শরীফের প্রখ্যাত ব্যাখ্যাতা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানীর মতে, ‘অর্থ বা পণ্যের বিনিময়ে নেয়া অতিরিক্ত অর্থ বা পণ্যই হচ্ছে রিবা।’’ আল্লামা মুহাম্মাদ আসাদের মতে, ‘কোন ব্যক্তি কর্তৃক অন্য কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে ঋণ হিসেবে প্রদত্ত অর্থ বা পণ্যসামগ্রীর ওপর সুদ (Interest) হিসেবে ধার্যকৃত অবৈধ অতিরিক্তই হচ্ছে রিবা।’’ এম এ খান বলেছেন, ‘রিবা হচ্ছে দেনার ওপর এমন অতিরিক্ত যাকে ঋণদাতার অধিকার হিসেবে বলা হয়েছে, কিন্তু এর বিনিময়ে ঋণদাতা দেনাদারকে কিছুই দেয় না।’’
শেখ এম মুস্তাফা শিবলির মতে, ‘রিবা হচ্ছে ঋণের আসল পরিমাপের ওপর যে কোন অতিরিক্ত, এ অতিরিক্ত প্রথমে পরিশোধ করা হোক বা শেষে দেয়া হোক।’’ ড. আলী আল-সালোসি বলেছেন, ‘ঋণের ওপর শর্ত হিসেবে সময়ের ক্ষতিপূরণ স্বরূপ দেয় যে কোন অতিরিক্তই হচ্ছে রিবা’। সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহ) এর মতে, ‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধের শর্তসাপেক্ষে মূলধনের ওপর যে নির্দিষ্ট পরিমাণ বাড়তি অর্থ গ্রহণ করা হয় তাকেই সুদ বলে।’’
ড. এম উমর চাপরার মতে, “শরিয়াহ্’তে রিবা বলতে ঐ অতিরিক্তকে (Premium) বুঝায় যা ঋণের শর্ত হিসেবে অথবা ঋণের মেয়াদ বৃদ্ধির দরুন ঋণগ্রহীতা অবশ্যই মূল অর্থসহ ঋণদাতাকে পরিশোধ করতে বাধ্য।”
অধ্যাপক মুহাম্মদ শরীফ হুসাইনের মতে, “ঋণের ওপর ঋণের শর্ত হিসেবে অতিরিক্ত কিছু লেনদেন করা হলে সে অতিরিক্তকে বলা হয় রিবা বা সুদ। তিনি আরো বলেন, ধারকৃত মূলধনের ওপর সময়ের অনুপাতে প্রদত্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ অতিরিক্ত দেয়াই হচ্ছে ‘রিবা’ বা সুদ।” ক্রয়-বিক্রয়ে দাম নির্ধারণের বিধান লংঘন করে কোন এক পক্ষের দেয় প্রতিমূল্যের ওপর অতিরিক্ত ধার্য করা হলে এবং সেই অতিরিক্ত অংশের বিনিময় দেয়া না হলে তাই হয় রিবা।
এমরান এন হোসাইনের মতে, ‘অন্যদের ক্ষতির বিনিময়ে, অবৈধ এবং ভ্রান্ত উপায়ে মূলধনের বৃদ্ধি হচ্ছে সুদ।’’
মুফতি মুহাম্মাদ তাকী উসমানীর মতে, ঋণের চুক্তিতে মূলধনের ওপর অতিরিক্ত ধার্য করাকে রিবা বলে যা আল কুরআনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংজ্ঞাটি পবিত্র কুরআনের বর্ণনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হয়।
ড. ইউসুফ আল-কারাদাভীর মতে, ‘শুধুমাত্র সময়ের বিনিময়ে মূলধনের ওপর শর্তানুযায়ী অতিরিক্ত যা কিছু আরোপ করা হয় তাই হচ্ছে সুদ।’ যাকী আল দীন বাদাবীর মতে, ‘রিবা হচ্ছে এক বিশেষ ধরনের অতিরিক্ত।’
