নাস্তিকতা কি ? নাস্তিকতার উৎপত্তি ও বিকাশ

নাস্তিকতা কি ? নাস্তিকতার উৎপত্তি ও বিকাশ

নাস্তিক্যবাদ (অন্যান্য নাম: নিরীশ্বরবাদ, নাস্তিকতাবাদ) একটি দর্শনের নাম যাতে ঈশ্বর বা স্রষ্টার অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয়না এবং সম্পূর্ণ ভৌত এবং প্রাকৃতিক উপায়ে প্রকৃতির ব্যাখ্যা দেয়া হয়। আস্তিক্যবাদ এর বর্জনকেই নাস্তিক্যবাদ বলা যায়। নাস্তিক্যবাদ বিশ্বাস নয় বরং অবিশ্বাস এবং যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বাসকে খণ্ডন নয় বরং বিশ্বাসের অনুপস্থিতিই এখানে মুখ্য।
শব্দটি সেই সকল মানুষকে নির্দেশ করে যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই বলে মনে করে এবং প্রচলিত ধর্মগুলোর প্রতি বিশ্বাস কে ভ্রান্ত বলে তারা স্বীকার করে। দিনদিন মুক্ত চিন্তা, সংশয়বাদী চিন্তাধারা এবং ধর্মসমূহের সমালোচনা বৃদ্ধির সাথে সাথে নাস্তিক্যবাদেরও প্রসার ঘটছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে সর্বপ্রথম কিছু মানুষ নিজেদের নাস্তিক বলে স্বীকৃতি দেয়। বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যার ২.৩% মানুষ নিজেদের নাস্তিক বলে পরিচয় দেয় এবং ১১.৯% মানুষ কোন ধর্মেই বিশ্বাস করে না।জাপানের ৩১% মানুষ নিজেদের নাস্তিক বলে পরিচয় দেয়। রাশিয়াতে এই সংখ্যা প্রায় ১৩% এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ ১২% নাস্তিক, ৬% (ইতালী) থেকে শুরু করে ৪৬% থেকে ৮৫% (সুইডেন) মত।


কিছু দার্শনিকরা সমাজে প্রচলিত রীতি-নীতি ও ধর্মকে নিয়ে সন্দীহান হয়ে সেগুলোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং তাদের লেখনীতে মূর্তিপূজা থেকে শুরু করে স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। আমাদের জানামতে – সর্বপ্রথম ব্যাক্তি যিনি এরকম চিন্তা লালন-পালন করেছিলেন, তার নাম হল ‘অ্যানাক্সাগোরাস’ (Anaxagoras)। অ্যানাক্সাগোরাস বিশ্বাস করতেন যে – সূর্য হল এক ধরণের অগ্নি-পাথর। যা তখনকার যুগের জনপ্রিয় বিশ্বাসের বিপরীত ছিল। এ জন্য তাকে নির্বাসনে যেতে হয়। তার মৃত্যু হয়েছে খৃষ্টপূর্ব (৫০০-৪২৭) সালের মধ্যবর্তী সময়।

