গল্প : পদ্মাবতী......
২য় পর্ব,
লেখক : Aminul Islam......
গতরাতে একটুও ঘুমতে পারিনি,সারা রাত শুধু পদ্মাবতীর কথা ভেবেছি।জানিনা মেয়েটা কেমন আছে? সেই তিন দিন আগে দেখেছিলাম।এসব ভাবছিলাম,
কিরে ঘুম ছাড়েনি,আজ নাকি তোর সেই পদ্মাবতীকে দেখতে যাবি (বাবু)?
ঘুমের মধ্যেই বললাম কত বাজে ( আমি)?
এই তো সকাল সাড়ে আটটা।
চল তাহলে হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা করে বেড়িয়ে পরি।
নারে আমি যাবো না, তোর পদ্মাবতীকে তুই দেখতে যা।
দোস্ত তুই আমার বিষয়ে তো সব জানিস,এই প্রথম যাবো তাদের বাসায়,ভাল করে জানি না।প্লিজ দোস্ত চল।
ওকে,চল তাহলে।
আজকে প্রথম পদ্মাবতীর বাসায় যাবো তাকে দেখতে,সে যেহেতু অসুস্থ তার জন্য তো কিছু নিয়ে যেতে হবে।কিছু আপেল,কমলা,আঙ্গুর এবং জুস কিনলাম পদ্মাবতীর জন্য।
তার পর রিকশা নিয়ে তাদের বাসার সামনে গেলাম।
আরে এ তুই কোথায় নিয়ে আসলি,এটাই কি তাদের বাসা,তোর মনে আছে তো? এটা দেখে মনে হচ্ছে কোনে ফুলের বাগান (বাবু)।
এটাই তো,সেদিন পদ্মাবতী এই বাসাতেই গিয়েছিলো( আমি)।
দোস্ত দেখেছিস বাসাটা কিন্তুু আসলেই অনেক সুন্দর।
ঠিক বলেছিস,আমার কাছেও সুন্দর লাগছে।
এবার চল তাহলে, যাবি না এখানেই দাড়িয়ে থাকবি?
ঠিক আছে চল যাই,বাসার গেটে দাড়োয়ান দেখছি,নিশ্চই ভদ্রলোকের বাড়ি।
তাহলে চল দাড়োয়ানকে বলে দেখি বাসার ভেতরে যেতে দেয় কি না?
চল তাহলে,
ধুর বাসার মালিকের তো নাম জানি না।
দোস্ত তুই গিয়ে একটু কথা বল(আমি)।
কি বলিস, তোর পরিচিত তুই বল,আমি পারবো না( বাবু)।
ওকে,এই যে মামা আমি পদ্মাবতীর বন্ধু,শুনলাম সে অসুস্থ, তার সাথে দেখা করতে আসছি।
ঠিক আছে দাড়ান,আগে শুনে আসি,আপনের নামটা বলেন (দাড়োয়ান) ?
বলেন গিয়ে,আমিনুল দেখা করতে এসেছে।
দাড়োয়ান চলে গেল, যানি না কি হয়।আমরা দু জন দাড়িয়ে আছি
হঠাৎ দেখলাম দাড়োয়ান দৌড়ে এসে গেট খুলে দিল।
মামা ভুল হয়ে গেছে,আসলে আপনারা নতুন তো, তাই চিনতে পারিনি ( দাড়োয়ান)।
আচ্ছা ঠিক আছে,বুঝলাম তাকে বকেছে আমাদের দাড়িয়ে রেখেছে তাই।বাসার মধ্যে যেতেই পদ্মাবতী আর তার মা চলে আসলো।আমি তো ভাবছিলাম কলিংবেল,তার পর দাড়িয়ে থাকতে হবে,কিছুক্ষণ পরে এসে কেউ দরজা খুলে দেবে।যাই হোক,
সালাম দিলাম,আন্টি কেমন আছেন?যদিও তারা হিন্দুধর্মালম্বী।
আপনি কেমন আছেন,পদ্মাবতীকে বললাম (আমি)।
আন্টি মুচকি হাসি দিয়ে বললো ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?
হঠাৎ পদ্মবতী বললো,আমি ভাল আছি,আপনি?
এই তো ভালো আছি।
আমার কথা গুলো শুনছিল আর সে হাসছিল।সেই চির চেনা হাসি,প্রথম যেদিন দেখেছিলাম।
হঠাৎ আন্টি বললো তোমরা বাসার ভেতরে আসো,তার পর কথা বলবো।
আমরা যা কিছু নিয়ে এসেছিলাম,দাড়োয়ান সব বাসার ভেতরে নিয়ে গেল।আমরা তাদের সাথেই ভেতরে গেলাম।
আমাদের বসতে বললো,বসলাম।
ওটা কে?
