প্রথমে বলা যাক হাইপার গ্লাইসেমিয়া সম্পর্কে – এটা এমন এক অবস্থা যাতে শরীরে রক্তে সুগার বা শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। খুব সোজা ভাষায় বলা যেতে পারে যে, ডায়াবেটিক রোগীদের ঠিক এই সময়ে ইনসুলিন ব্যবহার করতে হয় অর্থাৎ যদি কারো রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে ১১ মি.লি মোল/ লিটার এর উপরে চলে যায় তখনি তাকে হাইপার গ্লাইসেমিয়া ধরা হয়।
হাইপার গ্লাইসেমিয়ার কারণ :
সাধারণত কোনো ডায়াবেটিক রোগী যদি অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন : চিনি, মিষ্টি (সব ধরণের মিষ্টি), মিষ্টি ফল যেমন আম,কাঁঠাল,সফেদা ইত্যাদি পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন তাহলে রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যায় এবং হাইপার গ্লাইসেমিয়া দেখা যায়।অথবা ডায়াবেটিক রোগীরা যদি শর্করা জাতীয় খাবার যেমন: ভাত, আলু, মিষ্টি আলু, কচুর মূল ইত্যাদি অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন তাহলেও এই অবস্থা দেখা দিতে পারে।
১.অনেক বেশি পানির পিপাসা এবং মনে হওয়া যে মুখের ভিতরটা শুকিয়ে যাওয়া।
২.বেশি বার মূত্র বিসর্জন। অর্থাৎ অনেক বেশি পেশাব হওয়া
৩.দুর্বলতা
৪.চোখে ঝাপসা দেখা
৫.বমি বমি ভাব
৬.শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
৭.অনেক সময় পেট ব্যাথাও হতে পারে।
হাইপার গ্লাইসেমিয়াতে করণীয় :
১.রক্তে গ্লুকোজ লেভেল কমানোর জন্য বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
২.অনেক সময় দাড়চিনি খেলেও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়।
হাইপার গ্লাইসেমিয়া যাতে না হয় তার জন্য করণীয় :
১.সব সময় রক্তের গ্লুকোজ লেভেল খেয়াল রাখতে হবে।প্রতিদিনই অন্তত একবার মেপে দেখতে হবে।
২.ডাক্তার এর দেয়া খাবার মেনু ঠিক ভাবে মানতে হবে অর্থাৎ যে খাবার যতটুকু পরিমাণে খেতে বলা হয়েছে ঠিক তত টুকুই খেতে হবে।
৩.কিছু না কিছু শারীরিক কাজ কর্ম বা ব্যায়াম করতে হবে। একেবারে শুয়ে বসে থাকা চলবে না।
৪.অবশ্যই ডাক্তার এর পরামর্শ মতো এবং সময় মতো ইনসুলিন নিতে হবে।
৫.কম শর্করা জাতীয় খাবার যেমন ভুট্টা, ডাল, বাদাম, খোসাসমেত ফল, কাঁচা আটার রুটি ইত্যাদি খেতে হবে।এছাড়াও অাঁশ জাতীয় খাবার যেমন- ডাল,বাদাম,বীচি,শুকনা ফল,জিরা,ধনে,মটরশুঁটি, খোসাসমেত ফল(আপেল,পেয়ারা) ইত্যাদি খেতে হবে।
এবার আসি হাইপো গ্লাইসেমিয়াতে।
যেটাকে সাধারণ ভাষায় হাইপো বলে থাকেন অনেকে। যখন রক্তে গ্লুকোজ লেভেল ৩.৯ মি.লি. মোল/লিটার এর নিচে নেমে যায় তখনি সাধারণত হাইপো হয়।
হাইপো হবার লক্ষণ :
১.মাথা ঘোরানো এবং শরীর দুর্বল লাগা
২.ঘাম হওয়া
৩.প্রচন্ড ক্ষুধা লাগা
৪.অনেক সময় মাথা ব্যাথাও হতে পারে
৬.পেশী তে ব্যাথা হওয়া
৫.অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
বিশেষ দ্রষ্টব্য :অনেক সময় হাইপোর কারণে মৃত্যু ও হতে পারে।
হাইপো হওয়ার কারণ:
১.সাধারণত অতিরিক্ত ইনসুলিন গ্রহণ করলে রক্তে গ্লুকোজ লেভেল কমে যেতে পারে।
২.অতিরিক্ত ব্যায়াম এর ফলে রক্তে গ্লুকোজ লেভেল কমে যেতে পারে
৩.প্রয়োজনের তুলনায় কম খেলে বা কোনো বেলার খাবার বাদ দিলে
৪.অতিরিক্ত ঔষধ গ্রহণের ফলেও এমনটা হতে পারে।
হাইপো হলে করণীয় :
১.হাইপো হবার সাথে সাথেই ৩-৪ চামচ চিনি পানিতে গুলিয়ে খেয়ে ফেলতে হবে।
অথবা
২. তিন থেকে চারটি গ্লুকোজ ট্যাবলেট খেয়ে ফেলতে হবে
অথবা
৩. আধা কাপ মিষ্টি ফলের জুস বা আধা কাপ কোমল পানীয়( কোক, ফান্টা, সেভেনআপ)
অথবা
৪. চার থেকে ছয় পিস ক্যান্ডি
অথবা
৫.উচ্চ মানের শর্করা জাতীয় খাবার যেমন: ভাত, আলু, মিষ্টি ইত্যাদি খেতে হবে।
হাইপো যাতে না হয় তার জন্য করণীয়:
১.ডায়াবেটিক রোগী হলে বেশি ক্ষণ না খেয়ে থাকা যাবে না বা কোনো বেলার খাবার বাদ দেয়া যাবে না।
২.অতিরিক্ত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করা যাবে না।
৩.গ্লুকোজ লেভেল বার বার মেপে দেখতে হবে।
৪.অতিরিক্ত ইনসুলিন বা খাবার ঔষধ খাওয়া যাবে না।
৫.দুশ্চিন্তা বা ক্লান্তি অবসাদ যেনো না আসে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
লেখক-
আয়শা মারিয়া
খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান।