হাঁটা হলো সব ধরণের ব্যায়ামের মধ্যে সবচেয়ে উপকারী। প্রতিদিন সকালে অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট টানা হাঁটার অভ্যাস আছে অনেকেরই। আর যাদের এই অভ্যাস নেই তাদেরও এই অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। কারণ প্রতিদিন সকালে মাত্র ২০-৩০ মিনিটের এই হাঁটা সারা দিন ভালো কাটাতে সাহায্য করে এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তাই নিয়মিত আলো-বাতাস পূর্ণ যায়গায় আধা ঘন্টা করে হেঁটে নিন।
প্রিয়২৪.কম
প্রতিদিন হাঁটতে যাওয়ার আগে লক্ষ্য রাখুন আপনার পোশাকটি যথেষ্ট আরামদায়ক এবং হাঁটার উপযোগী কিনা। হাঁটার আগে একটু ঢিলে ঢালা পোশাক পরে নিন। হাঁটার জন্য আরামদায়ক জুতো কিনে নিন। সঙ্গে অবশ্যই খাবার পানি রাখুন। প্রতি ১৫ মিনিট পর পর পানি খান অল্প করে। তাহলে সকালের হাঁটার অভ্যাসটা উপভোগ্য হয়ে উঠবে। এবার তাহলে চলুন, মর্নিং ওয়ার্কের ৮টি স্বাস্থ্য উপকারিতা জেনে নেয়া যাক।
প্রতিদিন সকালের মর্নিং ওয়ার্কের সময় বিশুদ্ধ বাতাস ও সুন্দর পরিবেশ আপনার হৃৎপিণ্ড ও মনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। হাঁটার সময় হৃৎপিণ্ড শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করে। ফলে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ ও সচল থাকে এবং মানুষ দীর্ঘজীবী হয়।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়
সকালে প্রতিদিন কিছুক্ষণ করে হাঁটলে ফুসফুসে তাজা বাতাস প্রবেশ করার সুযোগ পায়। এই বাতাস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করে হৃৎপিণ্ড রক্তকে বিশুদ্ধ করে এবং অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত মস্তিষ্কে সরবরাহ করে। ফলে মস্তিষ্ক সচল থাকে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে সকালে নিয়মিত হাঁটলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত সকালে হাঁটলে রক্তের লোহিত কণিকাগুলো থেকে চর্বি ঝরে যায়। এছাড়াও হাঁটার সময় রক্তের ইন্সুলিন ও গ্লুকোজ ক্ষয় হয়। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত থাকে।
প্রিয়২৪.কম
ত্বক ভালো করে
প্রতিদিন সকালে হাঁটলে প্রচুর পরিমাণে ঘাম হয়। ফলে ত্বকের লোমকূপ গুলো খুলে যায় এবং শরীরের দূষিত পদার্থগুলো ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। ফলে ত্বক উজ্জ্বল ও লাবন্যময় দেখায়।
মেদ কমায়
নিয়মিত সকালে হাঁটলে মেদ ভুড়ির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। হাঁটলে প্রচুর ক্যালরী ক্ষয় হয়। ফলে নিয়মিত কম ক্যালরীর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন সকালে অন্তত ৩০ মিনিট করে হাটলে মেদ কমে এবং দেহের আকৃতি সুন্দর হয়।
দৃষ্টি শক্তি ভালো করে
প্রতিদিন কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমাদের চোখের বারোটা বেজে যাচ্ছে। চোখকে কিছুটা আরাম দিতে এবং চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিদিন সকালে হাঁটার বিকল্প নেই। গবেষণায় দেখা গেছে যে সকালে খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে।
মানসিক চাপ কমায়
প্রতিদিন হাঁটতে বেড়িয়ে সকালের সুন্দর স্নিগ্ধতা উপভোগ করতে কার না ভালো লাগে বলুন! প্রতিদিন সকালের সুন্দর পরিবেশ ও কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি আপনার মন ভালো করে দিতে পারে নিমিষেই। প্রতিদিন সকালে কিছুক্ষণ হেটে আসলে সারাদিন কাজের উৎসাহ বাড়ে এবং মানসিক চাপ কমে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
প্রতিদিন সকালে হাঁটলে শরীরের প্রতিটি কোষে বিশুদ্ধ রক্ত এবং অক্সিজেন পৌছে যায়। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং সহজেই অসুখে পরার প্রবণতা কমে।
এছাড়াও সকাল বেলা হাঁটার জন্য আপনি যে উপকার পাবেন !
