আমি যখন কলেজে নতুন, তখন মীমকে আমার ভাললাগে

"যে যেমন তার জীবন সঙ্গীও তেমন"
•••
আমি যখন কলেজে নতুন, তখন মীমকে আমার ভাললাগে।
মীম দেখতে যেমনই থাক, মীমের চোখ দুটো ছিল মায়াবী।
ওর চোখ দেখেই আমি ওর প্রেমে পড়ে যাই। কারন মীম
বোরকা ছাড়া বাইরে বের হতোনা। শুধু চোখ দুটো দেখেই
আমি মীমকে ভালবেসে ফেলি।
.
একদিন মীমকে পিছন থেকে ডাক দিলাম..
--এক্সকিউজমি..!
--আমাকে ডাকছেন..? (পিছন ফিরে বললো মীম)
--জ্বী, আপনাকেই। এখানে আপনি ছাড়া আর কেউ আছে
নাকি..?
--বলেন, কেন ডাকছেন।
--আপনি কি এই কলেজের ছাত্রী..?
--জ্বী.. সেকেন্ড ইয়ার।
--আমি ফাষ্ট ইয়ারে। নতুন তো তাই আপনার একটু হেল্প
চাই..!?
--বলেন কি হেল্প করতে পারি..!
কি বলবো, ভেবে পাচ্ছিলামনা। সেকেন্ড ইয়ারের কথা
শুনেই সব উল্টা পাল্টা হয়ে গেল। তাই কথা না বাড়িয়ে
বললাম..
--থাক আরেকদিন বলবো। মাইন্ড করবেননা প্লিজ...!
--না ঠিক আছে।
--আপনার নামটা..??
--মীম..
--আমি ফাহিম। ওকে বাই..
--আল্লাহ্ হাফেজ..
.
আমি নিজেই নিজেকে গালি দিলাম.. "শালা মাইয়া আর
খুঁইজা পাইলিনা, শেষ পর্যন্ত সিনিয়র মাইয়ার প্রেমে
পড়লি.! এখন ক্যামনে কি হইব..!"
আরে যা হবার হবে, বেশি তো সিনিয়র না। মাত্র তো এক
বছরের সিনিয়র। ক্যান অভিষেক বচ্চন দুই বছরের বড়
ঐশ্বরিয়াকে বিয়ে করছেনা..! আমাদেরও হবে, সমস্যা
কি..!
একা একা হাসছি... এখনও প্রপোজই করতে পারলামনা,
অথচ বিয়ে পর্যন্ত চইলা গেছি! হা..হা..হা..!!
.
আমি ভাবতে লাগলাম কি করে কি করা যায়..! কোন
ওয়েতে কথা বলা যায় মীমের সাথে..! মাথায় কোনো
বুদ্ধি আসছেনা। তারপরের দিন দেখলাম কলেজ শেষে
মীম দাড়িয়ে আছে বাসস্টপে। হয়তো বাসের জন্য
অপেক্ষা করছে। ভাবলাম একই বাসে যাবো। সমস্যা হইল
আমি যেদিকে যাবো, মীম যাবে তার উল্টো দিকে।
মীমের বাস চলে আসলো, মীম বাসে উঠে পড়লো। বাস
ছেড়ে দিলো। এমন সময় আমিও মীমের বাসে লাফিয়ে
উঠে পড়লাম। দেখলাম মীম একেবারে সামনে মহিলা
সীটে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর মীম একটা বাসস্টপে নেমে
গেল। আমিও নামলাম। মীমকে ডাক দিলাম। পিছন ফিরে
তাকালো। আমি সালাম দিলাম...
--আসসালামু আলাইকুম?
--ওয়া আলাইকুম আসসালাম।
--কেমন আছেন..?
--আলহামদুলিল্লাহ্।
আমি বুঝে ফেললাম মেয়েটা ধার্মিক।
--আপনার বাসা এখানে..?
--হ্যাঁ.. আপনি এখানে কেন...?
--একটু কাজ আছে..। আর আমি আপনার জুনিয়র। আমাকে
তুমি করে বলবেন।
--আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে আসি..?
--তারা আছে..?
--হ্যাঁ, বাসায় গিয়ে আসরের নামাজ পড়বো তো..
--আপনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন..? (আশ্চর্য হয়ে
বললাম)
--হ্যাঁ, আমি মুসলমান। নামাজ না পড়ে উপায় আছে..?
--অনেক ভাল লাগলো আপনার শুনে। আল্লাহ হাফেজ।
--আল্লাহ হাফেজ।
.
