..ব্রেকআপ অতঃপর বিয়ে......

.
আকাশ:দেখো নীলা এই সম্পর্কটা আমার
আর পক্ষে
টিকিয়ে রাখা সম্ভবনা।
নীলা:মানে তুমি কি বলতে চাচ্ছ?
:আমি ব্রেকআপ চাচ্ছি
:কিন্তু কেন?
:তোমাকে আর ভাল লাগেনা,তোমার
মাঝে আমি নিজেকে
অনেক খুজেছি কিন্তু পেয়েছি শুধু
শূন্যতা,তাছাড়া তুমিও আর
আমাকে আগের মত ভালোবাসোনা
হয়তো তোমার
জীবনে অন্য কেউ এসেছে,তাই
ব্রেকআপটা হলেই
ভালো হয়।
:ঠিক আছে।কথাটা বলেই অঝোর নয়নে
কাঁদতে কাঁদতে
পার্ক থেকে বের হয়ে অতীতের
কথাগুলো ভাবতে
ভাবতে পথ চলতে থাকে নীলা।
~~~
সময় ২০১৫।মা বাবার অতি আদরের
দুলালী ভাইবোনের
সকলের ছোট নীলা তখন সবেমাত্র
ইন্টার ১ম বর্ষে
চিলমারী মহিলা কলেজে ভর্তি
হয়েছে।নীলা ছিল খুবই
শান্ত প্রকৃতির মেয়ে,তার কাজ ছিল
কলেজে যাওয়া আর ক্লাশ
করে বাসায় ফেরা,প্রয়োজন ছাড়া
কারো সাথে তেমন কথা
বলতো না একাকি থাকতে
ভালবাসতো।অন্যসব বান্ধবীরা যখন
ক্লাশ বিরতিতে আড্ডায় মেতে উঠতো
নীলা তখন
বইয়ের মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে
রাখতো।আর আকাশ তখন
সবেমাত্র গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে
চাকরির জন্য ছোটাছুটি
করছে।নীলার কলেজে যাবার পথটা
ছিল আকাশের বাড়ির পাশ
দিয়ে।আর তখনি কলেজ আসা যাওয়ার
পথে আকাশ আর
নীলার দেখা হয়।নীলা মেয়েটা
দেখতে ততোটা
আহামরী ফর্সা না হলেও মেয়েটার
চোখদুটিতে আছে
মায়া,তার আচরন কথা সব যেন ছোট
বাচ্চাদের মত তাইতো
আকাশ এই মেয়েটার প্রেমে পড়ে যায়।
বেশ কিছুদিন
মেয়েটাকে ফলো করে দেখার পর
একদিন আকাশ তাকে
প্রপোজ করে আর নীলা আকাশকে না
করে দেয়।তার
পরো আকাশ হাল ছাড়েনি এবং শেষ
পর্যন্ত নীলা রাজি না
হয়ে আর পারেনি।কথা গুলো ভাবতেই
নীলার মনটা আরো
ডুকরে কেঁদে উঠলো কারন যে আকাশ
তাকে একদিন না
দেখে থাকতে পারতোনা,তার জন্য
সারাদিন রাস্তার ধারে
দাড়িয়ে অপেক্ষা করতো সেই আকাশ
কিভাবে আজ
ব্রেকআপ করলো।কোন হিসাবই
মেলাতে পারছেনা
নীলা।
~
নীলা বাসায় এসে শুয়ে আকাশের
কথা গুলো একাকি
ভাবতেছে,আর তখনি ওর মা এসে
বলতেছে নীলা মা তুই
তোর বন্ধু বান্ধবিদের কাকে কাকে
ডাকা লাগে ডেকে
নে আগামী ২১ ডিসেম্বর তোর বাবার
বন্ধুর ছেলের
সাথে তোর বিয়ে,আর শোন তোর কোন
পছন্দ
থাকলে বলতে পারিস,তোর বাবা
জানতে চেয়েছে।
নীলা মায়ের কথার উত্তরে কিছু না
বলে ভাবতে থাকে
আকাশ যদি ব্রেক না করতো তবে ওর
কথা বাবাকে বুঝিয়ে
বলে বিয়েটা ভেংগে দিতে
পারতো,আকাশের নামটা যে
তার মনের মাঝে লিখিত হয়ে
গেছে,ওকে ছাড়া অন্য
কাউকে জীবন সাথী হিসেবে কল্পনা
করতে পারেনা।
পরক্ষনে এটাও ভাবতে থাকে আকাশ
যদি আমাকে ছেড়ে
থাকতে পারে
তবে আমি কেন ওর কথা ভেবে
বাবাকে কষ্ট দেব।তাই
সে মাকে বলে যে আব্বু যা করবে আমি
সেটাই মেনে
নেব।
~~
অবেশেষে কাংখিত ২১ ডিসেম্বর
চলে আসে নীলাকে
তাঁর বান্ধবীরা লাল বেনারশী শাড়ি
পরিয়ে দিয়ে খুব সুন্দর
করে সাজিয়ে রেখেছে,এর মাঝে
একটা বারো আকাশ
ফোন করে নীলার খোজ নেয়নি।
বিয়ের সকল কার্য শেষে নীলা
গাড়ীতে উঠে খেয়াল
করে দেখে তার পাশে বরের সাজে
থাকা ছেলেটি আর
কেউ না স্বয়ং আকাশ।আকাশকে দেখে
নীলার প্রচন্ড রাগ
উঠে তাকে এতটা কষ্ট দেবার জন্য।
~~
নীলা একাকি বসে আছে ১টা
সাজানো খাটে আজ তাদের
বাসর রাত।এরপর আকাশ রুমে প্রবেশ করে
দরজা লাগিয়ে
নীলার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে
আর তখনি নীলা বলে
আপনি আমাকে বিয়ে করলেন কেন?
