সেই তুমি - Love story

হঠাৎ করেই পেছন ফিরে তাকালো রুবি। আমি
তাড়াতাড়ি দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে গেলাম।
কিছুক্ষন এদিক-ওদিক তাকিয়ে আবার হাঁটা শুরু করল সে।
.
বেশকিছুক্ষন ধরে ফলো করছি রুবিকে। আমার হাতে
একগাদা গোলাপ। প্রতিজ্ঞা করেছি আজ যে কোন
উপায়েই এগুলো রুবিকে দিয়ে মনের কথাটা বলে দিব।
এককথায় আজই তাকে propose করবো ....
.
আবার ওর পিছন পিছন হাঁটা শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে
দিশাবন্দ ঈদগাহর কাছে উপস্থিত। এমন সময় রুবি আবার
ফিরে তাকালো।
দেখে ফেলল!! না দেখে উপায়ও কি? লুকাবার যে কোন
পথ নেই!!
.
: কি ব্যাপার রনি ভাইয়া(ছদ্মনাম +একজনের প্রিয় নাম)?
-- না, কিছু না তো!!
: কিছু না হলে পিছন পিছন ঘুরছেন কেন? যা বলার বলে
ফেলুন? আর হাতে এগুলো কি?
আমি আমতা আমতা করে বললাম, " আসলে, আমি
তোমাকে......."
: আমি তোমাকে কি? ( ধমকের সুরে বলে উঠল রুবি)
.
রুবির কন্ঠস্বর শুনে আমার সাহস আবার তলানীতে ঠেকল।
মনে মনে আবার নিজেকে সাহস দিলাম, " আজ নেহি তো,
কাভি নেহি।"
.
চোখ দুটো বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললাম," রুবি,
আমি তোমাকে ভালোবাসি।" বলে গোলাপগুলো
বাড়িয়ে দিলাম।
.
: কি? তাহলে আপনার এই মতলব? নিজেকে কখনো
দেখেছেন আয়নায়? চুল কতগুলো শজারুর কাটাঁর মত।
সাইজটা ও তো হাপ সাইজ, তাছারা আপনার বার্জার
রংয়ের মত যে আনকমন কালার আমার তো মনে হয়
আপনাকে আসরের আজানের পরে আর খুঁজেই পাওয়া
যায়না .....কালো ভুত কোথাকার..
.
-- রুবি আমি তোমাকে সত্যিই খুব ভালোবাসি।
: ও তাই! তাহলে আগে নিজেকে পরিবর্তন করুন। নিজেকে
একটু স্মার্ট বানান। আর এগুলো কি?? বাসি ফুল নিয়ে
ভালোবাসার প্রস্তাব দিতে এসেছেন? ফুলগুলোতো আজই
নষ্ট হয়ে যাবে? তার চাইতে প্লাষ্টিকের ফুল আনতেন?
এই আপনার ভালোবাসা........
.
আমি রুবির হাত ধরে বললাম," please, accept me..। আমি
তোমার জন্য সব করব.... please, accept me......."
***
→এই রনি? কি হয়েছে? এমন করছিস কেন?
.
আরে!! এতো দেখি মায়ের হাত ধরে আছি? রুবি কোথায়??
এতক্ষন তাহলে স্বপ্ন দেখছিলাম। যাক বাবা বাঁচা গেল!!
স্বপ্নে reject করেছে, বাস্তবে তো নয়।
.
-- এই রনি, তোর কি হয়েছে রে? ঘুমের মধ্যে বিড়বিড়
করছিস?
: না, মা কিছু না! হয়তো স্বপ্ন দেখছিলাম।
-- হয়েছে, এবার ঘুম থেকে উঠ। রাজাপারা বাজারে
যেতে হবে।
.
মা চলে গেলে রুবিকে নিয়ে আবার ভাবতে বসলাম।
আসলে এ কয়েকটা দিন রুবিকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবছি
...
