জিয়াউর রহমানের গ্রামীণ উন্নয়ন পরিকল্পনা বা ১৯ দফা কর্মসূচি সম্পর্কে তুলে ধরা হলো
জিয়াউর রহমানের গ্রামীণ উন্নয়ন পরিকল্পনা
জিয়াউর রহমান তাঁর শাসনামলে (১৯৭৭-১৯৮১) গ্রামীণ অর্থনীতি ও অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দেন। তাঁর এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিল খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
১. খাল কাটা কর্মসূচি:
এটি ছিল তাঁর সবচেয়ে আলোচিত ও প্রতীকী কর্মসূচি।
উদ্দেশ্য: সেচের জন্য খাল পুনর্খনন ও নতুন খাল খননের মাধ্যমে কৃষি জমিতে পানির সরবরাহ বাড়ানো এবং ফলন বৃদ্ধি করা।
এই কর্মসূচির স্লোগান ছিল: "খাল কাটুন, ফসল ফলান"।
২. স্বনির্ভর আন্দোলন:
এই কর্মসূচির মাধ্যমে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে গ্রামীণ সম্পদ ও শ্রমের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনায় জোর দেওয়া হয়।
৩. গ্রাম সরকার (গ্রাম সভা):
গ্রামীণ প্রশাসন ও উন্নয়নে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে এই স্থানীয় সরকার কাঠামো চালু করা হয়। এর মাধ্যমে গ্রামীণ সমস্যাগুলো স্থানীয়ভাবেই সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৪. কৃষি বিপ্লব:
উন্নত বীজ, সার এবং সেচের ব্যবহার বাড়িয়ে খাদ্যশস্য, বিশেষত ধান, উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয়। এই সময় বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করে।
📋 ১৯ দফা কর্মসূচি
১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর জিয়াউর রহমান জাতির অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে এই ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এটি ছিল তাঁর প্রশাসনের দিকনির্দেশনা।
| ক্রম | কর্মসূচির প্রধান বিষয়বস্তু | সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা |
| ১ | স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা | জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, এবং অখণ্ডতাকে অক্ষুণ্ণ রাখা। |
| ২ | আল্লাহর উপর আস্থা | সংবিধানে বর্ণিত আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থাকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। |
| ৩ | গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা | গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ ও বহুদলীয় রাজনীতির সুযোগ সৃষ্টি। |
| ৪ | খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা | খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা। |
| ৫ | নিরক্ষরতা দূরীকরণ | ব্যাপকভিত্তিক শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে নিরক্ষরতা দূর করা। |
| ৬ | গ্রাম উন্নয়ন | পল্লী অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা। |
| ৭ | অর্থনৈতিক সাম্য | ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমিয়ে সমাজের সকল স্তরে অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠা করা। |
| ৮ | স্বনির্ভরতা অর্জন | বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরতা হ্রাস করে দেশজ সম্পদের সদ্ব্যবহার করা। |
| ৯ | জনগণের অংশগ্রহণ | জাতীয় জীবনের সকল স্তরে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। |
| ১০ | জাতীয় ঐক্য | জাতীয় সংহতি ও ঐক্য বজায় রাখা। |