এলিয়েন বা মহাশূন্যে প্রাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে আল-কুরআনের ভাষ্য!

মহাবিশ্বে বা মহাশূন্যে প্রাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে সবচেয়ে স্পষ্ট বর্ণনা এসেছে আল কুরআনের সুরা শুরার ২৯ নং আয়াত। আল্লাহ পাক সেখানে স্পষ্ট বলেছেন, ‘তাঁর এক নিদর্শন নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি এবং এতদুভয়ের মধ্যে তিনি যেসব জীব-জন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন।’ [সুরা শুরা : ২৯]
আল কুরআন বহু আগেই বলে রেখেছে, ভিনগ্রহে প্রাণী আছে। আছে নানা রকম উপাদান। পৃথিবীর মতোই বহু গ্রহ উপগ্রহ রয়েছে। তাদের অস্তিত্বের কথাও ঘোষণা করেছে কুরআন। কিন্তু মানুষের কাছে একসময় এগুলো ছিল অবিশ্বাসের মতো। কিন্তু বিজ্ঞানের উন্নতিতে এখন মানুষ মানতে বাধ্য হচ্ছেন, সত্যিই ভিনগ্রহে প্রাণী আছে। কোনো কোনো বিজ্ঞানী তো আশঙ্ক করছেন, ভিনগ্রহের প্রাণীরা যদি প্রযুক্তিতে আমাদের চেয়েও বেশি বেশি শক্তি হয় তবে পৃথিবীর জন্য বিপদ।
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহ তিনিই, যিনি সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য আকাশ আর অনুরূপ সংখ্যক পৃথিবী। তাদের উপরও আল্লাহর নির্দেশ অবতীর্ণ হয়; (এ তথ্যটি) এ জন্য যাতে তোমরা অবগত হও, আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও সর্বাজ্ঞ।’ [তালাক : ১২]
আয়াতটিতে আল্লাহ ইঙ্গিত দিয়েছেন পৃথিবীর মতো আরো অসংখ্য পৃথিবী রয়েছে। রয়েছে গ্রহ উপগ্রহ। যেখানে মহান আল্লাহর নিদর্শন অবতীর্ণ হয়। নিদর্শন অবতীর্ণ হওয়ার দারা মুফাসসিরগণ উদ্দেশ্য করেছেন, এসব গ্রহেও প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। তা না হলে নিদর্শন অবতীর্ণ হবে কাদের জন্য।
এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণী সম্পর্কে আল-কুরআনের ধারণা অনেক বেশি সুস্পষ্ট। যেখানে বিজ্ঞান বিষয়টি নিয়ে এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে। আর পবিত্র কুরআনের বর্ণনা যে ভুল নয় তার প্রমাণ গত কয়েক বছর ধরে এলিয়েন নিয়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা। হলিউড বলিউডে এ নিয়ে অসংখ্য মুভি হয়েছে। মিডিয়ায় তুলে ধরা হচ্ছে এলিয়েনের ব্যাপারে হাজারও তথ্য। আর বিজ্ঞান যে অদৃশ্য বা ভিনগ্রহের প্রাণের অস্তিত্ব অস্বীকার করে তাও ভুল প্রমাণ করেছে এলিয়েনের উপস্থিতি।
খ্রীষ্টপূর্ব পাঁচ শতকে থেলাস সর্বপ্রথম ভিনগ্রহের প্রাণীর ধারণা পোষণ করেন। তার ধারণা মতে, ‘দৃশ্যমান গ্রহ ব্যবস্থা ছাড়াও অন্য কোন জীবনবহুল জগত রয়েছে।’ এমনিভাবে মধ্যযুগের জ্যোতির্বিদগণও পৃথিবীর বাইরে অন্যান্য গ্রহে জীবনের কল্পনায় শুধু করতেন না, তারা কল্পিত জগতগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনেরও নিরন্তর প্রয়াস ও ধ্যান ধারণার চিহ্ন রেখে গেছেন ইতিহাসের পাতায়।
বিখ্যাত গণিতবিদ সি এফ গাউস সাইবেরীয় জঙ্গলের বৃক্ষরাজিতে একটি অতিকায় ত্রিকোণ তৈরির প্রস্তাব করেছিলেন যা অন্যান্য গ্রহের অধিবাসিগণকে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হবে। জে জে ভন লিট্রো সাহারা মরুভূমিতে জ্যামিতির পদ্ধতি অনুসারে সুবৃহৎ আকৃতির নালা তৈরি করে তাতে কেরোসিন ঢেলে রাতের বেলায় আগুন ধরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব রাখেন।
সি গ্রস দিনের সূর্যালোকে অতিকায় আয়না স্থাপন করে আলোর প্রতিফলন ঘটিয়ে ভিন গ্রহের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পরামর্শ পর্যন্ত দান করেছিলেন। এই তো গেল প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় দার্শনিকদের প্রচেষ্টা। আর আধুনিক যুগে ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধানে পৃথিবীতে এবং পৃথিবী থেকে পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে পরিচালিত হচ্ছে বিভিন্ন অভিযান।
ভিনগ্রহের প্রাণীদের সম্পর্কে আংকিক কিংবা যৌক্তিক কিংবা বিশ্বাসগত এই বিপুল সমর্থনের কারণেই গবেষকরা খুঁজে চলেছেন প্রাণের অস্তিত্ব। এই সন্ধান-কার্যক্রমে গবেষকরা একদিকে অতীতের ঐতিহাসিক উৎসে খোঁজ করছেন ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্ব আর বিজ্ঞানীরা খোঁজ করছেন পৃথিবীর বাইরের গ্রহ কিংবা উপগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব।
শুধু বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক নয় গণমাধ্যমও রেখে যাচ্ছেন এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। লেখা হয়েছে বই, প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকার প্রতিবেদন, তেমনি তৈরি হয়েছে গান, চলচ্চিত্র এবং এ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র। যা নতুন করে বলার কোন অবকাশ রাখেনা, কারণ এগুলো সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি।
আর কুরআন তো আগেই বলে রেখেছে বিশ্ব জগতের খবর। বলেছেন, ‘মহান আল্লাহই জগতসমূহের প্রতিপালক। বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা।’ [সুরা মুমিন : ৬৫]
আল-কুরআনের আরো অনেক আয়াতে ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে যে- শুধু আমাদের এই পৃথিবীই নয়, অন্য কোন অজানা প্রান্তেও রয়েছে আল্লাহর সৃষ্টি জীব। কিন্তু এর বিপরীতে মহাবিশ্বের কোথাও প্রাণ নেই এরকম কোন বার্তা আল-কুরআনে দেয়নি।
মহাবিশ্বে বা মহাশূন্যে প্রাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে সবচেয়ে স্পষ্ট বর্ণনা এসেছে আল কুরআনের সুরা শুরার ২৯ নং আয়াত। আল্লাহ পাক সেখানে স্পষ্ট বলেছেন, ‘তাঁর এক নিদর্শন নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি এবং এতদুভয়ের মধ্যে তিনি যেসব জীব-জন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন।’ [সুরা শুরা : ২৯]
আল্লাহ পাক এখানে স্পষ্টই বলেছেন তিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডণ উভয়ে জীব জন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন। সুতরাং স্পষ্ট এ আয়াতের পর মহাশূন্যে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে আর কোনো যুক্তি টিকতে পারে না।

Total Pageviews