সে কখন মাদ্রাসা যাবে ..কখন আমাদের পুকুরে আসবে
...এক কথায় সারাক্ষণ শুধু তাকে দেখার জন্যই বেকুল হয়ে
থাকি......
.
রুবি আমাদের সামনের বাসায় থাকে। এবার আমাদের
এলাকার একটা দাখিল মাদ্রাসায় ক্লাস 8 এ পড়ে।
দেখতে খুব একটা খুব একটা আহামরি সুন্দরী না হলেও,
চেহারায় খুব একটা মায়া আছে।
ওরা আমাদের পাড়ায় এসেছে মাস খানেক হলো। ওকে
দেখার পর থেকেই ভালো লেগে যায়। সেই থেকে আজ
পর্যন্ত অনেক চেষ্টা করেছি মনের কথা বলার, কিন্তু শেষ
পর্যন্ত সাহস করে আর বলা হয়নি।
.
না অনেক হয়েছে! আজকে এই Happy proposed day তে এর
একটা বিহিত করতেই হবে।
.
মনস্থির করে ফেললাম, আজই রুবিকে বলে দিব। মুখ ধুয়ে
তৈরি হতে লাগলাম।ঘরে আটা ময়দা পাওডার যা আছে
সব মুখে লাগালাম যাতে করে আজ আমাকে আর কালো
ভুত বলতে না পারে ..। চুলগুলো স্পাইক করতে যাবো, হঠাৎ
স্বপ্নের কথা মনে পড়ল!!
.
। বের হতে যাবো এমন সময় আবার মায়ের ডাক,
→ কিরে, বাজারে যাবি না?
-- না, আজকে বাজারে যেতে পারবো না? কাল যাবো......
→ তাহলে একেবারে কালকেই ভাত খাবি!!
-- চলবে......
.
বাসা থেকে বের হয়ে এলাম। পেছনে তাকালে দেখতে
পেতাম মায়ের অবাক করা দৃষ্টি, কারণ আমাকে তো
কখনো এইরুপে দেখেনি!!আজ যেভাবে আটা ময়দা মাখছি
অভাক না হলেও হইবো...
.
দোকান থেকে ৭টা প্লাষ্টিকের গোলাপ কিনে বাড়ির
সামনে খেজুর গাছের নিচে দাঁড়িয়ে রইলাম।
প্লাষ্টিকের কেনার পেছনেও স্বপ্নের হাত আছে। এই
গোলাপ নষ্ট হবেনা কখনো।
.
বেশকিছুক্ষন পর দেখলাম রুবি আসছে। সাথে আরো
তিনটা মেয়ে । আমিও এগোতে যাবো এমন সময় দেখি
আমাদের পাড়ার বগা(ভাল নাম আনোয়ার) রুবির সামনে
গিয়ে দাড়াঁল। তার হাতে কিছু ফুলও দেখা যাচ্ছে। কি
ব্যাপার, কি হচ্ছে এসব??!!
.
বগা ফুলগুলো রুবিকে দিল। এরপরই বগার গালে রুবির হাত
পড়ার আওয়াজ। বুঝতে পারলাম বগা নিশ্চয়ই রুবিকে
প্রপ্রোজ করেছে, তাই বেচারার এই দশা!!
হয়েছে। আজ আর আমার হিরোগিরি বা রোমিওগিরি
কোনটাই চলবে না!! আটা ময়দা কোনটাই আর কাজে
লাগলো না। কেটে পড়াই ভালো।
.
: রনি ভাই! একটু এদিকে আসুন তো......
.
এই যা! রুবি ডাকছে.........
কি আর করা,গেলাম তার কাছে। বগা তখনও দাঁড়িয়ে,
বেচারা হতভম্ব অবস্থায় আছে এখনো। মনে মনে বললাম,
বেটা হয়তো আমার চড়টাই তোর কপালে জুটেছে!!