আন্টি ওটা আমার বন্ধু,বাবু।আমরা এক বাসাতেই থাকি,সেদিন আমার সাথে বাবু আসার কথা ছিল।
ঠিক আছে তোমরা বসে কথা বলো আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।
আমি ভাবতেও পারিনি তারা আমাদের সাথে এত সুন্দর ব্যবহার করবে।
হঠাৎ,
তাহলে এত দিন পরে মনে পরলো ( পদ্মাবতী) ?
না আসলে নতুন বাসা,কিছু কাজ ছিলো,তাই একটু ব্যস্ত ছিলাম।
ও তাই।
এই নাও চা,সাথে কিছু মিষ্টি এবং কিছু ফল।
আন্টি আঙ্কেল কোথায়?
অফিসে গিয়েছে,ফোন করেছি এখনি চলে আসবে।তোমরা তাহলে কথা বলো আমি একটু আসছি।
পদ্মাবতী আমার বন্ধু বাবু,
কেমন আছেন (বাবু)?
এই তো ভাল আছি,আপনি?
ভাল আছি।
তাহলে আপনি কি এখন সুস্থ,ঔষধ খাচ্ছেন?
হা সব ঠিক আছে।
হঠাৎ কলিংবেল,
আন্টি এসে দরজা খুলে দিল,
ঐ তো আঙ্কেল চলে এসেছে,দাড়িয়ে সালাম দিলাম,যদিও তারা....।
আঙ্কেল হেসে বললেন তোমরা বসো।কেমন আছো তাহলে?
জ্বি ভাল আছি,
তোমরা এসেছো এজন্য আমরা খুবই খুশি হয়েছি।
ঠিক আছে তাহলে আজ আসি।
সে কি,তা হয় নাকি,আজকে প্রথম আমাদের বাসায় এসেছো,
খেয়ে তার পর যাবে।
না আঙ্কেল আজ না অন্য দিন আসবো।আসতে দিবে না তবুও সবাইকে বলে, বুঝিয়ে চলে আসলাম।পদ্মাবতী সেই চিরচেনা একটা হাসিয়ে দিয়ে বিদায় জানালো।রিকশা নিয়ে আসছি আর আমরা দুজন তাদের বিষয়ে কথা বলছি,একদিনের পরিচয়ে যে তারা আমাদের এত সন্মান করবে ভাবতেও পারিনি।হিন্দুধর্মালম্বী হলেও তাদের ব্যবহার অনেক ভাল,এটা বুঝেছি।বাসায় এসে গোসল করে, খেয়ে পড়তে বসলাম।কাল দিন পরেই রাজশাহীতে পরীক্ষা আছে।তাই সব কিছু বাদ দিয়ে পড়ছি।
কিরে পড়া শেষ হয়নি চল তারাতারি।
চলে গেলাম পরীক্ষার হলে,অনেক কষ্টে খুঁজে বের করলাম।প্রথমে বাবু তার পর আমি,একই সারিতে।খুব ভাল হয়েছে আমাদের দুজনের সিট পাশাপাশি।
হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন ডাক দিল,ভাইয়া এটা আপনের সিট,বললাম হ্যা।
কিন্তুু একি আশ্চর্যের বিষয় আমার পাশে জানালার ধারে তাকাতেই দেখি সেই পদ্মাবতী।আমি ভাবলাম আজ আমার পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে।
হঠাৎ, কেমন আছেন,এটা আপনার সিট ( পদ্মাবতী) ?
হ্যা,ভাল আছি,আপনি?
এইতো ভাল আছি।
তার পর পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলো,আমার আর বাবুর পরীক্ষা ভালই হলো,তাকেও কিছুটা সাহায্য করেছি।সবাই এক সাথেই বের হলাম হল থেকে।
কেমন হলো পরীক্ষা (আমি)?
ভাল হয়েছে,আপনের ( পদ্মাবতী)?
হয়েছে অনেক ভাল।কথা বলতে বলতে,
কি খবর পরীক্ষা কেমন হলো তোমাদের ( আঙ্কেল, আন্টি)?
