যেখানে ঋতুস্রাবের সময় নারীকে নির্বাসন দেয়া হয়!

পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব নারীদের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু, একথা মানতে নারাজ নেপালের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। তাই এসময় ঋতুবর্তীকে দূরে কোথাও পঠিয়ে দেয়া হয়। যা একরকম নির্বাসনের মত। এ সময় নারী অপবিত্র বলে মনে করা হয়। তাই পরিবারের সঙ্গে রাখা হয়না। এমনকি পানির টিউবয়েল পর্যন্ত ধরতে দেয়া হয়না। এতে দেবতা অসন্তুষ্ট হবেন।স্থানীয় ভাষায়, এই প্রথাকে বলা হয় ছাউপাদি। দেশটিতে ২০০৫ সাল থেকে এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে বেআইনি ঘোষণা করা হলেও, এখনো অনেক সমাজে তা প্রচলিত।দেশটির পশ্চিম এলাকায় ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন গ্রাম ঢাংগাদি। এখানকার বাড়িগুলো মাটি ও খড় দিয়ে তৈরি। এখানকার গ্রামগুলোর প্রায় সব পরিবারই ছাউপাদি প্রথা পালন করে।প্রথা অনুযায়ী নারীকে একই কাপড় পরে চারদিন ধরে কাটাতে হয়। ওই সময় কোনও পুরুষকে স্পর্শ করা যাবে না এবং বিশেষ কিছু খাবার খেতেও বারণ।এরপর ৬ষ্ঠ কিংবা ৭ম দিনে গরুর মূত্র দিয়ে গায়ে ছিটিয়ে তাদের ঘরে তোলা হয়। এতে ‘অপবিত্রতা’ দূর হল বলে মনে করেন স্থানীয়রা।লহ্মীমালা নামে স্থানীয় এক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, তার নিজের বেলাতেও এমনটি ঘটেছে। তবে এখন তিনি এ প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার। এখানকার পরিবারগুলোকে সচেতন করার চেষ্টা করছেন।লহ্মী বলেন, আমরা দরজায় দরজায় গিয়ে অনুরোধ করে বলছি, আপনার মেয়েকে বাড়ির বাইরে থাকতে বাধ্য করবেন না। তাদেরকে এসময়টায় ঘরের ভেতর তাকতে দিন। কিন্তু এটা খুবিই কঠিন কাজ। লোকজন আমাদের সাথে ঝগড়া লাগিয়ে দেয়। অভিশাপও দেয়। বেশিরভাগ সময় পুলিশ সাথে নিয়ে গ্রামগুলোতে ঢুকতে হয়।তার পরিবারের এখন আর এর চর্চা করা হয়না। তার নিজের মেয়েকে ঋতুস্রাবের দিনগুলোতে বাড়িতে নিজের কক্ষেই থাকতে দেন।যেখানে ওই নারীদের ‘নির্বাসন’ দেয়া হয়। এসব ঘর সাধারণত মাটির। ঘরে প্রবেশের দরোজা এতই ছোট যে হাতে-পায়ে হামাগুড়ি দিয়ে ভেতরে ঢুকতে হবে। কোনও কপাট নেই।ওই নারীদের নিরাপত্তার জন্য শীতের সময় একটি মশারি দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। তবে অন্যসময় খোলাই থাকে। রাতে স্থানীয় নিরাপত্তা কর্মীরা টহল দেয় আর কুকুর ঘোরাফেরা করে। ফলে এটা নিরাপদ।শহরাঞ্চলে এখন মেয়েদের কাছে স্যানিটারি প্যাড পরিচিত হলেও, এখানকার মেয়েরা ঋতুস্রাবের সময় পুরনো কাপড় ব্যবহার করে। স্যানিটারি প্যাড কেনার মত টাকা তাদের হাতে নেই।

Total Pageviews