গল্পঃ ঝগড়াময় ভালবাসা

আপনার চুল এতো বড়বড় কেন?
- বড় আবার কই? এখন আরো ছোট আগের থেকে।
- লম্বা লম্বা চুল মেয়েরা রাখে। আপিনি কি মেয়ে নাকি?
- চুল ছোট করলে আমাকে পিচ্চি পিচ্চি লাগে তাই ছোট করিনা।
- কেন আপনি কি বুড়া হয়ে গেছেন নাকি?
- তার চেয়ে কম কিসের।
- কালকে চুল কেটে আসবেন। মনে থাকে যেন।
- কেন? চুল কাটতে পারবোনা।
- কেন মানে? আমি আপনার কি হই হুম?
- ঐতো ওটাই। বিয়ে হয়েছে কদিন আগে। কিন্তু আমার চুল আমার ব্যাপার। আমি কাটবোনা।
- তাই না? আমার কথা তো শুনলেন না। পরে কিছু হলে কিন্তু আমি কিছু জানিনা।?
- পরে কিছু হবে মানে? দেখুন আপনি কিন্তু বেশি বেশি করছেন।
- করবোই।
- আজব তো। আমার চুল নিয়ে আপনার এতো মাথা ব্যাথা ক্যান?
- অধিকার আছে হুহ। ডিনার রেডি সবাই খাওয়ার টেবিলে অপেক্ষা করছে। আসুন তারাতারি।
- যান যান নিজে গিয়ে খেয়ে নিন। আমার ক্ষিদা লাগলে গিয়ে খেয়ে নিবো।
- বাইরে থেকে খেয়ে আসছেন নাকি? একদিন না মানা করেছি?
- খাবো পরে।
- তাহলে আমি ডাক দেই হুম আব্বুকে?
- হ্যাঁ। পাইছেন শুধু আব্বুর ভয়। আব্বু যাক বাসা থেকে তখন দেখি কি করেন।
একসাথে সবাই খেতে বসছে। সিয়ামের বাবা সিঙ্গাপুরে থাকে বছরের প্রায় দশ মাসই। জাহাজের ব্যবসা। এবার এসেছে এক মাস হয়ে গিয়েছে। আর এক মাস আছেন। এরমধ্যে সিয়ামের বিয়েটাও নিজের হাতে দিয়েছে।
- কিরে বাপ তোর কি খবর?
- এইতো ভাল। আপনার?
- সে আগের মতোই দৌড়াদৌড়ির উপর। বউমার দিকে খেয়াল রাখিস। কোন অভিযোগ যেন না শুনি।
- জ্বী।
কথাগুলো শুনছিলো আর ইভানার দিকে রাগী চোখে তাকাচ্ছিলো সিয়াম। খাওয়াদাওয়া শেষ করে রুমে আসে। সিয়ামের অভ্যাস ঘুমানোর আগে একটা গল্প লেখা। কিন্তু ইদানীং ব্যাস্ততার কারনে হয়ে উঠছেনা। ফোনটা নিয়ে একটা নোটের এপস অপেন করলো।
- এখন কয়টা বাজে? (ইভানা)
- রুমে ঘড়ি নাই? না আপনার ফোন নাই?
- তা আপনারও আছে। দেখুন না কয়টা বাজে।
- এগোরোটা. দশ। কেন?
- কেন মানে? ঘুমের সময় কি আরেকবার আসবে নাকি? ফোন রেখে ঘুমান বলছি।
- আজব তো! আপনি ঘুমান না। আমাকে টানছেন কেন? আমি একটু পরে ঘুমাবো।
- কাল সকালে অফিস নাই? আব্বুকে ডাক দিবো?
- ব্ল্যাকমেইল! হইছে আর ডাক দিতে হবেনা।
সিয়াম ফোন অফ করে ঘুমের দেশে পা বাড়ালো। কিছুক্ষন পর ঘুম ভাঙ্গলো ইভানার ডাকে।
- কি ব্যাপার? ফোন রেখে আমি তো ঘুমাচ্ছিলামই।
- না অন্য কারনে।
- তো বলুন আপনার কারন।
- আমার না খুব কবিতা শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে। একটা কবিতা শুনান না প্লীজ।
- ও হ্যালো। আমি ব্যবসার ছাত্র। কবিটা টবিতা পারিনা।
- প্রাইমারি স্কুলের কবিতাও মনে নাই।
- আছে তো! শুনালে ঘুমাবেন তো?