প্রখ্যাত ইসলামী অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকার এম. আযীযুল হক লিখেছেন, ‘ঋণ দেয়া মূল অর্থ যাই উৎপন্ন করুক না কেন তার বিচার না করে ঐ ঋণের ওপর পূর্ব নির্ধারিত পরিশোধিতব্য অর্থই হলো সুদ।’
প্রখ্যাত ইসলামী ব্যাংকার এ কে এম ফজলুল হকের মতে, ‘ঋণের লেন-দেনে ঋণের আসলের ওপর যদি ‘অতিরিক্ত কিছু’ ধার্য করা হয় তবে ঐ ‘অতিরিক্ত কিছু’কে সুদ (রিবা) বলে। সেই অতিরিক্ত কিছু অর্থও হতে পারে, দ্রব্যও হতে পারে, সেবাও হতে পারে। ঋণের ওপর অতিরিক্ত যাই নেয়া হোক না কেন তাই সুদ।’
মাওলানা মো: ফজলুর রহমান আশরাফী বলেন, পরিভাষাগত দিক দিয়ে রিবা হচ্ছে, ‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধের শর্তসাপেক্ষে কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিপরীতে পূর্বনির্ধারিত হারে যে অধিক পরিমাণে অর্থ আদায় করা হয় এবং একই শ্রেণীভুক্ত মালের পারস্পরিক লেন-দেন কালে চুক্তি মোতাবেক অতিরিক্ত যা গ্রহণ করা হয় তাকে সুদ বলা হয়।’
ড. মোহাম্মাদ হায়দার আলী মিয়ার মতে, ‘ঋণের ওপর ঋণের শর্ত হিসেবে অতিরিক্ত কিছু লেন-দেন করাকেই রিবা বা সুদ বলে।’
নওয়াজেশ আলী জায়েদীর মতে, ‘যে কোন ধরনের ঋণের ওপর ধার্যকৃত অতিরিক্তই রিবা’
উপরের সংজ্ঞাসমূহে বর্ণিত সুদকে আল্লাহ হারাম করেছেন। তাই সুদ বর্জন করতে হবে। আর সুদ বর্জনের পর আয়ের বিকল্প হালাল উৎস দরকার। এ জন্যই আল্লাহ দ্ব্যর্থহীনভাবে ব্যবসায়কে হালাল ঘোষণা করেছেন। ব্যবসায়লব্ধ মুনাফা তাই সম্পূর্ণ হালাল।
আল কুরআন ও আস সুন্নাহয় দুই প্রকার রিবা বা সুদের উল্লেখ রয়েছে। তা হচ্ছে :
১. রিবা নাসিয়া (Riba Nasiyah)
২. রিবা ফদল (Riba Fadl)
১. রিবা আল নাসিয়া (Riba al Nasiyah) :
কুরআন মজিদে উল্লেখিত রিবাই রিবা আল নাসিয়া। এটিকে রিবা আল কুরআনও বলা হয়। নাসিয়া শব্দের মূল হচ্ছে ‘নাসায়া’ যার আভিধানিক বা ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে স্থগিত, বিলম্বিত বা প্রতীক্ষা। পারিভাষিক অর্থে ঋণের সে মেয়াদকালকে নাসায়া বলা হয় যা ঋণদাতা আসল ঋণের ওপর নির্ধারিত পরিমাণ অতিরিক্ত প্রদানের শর্তে ঋণগ্রহীতাকে নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সুতরাং রিবা নাসিয়া হচ্ছে ঋণের উপর সময়ের প্রেক্ষিতে ধার্যকৃত অতিরিক্ত অংশ। এই অতিরিক্ত অংশ সময়ের সাথে বৃদ্ধি পাওয়া। ঋণ পরিশোধের জন্য প্রদত্ত সময় রিবা নয় বরং ঋণ পরিশোধের জন্য সময় থাকা প্রকৃতি সম্মত, স্বাভাবিক ও অপরিহার্য; তবে ঋণের আসলের ওপর ধার্যকৃত অতিরিক্ত হচ্ছে রিবা নাসিয়া। কেবল ঋণের ক্ষেত্রেই রিবা নাসিয়ার উদ্ভব ঘটে। সে ঋণ নগদ অর্থে হোক বা পণ্য আকারে হোক, তার ওপর ধার্যকৃত রিবা হচ্ছে রিবা