যেই ৫টি উক্তি তোমার জীবনে ইতিবাচক প্রভাব আনতে পারে

পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনীকোন দেশের তা নিয়ে দ্বিমত থাকতেই পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী সেই তালিকায় একদম প্রথম সারিতেই থাকবে তাতে কোন সন্দেহ নেই! এই পরিচিতি একদিনে গড়ে উঠেনি, শত শত বছরের কঠোর পরিশ্রম আর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফসল এই যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী- যা আজ পৃথিবীর বুকে ছড়ি ঘোরাচ্ছে।এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারিগর হচ্ছে সেনাবাহিনীর ট্রেইনিং। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে যোগদান করা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি। শুধুমাত্র NAVY SEAL-এর বাছাই প্রক্রিয়াই চলে ছয় মাস ধরে! এই সময়টিতে ভয়াবহ সব অত্যাচার আর পরিশ্রমের ভেতর দিয়ে যেতে হয় ট্রেইনিদের। অমানুষিক ধকল সইতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ঝরে পড়ে ৮০% এরও বেশি ভর্তিচ্ছু তরুণ!এভাবে দীর্ঘ সময় নিয়ে বেছে বেছে একদমদেশসেরা অসম্ভব দক্ষ এবং সমর্থ সব তরুণদের নিয়ে সাজানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। এই ট্রেনিং প্রক্রিয়াটা সব সৈনিকদের কাছে একটা দুঃস্বপ্নের মতো। শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতার একদম শেষ সীমা পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়া হয় তাদের এই ছয় মাস, এবং অমানুষিক মনোবল না থাকলে এই পরীক্ষায় টিকে থাকা কারো পক্ষে সম্ভব না! তাই মনোবল চাঙ্গা রাখতে পাঁচটি উক্তি সবসময় হৃদয়ে ধারণ করেন কঠোর মনের এই মানুষগুলো।দারুণ সব লেখা পড়তে ও নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে ঘুরে এসো আমাদের ব্লগের নতুন পেইজ থেকে!কথাগুলো সব শুনতে হয়তো শ্রুতিমধুর নয়, কিন্তু সেনাবাহিনীর অসম্ভব কঠিন নিয়মকানুনের চাদরে আবৃত জীবনে সাফল্যের সাথে টিকে থাকতে এমন কঠোর সব বাণীই মেনে চলতে হয়।১। বিজয়ী হতে চাইলে তোমাকে অবশ্যই মূল্য দিতে হবেদৌড় প্রতিযোগিতায় সবাই কিন্তু একসাথেই শুরু করে দৌড়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেবল একজনই থাকে যে সবার আগে পেরিয়ে যায় ফিনিশিং লাইন।ছোট্ট একটা দৌড়, পাঁচ মিনিটেরও না, অথচএর প্রস্তুতির পেছনে কত অজস্র ঘণ্টার পরিশ্রম মিশে থাকে! যেই মানুষটা প্রথম হলো, দেখা যাবে অন্যরা যখন ঘুমাচ্ছে সে তখন ঠিকই একাকী মাঠে ঘাম ঝরিয়েছে দৌড়ের প্রস্তুতিতে। জীবনের সব ক্ষেত্রেই এমন, সাফল্য পেতে হলে অন্যদের চেয়ে বেশি উদ্যম থাকতেই হবে।অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করতে হলে পরিশ্রমটাও অন্যদের চেয়ে বেশিই দিতে হবে জীবনে।২। কেউ হাল না ছাড়া পর্যন্ত দৌড় চলবেইট্রেইনিং এ কখনো “শেষ” বলে কিছু নেই, সবসময়ই “এর পরে কী?” এই প্রশ্ন থাকে মনে। বাস্তব জীবনও এমনই। সবাই বছরের শুরুতে প্রতিজ্ঞা করলো অনেক অনেক পড়ালেখা করবে, এক সপ্তাহ যেতেই দেখা গেল একজন প্রতিজ্ঞা ভুলে খেয়ে বসে আছে! এভাবে সময় যেতে যেতে একজন একজন করে অনেকেই ঝরে পড়বে, খুব অল্প কিছু মানুষ দাঁত কামড়ে আঁকড়ে ধরে থাকবে প্রতিজ্ঞাটার সাথে, বছরের শেষে গিয়ে দেখা যাবে অন্যদের থেকে তারা যোজন যোজন এগিয়ে গেছে! তোমার অনেক প্রতিযোগিতা? ভাল তো!