দিনটা ছিল ১৪ ই ফেব্রুয়ারি,।বিশ্ব ভালবাসা
দিবস।দিবসটি যথানিয়মে রুমনদের ক্যাম্পাসেও
পালিত হচ্ছে।পাঠাগারের নীরবতা ভাঙলে
যেমন অনেকটা হৈ চৈ ভরা কোন জনসভায়
মাইকিং এর মত লাগে,তদ্রুপ রুমনদের
ক্যাম্পাসটাতেও পাঠ দানের স্থানগুলো বিশ্ব
ভালবাসা দিবসের কাতিরে হয়ে যায় প্রেমিক-
প্রেমিকার রোমান্টিক দৃশ্যে ভরপুর।
ক্যাম্পাসে নাকি ভালবাসা দিবস উপলক্ষ্যে
একটি ভালবাসার ঐতিহ্যবাহক অনুষ্ঠানের
আয়োজন করা হয়েছে।যেখানে থাকবে সব
রোমান্টিক কথা-অভিনয়ের কাজ কারবার।
অনুষ্ঠানটি ঠিক বিকাল 2:30টায় শুরু হবে
ক্যাম্পাসের শেষ বর্ষের ছাএদের পরিচালনায়।
সবার উপস্থিতি বাধ্যগত,নোটিশ আগেই
ঠাঙ্গানো হয়ছে।
রুমন একজন ভদ্র,লাজুক টাইপের ছেলে ।তার
লাজুকতার পরিমাণ এতবেশি যে, সে ক্লাসে
কোন মেয়ে তো দূরের কথা, ক্লাসে
ম্যাডামের সাথে কথা বলতে পর্যন্ত লজ্জায়
কাতর হয়ে বিরক্তবোধ করে।ক্লাসে তার
সহপাঠীরা তার সাথে অনেক ঠাট্টা মসকারা
করে শুধুমাএ তার এই লাজুকতা নিয়ে।এই ঠাট্টা
মশকারা করে তারা পৈশাচিক আনন্দ পাই।তবু
তার অভ্যাসের কোন পরিবর্তন নাই।
ভালবাসা তার জন্য যেন অসস্তিসূচক
পাগলামি মনে করা ছাড়া আর কিছু নই। তার
উপরে ক্যাম্পাসে ভালবাসা দিবসের অনুষ্ঠানে
সকলের ন্যায় রুমনের বাধ্যতা উপস্থিতি যেন
তার জীবনে অন্যতম বাজে অনুভূতির সময় হবে
বোঝাই যায়।
রুমন দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবে শুয়ে
নিদ্রা যাপনের চেষ্টা করছে তক্ষনি, বাইরে
থেকে ইমরানের দরজা ধাক্কানো আওয়াজ
এবং ডাক রুমন ক্যাম্পাসে চল!
সময়টা অনেক হয়ছে।অনুষ্ঠান শুরু হতে আর
মিনিট খানেক বাকি।নিরুপায় হয়ে রুমন
ইমরানের সাথে চলল অনুষ্ঠান দেখবে বলে।
ইমরান তো আনন্দে পাগল প্রায়।
কেননা,রুমনের অজান্তে তারা আজ এক
অদ্ভুদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে পুরো
ক্যাম্পাসের সকলের সহযোগিতায়।
রুমনের লাজুকতা ক্ষানিকটা হলেও গিলবে বলে
ক্যাম্পাসের এই আয়োজনের অন্যতম
উদ্দেশ্য ।প্রথম থেকে শেষ বর্ষ অব্দি ছেলে
মেয়ে সকলের ভালবভাবে জানা আছে যে,লাজুক
মুখী রুমনের কান্ড-কলাপ।তাই, বন্ধুদের
অকৃএিম ভালবাসার কাতিরে সবার এই
পরিকল্পনার প্রয়াস।
কারণ,রুমন শেষ বর্ষে পড়ে, তবুও সেই হতে
আজ অব্দি কারো সাথে মুক্ত মনে মিশে
না,কথা বলে না।বড়,ছোট,শিক্ষক এবং
সহপাঠিদের একই আবদারি নালিশ এই যে,রুমন
আমাদের সাথে কেন মিশে না,কেনই বা কথা
বলতে চাই না।
রুমনের পরিবারসহ রুমনকে নিয়ে এই লাজুকতার
যন্এনায় ভোগছেন।ডাক্তার বলে কিনা,সবার
উচিত তাকে সৌহার্দপূর্ণ আচরনের মাধ্যমে
স্বাভাবিকতায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব শুধুমাএ
বন্ধুদের দ্বারা,এছাড়া রুমনকে এমন এক
পরিস্থিতিতে ফেলা উচিত সে তার জীবনের
সব জমা সুখ,দুঃখের কথা অনায়াসে বলতে
পারে। যাতে সে তার ছোট বেলা হতে আজ
অব্দি একঘরে ভাব দূর করতে পারে মন থেকে।
তাই রুমনের পরিবারের আকুল আবদার- রুমনের
বন্ধু ইমরান সহ সকলের কাছে,তারা যেন
ডাক্তারের কথামত আচরণ করে।তাই
ইমরানদের এই হঠাৎ চমকানো পরিকল্পনার
অন্যতম কারণ।
অনুষ্ঠানের মূল অংশ আরম্ভ হতে চলেছে।
উপস্থাপনায় কে আর রুমনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু
ইমরান।
অনুষ্ঠানে প্রায় সবার উপস্থিতি দেখার মতন।
কারন,সবাই জানে যে আজ কি হতে যাচ্ছে যা-
রুমন মোটেই জানেই না।অনুষ্ঠানের
ধারাবাহিকতায় দু'একটা গান,রোমান্টিক
অভিনয় চোখে পড়ার মত।সবার মনযোগ
গভীরতায় পৌছঁল অনুষ্ঠানের মূল চরিত্ত্র
রুমনের দিকে।রুমনকে পরিকল্পনা মোতাবেক
লটারির মাধ্যমে প্রথম বর্ষের তারেক এর পর
২য় জন ব্যক্তি হিসেবে কিছু
গাওয়া,ভালবাসাকে নিয়ে বলা কিংবা নৃত্য
পরিবেশনের জন্য মঞ্চে আসার বিনীত
আহবান জানানো হল।যে কোন একটা হলে
চলবে।গান,নাচ করবে রুমন? অসম্ভব।আর ঐ
দিকে লাজুক কুমার কোন রকমে হাত পা গুটিয়ে
বসে আছে কবে অনুষ্ঠানের ইতি টানবে সেই
অপেক্ষায়। কিন্তু,তার আজ ছাড় নাই।
প্রিয়২৪.কম
রুমন অসস্তিবোধ করলে পাশের চেয়ারের
সবাই মিলে রুমনকে মঞ্চে ভদ্রতার সাথে টানা
হিচড়া ভাবে তুলে দিল।রুমন আর কি
অনায়াসেই কাদোরে ভাব নিয়ে কাপঁতে লাগল।
কিন্তু,ডাক্তারের কথা মোতাবেক রুমনকে
এমন পরিস্থিতিতে ফেলানো হয়েছে সে মঞ্চে
থাকতে বাধ্য।কারণ, সে ক্যামপাসের বড় ভাই।
সে কিছু না করলে ভালো জানে যে নিজের
অসম্মানি হবে।তাই সে কাপঁতে কাপঁতে
গান,নৃত্যকে টপকিয়ে কিছু বলাকে পছন্দ করে।
সেই তার জীবনের কিছু স্মরণীয় সত্য
ভালবাসার কথা বলল।
১/ছোট বেলা হতে আমি(রুমন) ছিলাম খুব
মেধাবি।যখন আমি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ যায়,তখন
একটা মেয়ে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়।
কিন্তু,আমি বুঝেও তাকে বুঝিনি।আসলে
পারিনি শুধুমাএ পরিবারের কঠোর শাসনের
ভয়ে।সে আমায় ভালবেসে কতই না পাগলামো
করত,এমনকি ছোট্ট বিষয়েও আমার প্রতি
ছিল সিরিয়াস।তার উদাহরণ-আমি যে রংয়ের
কলম দিয়ে লিখতাম কিংবা যত নম্বর বেঞ্চে
বসতাম, সে আমার মতনই লিখত,বসত।
এটা শোনার সাথে সাথে সবাই হেঁসে দিল।
রুমন তা দেখে আরও উৎসাহ পেল এবং তার
প্রেমের গল্পকে আরো বলতে লাগল।
২/ আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে কোন এক
মেয়ে স্ট্যাটাসে কমেন্ট করে।কমেন্ট গুলা
ছিল খুবই রোমান্টিকতার।তাই ,তাকে
ইনবক্সে মানা করে দিই যেন সেই মেয়েটি
আমার স্ট্যাটাস গুলোতে কমেন্টস না করে
শুধুমাএ পরিবারের সদস্যরা তা দেখবে বলে।
৩/কোন একজন মেয়ের সাথে আমি চ্যাট
করতাম রোজিই।আসলে সে হাই বলাতে
আমার চ্যাটিং-এর আরম্ভ।কিন্তু, পরিবারের
ভয়ের তাড়নায় মেয়েটিকে ফেইক বলে চ্যাট
করতে মানা করে দিয়েছিলাম।তাদের কাউকে
আমার সরি বলা হল না।
প্রিয়২৪.কম
সবাই বোঝতে পারে রুমনের এই অবস্থা কেন।
এককথায়,পরিবারের কড়া শাসনের মাএা,বন্দি
ঘরমুখে বসবাসের জন্যে রুমনের জীবনে এই
অভিশাপ।
সবার চোখের কোনে শিশির পরিমাণ
মায়াজালের পানির বিন্দু জমলো।সবাই মঞ্চে
উঠে একের পর এক রুমনের কাধেঁ কাধঁ মিলিয়ে
আলিঙ্গন করতে লাগল সাথে এক একটা দারুন
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে।
রুমন বুঝতে পারল এটাই বুঝি মিলামেশা।এটাই
ভালবাসা।এটাই বন্ধুত্ব।এটাই স্বাভাবিক
জীবন যা আমায় পরিবার দিতে পারেনি কেবল
অভিশপ্ত জীবন ছাড়া।তখন হতে রুমনের
অনুভূতির নতুন অধ্যায় শুরু হল।
Home »
ভালবাসার গল্প - Bangla Love Story
» অনুভূতির নতুন আলিঙ্গন - দিনটা ছিল ১৪ ই ফেব্রুয়ারি