কুহেলিকার অন্তরালে - প্রেমের গল্প

কুহেলিকার অন্তরালে
______________
১.
বিয়ে বাড়ি। তাই হইচইও হচ্ছে
বেশ। আজ কনের গায়ে হলুদ।
আত্মীয়-স্বজন যাদের আসার কথা
মোটামুটি সবাই এসে গেছে। কনে
হলো আমার মায়ের চাচাত বোন।
সহজ কথায় চাচাত খালা। উনারা
আট ভাই বোন। এখনকার সময়ে এত
বড় পরিবার সচরাচর দেখা যায়
না। বংশের বাতি জ্বেলে রাখার
চেষ্টাতেই পরিবারের আকার বড়
হয়ে গিয়েছে। বিয়ে বাড়ি আমার
তেমন ভালো লাগে না। তবে
নানা-নানীকে আমার খুব পছন্দ।
উনাদের মুখে হাসি ফোটাতেই
বলতে গেলে একরকম আসা এখানে।
বাড়ির এককোণে চেয়ার পেতে
আমার বসার ব্যবস্থা করা
হয়েছে। চাদর গায় বসে রয়েছি।
হাতে কাসার গ্লাস; তাতে
খেজুরের রসের সাথে একগাদা
মুড়ি ভেজানো। রসে ভেজা মুড়ি
শেষ হওয়ার সাথে সাথে আবার
মুড়ি নিয়ে রসে ভিজিয়ে রাখছি।
প্রিয় খাবারের সংস্পর্শে
থাকায় একাকীত্ব তেমনটা গ্রাস
করছে না। একটু পরে রং
মাখামাখি শুরু হবে। এলাকার
যুবতী মেয়েরা সবাই ধরতে
গেলে খালা সম্পর্কীয়। তাই এই
ঘটনাটা তেমন কোন ব্যাপার না
আমার কাছে। চারদিন ধরে
এখানে রয়েছি, প্রতিদিনই এই
সময়ে রং মাখামাখি শুরু হয়।
শেষ হয় দুপুরে। শেষ হয় বলা
যাবে না। উৎসুক ছেলে/মেয়ে
গোসল করার পরেও রং লাগিয়ে
দেয় একে অপরকে মাঝে মাঝে।
তখন সবকিছু ভুলে আবার শুরু হয়ে
ছেলেদের সাথে মেয়েদের যুদ্ধ
যুদ্ধ খেলা। আমি অংশগ্রহণ করতে
না পারলেও বেশ বিনোদিত হই।
হঠাৎ করেই আমার দুই চোয়ালে
ঠাণ্ডা পরশ অনুভব করি। কোমল
স্পর্শে অসাধারণ অনুভূতি
জাগলেও একটু পরে বুঝতে পারি
আমাকে রং মাখানো হয়েছে।
গুণবতীর চেহারাও চলে এসেছে
সামনে। পুরো মুখ জুড়ে হাসি
খেলে যাচ্ছে! নানা-নানীর
সবচেয়ে ছোট আর চঞ্চল মেয়ে
সাবিয়া। আমার চেয়ে এক ব্যাচ
সিনিয়র।
-কী বোনপো, ভেবেছিলে কেউ রং
মাখাবে না?
-না, মানে তুমি এটা কেন
করলে?
-বোকা ছেলে। চলো আজ আনন্দ
করবে মাসিদের সাথে।
আমি ইতস্তত বোধ করছিলাম।
খালা তো! বেয়াই বেয়াইন
সম্পর্ক হলে না হয় কথা ছিল।
তবুও বাড়ির রাজকন্যার আদেশ
বলে কথা। নানী বারান্দায় বসে
আমাদের কাণ্ডকারখানা
দেখছিলেন আর মুচকি মুচকি
হাসছিলেন। আমার চোখে ছিল
উনার নিকট বাঁচিয়ে দেওয়ার
আকুতি। উনি ধরে ফেলেছিলেন।
কিন্তু ইশারায় এমন ভাব নিলেন
যেন কিছুই করার নেই।
আমি এবার প্রথমবারের মতো
নিজ থেকে মুখ খুললাম।
-মাসিদের সাথে আর কী আনন্দ
করব?