জ্বি অনেক ভাল হয়েছে।দেখলাম তারা গাড়ি নিয়ে এসেছে।আমাদের তাদের বাসায় নিয়ে যেতে চাইলো,খুবই ক্লান্ত লাগছিল,তাই কোন রকমে বুঝিয়ে বললাম অন্যদিন যাবো,বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।কাল রেজাল্ট বের হবে।বিকাল চারটায় রেজাল্ট বের হলো,আমরা দুজন তো খুব খুশি আমাদের আন্দন দেখে কে ,আমরা চান্স পেয়েছি।হঠাৎ মনে হলো পদ্মাবতীর খবর কি,ফোন দেই,কিন্তুু ফোন নাম্বার তো নেই।কেমন লাগে,বাসায় গেলাম,পরীক্ষার হলে দেখা নাম্বার চাইলাম না,সেও তো চাইলো না।থাক কাল না হয় তাদের বাসায় গিয়ে খবর নেবো।
হঠাৎ বাবুর ফোন আসলো তার সেই আত্নীয় মারা গেছে,তাকে এখনি বাসায় যেতে হবে।সে চলে গেল,আমার আর কিছু পরীক্ষা আছে তাই থাকলাম।কিছুই ভাল লাগছিলো না।ঠিক করলাম কাল রাজশাহীর পদ্মার পাড়ে ঘুড়তে যাবো।যেই ভাবা সেই কাজ।চলে গেলাম রিকশা নিয়ে।রিকশা থেকে নেমে পদ্মার পাড় দিয়ে হাটছি।বাবুর সাথে ফোনে কথা বলছি,এমন সময় কেউ যেন ডাক দিলো,পিছন ঘুরে দেখি সেই পদ্মাবতী।
দেখলাম তারা সবাই এসেছে,
তোমার রেজাল্ট এর খবর কি?
জ্বি আঙ্কেল আমাদের দুজনেরি চান্স হয়েছে।
পদ্মাবতীকে বলাম আপনার কি খবর?
সে মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,সেই চির চেনা হাসি,আমার চান্স হয়েছে।তাই আমরা সবাই এখানে ঘুরতে এসেছি।আপনের বন্ধু কোথায়?
ও বাসায় গেছে।
তাহলে আজ কিন্তুু আমাদের সাথে থাকতে হবে।
আচ্ছা ঠিক আছে।
তাদের সাথে অনেক কথা বললাম পদ্মার পাড়ে বসে।তার বাবা মা দুজনি ডাক্তার। বেশ কিছুক্ষণ পর তার বাবার কাছে ফোন আসলো এখুনি হাসপাতালে যেতে হবে।
দুঃখিত বাবা তোমাদের সময় দিতে পারলাম না,তোমরা থাকো,আমাকে যেতে হবে,আন্টিও বললো তিনিও চলে যাবেন।তারা গাড়ি নিয়ে চলে গেল।পদ্মাবতীকে বলে গেলে আমাকে নিয়ে বাসায় আসতে।
চলুন নৌকাতে উঠবো,আমার নৌকাতে চড়তে খুব ভাল লাগে (পদ্মাবতী)।
ঠিক আছে চলুন,পড়ন্ত বিকাল পদ্মাবতীকে নিয়ে পদ্মা নদীতে নৌকাতে ঘুরতে অনেক ভাল লাগছিল আমার।সে ফুছকা আর ঝাল মুড়ি পছন্দ করে,তার সাথে ওগুলো খেয়েছিলাম।বেশ মজা লাগছিল।আমরা বেশ কিছু ফটো তুললাম।প্রায় সন্ধে হয়ে আসছিল,
একটা রিকশা নিয়ে রওনা হলাম।
কেমন লাগলো আমার সাথে ঘুরতে আপনের ( আমি)?
জ্বি অনেক ভাল,আচ্ছা আমরা তো একই ইয়ারে পড়ি তুমি করে বলা যায় না ( পদ্মাবতী)?
বললাম আজ আর না কাল থেকে বলবো।কিন্তুু পদ্মাবতীর সাথে পদ্মা নদীতে কাটানো এই সময় আমার সারা জীবন মনে থাকবে।
ও তাই নাকি,
রিকশা থেকে নামলাম।
চলুন বাসার ভেতরে,
না অন্য দিন আসবো,
আপনি তো প্রতিদিন বলেন অন্যদিন।
ঠিক আছে আসবো, এখন তাহলে আসি,
আমি ঘুড়ে দাড়াতেই,
এই যে শুনুন,আপনের ফোন নাম্বারটা দিন,
আমি আমার নাম্বারটা দিলাম।সে তার ফেনে উঠালো।
ঠিক আছে রাত্রে ফোন দেব।
আচ্ছা আজকে আসি তাহলে,
ভাল থাকবেন,
আপনিও।
(বি : দ্র : গল্পটা কাল্পনিক,বাকিটা ৩য় পর্বে)