ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ কতটা গুরুত্বপূর্ণ

মানবতার ধর্ম ইসলাম নারী পুরুষদের মধ্যে সুন্দর ও পুতঃপবিত্র জীবন- যাপনের জন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। বল্গাহীন, স্বেচ্ছাচারী জীবনের উচ্ছৃঙ্খলতা ও নোংরামির অভিশাপ থেকে সুরক্ষা করতেই ইসলাম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জোর তাগিদ প্রদান করেছে।কেননা নারী পুরুষের পবিত্রতা ও সতিত্ব রক্ষার মোক্ষম ও বাস্তব সম্মত হাতিয়ার হল এ বিবাহ ব্যবস্থা। বিয়ে হল পুরুষ ও নারীর মাঝে সামাজিক পরিবেশে এবং ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক অনুষ্ঠিত এমন এক সর্ম্পক স্থাপন যার ফলে নারী-পুরুষ দু’জনে একত্রে বসবাস এবং পরস্পরের যৌন সর্ম্পক স্থাপন সম্পূর্ণ বৈধ হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা নারী-পুরুষের মধ্যে বিবাহের বিধান দিয়েছেন বিশেষ হেকমত সামনে রেখে। সেসব হেকমত থেকে এখানে কয়েকটি বিষয় আলোচনা করা হলো। ১) মানববংশ বিস্তার করা ও ধ্বংসের হাত থেকে মানববংশকে হেফাজত করা। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে: ‘তোমরা কুমারী ও অধিক সন্তান জন্মদানে সক্ষম নারীদের বিয়ে করো। কেননা কেয়ামতের দিন আমি আমার উম্মতের সংখ্যার আধিক্য দিয়ে অন্যান্য উম্মতের ওপর গর্ব করবো। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২০৫০)২) বিবাহ চক্ষু শীতল করে। হাদিস শরিফে এসেছে: ‘হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা (আর্থিক ও দৈহিকভাবে) বিবাহ করতে সক্ষম, সে যেন বিয়ে করে। কেননা এটি চক্ষু শীতল করে ও লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। আর যে অক্ষম, তার জন্য রোজা রাখা জরুরি। এই রোজা তার জন্য জৈবিক চাহিদা প্রতিরোধক। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৯০৫; মুসলিম, হাদিস : ১৪০০) ৩) বিবাহের মাধ্যমে অন্তরের অসওয়াসা ও অবৈধ কামনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে এসেছে: ‘তারা তাদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, তাদের পত্নী বা অধিকারভুক্ত দাসিদের ছাড়া। এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। ’ (সুরা: মা’আরেজ, আয়াত : ২৯-৩০) ৪) বিবাহের মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। বিবাহের মাধ্যমে লজ্জাস্থান হেফাজত হয়। এতে জান্নাতে যাওয়া সহজ হয়। হাদিস শরিফে এসেছে, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে তার দুই ঠোঁটের মাঝখান (জিহ্বা) ও দুই রানের মাঝখান (লজ্জাস্থান) নিরাপদ রাখার বিষয়ে গ্যারান্টি দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের গ্যারান্টি দিচ্ছি’। (বুখারি শরিফ, হাদিস : ৬৪৭৪) ৫) যে ব্যক্তি নেককার নারীকে বিয়ে করলো, সে ইসলামের পথে ক্রমাগ্রসর হলো। মহানবী (সা.) ইরশাদকরেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা যাকে একজন নেককার স্ত্রী দান করেছেন, তিনি তাকে ইসলামের পথে অর্ধেক অগ্রসর করে দিয়েছেন। এবার অবশিষ্ট অর্ধেকের জন্য তার উচিত আল্লাহকে ভয় করা। ’ (মুসতাদরাক হাকেম : ২/১৬১) ইমাম জাহাবি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। ৬) বিবাহের মাধ্যমে অন্তরের প্রশান্তি বাড়ে। কর্মমুখরদিন শেষে ক্লান্তশ্রান্ত দেহে স্বস্তি আসে স্ত্রীর মাধ্যমে। জাগতিক জীবনের শত কোলাহল, কষ্ট মানুষ সহ্য করে প্রিয়তমা স্ত্রীর মুখপানে চেয়ে। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একজন ব্যক্তি থেকে। তা থেকেই তার স্ত্রী সৃষ্টি করেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়’। (সুরাআরাফ, আয়াত : ১৮৯) ৭) অনেকগুলো পরিবারের সমন্বয়ে সমাজ গঠিত হয়। তাই সমাজের অন্তর্গত পারিবারিক বলয় যত সুদৃঢ় হবে, সমাজও তত সুদৃঢ় হবে। মহানবী (সা.)-এর আচার-আচরণ, চালচলন নিজের জীবনসঙ্গিনীর সঙ্গে সহানুভূতি ও স্নেহময় ছিল। বর্ণিত আছে, ‘আয়েশা (রা.) পেয়ালার যেখানে মুখরেখে পান করতেন, রাসুল (সা.) সেখানে মুখ রেখে পান করতেন এবং একই হাড্ডিরগোশত আয়েশা (রা.) খেয়ে রাসুল (সা.)-এর হাতে দিলে রাসুল (সা.) সেখান থেকেই খেতেন, যেখান থেকে আয়েশা (রা.) খেয়েছেন’। (নাসাঈ : হাদিস : ৭০) ৮) নেক সন্তান জন্ম দিলে সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব পাওয়া যাবে। মৃত্যুর পরও এর সুফল ভোগ করা যাবে। হাদিস শরিফে এসেছে : ‘মানুষ যখন মারা যায়, তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন ব্যক্তির আমল চলমান থাকে। এক. সদকায়ে জারিয়ামূলক কাজকর্ম (যেমন— মসজিদ, মাদ্রাসা করা, রাস্তাঘাট করা, মানবসেবায় কোনো কাজ করা)। দুই. তার রেখে যাওয়া জ্ঞান, যা থেকে মানুষ উপকৃত হয়। তিন. নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করতে থাকে। ’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ১৬৩১)।

Total Pageviews