সাবিয়া আমার হাত ধরে উঠোন
পেরিয়ে কলপাড়ের পাশ দিয়ে
যাচ্ছিল। আমার কথা শুনে হঠাৎ
কলপাড়ের ভেতরে নিয়ে গেল
আমাকে। আমি কী হচ্ছে, এমন
করছ কেন এসব বলে পার পাওয়ার
চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু মাসি
তা শুনবে কেন! ভেতরে নিয়ে
আচমকা আমাকে চুমু খেয়ে বসল।
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।
আমাকে অবাক করে দিয়ে
সাবিয়া আবার কথা বলা শুরু
করল।
- সম্পর্কে বেয়াইন হলে না হয়
সর্বোচ্চ এটুকুই পেতে। এটাকেই
আনন্দ বলে মনে কর তো?
-আমি সরি।
-আরে! সরি কিসের? তুমি
ইনস্ট্যান্ট আনন্দ চাচ্ছিলে,
আমি হেল্প করলাম।
-সাবিয়া খালা, তোমার সামনে
আমি আর কোনোদিন মুখ উঁচু করে
কথা বলতে পারব না।
-সেটা পরে দেখা যাবে। এখন
চলো, আমার বান্ধবীদের রং
মাখাতে হবে।
প্রিয়২৪.কম
২.
পড়ন্ত বিকেল। সূর্যের কিরণ
সকালের মতো আরামদায়ক হলেও
শীতের কুহেলিরা ঠাণ্ডার ভয়
ধরিয়ে দিতে শুরু করেছে এখন
থেকেই। সকাল থেকে ঘটে চলা
ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করতে
গিয়ে আমার উনিশ বছরের মাথা
ইতোমধ্যেই ধরে গেছে। এমন
কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে
কোনোদিন আমাকে যেতে হয়নি।
সাবিয়ার আমাকে চুমু খাওয়ার
কোনো দরকার ছিল? একেবারেই
অপ্রয়োজনীয় একটা কাজ ও করে
বসেছে। আর আমাকেও লজ্জার
মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
জানাজানি হলে বাড়ির কাউকে
আমরা দুজনের কেউই মুখ দেখাতে
পারব না।
-বোনপো, ও বোনপো। ঘরের মধ্যে
এত কিসের কাজ? গার্লফ্রেন্ডের
সাথে কথা হচ্ছে নাকি?
সাবিয়া আবার এসেছে। সকাল
থেকে দুপুর পর্যন্ত ও আর ওর
বান্ধবীরা আমাকে আচ্ছামতো রং
মাখিয়েছে। এখন আবার কী করবে
ও জানে। ভেতরে আসতে বলতে
ইচ্ছে করছে না। তবুও না আসতে
বললে কেমন দেখায়।
-আসুন ছোট মাসি।
সাবিয়া ভেজানো দরজা খুলে
ভেতরে ঢুকল। আমি একপাশ হয়ে
শুয়ে ছিলাম। হাতে ফোন ছিল।
আমার হাত থেকে ওটা কেড়ে
নিয়ে বলল,
-চলুন সাহেব। বিকেলে শুয়ে
থাকতে হয় না।
-কোথায় যাব?
-এখান থেকে যতদূর পা চলে।
-আমার হাঁটতে বেশি ভালো
লাগে না।
-আচ্ছা, বাবা। ঠিক আছে। বের
হও এখন।
একটা চাদর কাঁধে নিয়ে
বেরিয়ে পড়লাম। সাবিয়ার
হাতে বেশকিছু প্যাকেট দেখা
যাচ্ছে। অত উৎসাহ দেখালাম
না। যা থাকে থাকুক। পরিবেশটা
সুন্দর হওয়াতে প্রেমিক প্রিয়২৪.কম
প্রেমিকারা জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে
বেড়াচ্ছে। সাবিহা আর আমি
পাশাপাশি হাঁটছিলাম। আমার
বেশ লজ্জা লাগছিল। কারণ
রাজকন্যার মতো চেহারার এক
মেয়ে আমার সাথে হাঁটছে আর
যুগলবন্দী ছেলেগুলো আমার দিকে
হিংসা হিংসা চোখে তাকাচ্ছে।
-ছোট মাসি..
-হু..
-আমার লজ্জা লাগছে।
-কেন, বোনপো?
-সবাই কেমন কেমন ভাবে
আমাদের দিকে তাকাচ্ছে।
-ওদের চোখ রয়েছে ওরা
তাকিয়ে থাকুক।
-ওরা অন্যকিছু ভাবছে।
-ধুর, বোনপো। তুমি বড্ড
জ্বালাও।
-আচ্ছা, আমরা কোথায় যাচ্ছি?
-বেহেশতে...
(চলবে)t

Total Pageviews