জানুন পৃথিবীর বৃহত্তম পাঁচটি দেশ সম্পর্কে!!!

পৃথিবীর বৃহত্তম দেশগুলো সম্পর্কে জানার আগে চলুন নিজের দেশ “বাংলাদেশ”সম্পর্কে টুকিটাকি প্রয়োজনীয় সব তথ্য জেনে নেই।বাংলাদেশ (Bangladesh)রাজধানী: ঢাকা (Dhaka)আয়তন: ১৪,৭,৫৭০ বর্গ কিমি বা ৫৫,৫৯৯ বর্গ মাইল (৯৪তম)জনসংখ্যা: ১৬,৪৪,৮,৫৭০ (৭ম)রাষ্ট্রভাষা: বাংলা (Bengali)সরকার: সংসদীয় গণতন্ত্রমাথাপিছু আয়: ১,৬৯৭ মার্কিন ডলার (১৫২তম)মুদ্রা: টাকা (BDT)বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্র যার আনুষ্ঠানিক নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনাবসানে ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান নামে যে দেশটি সৃষ্টি হয়েছিলো। তার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তান। শোষণ বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দারিদ্র্য পীড়িত বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় ঘটেছে দুর্ভিক্ষ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এছাড়াও প্রলম্বিত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ওপুনঃপৌনিক সামরিক অভ্যুত্থান এদেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক প্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে।বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। কিন্তু আয়তনের হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে ৯৪তম। ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। তবে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের তুলনায় বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি (মূল্যস্ফীতি সমন্বয় কৃত) প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এবং ১৯৯০-এর শুরুর দিককার তুলনায় দারিদ্র্যতার হার প্রায় ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ “পরবর্তী একাদশ” অর্থনীতিসমূহের তালিকায় স্থান করেনিয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য শহরের পরিবর্ধন বাংলাদেশের এই উন্নতির চালিকা শক্তিরূপে কাজ করছে। এর কেন্দ্রবিন্দুতে কাজ করেছে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর তরিত বিকাশ।এবার চলুন পৃথিবীর বৃহত্তম পাঁচটি দেশ ঘুরে আসি।রাশিয়া (Russia)রাজধানী: মস্কো (Moscow)আয়তন: ১,৭০,৭৫,৮০০ বর্গ কিমি বা ৬৫,৯২,৪০০ বর্গ মাইল (১ম)জনসংখ্যা: আনুমানিক ১৪,৩০,৩০,০০০ জন (৮ম)রাষ্ট্র ভাষা: রাশিয়ান কিন্তু বিভিন্ন প্রাদেশিক আরও ২৭টি ভাষা চালু আছেসরকার: রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্রমাথাপিছু আয়: ১৬,৬৮৭ মার্কিন ডলার (৪৫তম)মুদ্রা: রুবল RUB১৯২২ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত রাশিয়া ছিলসোভিয়েত ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্র। সে সময় অনেকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে রাশিয়া নামে চিনলেও প্রকৃতপক্ষে রাশিয়া ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৫টি ইউনিয়ন অংশের একটি। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠার পূর্বে রাশিয়ায় রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল। রাশিয়ার রাজপ্রধানকে জার (tsar বা czar) বলা হত। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে রাশিয়া মুক্ত বাজার ও গণতন্ত্রকে স্বাগত জানায়।