হাঁটার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।স্বাস্থ্য গবেষণায় দেখা গেছে-
১.হাঁটা রক্তচাপ কমায়
২.হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
৩.অতিরিক্ত মেদ কমায়
৪.রক্তের সুগার কমায়
৫.ওজন কমায় ও নিয়ন্ত্রণ করে
৬.ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টেরল, আন্থ্রাইটিস, ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রন করে
৭.হার্টের সমস্যা,স্ট্রোক হবার ঝুঁকি কমায়
৮.হাঁড় শক্ত করে
৯.রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে
১০.ফলে হার্ট ভালো থাকে, শরীরের সামগ্রিক শক্তি বা ফিটনেস বাড়ে
১১.ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা কমায়
১২.মাসেলের শক্তি বাড়ায়
১৩.হেলদি বিএম আই ধরে রাখে বা অর্জন করা যায়
১৪.হেলদি ওয়েস্ট টু হিপ রেসিও ধরে রাখে বা অর্জন করা যায়,
১৫.মেটাবলিজম বাড়ায়
১৬.শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ভালো থাকে
১৭.তারুণ্য ধরে রাখে
১৮.আয়ু বাড়ায়
১৯.ব্রেইনের কার্যকারিতা বাড়ায়
২০.ভালো ঘুম হয়
২১.স্মরণ শক্তি বাড়ায়
২২.মন প্রফুল্ল রাখে, মানসিক অবসাদ দূর করে ও মন ভালো করে
২৩.মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়
২৪.ভাল কলেষ্টেরল এইচডিএল বাড়ায় আর মন্দ কলেষ্টেরল এলডিএল কমায়
২৫.রক্ত নালীর দেয়ালে চর্বি জমতে দেয়না
২৬.হাঁটলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে
২৭.ডায়াবেটিস হয়ে থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখে
২৮.হাঁটার ফলে পেশীর শক্তি বাড়ে
২৯.হাঁটা হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ায়
৩০.শরীরের ওজন ঠিক থাকে আর শরীর থাকে ফিট
শুধু তাই নয় বিভিন্ন জটিল জটিল রোগের জন্য আলাদা আলাদা ব্যায়াম আছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে হাঁপানির মতো জটিল রোগও কিন্তু বিশেষ ধরনের ব্যায়ামের মাধ্যমে আরোগ্য হতে পারে।
কতক্ষন এবং কতদিন হাঁটব?
হাঁটার উপকার পেতে অবশ্যই নিয়মিত এবং সপ্তাহে অন্তত চার বা পাঁচ দিন হাঁটতে হবে, তবে সপ্তাহে সাত দিন হাঁটতে পারলে তা হবে সোনায় সোহাগা। হাঁটতে হবে ৩০/৪০ থেকে ৬০ মিনিট ধরে। প্রতিদিন তিরিশ মিনিট থেকে এক ঘন্টা হাঁটলে মুটিয়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সারসহ অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি তিরিশ থেকে ষাট শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করা যায়।
সপ্তাহে ৪/৫ দিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট দ্রুত হাটলেই আপনার জীবনের অনেক উন্নতি হবে। যারা ব্যায়াম করেন না, তারা কিছুদিন হাটলেই বুঝবেন এর কত উপকারিতা, শরীরটা কত ঝরঝরে মনে হচ্ছে।বরযাত্রীর হাঁটা হাঁটলে কিন্তু হবে না। হাঁটতে হবে যথেষ্ট দ্রুত যেন শরীর থেকে ঘাম বের হয়। আপনি দৈনিক যত বেশি হাঁটবেন, মনে হবে আপনি ততই বেশি ভাল আছেন। ভাল থাকার ব্যাপারে আপনার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে।
কখন হাঁটবেন ?
হাঁটা হাঁটির সর্বোত্তম সময় হচ্ছে ভোর বেলা, যারা নামাজ পড়েন তাদের জন্য ফজরের নামাজের পর। এসময় গাড়ী ঘোড়া এবং কল কারখানা বেশী না চলার কারণে ভোরের বাতাস থাকে অনেকটা নির্মল। সকালে যাদের সম্ভব নয় তারা তাদের সুবিধা মতো যে কোন একটা সময় নির্ধারণ করে নিতে পারেন, তবে দুপুরের ভরা রোদে মোটেই নয়।
তবে আপনার সুবিধামত সময়ে হাঁটতে পারেন। তবে শরীরের কথা চিন্তা করলে বিকালে হাঁটা সবচেয়ে ভালো। কারণ তখন মাসেল ফ্লেক্সিবল থাকে।শরীরের তাপমাত্রা সকালের চাইতে বেশি থাকে। তখন সব কাজ শেষ করে টেনশন মুক্ত হয়ে হাঁটা যায়।কিন্তু সকালে হাঁটলে মাসেল ও জোড়া শক্ত হয়ে থাকে। আবার শরীরও ওয়ার্ম আপ হতে সময় বেশি লাগে।সে কথা চিন্তা করলে বিকালে হাঁটা উত্তম। কিন্তু বিকালে পরিবেশ দূষণ বেশি থাকে এটাও সমস্যা। সকালে দূষণ মুক্ত পরিবেশে হাঁটা যায়। তবে আপনি যখনি সময় পান সুবিধা মত সময়ে হেটে নিবেন। চেষ্টা করবেন প্রতিদিন একই সময়ে হাঁটতে।
কোথায় হাঁটবেন ?
চেষ্টা করুন সুন্দর, দূষণ মুক্ত পরিবেশে হাঁটতে। হাঁটার জায়গা যেন সমতল ও পরিষ্কার হয় তা লক্ষ্য রাখুন। বাড়ির বাগান, পার্কে, পরিষ্কার ফুটপাতে বা যেকোনো খোলা জায়গায় হাঁটতে পারেন। মাঝে মাঝে হাঁটার রাস্তা বা জায়গা বদল করুন। এতে একঘেয়েমি কাঁটবে।
Home »
খাদ্য ও স্বাস্থ্য
» সকালে হাঁটার স্বাস্থ্য উপকারিতা সমূহ