ক্লাস ৫ এ পড়ুয়া ছেলের জীবন কাহিনী
# ঠিক ১৪ বছর আগের কথা , আমার বাবা,কোন কারনবশত
আমাদেরকে রেখে, রাজশাহী থাকেন, আমার মা থাকে
আমার নানুর কাছে, আমার নানু বাড়ী ঢাকা,,আমি থাকি
আমার দাদির কাছে, ক্লাস ৫ পর্যন্ত পড়াশুনা আমি
দাদির কাছে থেকেই করি,
আমি ক্লাস ৫ এ পরীক্ষা দিলাম ১ মাস ছুটি তাই
দাদিকে অনেক কষ্টে রাজি করালাম আমি,আমাকে
যেনো ঢাকা যেতে দেয়,,,তারপর আমি একজনের সাথে
ঢাকায় আসি,, আমার মা আমাকে দেখে অনেক খুশি
আমিও খুশি আর খুশি হবোনা কেন? পুরো ১ বছর পর মাকে
দেখছি,, আমার মা কাজ করতো গার্মেন্টস এ সকাল ৮
টায় যেতো আর ২ টায় একবার আসতো আবার ৪ টায়
যেতো, রাত ১০ টায় আসতো,,এমন করেই ৪,৫ দিন কেটে
যায়, হঠাৎ একদিন রাতে দেখি মাকে কিছু মানুষ ধরাধরি
করে বাসায় নিয়ে আসে, আমি আর আমার ছোট বোন
কান্না করে দিলাম, আর জিজ্ঞেস করছিলাম কি হইছে
আমার আম্মুর?, কেউ আমাদের কিচ্ছু বলছেনা,,এমন সময়
একজন বললো,তোমার আম্মু রাস্তায় পড়েছিল,, আমরা
ওনাকে পরে থাকতে দেখে ডক্টরের কাছে নেই,ডক্টর
বলছে ওনার বড় ধরনের রোগ আছে ওনাকে বড় ডক্টর
দেখাতে,,তুমি তোমার বাবাকে বলো তোমার আম্মুকে
হসপিটালে নিতে, ,এগুলা বলে সবাই চলে যায়,, আমি
আমার নানুকে ডেকে আনি আমার নানু বলে তোর মামা
আসুক দেখি কি হয়,,মামা তখন ছিলো ঢাকার
বাইরে,,ঢাকা আসতে আসতে ৫,৬ দিন লেগে যাবে,,কিন্তুু
আম্মুর যেই অবস্থা,এতো দিন বাসায় রাখা যাবেনা
যেভাবেই হোক আম্মুকে হসপিটালে নিতে হবেই,,যেই
কথা সেই কাজ, পরেরদিন সকালে,আমি একটা কাজের
সন্ধানে বের হলাম, ইসলামপুর কাপড়ের দোকানে একটা
কাজ পেলাম, আমার খালুর বন্ধুর দোকান,, বেতন মাসে
৬০০ টাকা,, আমি কাজে লেগে যাই,,এটা ভাবিনি যে
মাত্র ৬০০ টাকায় আম্মুর অপারেশন করানো যাবেনা,
জাই হোক, এমন করে, কিছু দিন কেটে যায়, পরে ভেবে
দেখি না মাত্র ৬০০ টাকায় কিচ্ছু হবেনা,,তাই আমি
রাতে ও কাজ করতে লাগলাম,, তারপর আমার এক ভাই,...