আমি মীমের প্রতি আরো দুর্বল হয়ে গেলাম। মীম এই
যুবতি বয়সে নামাজকে এত ভালবাসে, বর্তমান যুগে
মীমের মত ভাল মেয়ে খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
তাই মীমকে আমার চাইই চাই..।
আমি মনে ভাবলাম, মীমকে পেতে হলে প্রথমে ওর পথ
ধরেই চলতে হবে। তাই আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শুরু করে
দিলাম। আমি নামাজ শুরু করে একটা জিনিস খেয়াল
করলাম। সেটা হচ্ছে, নামাজ আমাকে সমস্ত খারাপ কাজ
থেকে বিরত রাখছে। আমি যখনই সিগারেট ধরাতে
যেতাম, আমার মন থেকে একটা বাধা আসতো। আমি তো
নামাজ পড়ি। যখন বন্ধুদের সাথে বাজে আড্ডা দিতাম,
আযান হলেই মসজিদে না যাওয়া পর্যন্ত ভাল লাগতোনা।
আমি সম্পূর্ণ চেঞ্জ হয়ে গেলাম।
.
একদিন মীমকে ডেকে সরাসরি বললাম... "আমি আপনাকে
কথাগুলো না বলে থাকতে পারলামনা। আপনার
চেহারাটা আজও পর্যন্ত দেখিনি। আর দেখার প্রয়োজনও
নাই। আমি আপনাকে ভালবাসি। প্রথমে আপনার চোখ
দেখেই আমি আপনার প্রেমে পড়ে যাই। আপনার জন্য
আরো পাগল হয়ে যাই তখন, যখন জানতে পারলাম আপনি
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। এটা জেনে আমিও পাঁচ
ওয়াক্ত নামাজ শুরু করি। আপনি আমার এক বছরের
সিনিয়র। এটা আমার কাছে কোনো সমস্যা না। সবচেয়ে
বড় কথা, সত্য কথা আমি আপনাকে ভালোবাসি। আর
আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমার জীবন চলার পথে
আপনাকে আমার খুব প্রয়োজন।"
একটানা বলে ফেললাম কথাগুলো..!
.
আমার কথাগুলো এক ধ্যানে শুনেছিল মীম। তারপর মীম
বললো... "দেখ ফাহিম, আমি বুঝতে পারছি তুমি আমাকে
সত্যিই ভালবাস। তুমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছো, এটা
জেনে আমার খুব ভাল লাগছে। তুমি আমার বয়সে ছোট,
তাতেও কোনো সমস্যা নেই আমার। কিন্তু ইসলামে আছে
বিয়ের আগে প্রেম ভালবাসা পাপ। এখন তুমিকি আমাকে
এই পাপ কাজটি করতে বলো..?"
.
আমি মীমের কথাগুলো শুনে ভাবলাম, আসলে ঠিকই তো
বলেছে। তাহলে উপায় কি..? আমি বললাম.. "আপনি
আমাকে যেটা বলবেন, আমি তাইই করবো। কিন্তু
আপনাকে আমার চাই।"
ও বললো.. "ঠিক আছে আল্লাহ্ যদি তোমার আমার মিলন
লিখে রাখেন, তাহলে তোমাকে বিয়ে করতে আমার
কোন আপত্তি নাই। এবং বিয়ের পর তোমাকে মন প্রাণ
উজাড় করে ভালবাসবো।"
.
আমি আমার মা বাবাকে সেদিনই সব খুলে বলি। এবং
মীমের বাড়ি আমার বাবা মাকে পাঠিয়ে দেই। ভাগ্য
ভালো মীমের বাবা মা আমার মা বাবাকে ফিরিয়ে
দেয়নি। আমি আল্লাহর কাছে মীমকেই চাইতাম। আর
অপেক্ষার গুনছিলাম কবে আসবে সেই ক্ষন..!
.
ছয় বছর পর আমাদের বিয়ে হলো। আজ বাসর ঘরে প্রথম
মীমকে দেখছি..! আল্লাহ আমার জন্য এতবড় উপহার
রেখেছিলেন! সত্যিই আমি ভাষা হারিয়ে ফেললাম
মীমকে দেখে। আমি মীমকে বললাম.. "তুমি এত সুন্দর..!
দাড়াও আগে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর
কাছে শুকরিয়া আদায় করে নিই..!"
মীম বললো.. "দাড়াও দুজন একসাথেই পড়ি..!"
আমরা দুজন নামাজ দিয়ে নতুন জীবনের শুরু করলাম।
.
সত্যি কথা বলতে 'আপনি যেমন আপনার জীবন সঙ্গীও
তেমন

Total Pageviews