পূর্ব ইউরোপ ও উত্তর এশিয়া জুড়ে বিস্তৃত বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়া। রাশিয়ার আয়তন দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ কানাডার আয়তনের প্রায় দ্বিগুণ। দেশটির সরকারী নাম রুশ ফেডারেশন। রাশিয়ার মত এত বেশি খনিজ সম্পদ বিশ্বের অন্য কোন দেশের নেই। রাশিয়ার চার-পঞ্চমাংশ জনগণ এরপূর্ব ইউরোপীয় অংশে উরাল পর্বতমালার পশ্চিমে বাস করে। রাশিয়ার রাজধানী মস্কো দেশটির প্রশাসনিক বাণিজ্যিক শিল্প ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। রাশিয়া বর্তমানে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। দেশটিতে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হয়। দেশের বেশিরভাগ জনগণ রুশ ভাষায় কথা বলে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সেন্ট পিটার্সবার্গ যা সোভিয়েত শাসনামলে লেলিনগ্রাদ নামেপরিচিত ছিল।কানাডা (Canada)রাজধানী: অটোয়া (Ottawa)আয়তন: ৯৯,৮৪,৬৭০ বর্গ কিমি বা ৩৪,৫৪,০৮২ বর্গ মাইল (২য়)জনসংখ্যা: ৩,৪৭,৭৭,০০০ জন (৩৫ তম)রাষ্ট্র ভাষা: ইংরেজি এবং ফ্রান্সসরকার: পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসিমাথাপিছু আয়: ৩৫,২০০ মার্কিন ডলার (৭ম)মুদ্রা: ক্যানাডিয়ান ডলার (CAD)কানাডা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র যা উত্তর আমেরিকার উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকা জুড়ে অবস্থিত।১৫তম শতকের শুরুতে ইংরেজ এবং ফরাসি অভিযাত্রীরা আটলান্টিক উপকূল আবিষ্কার করে এবং পরে বসতি স্থাপনেরউদ্যোগ নেয়। ফ্রান্স দীর্ঘ সাত বছরের যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে ১৭৬৩ সালে উত্তর আমেরিকায় তাদের সব উপনিবেশ ইংরেজদের কাছে ছেড়ে দেয়।১৮৬৭ সালে মৈত্রীটার মধ্য দিয়ে চারটি স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ নিয়েদেশ হিসেবে কানাডা গঠন করা হয়। এর ফলে আরও প্রদেশ এবং অঞ্চল সংযোজনের পথ সুগম এবং ইংল্যান্ড থেকে স্বায়ত্তশাসন পাওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। ১৯৮২ সালে জারীকৃত কানাডা অ্যাক্ট অনুসারে দশটি প্রদেশ এবং তিনটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত কানাডা সংসদীয় গণতন্ত্র এবং আইনগত রাজতন্ত্র উভয়ই মেনে চলে। রাষ্ট্রের প্রধান রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। কানাডা দ্বিভাষিক(ইংরেজিও ফরাসি ভাষা দুটোই সরকারী ভাষা) এবংবহুজাতির দেশ।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (United States of America)রাজধানী: ওয়াশিংটন ডি.সি (Washington DC)আয়তন: ৯৬,৩১,৪১৮ বর্গ কিমি বা ৩৭,১৭,৭২৭ বর্গ মাইল (৩য়)জনসংখ্যা: আনুমানিক ৩১,২৩,৫৩,০০০ জন(৩য়)রাষ্ট্রভাষা: ইংরেজি কিন্তু জাতীয় স্তরে নির্দিষ্ট কোন ভাষা নেইসরকার: যুক্তরাষ্ট্রীয় সাংবিধানিকপ্রজাতন্ত্রমাথাপিছু আয়: ৪৮,১৪৭ মার্কিন ডলার (৭ম)মুদ্রা: ডলার (USD)মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর আমেরিকায় অবস্থিত পঞ্চাশটি রাজ্য ও একটি ফেডেরাল ডিস্ট্রিক্ট নিয়ে গঠিত এক যুক্তরাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র। মধ্য উত্তর আমেরিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডটি পশ্চিমে প্রশান্ত ও পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর দ্বয়ের মধ্যস্থলে অবস্থিত।এই অঞ্চলের উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্তেঅবস্থিত যথাক্রমে কানাডা ও মেক্সিকো রাষ্ট্রদ্বয়। আলাস্কা রাজ্যটি অবস্থিত মহাদেশের উত্তর-পশ্চিমে এই রাজ্যের পূর্ব সীমায় কানাডা ও পশ্চিমে বেরিং প্রণালী পেরিয়ে রাশিয়া। হাওয়াই রাজ্যটি মধ্য-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত একটি দ্বীপপুঞ্জ। এছাড়াও ক্যারিবিয়ান ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অনেক অঞ্চল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকারভুক্ত।