.
: রনি ভাই, দেখুন না....এই ছেলেটা আমাকে প্রপোজ
করতে আসছে। কি সব আজে বাজে ছেলে আপনাদের
পাড়ায়!!
-- কিকি রে বগা!! এমন করলি কেন
কি রে বগা!! এমন করলি কেন? ও তো তোর ছোট বোনের
মতই।
.
বগা কিছু না বলে হা করে আমাদের কথা গিলছে, চড়
খেয়ে বেচারার বাকশক্তি হয়তো সাময়িক লোপ
পেয়েছে।
.
বগাকে উদ্দেশ্য করে রুবি বললো, " রনি ভাইকে দেখো।
উনি কত ভালো!! এতদিন এখানে আছি কখনো আমাকে
ঐসব নজরে দেখে নাই। সবসময় আমার বড় ভাইয়ের মত
থেকেছে। রোমিও হতে আসেনি। উনার মত ভাই পাওয়া
অনেক মুশকিল।"
.
হায় হায়!! রুবি কি বলে এসব!! .....আমাকেশেষ পর্যন্ত
ভাইয়া বানিয়ে দিল!!
.
: তো ভাইয়া, প্লাষ্টিকের ফুল নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
-- বাসায় নিয়ে যাচ্ছি, ফুলদানিতে দিব.....
: ও, আচ্ছা। চলি তাহলে ভাইয়া। ভালো থাকবেন.....
.
রুবি চলে যেতে লাগল। আর আমি অসহায় দৃষ্টিতে
তাকিয়ে রইলাম। আর বগা, সেতো আপাতত মানসিক
ভাবে বিপর্যস্ত!!
.
কি থেকে কি হয়ে গেল! এসেছিলাম রোমিও হতে,
বানিয়ে দিল ভাইয়া। বাংলালিংকের বিজ্ঞাপনের
ডায়ালগটা মনে পড়ে গেল......
.
" এ জগতে হায়, কে ভাইয়া হতে চায়!!"
.
যাক শালা আমার দ্বারা আর কিচ্ছু হবেনা ....যেই
জায়গায় আমার হাইস্কুল ফেন্ড + কাজিন # তানজিনার
মেয়ের প্রথম জন্মদিন আসছে 10 তারিখ।আর শালা সেই
জায়গায় আমি......!!!!আজ প্রর্যন্ত কাওকে প্রোপোজই
করতে পারলাম না। বাচ্চা থাক দূরের কথা প্রেম
প্রস্তাবটাই দিতে পারলাম না।
.
.
.
.থেত শালা ... , কি ভাবছি এসব! ভাইয়া কেন হব? আবার
চেষ্টা করতে হবে। পরবর্তী মিশনে নামার আগে পূর্ণ
প্রস্তুতি নিতে হবে। ভাবছি আমাদের পাড়ার লাভগুরু
# নয়ন ভাইয়ের কাছে যাবো।
দেখি উনি কোন নতুন ফর্মুলা দিতে পারেন কিনা...........
.......!!
.
.
.
(((সত্যি বলতে কি, রুবির প্রতি অনেকটাই ভালোলাগা
থাকার কারনে,,আংশিক সত্য এবং কাল্পনীকতা নিয়েই
গল্পটা লিখা। আর এই ভালোলাগাকে উদ্দেশ্য করেই
দীর্ঘদিন আগে লিখাটা প্রথমবার পোষ্ট করেছিলাম।
কিন্তু আবারো তাকে উদ্দেশ্য করেই আজ আবার
রিপোষ্ট করলাম। এখানে শুধু পার্থক্য একটাই ,তখন সে
ছিল,, কিন্তু কাল সন্ধার পর থেকে অর্থাৎ এখন,, সে আর
নেই। চলে গেছে অনন্তকালের জন্য উপারে।দোয়া করবেন
ওর জন্য)))

Last 7 Days Visitors