হেপাটাইটিস-বি প্রতিকারে হোমিওপ্যাথি

হেপাটাইটিস-বি প্রতিকারে হোমিওপ্যাথি
অনেকেই মনে করেন জন্ডিস এবং হেপাটাইটিস-বি একই রোগের ভিন্ন নাম। আসল ছবিটা কিন্তু অন্যরকম। জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দিলেও হেপাটাইটিস-বি অনেক বেশি বিপজ্জনক। এ রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করতে হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান নিয়ে আজকের নিবন্ধ।
হেপাটাইটিস-বি লিভারের একটি মারাত্মক রোগ। হেপাটাইটিস-বি নামক একটি ভাইরাস এই রোগের কারণ। হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস মূলত লিভারকে আক্রমণ করে লিভার কোষ ধ্বংস করে তা অকেজো করে দেয়। বাস্তবে হেপাটাইটিস-বি এইডসের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি সংক্রামক। এটি এইডসের ভাইরাস এইচআইভির চেয়ে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে সংক্রমণ করে। ফলে রোগী লিভার সিরোসিস বা ক্যান্সারে দ্রুত আক্রান্ত হয়। পৃথিবীতে এইডসের কারণে প্রতি বছর যত লোক মৃত্যুবরণ করে, হেপাটাইটিস-বির কারণে তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। তামাকের পর একে দ্বিতীয় ক্যান্সার সৃষ্টিকারী হিসেবে গণ্য করা হয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫% হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি বাহক এবং ২০ ভাগ লিভার সিরোসিস বা ক্যান্সারের কারণে মারা যায়। দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছে।
হেপাটাটিস-বি কীভাবে হয় :
* সংক্রমিত সুচের মাধ্যামে রক্তদান, রক্ত গ্রহণ বা সংক্রমিত রক্ত গ্রহণ অর্থাৎ রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে এই রোগ হয়। পেশাদার রক্তদাতাদের ২৯ ভাগই হলো এ রোগের বাহক।
* সংক্রমিত লোক বা বাহকের টুথব্রাশ, ইনজেকশনের সুচ, রেজার ইত্যাদির মাধ্যমে অন্য লোকে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়।
* সংক্রমিত পুরুষ থেকে নারীতে অথবা নারী থেকে পুরুষে যৌন মিলনের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়।
* এ ছাড়াও জন্মের সময় বাহক মা থেকে নবজাতকের শরীরে সংক্রমিত হয়।
কারা এই রোগ সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ :
* স্বাস্থ্য কর্মীরা * যাদের ঘন ঘন রক্তের প্রয়োজন * মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা * হেপাটাইটিস-বি বাহক মা থেকে যেসব সন্তানের জন্ম হয় * বেপরোয়া বা অবাধ যৌন জীবনযাপনে অভ্যস্ত মানুষ * যাদের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তাদের এই রোগের সংক্রমনের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে।
হেপাটাইটিস-বি এর উপসর্গ :
* জ্বর * মাথাব্যথা * দুর্বলতা * খাওয়ায় অরুচি বা ক্ষুধামন্দা * বমি * হলুদ ইউরিন * ত্বক এবং চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া।
রোগ নির্ণয় :
উপরোক্ত উপসর্গ ছাড়াও রক্ত পরীক্ষার (ঐইঝঅএ ঞবংঃ) মাধ্যমে হেপাটাইটিস-বি আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়। রক্ত পজিটিভ হলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করতে হবে। উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে হেপাটাইটিস-বি থেকে আরোগ্য লাভ সম্ভব। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসার উদ্দেশ্য হচ্ছে লিভার কোষ ধ্বংসের গতি বন্ধ করা এবং শরীরকে ভাইরাসমুক্ত করা।
প্রতিরোধ :
* রক্ত পরিসঞ্চালনের সময় দাতার রক্তে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিতে হবে। রক্ত পরিসঞ্চালনের আইন অনুযায়ী এ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক।
* একজনের ব্যবহার্য টুথব্রাশ, ইনজেকশনের সুচ, দাড়ি কাটার রেজার ইত্যাদি অন্যজনের ব্যবহার করা উচিত নয়।
* যৌন মিলনের সময় অবশ্যই কনডম ব্যবহার করতে হবে।
হোমিওপ্যথিক প্রতিবিধান :
হোমিওপ্যাথিতে হেপাটাইটিস-বি রোগে ওষুধ নির্বাচন করা খুব সহজ নয়। এই রোগ আরোগ্য হওয়ার জন্য যে ওষুধগুলো ব্যবহৃত হয় তা সংক্ষেপে নিম্নে প্রদত্ত হলো যথা : মার্কুরিয়াস সলিউবিলিস, নেট্রাম সালফ, হাইড্রাসটিস, চেলিডোনিয়াম, কার্ডুয়াস-মেরিনাস, চিয়োন্যানথাস-ভার্জিনিকা, কার্বোভেজ, ডলিকস, চায়না, লাইকোপোডিয়াম, নাক্সভমিকা উল্লেখযোগ্য। তার পরও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে ওষুধ সেবন করা উচিত।

Total Pageviews