- হুম।
- ঐ দেখাযায় তাল গাছ.. ঐ আমাদের গা.. ঐখানেতে বাস করে কানা বগির ছা... ঘুমান গুড নাইট।
- আরে আরে এটা কোন কবিতা হলো? আচ্ছা কবিতা শুনানো লাগবেনা। একটা গান শুনান আপনার পছন্দের।
- চার লাইন শুনালে হবে?
- উমম.. হবে।
- তোমার আমার প্রেম আমি আজও বোঝিনি.. ঐ চোখের চাওয়াতে প্রেম আজও দেখিনি.. দূরে তবু দূরে সরে থাকতে পারিনি.. কাছে এসে কেন কাছে আসতে পারিনি। শুভ রাত্রি।
- এটা কি গান হলো। ছ্যাকামার্কা গান। একটা রুমান্টিক গান শুনান।
- আসমানের তারা জানে..জানে জমিনের ফুল.. ভালবেসে তোমায় করিনাই ভুল। আর পারিনা শুভ রাত্রি হ্যাঁ?
- হ্যাঁ এই গান পারবেন কেন। তবুও ধন্যবাদ। শুভ রাত্রি।
সিয়ামকে রাগিয়ে দিতে অনেক ভালো লাগে ইভানার। এজন্য যে কোন বিষয়ে অতিরিক্ত খবরদারী করে। ফজরের নামাজের সময় সিয়ামকে কাতুকুতু দিচ্ছে। কাতুকুতুতে ঘুম ভাঙ্গলো।
- কি ব্যাপার? কি হলো আবার?
- আজান দিবে একটু পর।
- অহ.. আগে আজান দিক। তারপর উঠবো।
- মুখ কাঁপলোনা একথাটা বলতে? এখনি উঠেন। আব্বু মনে হয় একটু পরেই ডাকবে।
আরেকটু ঘুম আর হলোনা। উঠে বাবার সাথে নামাজ পড়তে যায়। নামাজ পড়ে এসে আবার ঘুম। কিন্তু কপালে বেশিক্ষন স্থীর রইলোনা। আবার ডাকাডাকি!
- কি হলো আবার?
- কিছু হয়নি। আর কিছুক্ষন দেরি হলে শরীরে আপনার পানি
প ঢালবো আর কিছুনা।
- কি শয়তান মেয়ে। একটা দিনও ঠিক করে ঘুমাতে দেয়না।
- বেশি ঘুমালে শরীর খারাপ করে।
সিয়ামের উঠতে হলো। না উঠে উপাই নেই এখন। কারন কিছুক্ষন পর সত্যি সত্যিই পানি ঢেলে দিতো। এর আগে অনেকবার ঢেলে দিয়েছিলো। তার উপর এখন আরো শীত। অফিসে যাওয়ার আগে।
- রাতে কি বলছিলাম মনে আছে?
- আপনি কি আর একটা দুইটা কথা বলেন। কোন কথাটা?
- ঐ আপনার মাথার চুল। আসার সময় কেটে আসবেন। নাহয় রাতে ঘুমানোর সময় কেঁচি দিয়ে কেটে দিবো।
- আমিও আপনার চুল কেঁচি দিয়ে কেটে দিবো। আমি পারিনা নাকি?
- তাই না? আব্বুকে একটু ডাক দেই? দিয়ে বলি আপনি আমার চুল কেটে দিবেন। হুম?
সিয়াম আর কোন কথা না বলে হাঁটা শুরু করলো। ইভানা হাসছে মিঠমিঠিয়ে। অফিসের লাঞ্চ টাইম। সিয়াম ফোনটা অফ করে রেখেছে। জানে এক্ষণি ফোন দিয়ে বকবকানি শুরু করে দিবে। ইভানা ফোন দিয়ে অফ পেয়ে মেজাজ খারাপ হলো। অফিস শেষে ফোন খুললো। এরি মধ্যে ইভানার ফোন।
- কি ব্যাপার? দূপুরে ফোন অফ ছিলো কেন?
- চার্জ ছিলোনা। এখন অফিস থেকে চার্জ করে নিছি।
- মি

Total Pageviews