হজরত সুলাইমানের (আ.)সাথে পিঁপড়ারা কথা বলতো কীভাবে?

হজরত দাঊদ (আ.) মৃত্যুর পর সুযোগ্য পুত্র সুলায়মান তার স্থলাভিষিক্ত হন। শেষনবী মুহাম্মাদ (সা.) এর আবির্ভাবের নূন্যাধিক দেড় হাজার বছর পূর্বে তিনি নবী হন। সুলায়মান ছিলেন পিতার ১৯ জন পুত্রের অন্যতম। আল্লাহ পাক তাকে জ্ঞানে, প্রজ্ঞায় ও নবুওয়াতের সম্পদে সমৃদ্ধ করেন। এছাড়াও তাকে এমন কিছু নেয়ামত দান করেন, যা অন্য কোনো নবীকে দান করেননি। ইমাম বাগাভী ইতিহাসবিদগণের বরাতে বলেন, সুলায়মানের (আ.) মোট বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর।তের বছর বয়সে রাজকার্য হাতে নেন এবং শাসনের চতুর্থ বছরে বায়তুল মুক্বাদ্দাসের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তিনি ৪০ বছর কাল রাজত্ব করেন। তার একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো তিনি পিঁপড়ার সাথে কথা বলেছিলেন।এই বিষয়ে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক বলেছেন, সুলাইমানের জন্য জিন, মানুষ ও পাখিদের সৈন্য সমবেত করা হয়েছিল এবং তাদেরকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা হতো। (একবার সে তাদের সাথে চলছিল) এমন কি যখন তারা সবাই পিঁপড়ের উপত্যকায় পৌঁছালে তখন একটি পিঁপড়ে বলল, হে পিঁপেড়েরা! তোমাদের গর্তে ঢুকে পড়ো। যেন এমন না হয় যে, সুলাইমান ও তার সৈন্যরা তোমাদের পিশে ফেলবে এবং তারা টেরও পাবে না। সুলাইমান তার কথায় মৃদু হাসল এবং বলল, হে আমার রব! আমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো, আমি যেন তোমার এ অনুগ্রহের শোকর আদায় করতে থাকি যা তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি করেছ এবং এমন সৎকাজ করি যা তুমি পছন্দ করো এবং নিজ অনুগ্রহে আমাকে তোমার সৎকর্মশীল বান্দাদের দলভুক্ত করো। (নামল:১৭-১৯)জ্বীনেরা যে হজরত সুলাইমানের সেনাবাহিনীর অংশ ছিল এবং তিনি তাদের কাজে নিয়োগ করতেন, বাইবেল একথারও উল্লেখ নেই। কিন্তু তালমূদে ও রাব্বীদের বর্ণনায় এর বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। (জুয়িশ এনসাইক্লোপিডিয়া, ১১ খণ্ড, ৪৪০ পৃষ্ঠা)বর্তমান যুগের কোনো কোনো ব্যক্তি একথাপ্রমাণ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন যে, জ্বীন ও পাখি বলে আসলে জ্বীন ও পাখির কথা বুঝানো হয়নি বরং মানুষের কথা বুঝানো হয়েছে। মানুষরাই হজরত সুলাইমানের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত ছিল। তারা বলেন, জ্বীন মানে পার্বত্য উপজাতি। এদের উপর হজরত সুলাইমান বিজয় লাভ করেছিলেন। তার অধীনে তারা বিস্ময়কর শক্তি প্রয়োগের ও মেহনতের কাজ করত। আর পাখি মানে অশ্বারোহী সেনাবাহিনী। তারা পদাতিক বাহিনীর তুলনায় অনেক বেশি দ্রুততা সম্পন্ন ছিল। কিন্তু এটি কুরআন মজীদের শব্দের অযথা বিকৃত অর্থ করার নিকৃষ্টতম প্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয়। কুরআন এখানে জ্বীন, মানুষ ও পাখি তিনটি আলাদা আলাদা প্রজাতির সেনাদলের কথা বর্ণনা করছে এবং তিনের ওপর (আলিফ লাম) বসানো হয়েছে তাদের পৃথক পৃথক প্রজাতিকে চিহ্নিত করার উদ্দেশে। তাই আল জ্বীন (জ্বীন জাতি) ও আত তাইর (পাখি জাত) কোনো ক্রমেই আল ইন্স (মানুষ জাতি)-এর অর্ন্তভূক্ত হতে পারে না।পিপড়াগুলো কীভাবে যোগাযোগ করল? কমিউনিটির মাধ্যমে পিঁপড়াগুলো ফারমোনস নামক রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারে। আধুনিক গবেষকরা এই বিষয়টিকেই সঠিক বলেছেন। পিঁপড়াগুলো এক ধরনের অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে কথা বলে।কুরআনের বৈজ্ঞানিক মর্মস্পর্শী : কুরআনের এক হাজার আয়াত আছে যেগুলো নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছেন। এই ক্ষেত্রে যেটা দেখা গেছে সেটা হচ্ছে কুরআন যা বলেছে যে বিষয়ে যা বলেছে সেগুলো আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে মিল রয়েছে। অবশ্য অনেক মনে করেন যে ধর্ম এবং বিজ্ঞান দুটি পৃথক বিষয়। একটির সাথে অপরটির কোনো মিল নেই। তাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারণা। তবে কুরআনের আয়াতগুলোকে বিজ্ঞানের আলোকে বিশ্বাস করলে হবে না। কুরআনের আয়াতকে বিশ্বাস করতে হবে সেগুলো যদি বিজ্ঞানের সাথে মিলে যায় তবে ভালো। কোনো কারণে সেগুলো বিজ্ঞানের সাথে না মিললেও কুরআনের আয়াতগুলোকে বিশ্বাস করতে হবে।

Total Pageviews