কারনবশত নাম বলছিনা,....ওনার বাদামতলি ফলের
বিজনেস, আমি ওনার কাছে যাই ওনাকে কিছু বলিনা
আম্মুর বিষয়,,শুধু বলি আমার কাজ লাগবে,,ভাইয়ার ও অই
সময় লোক দরকার ছিলো তাই আমাকে রেখে দেয়,,বেতন
৯০০ টাকা,, আমার চলবে,কারন অই সময় আমার ৯০০ টাকা,
৯ হাজার এর কাজে দিচ্ছে,,। আমি রাতে ও কাজ করি
তাতে প্রতিদিন প্রায়,৩০০-৪০০. টাকার মতো পাই,
এমন করে ৩ মাস কেটে যায়,,আমি এই ৩ মাসে ২০ হাজার
টাকা জমা করি,, এই ৩ মাস আম্মুকে ঔষধের উপর রাখা
হয়,
প্রিয়২৪.কম
আমার কোন কাজিন আমাকে হেল্প করেনি,,শুধু সান্তনা
দেয়া ছাড়া,,,আমি মনে মনে ঠিক করলাম এবার আম্মুকে
হসপিটালে ভর্তি করবো,,আমি ভাইয়ার থেকে ১ দিনের
ছুটি নেই,,তারপর আম্মুকে হসপিটালে নিই,,আম্মুকে
হসপিটালে ভর্তি হতে হলো,, ডক্টর বলছে,অপারেশন
করতে হবে,,আমি জিজ্ঞেস করলাম কতো টাকা লাগবে
অপারেশন করাতে? ডক্টর,বললো, এই ধরো, ৭০- ৮০ হাজার
টাকা লাগবে,কথা টা শুনে আমার মাথায় বজ্রপাত হওয়ার
অবস্থা ,কি করবো আমি? কিচ্ছু ভেবে পাচ্ছিনা, যতো
যাই হোক, আম্মুকে বাঁচাতেই হবে,,,এমন অবস্থায় আব্বু
আসে,,আব্বু ও কিছু না জেনে আম্মুকে হসপিটালে ভর্তি
করে,,
আব্বুর কাছে ছিলো, ৩০ হাজার টাকা,আমার কাছে ২০
হাজার মোট ৫০ হাজার হইছে,,এখনো আরো ৩০ হাজার
লাগবে,,,এদিকে ডাক্তার বলছে ইমারজেন্সি অপারেশন
করাতে,,,
কোন উপায় না পেয়ে,,আমি আমার বসের কাছে
যাই,,মানে আমি যার কাছে কাজ করি,ওনাকে সব বল্লাম
উনি আমাকে ২ হাজার টাকা দিয়ে বল্লো, জে তুই ওমক
এর কাছে জা,,আমি ওনাকে বলে দিচ্ছি,,,নাম টা বল্লাম
না,,,আমি ভাইয়ার কথা মতো সেই লোকের কাছে
যাই,সেই লোক আমাকে ১ হাজার টাকা দিলো,,, টাকা
টা নিয়ে আমি ভাইয়ার কাছে যাই,,ভাইয়া যা বলার বলে
দিলো,, এখন সব কিছু আমার হাতে,,আমাকে বাদামতলির
সবাই অনেক আদর করতো, কারন আমি তখন অনেক ছোট
ছিলাম, আবার সবার কথা ও শুনতাম,, পরে এক মামা
আমাকে বুদ্ধি দিলো,, বুদ্ধিটা এমন,, দেখ রাফি,তুই
এখনো অনেক ছোট,কেউ তোকে এতো টাকা দিবেনা,,তুই
একটা কাজ কর,সবার কাছে যা আর তোর আম্মুর কথা
বল,,দেখবি সবাই তোকে হেল্প করবে,,,কথাটা শুনার পর
আমার আমি কিছুক্ষন অবাক হয়ে বসে ছিলাম,, কিছু
বলতে পারছিলাম,, তারপর ভাবি,সম্মানের চাইতে আমার
মা আমার কাছে বড়,,,
আমি নেমে পড়ি রাস্তায়,,আমার পরিচিতি যতো মানুষ
ছিল সবাইকে বলি সবাই আমাকে হেল্প করে,,কেউ ২
টাকা তো কেউ ২০০ টাকা,,,,আমি ভুলিনি কাউকে যারা
আমার আম্মুকে বাঁচাতে আমার পাশে দাড়িয়েছিল,,,,বল
তে পারেন আমি আমার আম্মুকে বাঁচাতে ভিক্ষা করতে
নেমেছিলাম,,, হ্যা আমি সেই রাফি,,যে তার মাকে
বাঁচানোর জন্য রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করেছিলো,,,
আমি সেই রাফি যে সারা রাত পেপার বিছিয়ে
হসপিটালের বারান্দায় ঘুমিয়েছিল, মাথায় দেয়ার মতো
একটা বালিশ পর্যন্ত ছিলোনা,, আজ ১৪ টা বছর কেটে
গেছে,,আমার মা ও বেঁচে আছে,,প্রতিদিন দুপুর ২ টায়
আমাকে ফোন করে বলে কিরে বাবা বাসায় আসবিনা ?
