কী করে বুঝবেন যে, প্রেমের সম্পর্কটি এবার শেষ?

মানুষের জীবনে প্রেম আসাটা খুব স্বাভাবিক। আবার কোনো না কোনো কারণে, কখনও বা অকারণই সে সম্পর্কটি ভেঙেও যেতে পারে। দীর্ঘ দিন প্রেম করার পরও এক সময় মনে হতে পারে সম্পর্কটিই বৃথা।

হঠাৎ মনে হতে পারে এতো দিনের এতো আবেগ, অনুভূতি, একসঙ্গে কাটানো সুন্দর সময়গুলো ভীষণ অর্থহীন লাগছে। পুরোপুরিই ব্যর্থতায় ভরা আপনার প্রেমের সম্পর্কটি।

মানুষের জীবনে মাঝে মাঝে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যখন নিজের বহু যত্নে গড়া প্রেমের সম্পর্কটি পুরোপুরিই ব্যর্থ কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। আর যখন নিজের যত্নে লালন করা প্রেমের সম্পর্কটিতে ভেজাল ঢুকে যায় তখন সব কিছুই অর্থহীন মনে হয়। তবে প্রেম ব্যর্থ কিনা- এটা বোঝার কি কোনো উপায় আছে? উত্তরটি যদি হ্যাঁ হয়, চলুন তবে জেনে নিই কি সে উপায়।

কোনোভাবেই যে আপনাকে বোঝে না

আপনার সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের পরেও যদি আপনার প্রেমিক/প্রেমিকা আপনাকে না বোঝে কিংবা বোঝার চেষ্টা না করে তাহলে বুঝে নিন আপনার সম্পর্কটি ব্যর্থ। প্রেমের সম্পর্কে দুজন দুজনকে না বুঝতে পারলে অনেক রকমের মানসিক টানাপোড়েন হয়। ফলে সম্পর্কটির মধুরতা নষ্ট হয়ে যায়।

অনুভূতির অভাব

আপনার সঙ্গীর প্রতি আপনার অনুভূতির কোনো কমতি নেই। কিন্তু আপনার অনুভব করেন যে আপনার প্রতি আপনার সঙ্গীর তেমন কোনো অনুভূতি বা টান নেই। এমন পরিস্থিতিতে আপনি বুঝে নিন যে আপনার সম্পর্কটি ব্যর্থ। কারণ ভালোবাসা পুরোপুরিই অনুভূতির ব্যাপার। অনুভূতি ও পরস্পরের প্রতি টান না থাকলে সেটাকে ভালোবাসার সম্পর্ক বলা যায় না।

দেখা করতে কিংবা যোগাযোগে অনীহা

প্রেমের সম্পর্ক মানেই নিয়মিত দেখা করা কিংবা কথা বলার জন্য আকুলতা। কিন্তু আপনার প্রেমিক/প্রেমিকা যদি কোনও কারণ ছাড়াই আপনার সাথে দেখা করতে বিরক্ত হয় কিংবা আপনার ফোন পেলে বিরক্তি প্রকাশ করে তাহলে বুঝে নিন আপনার প্রেমের সম্পর্কটি ব্যর্থ। কারণ নিয়মিত যোগাযোগ না থাকলে প্রেমের সম্পর্কের উষ্ণতা কমে যায় এবং মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়।

প্রতারণা

আপনার প্রেমিক/প্রেমিকা যদি আপনার কাছে স্বচ্ছ না হয় তাহলে বুঝে নিন আপনার সম্পর্কটি ব্যর্থ। কারণ প্রেমের সম্পর্কে স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। প্রেমিক/প্রেমিকার মধ্যে কোনও ধরনের ছলচাতুরী কিংবা প্রতারণা আশ্রয় পেলে সেই সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখার আর কোনো অর্থ থাকে না।

বিষন্নতা

আপনার প্রেমের সম্পর্কটি যদি আপনার সার্বক্ষণিক বিষন্নতার কারণ হয় তাহলে সেটা একটি ব্যর্থ প্রেমের সম্পর্ক। প্রেমের সম্পর্ক মানুষের মনের আনন্দের খোরাক হওয়ার বদলে বিষন্নতা সৃষ্টি করলে তা শরীর ও মনের জন্যও ক্ষতিকর। তাই এই ধরনের সম্পর্ক থেকে দূরে থাকাই ভালো।