নাসিয়া। অধ্যাপক মুহাম্মদ আকরাম খানের মতে, কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির নিকট থেকে কোন জিনিস নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে ফেরত দেয়ার শর্তে গ্রহণ করার পর, মেয়াদ শেষে চুক্তি মোতাবেক উক্ত জিনিসের সাথে যে অতিরিক্ত পরিমাণ তাকে প্রদান করে সে অতিরিক্ত পরিমাণকে ‘রিবা আল নাসিয়া’ বলে। হানাফী ফকীহগণ বিরা নাসিয়ার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, রিবা নাসিয়া হচ্ছে, মেয়াদ বা সময়গত বৃদ্ধি যা তাৎক্ষণিক বিনিময়ের চেয়ে বাকিতে বিনিময়ে প্রদত্ত বর্ধিত সময় বা মেয়াদ এবং দেনার পরিমাণের বৃদ্ধি, যখন ভিন্ন ভিন্ন জাতের ওজন বা পরিমাপযোগ্য পণ্য, অথবা কখনও জ্ঞান ও পরিমাপ করা হয় না এমন সমজাতের পণ্য বাকিতে ক্রয়-বিক্রয় করা হয় এবং দেনার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়।
ধরা যাক, ‘আবদুর রহিম’ একজন ঋণদাতা এবং ‘আবদুল করিম’ একজন ঋণগ্রহীতা। ‘আবদুর রহিম’ যদি ‘আবদুল করিমকে ১০০ টাকা এক বছরের জন্য এ শর্তে ধার দেয় যে, এক বছর পর আবদুল করিম উক্ত ১০০ টাকার সাথে অতিরিক্ত আরও ২০ টাকা ফেরত দেবে, তাহলে এ অতিরিক্ত ২০ টাকাই হবে ‘রিবা নাসিয়া’। এভাবে ঋণদাতা যদি ঋণগ্রহীতাকে ১ কিলোগ্রাম লবণ এ শর্তে ধার দেয় যে, এক মাস পর ঋণগ্রহীতা দেড় কিলোগ্রাম ফেরত দেবে তাহলে এ অতিরিক্ত আধা কিলোগ্রাম লবণ হবে ‘রিবা নাসিয়া’। রিবা নাসিয়া, রিবা আল জাহিলিয়্যা, রিবা আল জলি (Obvious riba), স্পষ্ট প্রকট, রিবা আল মুবাশশির (Direct Riba), রিবা আল দুয়ুন (Riba on loans), রিবা আল করদ, রিবা আল কুরআন ইত্যাদি নামেও অভিহিত হয়ে থাকে। বর্তমান যুগে ঋণের বিনিময়ে সুদের আদান-প্রদান ব্যাপকভাবে প্রচলিত। আল্লামা ড. ইউসূফ আল-কারাদাভীর মতে, ঋণের বিনিময়ে সুদ বা কুরআনে উল্লেখিত সুদই বর্তমান যুগের ইস্যু। আধুনিক অর্থনীতিতে রিবা নাসিয়ার প্রচণ্ড দাপট। মানুষের সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ঘিরে বিষধর সাপের মত পেঁচিয়ে রয়েছে এই রিবা নাসিয়া। রিবা নাসিয়ার অক্টোপাসে আটকা পড়ে আছে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। মুফতি মুহাম্মাদ তাকী উছমানীর মতে, ‘ঋণ বা দেনার আসলের ওপর চুক্তি অনুসারে ধার্যকৃত যে কোন অতিরিক্ত হচ্ছে রিবা আল নাসিয়া। মহাগ্রন্থ আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে এই রিবাকেই হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি আরো লিখেছেন, ভোগ বা উৎপাদন যে উদ্দেশ্যেই হোক, নির্বিশেষে সকল ঋণ বা দেনার চুক্তিতে আসলের ওপর ধার্যকৃত, কম হোক বেশি হোক, যে কোন অতিরিক্তই হচ্ছে আল কুরআনে ঘোষিত হারাম ‘রিবা’।