এ তথ্য অনুযায়ী  – পৃথিবীর সর্বপ্রথম স্বঘোষিত এবং অনুশীলনকারী নাস্তিকের নাম হল ‘অ্যানাক্সাগোরাস’।
আধুনিক যুগের পূর্বে নাস্তিকতা কখনও এত সংগঠিতভাবে আবির্ভূত হয়নি। মধ্যযূগে (ইউরোপের অন্ধকার যুগ হিসেবে আখ্যায়িত) যারা ইউরোপীয় সমাজে প্রচলিত খৃষ্টধর্মের বিলীফ ও বিশ্বাস বিরোধী কোন আইডিয়া নিয়ে উপস্থাপিত হতেন, তাদেরকে ‘হেরেটিক’ (Heretic) তথা ধর্মদ্রোহী আখ্যায়িত করা হত। তাদের জন্য অপেক্ষা করত হরেক-রকমের মর্মান্তিক শাস্তি। অনেক বিজ্ঞানী, দার্শনিক এবং আবিষ্কারককে গীর্জার আইনানুযায়ী শুলিবদ্ধ করা হয়, ফাঁসি দেয়া হয়, জীবন্ত পুড়িয়ে দেয়া হয়। আবার অনেককেই কাটতে হয় যাবজ্জীবন নির্বাসন। গ্যালিলিওর (Galileo Galilei) মত সুনামধন্য মহাকাশবিজ্ঞানীকে, একজন ধর্মপ্রাণ খৃষ্টান হওয়া সত্তে¡ও – ইতালীয়ান সমাজ থেকে বয়কট করে তার সাথে সবধরণের লেনদেনকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়।  কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন, ‘পৃথিবী ঘূর্ণ্যমান’। অন্যদিকে বাইবেল বলে, (The world is firmly established, it cannot be moved) ) অর্থাৎ – ‘পৃথিবী আপন স্থানে স্থীর। ইহা ঘুরিতে পারেনা’।  শিল্পবিপ্লবের সাথে সাথে ইউরোপে বস্তুবাদী চিন্তা-চেতনা খুবই দ্রুত বিস্তার লাভ করতে থাকে। রাষ্ট্রকে গীর্জা ও ধর্মযাজকদের আগ্রাসী কবল থেকে আলাদা করার দাবী-দাবা উঠতে থাকে। অবশেষে নিরুপায় হয়ে রাজা-বাদশারা পাদ্রীদের খোদাপ্রদত্ত (?) ক্ষমতাকে কেড়ে নেয়। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে ধর্মকে চীর বিতাড়িত করে এর বদলে নিয়ে আসা হয় গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ফ্যাসিবাদ এবং এধরণের আরো অনেক মানবতৈরী মতবাদসমূহকে।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে – পশ্চিমা বিশ্বে নাস্তিকতার এই চরম উৎকর্ষের পিছনে সবচেয়ে বেশী অবদান রেখেছে ধর্মব্যবসায়ী খৃষ্টান পাদ্রীরা। খৃষ্টবাদে বিদ্যমান অনেক অযৌক্তিক এবং বিকৃত তথ্যও এতে ইন্দন যোগায়। বিজ্ঞানের অনেক আবিষ্কার বিকৃত বাইবেলকে মিথ্যা বলে প্রমাণিত করে।
১৮৫৯ সালে চার্লস ডারউইন তার মহাবিতর্কিত ‘অন দ্যা অরিজিন অব স্পেসিজ বাই মীন্স অব ন্যাচারাল সিলেকশন’ (On the Origin of Species by Means of Natural Selection) গ্রন্থটি রচনা করেন; যা পশ্চিমা সমাজে এক নব উত্তাল সৃষ্টি করে। ডারউইন তার গ্রন্থে বস্তুবাদী ও নিরীশ্বরবাদী চিন্তার বীজ বপন করেন। যদিও তার ‘থিওরী অব ইভোলুশন’ (Theory of Evolution) পরবর্তীতে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলোর মাধ্যমে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে প্রমানিত হয়, তথাপি পশ্চিমারা এটার বহুল প্রচার প্রসার করে। কারণ এ থিওরী খৃষ্টবাদের উপর মুগুরের মত আঘাত করে।
(দেখুন: http://www.bbc.co.uk/history/historic_figures/darwin_charles.shtml)
ক্রমান্বয়ে পশ্চিমা বিশ্বে খৃষ্টবাদের অনুসারীদের সংখ্যা কমে আসে। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী – সমস্ত বৃটেনে কেবলমাত্র শতকরা ৫৯ ভাগ মানুষ খৃষ্টান, অথচ ২০০১ সালে খৃষ্টানরা ছিল ৭২%।
(দেখুন: বিবিসি http://www.bbc.co.uk/news/uk-20683744)

...

Watch This Video 

Photos of some নাস্তিক





















Total Pageviews