যদি আপনার প্রেমের সম্পর্কে এগুলো সব লক্ষণই ধরা দেয়, তবে সে সম্পর্কটি টিকিয়ে রেখে কোনও লাভ আছে কি? উত্তরটি না হয় নিজের কাছেই নিজে দিন।

ভালোবাসা নিয়ে কিছু কথা………

আমি খুব ভালো লেখক না তাই হয়তো সব কথা বুঝিয়ে বলতে পারবো না। কিছু হতাশ প্রেমিক বা প্রেমিকার জন্যই এই পোস্ট। ২০০৫ সালের প্রথম দিকের কথা, নতুন প্রেমে পরেছিলাম সেই থেকে গতো দু মাস আগেও আমার সম্পর্কটা কন্টিনিউ ছিল, জীবনের সব কিছু দিয়ে তাকে ভালোবেসে ছিলাম, আজও বাসি।

প্রথম দিকে সম্পর্কটা অনেক মধুর ছিল, কিন্তু বাস্তবতা যখন সামনে আসলো আস্তে আস্তে সম্পর্কে ভাটা পরে। এক পর্যায়ে শত চেস্টা করেও আর ধরে রাখতে পারলাম না।

যদি আমরা বিভিন্ন সিনেমার দিকে খেয়াল করি তাহলে দেখবো। নায়ক গরিব কিন্তু নায়িকা ধনী, তবে শেষের দিকে দেখব নায়ক কোন না কোন ভাবে ধনী হয়ে গেছে তখন নায়িকাকে বিয়ে করতে পারছে। তাহলে কি বুঝলাম ভালোবাসা সমানে সমানে হয়। সিনের উদাহরন দিলাম এই জন্য যে, সিনেমাতো বাস্তব জীবনের কোন অংশ নিয়েই হয়।

আসলে জীবনে প্রেম যখন আসে তখন পৃথিবীর কোন কিছুই আর ভালো লাগে না প্রিয় মানুষটিকে ছাড়া, নিজের জীবন থেকে নেওয়া। বন্ধু বান্ধব যতই প্রিয় মানুষটিকে খারাপ বলুক না কেন, এক কান দিয়ে যায় আর অন্য কান দিয়ে বের হয়। অনেক সময় আমারা নিজের মা বাবার কথাও শুনি না, যেমন আমি।

কিন্তু রিলেশন যখন ব্রেক হয় তখন বন্ধু বান্ধব আর নিজের পরিবারের কথাই বেশি মনে পরে, সব সময় ইচ্ছে করে তাদের সাথে সময় কাটাতে। নিজের মধ্যে কষ্ট লাগে কেন নিজের পরিবারের কথা শুনলাম না।

নিজের পরিবারকে কষ্ট দেই একটা কথাই ভেবে সেটি হলো, আমরা যতই খারাপ কাজ করি না কেন তারাতো আমাদের ছেড়ে যাবে না, শত ভুল হলেও আমাদের ক্ষমা করে দেব। আর এই সুযোগের সৎব্যাবহার করি।

এখন আমার প্রশ্ন,

কেন সামান্য ভুল হলে প্রেমিক বা প্রেমিকা আমাদের ক্ষমা করতে পারে না, কেন পরিবারের মতো আবার আপন করতে পারে না? উত্তরটা আমি দিচ্ছি, নিজের পরিবারই একমাত্র যায়গা যারা আমাদের নি:শার্থ ভাবে ভালোবাসে।

তাহলে কি বলব,যখন আমরা প্রেম করি তখন কিছুটা হলেও স্বার্থ কাজ করে? উত্তরটা আপনারা ভেবে বের করুন। তাই একটা কথাই বলব, মা বাবা সব সময়ই আমাদের মঙ্গল কামনা করে, তাই নতুন করে রিলেশন করার আগে একটু চিন্তা করুন মা বাবার কথা। কি করতে যাচ্ছি আর কি করা উ্চিৎ।