২. রিবা ফদল (Riba Fadl):
রিবা ফদলের উদ্ভব হয় হাতে হাতে বিনিময়ের (Hand to hand transfer) থেকে। রিবা ফদল হচ্ছে সাদৃশ্যপূর্ণ দু’টি জিনিসের হাতে হাতে তাৎক্ষণিক বিনিময়ে বাড়তি নেয়া, যেমন- স্বর্ণের বিনিময়ে বেশি স্বর্ণ, দিরহামের বিনিময়ে বেশি দিরহাম। এইভাবে একই জিনিসের বিনিময়ে একই জিনিস বেশি নেয়া। যেহেতু একই জিনিস সে জিনিসের অতিরিক্ত জসস দিল, তাই এখানে সুদি লেনদেনের মনোবৃত্তি কাজ করেছে। অন্যকথায়, পণ্য বিনিময় কালেও সুদ হতে পারে। একই জাতীয় পণ্যের নগদ হাতে হাতে উপস্থিত বিনিময়ে (Spot-Transaction) কমবেশি করা হলে বেশিটা রিবা ফদল। অধ্যাপক মুহাম্মদ আকরাম খানের মতে, সমজাতীয় পণ্যদ্রব্য ও মুদ্রার লেন-দেন কালে এক পক্ষ চুক্তি মোতাবেক অপর পক্ষকে শরিয়াহ্ সম্মত বিনিময় ব্যতীত যে অতিরিক্ত মাল প্রদান করে তাকে রিবা আল ফদল বলে। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী বলেছেন, ‘পণ্য বা অর্থের বিনিময়ে অতিরিক্ত পণ্য বা অর্থই হচ্ছে রিবা। যেমন, এক দিনারের বিনিময়ে দুই দিনার। এখানে বিনিময় বলতে তিনি হাতে হাতে বিনিময়কে বুঝিয়েছেন। এ ছাড়া এক জাতের মুদ্রা, অর্থাৎ দিনারের সাথে দিনারের বিনিময়ের কথা বলেছেন। সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (রহ) লিখেছেন, ‘একই জাতিভুক্ত দুটি জিনিসের হাতে হাতে লেন-দেনের ক্ষেত্রে যে বৃদ্ধি হয় তাকে বলা হয় রিবা আল ফদল। মহানবী (সা) রিবা ফদলকে হারাম ঘোষণা করেছেন।
উদাহরণস্বরূপ এক কিলোগ্রাম উন্নতমানের খেজুরের সাথে দুই কিলোগ্রাম নিম্নমানের খেজুর বিনিময় করা হলে, নিম্নমানের খেজুরের ঐ অতিরিক্ত এক কিলোগ্রামই হবে রিবা ফদল। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, একদা হযরত বিলাল (রা) মহানবী (সা)-এর নিকট কিছু উন্নতমানের খেজুর নিয়ে এলেন। মহানবী (সা) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথা থেকে এ খেজুর আনলে। হযরত বিলাল (রা) উত্তরে বললেন, আমাদের খেজুর নিম্নমানের ছিল তাই আমি দুই সা পরিমাণ নিম্নমানের খেজুরের পরিবর্তে ভাল মানের এক সা খেজুর বদলিয়ে নিয়েছি। মহানবী (সা) এ কথা শুনে বললেন; এতো হচ্ছে খাঁটি নির্জলা রিবা। একেবারে নির্জলা রিবা বা সুদ। কখনো এরূপ করো না বরং তুমি কিনতে চাইলে অন্য আরেক জনের কাছে বিক্রি কর, তারপর যে পয়সা পাও তা দিয়ে খরিদ কর। হযরত আবু হুরায়রা (রা) ও হযরত আবু সাইদ খুদরী (রা) হতে আর একটি বর্ণনায় এসেছে, মহানবী (সা) বনু আদি আল আনসারী গোত্রের এক ব্যক্তিকে রাজস্ব আদায়ের জন্য খায়বরে কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দান করেছিলেন। লোকটি মহানবী (সা) এর নিকট ভাল মানের খেজুর নিয়ে এলেন। তখন মহানবী (সা) বললেন, খায়বরের সমস্ত খেজুর কি এ রকম? তিনি বললেন না, আল্লাহর কসম হে আল্লাহর রাসূল (সা)। আমরা এ মানের এক সা খেজুর সংগ্রহ করি সাধারণ মানের দুই সা খেজুরের বিনিময়ে এবং দুই সা সংগ্রহ করি তিন সা-এর বিনিময়ে। তখন মহানবী (সা) বললেন, এ রকম করো না। প্রথমে সবগুলো (তোমাদের নিকট যে মানের খেজুর রয়েছ তা) দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করবে, অতঃপর (প্রাপ্ত) দিরহাম দিয়ে উন্নতমানের খেজুর ক্রয় করবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণভাবে মনে হতে পারে দুই কেজি নিম্নমানের খেজুর দিয়ে এক কেজি উন্নতমানের খেজুর বিনিময়ে দোষের কিছু নেই। কারণ গুণগত মান ভাল হওয়ায় এরূপ বিনিময় হতেই পারে। কিন্তু লেনদেনটি সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করলে ত্র“টিপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হবে। কেননা গুণগত মান একটি অতি সূক্ষ্ম জিনিস। স্বাদ, গন্ধ, দেখার সৌন্দর্য ইত্যাদি অনেক বিষয় এর সাথে সম্পৃক্ত।
সমজাতীয় পণ্য বিনিময় করে এর গুণগতমান পরিমাপ করা কঠিন। এ ছাড়াও পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে সকলের অভিজ্ঞতা থাকে না বিধায় ঠকার আশঙ্কা থাকে। অধিকন্তু পণ্য বিনিময় করার সময় গুণ অনুমান করা যায় আর নিশ্চিত হওয়া যায় কেবল ভোগ ব্যবহারের পরেই। এ কারণেই মহানবী (সা) বলেছেন, পণ্য সম্পর্কে অনভিজ্ঞ ব্যক্তিকে ধোঁকা দেয়ার কারণে অতিরিক্ত গ্রহণ করা যা রিবা (সুদ)। তাই সমজাতীয় পণ্য বিনিময় না করে তা প্রচলিত বাজার দরে নিম্নমানের পণ্যটি বিক্রি করে প্রাপ্ত মূল্য দিয়ে প্রচলিত বাজারমূল্যে উন্নতমানের সমজাতীয় পণ্য খরিদ করলে ঠকার আশঙ্কা থাকে না। তাই পণ্যের বিনিময়কালে প্রচলিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত গ্রহণ বা প্রদান করার ফাঁক-ফোকর বন্ধ করার জন্য মহানবী (সা) সমজাতীয় পণ্য বিনিময়কালে কমবেশি করতে নিষেধ করেছেন। তাই ইমাম ইবনে তাইমিয়া (১২৬২-১৩২৮) রিবা ফদলকে রিবা আল খফি বা সুপ্ত সুদ বা অস্পষ্ট ও প্রচ্ছন্ন সুদ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সমজাতীয় পণ্য বিনিময়কালে কমবেশি করাকে সকল ইসলামী অর্থনীতিবিদ ‘রিবা ফদল’ বলেছেন। প্রাসঙ্গিক হাদিসসমূহ বিশ্লেষণ করে ড. এম. উমর চাপরা রিবা ফদলের চমৎকার সুন্দর এক সংজ্ঞা এভাবে দিয়েছেন, “Anything that is unjustifiably received as an extra by one of the two counter parties in a transaction of trading is Riba al Fadl.” হানাফী ফকীহগণ রিবা ফদলের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, রিবা ফদল হচ্ছে ক্রয়-বিক্রয়ে কোন এক দিকের সম্পদের ভিত্তিতে আইনত গ্রহণযোগ্য মানদণ্ড তথা ওজন ও পরিমাপের ভিত্তিতে আরোপিত অতিরিক্ত।
