রাসূলুল্লাহ (সা:) এর বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে নাস্তিকদে দাঁত ভাংগা জবাব

অনেক অবিশ্বাসীদের মনে একটি প্রশ্ন প্রায়ই ঘুরপাক খায়, তাহলো – রাসূলুল্লাহ ﷺ বহু বিবাহের সঠিক কারন কি ?সাধারণ মুসলিম পুরুষ না ৪টার বেশী বিয়ে করতে পারে না? উনি তাহলে ১১টা বিয়ে করলেন কেন?” এমন প্রশ্ন করে অনেকেই। – বর্তমান সময় যখন অনলাইনেও অফলাইনে নাস্তিকতা ও ইসলাম-বিদ্বেষ চরম আকার ধারণ করেছে তখন সাধারণ মুসলিমের জন্য এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা জরুরী হয়ে পড়েছে। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আছে এবং এই লেখায় আমি সেই উত্তর দিব। কিন্তু সেই উত্তরে যাওয়ার আগে ছোট্ট একটা ভূমিকার অবতারণা করতে হচ্ছে।উত্তর বুঝার প্রি-রিকুইসিট জ্ঞান: আমাদের উপমহাদেশে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে নিয়ে লেখা কিছু বইতে, এবং বিভিন্ন আলেমরা তাদের লেকচারে তাঁকে নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি রকমের কথা বলে থাকেন। যেমন – রাসূলুল্লাহ ﷺ নূরের তৈরী, তাঁকে সৃষ্টি না করা হলে কিছুই সৃষ্টি হত না, তিনি সকল প্রকার মানবিক ও জৈবিক চাহিদার উর্ধ্বে ছিলেন – ইত্যাদি। এই কথাগুলো ভুল। অবশ্যই রাসূলুল্লাহ ﷺ সব মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানুষ এবং তিনি নিষ্পাপ, কিন্তু একথাও মনেরাখতে হবে তিনি আমাদের মতই রক্ত-মাংসের একজন মানুষ, যাকে তাঁর ঈমান ও আমলের কারণে আল্লাহ্ বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। বলুন, “আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ। যার উপর প্রত্যাদেশহয়েছে যে তোমাদের উপাস্য একমাত্র আল্লাহ্, তাই তাঁরই পথ অবলম্বনকরো এবং তাঁরই কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো”।(সূরাফুসসিলাত ৪১:৬)আমাদের মধ্যে যেমন আশা-আকাংক্ষা, দু:খ-কষ্ট, অস্থিরতা-রাগ আছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মধ্যেও এর সবই উপস্থিত ছিল। তাঁর সাথে আমাদের পার্থক্য হলো তিনি এগুলোকে নিজের নিয়ন্ত্রণের রাখতে পারতেন, আমরা কখনো পারি, কখনো পারি না। আমাদের মধ্যে যেমন কামনা-বাসনা আছে, স্বাভাবিকভাবে মানুষ হিসাবে তাঁর মধ্যেও এগুলো ছিল। আমরা যেমন সুন্দরের প্রতি আকৃষ্ট হই, তিনিও সুন্দরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করতেন। আমাদের সাথে তাঁর পার্থক্য হলো – আমরা আমাদের বাসনা পূরণের জন্য আল্লাহর ﷻ দেয়া সীমা লঙ্ঘন করে ফেলি, যার দিকে তাকানো উচিত নয় তার দিকে তাকাই, যার সাথে সম্পর্ক করা আল্লাহর ﷻ বিধানের বাইরে তার সাথেও সম্পর্ক করি। কিন্তু, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর চাহিদা পূরণের জন্য কখনোই আল্লাহর ﷻ দেয়া সীমাকে লঙ্ঘন করেননি, সর্বাবস্থায় আল্লাহর ﷻ হুকুম মেনে চলেছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ (বা যে কোন মানুষের)যে কোন কাজ সম্পর্কে আমাদের আপত্তি থাকবে না যদি তা নিচের দুইটা (both) বিষয়কে মেনে চলে – এক – যদি তা আল্লাহর ﷻ দেয়া সীমার মধ্যে থাকে। অর্থাৎ, আল্লাহ্ যদি কোন কিছুকে হালাল করে থাকেন তাহলে সেটা করলে দোষের কিছু নেই। দুই – যদি কাজটি ঐ সমাজে গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে। (নামাজ,রোজা তথা ইবাদতের ক্ষেত্রে এই ২য় শর্তটি পূরণ হওয়া জরুরি নয়, কিন্তু পার্থিব কাজ যেমন বিয়ে, যুদ্ধ ইত্যাদির (worldly affairs) ক্ষেত্রে এই শর্তটি গুরুত্বপূর্ণ) উদাহরণস্বরূপ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বহুবিবাহের কথা ধরা যাক। আমরা জানি – রাসূলুল্লাহ ﷺ বহু বিবাহ করেছেন– এটার অনুমতি আল্লাহর ﷻ কাছ থেকেওআছে, আবার তৎকালীন সমাজেও এটা গ্রহণযোগ্য প্র্যাক্টিস ছিল – কাজেই রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বহুবিবাহ নিয়ে কোন মুসলিমের আপত্তি থাকবে না। আবার বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় সাধারণভাবে বহু বিবাহ গ্রহণযোগ্য নয়। কাজেই কোন মুসলিম যদি সক্ষমতা থাকার পরেও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতারকথা বিবেচনা