আমেরিকার আদিম অধিবাসীরা সম্ভবত এশীয় বংশোদ্ভুত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে এরা কয়েক হাজার বছর ধরে বসবাস করছে। তবে নেটিভ আমেরিকানদের জনসংখ্যা ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনের পর থেকে মহামারী ও যুদ্ধবিগ্রহের প্রকোপে ব্যাপক হ্রাস পায়। প্রাথমিক পর্যায়ে আটলান্টিক মহাসাগর তীরস্থউত্তর আমেরিকার তেরোটি ব্রিটিশ উপনিবেশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।গণচীন (China)রাজধানীঃ বেইজিং (Beijing)আয়তনঃ ৯৫,৯৬,৯৬০ বর্গ কিমি বা ৩৭,০৪,৪২৬ বর্গ মাইল (৪র্থ)জনসংখ্যাঃ আনুমানিক ১৩৩,৮৬,১২,৯৬৪ জন(১ম)রাষ্ট্রভাষাঃ ম্যান্ডারিন চাইনিজ তাছাড়া আঞ্চলিক বিত্তিতে আরও স্বীকৃত ভাষা আছেসরকারঃ সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রমাথাপিছু আয়ঃ ৮,৩৯৪ মার্কিন ডলার (৯০তম)মুদ্রাঃ ইয়েন (CNY)চীন এশিয়া মহদেশের পূর্ব অঞ্চলে এবং প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত। চীনের স্থলভাগের আয়তন প্রায় ৯৬ লক্ষ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে চীন এশিয়ার বৃহত্তম দেশ এবং রাশিয়া ও কানাডার পর চীন বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। উত্তর-দক্ষিণে চীন মোহো অঞ্চলের উত্তরের হেইলুংচিয়াং নদীর কেন্দ্রস্থল অর্থাৎ ৫৩.৩০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ থেকে দক্ষিণে নানসা দ্বীপপুঞ্জের চেনমু-আনসা অর্থাৎ ৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। চীনের সর্বদক্ষিণ আর সর্বউত্তর প্রান্তেরমধ্যকার দূরত্ব প্রায় ৫৫০০ কিলোমিটার। পূর্ব-পশ্চিমে চীন পূর্বের হেইলুংচিয়াং নদী আর উসুলিচিয়াং নদীর সঙ্গমস্থল অর্থাৎ১৩৫.০৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে পশ্চিমে পামির মালভূমি অর্থাৎ ৭৩.৪০ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশটির পূর্ব আর পশ্চিম প্রান্তের মধ্যকার দূরত্ব প্রায় ৫০০০ কিলোমিটার।চীন একটি পর্বতময় দেশ। এর মোট আয়তনের দুই-তৃতীয়াংশ পর্বত, ছোট পাহাড় এবং মালভূমি নিয়ে গঠিত। আরওসঠিকভাবে বলতে গেলে চীনের ৩৩% উঁচু পর্বত, ২৬% মালভূমি, ১৯% অববাহিকা, ১২% সমতলভূমি এবং প্রায় ১০% ক্ষুদ্র পাহাড়।ব্রাজিলঃ (Brazil)রাজধানীঃ ব্রাসিলিয়া (Brasilia)আয়তনঃ ৮৫,১১,৯৬৫ বর্গ কিমি বা ৩২,৮৫,৬১৮ বর্গ মাইল (৫ম)জনসংখ্যাঃ ১৯,০৭,৩২,৬৯৪ জন (৫ম)রাষ্ট্রভাষাঃ পর্তুগীজ (Portuguese)সরকারঃ রাষ্ট্রপতি শাসিত সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্রমাথাপিছু আয়ঃ ১১,৮৮৫ মার্কিন ডলার(৭৪তম)মুদ্রাঃ রিয়াল (BRL)সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রী ব্রাজিল হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র। এছাড়াও জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ। ৮৫,১১,৯৬৫ বর্গকিলোমিটার (৩২,৮৫,৬১৮ বর্গমাইল) আয়তনের এই দেশটিতে বসবাসকৃত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৯ কোটির কিছু উপরে। এটি আমেরিকার একমাত্র পর্তুগিজভাষী দেশ এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ পর্তুগিজভাষী রাষ্ট্র।ব্রাজিলে পূর্বভাগ আটলান্টিক মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। যার উপকূলীয়ভাগের দৈর্ঘ প্রায় ৭,৪৯১ কি.মি. (৪,৬৫৫ মাইল)।ব্রাজিলের উত্তরে রয়েছেভেনেজুয়েলা, গায়ানা, সুরিনাম, ও ফ্রান্সের সামুদ্রিক দেপার্ত্যমঁ ফরাসি গায়ানা। এছাড়াও এর উত্তর-পশ্চিম ভাগে কলম্বিয়া; পশ্চিমে বলিভিয়া ও পেরু। দক্ষিণ-পশ্চিমে আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ে, এবং সর্ব-দক্ষিণে দক্ষিণে উরুগুয়ে অবস্থিত। ব্রাজিলীয় সীমানায় আটলান্টিক মহাসাগরের বেশকিছু দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত। যার মধ্যে রয়েছে ফের্নান্দু জি নরোনিঁয়া, রোকাস অ্যাটল, সেন্ট পিটার ও সেন্ট পল রকস, এবং ত্রিনিদাজি এ মার্চিঁ ভাজ।ব্রাজিলের সাথেচিলি ও ইকুয়েডরব্যতীত দক্ষিণ আমেরিকার সকল দেশেরই সীমান্ত-সংযোগ রয়েছে।

Total Pageviews