আমার দেখামতে বেশিরভাগ লাভ ম্যারিজের শেষ পরিনতি ডিভোর্স নয়তো সারা বছর সংসারে অশান্তি। তবে তার পিছনে কি এমন কারন? আমরা তো একে অপরকে ভালোবেসেই বিয়ে করে ছিলাম, সব সময়তো এটাই বলতাম, ” তুমি আমার জান, তুমি আমার পরান, তোমার জন্য মরতে পারি” তবে সংসার জীবনে কেন আমরা একে অপরকে বলি তুমি আমার দু চক্ষের বিষ? একটু ঠান্ডা মথায় চিন্তা করে দেখুনতো। তবে আমি যে কারনগুলো খুজে পাই তা এবার বলছি-

প্রথম কারন, বিশ্বাসের অভাব।

ব্যখ্যা– আমারা যখন প্রেম করি তখন একে অপরের জন্য অনেক কিছুই করি। মেয়েদের ক্ষেত্রে, স্কুল, কলেজ বা টিউশনির কথা বলে একে অপরের সাথে দেখা করি, মা বাবার চোখ ফাকি দিয়ে রাতের আধারে ফোন করি, মা বাবাকে ঠকিয়ে অনেক অপকর্মেও লিপ্ত হই, এমনকি অন্যের আমানতও খেয়ানত করি।

ছেলেদের ক্ষেত্রেও ঠিক এমন হয়। যখন আমরা প্রেম করি তখন এইসব অপকর্মকে আমরা অনেক উপভোগ করি বটে, মনে মনে ভাবি ওহ কি প্রেম, আমার জন্য সব করতে পারে।

কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছেন এই অপকর্মগুলো ভবিষ্যত জীবনে হুমকি হয়ে দাড়াবে? যে মেয়ে বা ছেলে বিয়ের আগে মা বাবাকে ঠকিয়ে এতো গুলো অপকর্ম করতে পারে তাকে কি করে বিয়ের পরে বিশ্বাস করা যায়? আমাকে ভালোবেসে যে এতো খারাপ কাজ করতে পারে সে অন্যকে ভালোবেসে তো এর থেকেও বেশি খারাপ কাজ করতে পারে।

তাই সংসার জীবনে একে অপরের প্রতি এই খুতখুতে মন ভাব কাজ করে, আর সুখ তখনই জানলা দিয়ে পালায়।

২য় কারন, কব্জা করার প্রবনতা,

অনেক ছেলে বা মেয়ে বিয়ের আগেই প্রিয় মানুষটিকে কন্ট্রোল করার চেস্টা করে, ভাবে আমি যা বলবো সে তাই ই করবে।

বিয়ের আগে প্রেমের তাড়নায় অন্ধ হয়ে অনেকে তা মেনেও নেয়, কিন্তু বিয়ের পরে নিজেকে স্বাধীন ভাবায় সেই কাজ গুলো আর করতে পারে না, তখন শুরু হয় মান-অভিমান, শেষের দিকে বড় আকারে রুপ নেয়। নিত্যদিন ঝগড় বিবাদ লেগেই থাকে।

৩য় কারন, সেক্রিফাইজ মেনটালিটির অভাব,

যা একটা সংসার সুখি করার মূল মন্ত্র। বিয়ের পরে সব সময় মাথার মধ্যে কিছু প্রশ্ন থাকে, সেটি হলো বিয়ের আগে ও এটা করতো, ওটা করতে এখন কেন করে না?

আমি মনে হয় পুরানো হয়ে গেছি, আমি তার জন্য জীবনে এতো কিছু করলাম আজ কেন ও কিছু করতে পারবে না? সব প্রশ্নের উত্তর একটাই, আরে বাবা বিয়ের আগে যা করেছিল তা প্রেমে অন্ধ হয়ে করেছিল। এভাবে কারন খুজতে গেলে হাজারো কারন পাওয়া যাবে।

