টুপি, পাগড়ি, জুব্বা কি সুন্নতি পোশাক?

নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার,
সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক
প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’।
জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায়
এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের
বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম
ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৯২৬তম পর্বে, টুপি,
পাগড়ি, জুব্বা এগুলো সুন্নতি পোশাক কিনা,
সে সম্পর্কে বরিশালের মুলাদি থেকে চিঠিতে
জানতে চেয়েছেন বেলায়েত হোসেন ফারুকি।
অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।
প্রশ্ন : লম্বা জামা, টুপি, পাগড়ি কি সুন্নতি
পোশাক?
উত্তর : সুন্নতি পোশাক বলতে পোশাকের
কোনো নির্দিষ্ট কাটিং সুন্নাহর মধ্যে নেই।
সুন্নাহ বলতে আমি বোঝাচ্ছি, রাসুলুল্লাহ
(সা.)-এর হাদিসের মধ্যে আসেনি। অর্থাৎ
রাসুল (সা.)-এর সহিহ হাদিসের মধ্যে
পোশাকের সুনির্দিষ্ট কোনো কাটিং রাসুল
(সা.) জানিয়ে যাননি।
সুতরাং লম্বা জামা, টুপি, পাগড়ি এই
পেশাকগুলো এভাবে রাসুল (সা.) কোনো
সহিহ হাদিসের মধ্যে আসেনি। কিন্তু
রাসুলুল্লাহ (সা.) পাগড়ি ব্যবহার করেছেন
মর্মে সহিহ হাদিস সাব্যস্ত হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) জুব্বা ব্যবহার করেছেন মর্মে
সহিহ হাদিস সাব্যস্ত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ
(সা.) পাগড়ির নিচে টুপিও পরেছেন মর্মে সহিহ
হাদিস সাব্যস্ত হয়েছে।
এগুলো রাসুল (সা.) ব্যবহার করেছেন, এটি
প্রমাণিত হয়েছে, এটা রাসুল (সা.) এর কাজ।
তাই এই কাজগুলো কীভাবে ইসলামী শরিয়তের
মধ্যে গুরুত্ব দেওয়া হবে, অর্থাৎ প্রকৃত
অবস্থানটি কি হবে, এ নিয়ে আলেমদের মধ্যে
মতবিরোধ বা মতপার্থক্য রয়েছে। অধিকাংশ
আহলুত তাহকিক, মাহকি ওলামায়ে কেরাম
বলেছেন, নবী (সা.) যে সমস্ত কাজগুলো
স্বভাবজাত বা মানুষের প্রকৃতিগত কাজ,
সেগুলো সবগুলোই মূলত আদত (অভ্যাস, প্রথা
বা প্রচলন) এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
তাই রাসুল (সা.) এই কাজগুলো অভ্যাসের
মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে, এগুলো ইবাদতের মধ্যে
অন্তর্ভুক্ত হবে না।
ফলে দেখা গিয়েছে যে এগুলো যদি ইবাদতের
মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতো, তাহলে সাহাবায়ে
কেরামকে রাসুলুল্লাহ (সা.) এভাবেই পোশাক
পরতে বা এভাবে কাজ করতে বলতেন। কিন্তু
রাসুল (সা.) এভাবে বলেননি। তাই বোঝা
যাচ্ছে যে এগুলো মূলত প্রথাগত প্রচলন বা
আদাতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলে
অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য এটাই, যে
এগুলো মূলত প্রথা বা প্রচলনের মধ্যে
অন্তর্ভুক্ত, এগুলো ইবাদতের মধ্যে
অন্তর্ভুক্ত নয়।
তবে, কেউ যদি মাথায় পাগড়ি পরেন, অথবা
মাথায় টুপি পরেন, অথবা বড় জুব্বা পরেন, এই
কারণে যে, রাসুল (সা.)-এর অনুসরণ করার
জন্য, যে রাসুলুল্লাহ (সা.) পরেছেন, প্রমাণিত
হয়েছে , সেই কারণে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর
প্রতি ভালবাসার কারণে, তাহলে অবশ্যই তিনি
সওয়াব পাবেন, যেহেতু আল্লহু সুবহানাহুতায়ালা
কুরআনে কারিমের মধ্যে স্পষ্ট করে বলেছেন,
‘আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে তোমাদের
জন্য উত্তম আদর্শ।’
সুতরাং যেহেতু একটা নমুনা, আদর্শ, মডেল
আমার সামনে আছে, এই মেডেলের অনুসরণের
কারণে, আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর অনুসরণের
কারণে তিনি সওয়াব পাবেন। শুধুমাত্র ওই
পোশাকের কারণে নয়, বা পোশাকটাকে সুন্নাত
আখ্যায়িত করার জন্য নয়। তাই সুন্নতি
পোশাক বলতে যদি কেউ মনে করে থাকেন যে
সুনির্দিষ্ট কোনো কাটিংকে, এই কাজটি শুদ্ধ
নয়।
তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো পোশাক
পরেছেন, এটি প্রমাণিত হলে, যদি কেউ
রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ভালোবাসার কারণে,
অনুসরণের কারণে পোশাকটি পরেন, তাহলে
তিনি সওয়াব পাবেন, এতেও কোনো সন্দেহ
নেই।

Total Pageviews