আকাশ:ভালবাসি বলে।(নীলাকে
জড়িয়ে ধরে)
এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে
নীলা বলতে থাকে
কিন্তু আমি আপনাকে ভালবাসি
না,আমি অন্য একজনকে ভালবাসি
তাছাড়া আপনি নিজেও তো বলেছেন
যে আমার মাঝে
শূন্যতা ছাড়া কিছু নেই,আমাকে ভাল
লাগে না।
:আমি তো তোমাকে সারপ্রাইজ দেব
বলে মজা করে
বলেছি।
:কিন্তু আমি মজা করে বলছিনা,আমি
আমার ক্লাস ফ্রেন্ড
সাদমানকে ভালবাসি।ওর সাথে
আমার কথা হয়েছে আমরা
আগামীকাল অন্যত্র চলে যাব বলে
সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আর
আপনি বেড়িয়ে যান আমাকে স্পর্শ
করবেন না।
এ কথা শুনে আকাশ আর কিছু না বলে
বাইরে বারান্দায় গিয়ে
দাঁড়িয়ে আকাশের তারা গুলোর
দিকে তাকিয়ে থাকে নীল
আকাশটা মেঘে ঢেকে গেছে
যেকোন সময় বৃষ্টি
আসতে পারে।আকাশ এর আগে শুনেছে
বৃষ্টির সময় নাকি
বাসর রাতটা অনেক মধুর হয় কিন্তু তার
বেলা সেটা কেমন
যেন পাল্টে গেল ভাবতেই চোখ
থেকে বিন্দু বিন্দু জল
তার গাল বেয়ে গড়িয়ে মাটিতে
পড়তে লাগলো।
সেই সাথে ঐ নীল আকাশ থেকেও
বৃষ্টির বারি ধারা বইতে
থাকলো।বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ
বৃষ্টির পানি গুলোকে নাড়াচাড়া
করতেছে।
এদিকে নীলা একাকি খাটে বসে
ভাবতেছে এ কি করলাম
আমি আকাশ তো আমাকে ভালবেসে
সারপ্রাইজ দিবে
বলে এমনটা অভিনয় করেছিল আর আমি
কিসের জন্য ওকে
ভালবেসে কাছে পাবার পরো দুরে
তাড়িয়ে দিলাম।
দেখি পাগলটা এখন কি করছে~~
আকাশ একাকি বসে বৃষ্টি দেখতেছে
এমন সময় কাঁধে
কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছনে
ফিরে দেখে
নীলা দাড়িয়ে আছে।কিছু বলতে
যাবে তার আগে নীলা
বলতে থাকে চলো ভিতরে চলো
আমাকে একা রেখে
এখানে বৃষ্টি বিলাশ হচ্ছে তাই না।
:তাছাড়া কি করবো,আর তুমি একা
মানে তোমার মনে তো
তোমার ক্লাস ফ্রেন্ড সাদমান আছে।
:সাদমান কে?সাদমান নামে তো আমি
কাউকে চিনিনা।আমার
মনে তো শুধু ১জন আছে আর সে তো
আমার সামনেই
আছে।
:কেউ যদি নেই তবে আমাকে বের করে
দিলে কেন?
জানো আমি সাদমান নামটা শুনে
কতটা কষ্ট পাইছি।
:সেইদিন তোমার কাছে ব্রেকআপ
কথাটা শুনে আমিও
অনেক কষ্ট পাইছি।জানো এই কয়েকটা
দিন বেঁচে
থেকেও মনে হয়েছিল আমি যেন মৃত
লাশ।তাই তার
থেকে কিছুটা তোমাকে উপহার
দিলাম মাত্র।
:তাই তো দেখতে পাচ্ছি আমার
পাগলি বউটাকে এত হালকা
মনে হচ্ছে কেন?(কোলে তুলে নিয়ে)
:কি আমি মোটা ছিলাম বলেই
আকাশের বুকে কয়েকটা কিল
ঘুষি মারতে থাকে।আর আকাশ
নিলাকে বুকের মাঝে শক্ত
করে ধরে রুমের দিকে এগিয়ে যেতে
থাকে।
এরপর বৃষ্টি আর দমকা বাতাসে
বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন
হওয়ায়,এই ঘোর অন্ধকারে লেখক আর
কিছু দেখতে
পারেনি।
.
লেখা:জোবাইর খন্দকার(সাদমান
শাকীব)
উৎসর্গ:সেই বান্ধবীটি।

Total Pageviews