করে বহুবিবাহ না করে – তাহলেও আমরা বলব সে ঠিক করেছে। অন্যদিকে, পশ্চিমা বিশ্বে সমকামিতাএকটি গ্রহণযোগ্য আচরণ, কিন্তু একজন মুসলিম হিসাবে আমরা এই আচরণের পক্ষে নই কারণ এটা আল্লাহর ﷻ দেয়া সীমার বাইরে। এখানে বলে রাখা ভাল যে, ইসলামিক আইন যদিও কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা’ (Consensus) ও কিয়াসের (Analogy) উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু এর প্রয়োগ আরো কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে যার মধ্যে আছে – মাসলাহা মুরসালা (Consideration of Public Welfare/জনতারবৃহত্তর স্বার্থ) ও উরফ (Social norm /সামাজিক রীতি)।উপরের প্রি-রিকুইসিট জ্ঞানকে মাথায় রেখে এবার আসুন সরাসরি প্রশ্নে চলে যাওয়া যাক। প্রশ্ন – ইসলামের যেখানে ১জন পুরুষের জন্য ৪জন স্ত্রী রাখার অনুমতি আছে, সেখানেমুহাম্মাদﷺ কিভাবে ১১টা বিয়ে করলেন? তাঁর বৈবাহিক জীবন কি অস্বাভাবিক নয়? রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ১১জন স্ত্রী ছিল, যার মধ্যে ৯ জন একসাথে স্ত্রী হিসাবে ছিল (বাকী ২ জনের মৃত্যু হয়েছিল)। তাঁর স্ত্রীদেরকে আমরা সম্মানের সাথে উম্মাহাতুল মু’মিনীন (ঈমানদারদের মাতা) বলে থাকি।যদিও একজন মুসলিমের জন্য চারজনের বেশী স্ত্রী রাখার অনুমতি নেই, কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ কে আল্লাহ্ চার এর বেশী স্ত্রী রাখার অনুমতি দিয়েছিলেন। আর এই অনুমতি দেয়া হয়েছে নিচের আয়াতের মাধ্যমে। হে নবী, আমি আপনার জন্য বৈধ করেছি আপনার স্ত্রীদেরকে যাদের আপনিদেনমোহর দিয়েছেন …আর কোন ঈমানদার নারী নবীর কাছে নিবেদনকরলে আর নবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে সে বৈধ।আর এ শুধু আপনারইজন্য,বাকী মুমিনদের জন্য নয়। [সূরা আহযাব৩৩:৫০] কিন্তু প্রশ্ন হলো এই সুবিধা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে দেয়ার কারণ কি? আসুন এর কয়েকটা কারণ দেখা যাক – রাসূলুল্লাহ সাঃ ﷺ এর শারিয়াহ কিছুটা ভিন্ন ছিল রাসূলুল্লাহ ﷺ এর শারিয়াহর কিছু অংশ সাধারণ মুসলিমদের থেকে ভিন্ন ছিল।এই ভিন্ন শারিয়াহ তাকে সুবিধা কিছু দিয়েছিল, কিন্তু দায়িত্ব দিয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশী। যেমন – রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য প্রতিরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ওয়াজিব ছিল, একবার যুদ্ধের সরঞ্জাম পড়ে ফেলার পর যুদ্ধে না যাওয়া তাঁর জন্য হারামছিল, দান গ্রহণ করা তাঁর জন্য হারাম ছিল, মৃত্যুর সময় পরিবারের জন্য একটা পয়সা সম্পদ রেখে যাওয়াও তাঁর জন্য হারাম ছিল, এমন কি আজ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বংশধরের কেউ যতই দরিদ্র হোক না কেন যাকাত নিতে পারবেনা। এত কঠিন কঠিন নিয়মের বিপরীতে আল্লাহ্ তাঁকে খুব অল্প কিছু বিধানে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন, তার মধ্যে একটি হলো চারটির বেশী স্ত্রী রাখার অনুমতি।রাসূলুল্লাহ ﷺ চাইলে আরো বেশী বিয়ে করতে পারতেন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর যৌবনের প্রাইম টাইম একজন মাত্র স্ত্রীর সাথেই কাটিয়েছিলেন – ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর একজন মাত্র স্ত্রী ছিল। অথচ বহুবিবাহ করা আরব সমাজে একটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল এবং তিনি চাইলেই তখন একাধিক বিয়ে করতে পারতেন। আমাদের সমাজে যেমন বিয়ের সময় ছেলেদের যোগ্যতা দেখা হয় – তার পড়াশুনা, চাকরি-বাকরি, আয়-রোজগার দেখা হয়, তৎকালীন আরব সমাজে বিয়ের সময় একটা ছেলে বা মেয়ের একটা বৈশিষ্ট্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ছিল – তা হলো বংশমর্যাদা। রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেনআরবের সবচাইতে সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশের সবচাইতে সম্মানিত ও লিজেন্ডারি ব্যক্তিত্ব আব্দুল মুত্তালিব এর সবচেয়ে প্রিয় নাতি। তাই তিনি চাইলে যৌবনে ও নবুয়তির আগে১০-১২টা বিয়ে করা তার জন্য কোন ব্যাপারই ছিল না, কিন্তু তা তিনি করেন নি।

Total Pageviews