কাউকে ভালো লেগেছে? তাকে পেতেই হবে? নো প্রবলেম, এই দিকে আসেন। জীবনে চলার পথে অনেক দামি জিনেসও আপনার পছন্দ হয়ে যেতে পারে, কিন্তু তাই বলে কি সব কয়টা কিনতে হবে? আপনার সামর্থ আছে তো? কিছুদিন আগে রাস্তায় চলার সময় একটা দামি গাড়ি আমার পছন্দ হয়ে গেল, আফসোস করলাম আমার যদি টাকা থাকতো তাহলে এমন একটা গাড়ি আমারও থাকতো।

মাথা নিচু করে চলে এলাম। তবে আপনি কেন একটি মেয়ে বা একটি ছেলেকে ভালোলাগার পর মাথা নিচু করে চলে আসতে পারেন না? তাকে কেন পাওয়ার জন্য পাগলের মতো হয়ে যান? কেন তাকে না পেলে সুইসাইড কারার ট্রাই করেন? আর কেনই বা গুরুত্বপূর্ন সময় অপচয় করে তার পিছনে ঘুর ঘুর করেন?,

তাহলে কি বলবো, এটা প্রেম নয়? আবেগ , আক্রশ বা লোভ বলতে পারি? হ্যা ঠিক এটাই, একটু চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখুনতো? অনেক অনেক সময় এই লোভ থেকে সম্পর্কও হয়ে যায় আর সেই সম্পর্ক বেশি দিন থাকে না। কারন একটাই “ভালোবাসা অন্ধ”

কাউকে ভালোবাসার আগে একটু চিন্তা করুন, সে আপনার যোগ্য কিনা? আপনার সব ভালো লাগাকে মূল্য দিতে পারবে কিনা? তাকে দিয়ে সংসার হবে কিনা? আবেগে বা অন্ধ হয়ে ঘাড় নেড়ে সব হ্যা বলে দিলেই মরেছেন, কষ্ট পাওয়ার জন্য তৈরী হয়ে নিন।

বহুদিন সম্পর্কের এক পর্যাযে হঠাৎ করে কেউ যদি আর সম্পর্ক না রাখতে চায় তহলে তাকে যেতে দিন, কারন সে আপনার জন্য আর উপযুক্ত নয়, প্রথম দিকে উপযুক্ত হলেও। যদি উপযুক্ত হয় তবে আবার আসবে।

একটু অপেক্ষা করুন। যে চলে যাবে সে আজ হলেও যাবে কাল হলেও যাবে, তবে বিয়ের পরে পরিবার ও নিজের মুখে চুনকালি দিয়ে গেলে সেটা কি ভালো দেখাবে? তার থেকে বিয়ের আগেই চলে যেতে দেওয়া মঙ্গল নয়? একটু ভেবে দেখবেন।

হঠাৎ করে ব্রেক হয়ে গেলে অনেকে বলেন আমি তাকে দেখে নেব, কিন্তু কেন? উত্তর- সে আমার জীবন ধ্বংশ করে দিছে আমিও তার জীবন ধ্বংশ করে দেব। একটু ভাবুন তো, কেউ কি পারে অন্যের জীবন নস্ট করতে? যা করেছেন নিজেই আবেগে মত্ত হয়ে করেছেন। তাতে অন্যের কি দোষ?

অনেক কিছুই লিখতে ইচ্ছে করে কিন্তু আগেই যে বললাম আমি কবি নই, লেখকও নই। তাই এই পর্যন্তই থাক। সংক্ষেপে কিছু কথা বলে যাই-

ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না

পৃথিবীতে সব থেকে আপনজন মা বাবা তাদের মনে কষ্ট দিয়ে কেউ কোন দিন সুখি হতে পারে না, তাই তাদের মতামত কে আগে দেখুন।

জীবনটা অনেক সুন্দর শুধু চোখের পানি মুছে চোখ মেলে তাকান, কারো জন্যই জীবন থেমে থাকবে না। মিছে কষ্ট পেয়ে কি লাভ বলেন?

ভালো-খারাপ দু ধরনেরই মানুষ থাকবে, এটাই নিয়ম, অন্ধকার আছে বলেই বুঝতে পারি আলো এতো সুন্দর।
আর মনে প্রানে বিশ্বাস করুন, আল্লাহ আছেন তিনি সব দেখছেন। তিনি যা করেন বান্দার ভালোর জন্যই করেন। কেবল অপেক্ষা করুন।

Total Pageviews