বাসায় আয় খেয়ে যা বাবা, নিজের দিকে একটু তাকা
বাবা, দেখছিস দিন দিন কেমন কেমন শুকিয়ে
যাচ্ছিস,,আমি বলি,আরে মা একদিন না খেলে কিচ্ছু
হবেনা তুমি খেয়ে নাও,,মা বলে প্রতিদিন তো একি কথা
বলিস,,,আমি ফোন কেটে দেই,,সন্ধায় জখন কাজ শেষ
করে বাসায় আসি,,মা বলে ফ্রেশ হয়ে আয় আমি ভাত
দিচ্ছি আমি বলি খাবনা না ক্ষিদা নেই, মা বকে,আমি ও
মনে মনে হাসি
মা যখন বকা দেয়,,,সকাল বেলা নাস্তা করিনা আমি শুধু
চা বিস্কুট খেয়ে কাজে যাই। আম্মু বকে,,,,এমন কতো
কারনে অকারনে আম্মু বকে যার হিসেব নেই,,,,আজ আমি
আমার আম্মুকে মা বলে ডাকতে পারি তাদের জন্য যারা
আমাকে হেল্প করেছিলো, কোনদিন ভুলবো না
আপনাদের,,,
প্রিয়২৪.কম
একটা কথা না বল্লেই নয়,,আমি যে মানুষের কাছে হাত
পেতে মায়ের অপারেশন করাইছি, সেটা আজও আমার
পরিবারের কেউ জানেনা,,,আরেক টা কথা যেই ছেলে
মাত্র ২ টাকার জন্য একদিন হাত পেতেছিলো, সেই
ছেলে আজ প্রতিমাসে কমকরে হলেও ২০ হাজার টাকা
ইনকাম করে,,আজ আমি আমার বাবা মা ২ বোন,কে নিয়ে
আমি অনেক ভালো আছি,,,,,,
হয়তো আপনারা আমার গল্প টা পড়ে মনে মনে ভাবছেন,
এগুলা কেন বল্লাম? , হ্যা, এগুলা বলার কারন আছে আর
কারন টা হলো কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধুর মা মারা
গেছেন, আল্লাহ্ তাকে বেহেস্ত নছিব করুক,,,,হয়তো
অনেকেই চিনবেন আমার সেই বন্ধুকে,,বন্ধুর নাম মিন্টু,
একদিন রাত ১০ টায়- আরিফ আমাকে ফোন করে বলে,
মিন্টুর মা মারা গেছে, আমি আর আমার কিছু বন্ধু সেই
রাতেই ফরিদপুর যাই ভোর ৪.৩০ এ আমরা মিন্টুর বাড়িতে
যাই,,সব কিছু ঠিক ছিলো আসল প্রবলেম টা আসে তখন
যখন আন্টিকে আমরা কবরে শুয়ালাম,, আমার মনে তখন,
এটাই আসে, আমার মাকে ও তো একদিন এইভাবে রেখে
আস্তে হবে অন্ধকার কবরে,,,এই ভেবে কান্না আসছিল
তবে আমি কান্না টা করতে পার ছিলাম না মিন্টুর জন্য
কারন মিন্টুকে সামাল দিতে হবে আমারি,,,,,আর কিছু
বলছিনা খারাপ লাগছে বলে , শুধু এটাই বলি,,বাবা মার
মনে কষ্ট দিবেন না কেউ,,বাবা মা যে কি সেটা সময়
থাকাকালিন বুঝে নিন,, নয়তো সারাজীবন পস্তাতে
হবে,,,যখন দেখবেন আপনার অনেক টাকা পয়সা,কিন্তু
বাবা মাকে খাওয়াতে পারেননি কিছুই, ,,,,,
,,জানিনা গল্প টা কার কেমন লাগবে,,,, যদি কারো
খারাপ লাগে তো আগেই সরি বলছি,,
Home »
ভালবাসার গল্প - Bangla Love Story
» ক্লাস ৫ এ পড়ুয়া ছেলের জীবন কাহিনী