এই প্রতিযোগিতার মনোভাবই তোমাকে মানসিকভাবে শক্ত করে তুলবে। সবাই একটাপর্যায়ে গিয়ে হাল ছেড়ে দিবে, এটাই হয়, কিন্তু তুমি ছাড়বে না, ঝুলে থাকবে, কামড়ে ধরে থাকবে, প্রাণপণে লেগে থাকবে, শেষ পর্যন্ত পাহাড়ের চূড়ায় কেবল একজনই উঠবে- সেই মানুষটা হবে তুমি! এটাই তো বিজয়!৩। কোন কষ্টই চিরস্থায়ী নয়অনেকসময় এমন হয়, মনে হয় জীবনটা শূন্য! কিছুই হচ্ছে না, বদলাচ্ছে না, একটা অন্ধকার কূপের মধ্যে পড়ে আছো তুমি, এখান থেকে বের হবারও যেন কোন পথ নেই- তখন মানুষ জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এজন্যই পৃথিবীতে এখনো প্রতি বছর দশ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে! প্রতিদিন তিন হাজার মানুষ জীবনটা নিজের হাতে শেষ করে ফেলছে, ভাবতে পারো?এজন্যই সেনাবাহিনী শিক্ষা দেয় কোন কষ্টই চিরদিনের নয়। একদিন না একদিন এইকষ্ট শেষ হবেই। ছয়মাসের অমানুষিক ট্রেনিংও একদিন ঠিকই শেষ হয়। সেই সুন্দর ভবিষ্যতের কথা ভেবে হলেও দাঁত কামড়ে এখনকার কষ্টটা সহ্য করতে শেখো। দিন বদলাবেই, দুঃসময়ের কাল মেঘ কেটে ঝলমলে সূর্য একদিন উঠবেই।৪। ভালো লাগুক আর না-ই লাগুক, তোমার কাজ যেটা সেটা তোমাকে করতেই হবেসকালে ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠতে আমাদের কারোই ভাল লাগে না, পরীক্ষার এত এত পড়াশিখতে অসহ্য লাগে, বাসায় কেউ কোন কাজ করতে বললে মহা বিরক্তি লাগে- কিন্তু যেটা তোমার দায়িত্ব সেটা তো পালন করতেই হবে।তোমার এখন সকাল দশটার আগে হয়তো ঘুম ভাঙে না, ছুটির দিন বিছানায় গড়াগড়ি দিয়েই কেটে যায়। একদিন ঘুম কম হলে ক্লাসে গিয়ে ঘুমে চোখ ভেঙ্গে আসে। অথচঠিক তোমার মতই একজন সেনাবাহিনীতে সারাদিনে মোটে তিন ঘন্টার বেশি ঘুমানোর সুযোগ পায় না, সে কি মারা যাচ্ছে এত কম ঘুমিয়ে? না! মানুষ অসম্ভব ক্ষমতাবান একটি প্রাণী, অভ্যাস করালে তাকে দিয়ে অসাধ্য সাধন করানো যায়। তাই ভাল লাগুক আর না-ই লাগুক, কর্তব্যে কখনো অবহেলা করো না। কষ্ট ভাবলেই কষ্ট, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে তুললে এই কষ্টগুলো তুমি নিজে থেকেই সাদরে বরণ করে নিবে।৫। যেকোন কাজ করার দুটি মাত্র নিয়ম- সঠিক ভাবে করা, এবং বারবার করা!আমরা নতুন কিছু করতে গেলে সবসময় কী বলি?“শুরুতে কিছু ভুলচুক হবেই, practice করতে করতে শিখে ফেলবে!”সেনাবাহিনীতে “ভুল” করার কোন সুযোগ নেই! খাতায় একটা অঙ্ক ভুল হলে তুমি কেটে আবার করার সুযোগ পাচ্ছো, যুদ্ধের ময়দানে একটা গ্রেনেড ছুঁড়তে ভুল হলে কিন্তু সেই সৈনিক দ্বিতীয় কোন সুযোগ পাবে না আর। এখানে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে হয় রক্ত দিয়ে, পঙ্গুত্ব দিয়ে, মৃত্যু দিয়ে। তাই ট্রেনিং এ ভয়াবহ কঠোর অমানুষিক পরিশ্রম করানো হয় সৈনিকদের, ভুলচুক করার বিন্দুমাত্র অবকাশ যেন না থাকে এমনভাবে অস্থিমজ্জায় ঢুকিয়ে দেওয়াহয় ট্রেইনিং।তুমি সারাবছরে বইয়ের অঙ্কগুলো কয়বার অনুশীলন করো? সেনাবাহিনীর ট্রেইনিং এ খুব খুঁটিনাটি বিষয়গুলোও হাজারবার করে অনুশীলন করানো হয়। কারণ এটা যে জীবন-মৃত্যুর বিষয়, এখানে কোন সহানুভূতি, মায়া, মমতার স্থান নেই। যুদ্ধের ময়দানটা অসম্ভব নির্দয়, এখানে তোমার ভুলের কোন ক্ষমা নেই, দ্বিতীয় সুযোগ নেই। বাস্তব জীবনেও অনেকদূর এগিয়ে যেতে প্রয়োজন এই মনোভাব- শতভাগ সঠিক এবং আত্মবিশ্বাসী না হওয়া পর্যন্ত কখনো অনুশীলন থামাতে নেই।

Total Pageviews