এছাড়া নবী করীম (সা) আরও কতিপয় লেনদেনকে রিবা আখ্যায়িত করেছেন যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১. অর্থের বিনিময়ে অর্থ লেনদেনে উভয় পক্ষের অর্থ যদি একই জাত ও শ্রেণীভুক্ত হয় এবং উভয় পক্ষ যদি সমান সমান পরিমাণের অর্থ লেনদেন না করে, তাহলে বিনিময় তাৎক্ষণিক হাতে হাতে নগদে (spot transaction) হোক, সে লেনদেন হবে ‘রিবা’;
২. বার্টার বা পণ্যের সাথে পণ্য বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলো যদি ওজন বা পরিমাপ যোগ্য হয় এবং একই জাত ও শ্রেণীভুক্ত হয় এবং যদি উভয় পক্ষের পণ্যের পরিমাণ অসমান হয় অথবা কোন এক পক্ষ যদি তার পণ্য প্রদান ভবিষ্যতের জন্য স্থগিত বা বাকি রাখে তাহলে এরূপ লেনদেন ‘রিবা’ লেনদেনে পর্যবসিত হবে।
৩. বার্টার বা পণ্যের সাথে পণ্য বিনিময়ে পণ্য যদি ভিন্ন ভিন্ন জাত ও শ্রেণীভুক্ত হয় এবং সেগুলো যদি ওজন বা পরিমাপযোগ্য হয় আর কোন পক্ষ যদি তার পণ্য প্রদান স্থগিত বা বাকি রাখে তাহলে তা ‘রিবা’ লেনদেনের অন্তর্ভুক্ত হবে।
ইসলামী আইন শাস্ত্রে উল্লেখিত এই তিন ধরনের লেনদেনকে বলা হয়েছে ‘রিবা আল-সুন্নাহ্’; কারণ এরূপ লেনদেন নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নবীর (সা) হাদীস বা সুন্নাহর দ্বারা।
শাফেয়ী আইনবেত্তাদের মতে, “It is an exhcnange with an increase in one of the trade items over the other”. অর্থাৎ “ক্রয়-বিক্রয়ে দু’টি পণ্যের কোন একটির পরিমাণ অপরটির চেয়ে বেশি করে ক্রয়-বিক্রয় করাই হচ্ছে রিবা ফদল।”
বর্তমান যুগে সীমিতভাবে রিবা ফদলের প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। যেমন, ছেঁড়া-ফাটা-পুরাতন টাকা ও নতুন টাকা বিনিময়কালে কমবেশি করা, লেন-দেনের ক্ষেত্রে অন্যকে প্রতারিত করে অন্যায়-অনৈতিক উপার্জন ইত্যাদি। রিবা আল ফদল অন্যান্য নামেও আখ্যায়িত হয়ে থাকে। যেমন- রিবা আস-সুন্নাহ, (Riba al Sunnah), রিবা আল বুয়ু (Riba in trade), রিবা গায়ের আল মুবাশশির (Indirect Riba), রিবা আল খফি (Hidden Riba) ইত্যাদি।
হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ দেহলবী (রহ) (১৭০৩-১৭৬৩ খ্রি.) বলেন, রিবা দুই প্রকার। যেমন, (১) রিবা হাকিকী বা প্রকৃত রিবা (Real Riba), (২) রিবা আল ফদল। প্রকৃত বা হাকিকী রিবা কেবল ঋণের ওপরই হয়। (Real riba is only on Loan