হস্তমৈথুন ও স্বপ্নদোষ কি যৌনস্বাস্থের জন্য হুমকি?

অন্ধ বিশ্বাস আর কু-সংস্কারেরবিষবাষ্প ছড়িয়ে আছে আমাদেরসমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এরফায়দা লোটে একশ্রেণির অসাধুব্যবসায়ী। সেই পুরাকাল থেকে আজপর্যন্ত তান্ত্রিক, সাধু, পীর, ফকিরের,হেকিম, কবিরাজ, হকার থেকে শুরুকরে স্যুট-টাই পরা আধুনিকচিকিৎসকের বেশ ধরে এরা ঘুণপোকারমতো কুরে কুরে খাচ্ছে আমাদেরসমাজের মেরুদণ্ডকে। তাই আজ পর্যন্তনিজের পায়ে ঠিক শক্তহয়ে দাঁড়াতে পারেনি আমাদেরসমাজ।যে বয়সে ছেলেমেয়েরা মহাকাশযানচড়ে গ্রহান্তরে পাড়ি দেয়ার স্বপ্নআঁকবে, ঠিক সেই সময়ে আমাদেরতরুণরা সুবেশধারী ভণ্ডদেরখপ্পরে পড়ে যৌনরোগনিয়ে মাথা ঘামাতে গিয়ে নিজেরদৈহ্যিক ও মানসিক উভয়সৃজনশীলতাকেইপায়ে মাড়িয়ে জাতিরভবিষ্যতকে শপে দিচ্ছে কুসংস্কারেরআস্তাকুঁড়ে।এটা ঠিক, বিজ্ঞানের অগ্রগতিরসাথে সাথে আমাদের সমাজেরঅনেক কুসংস্কারই বিদায়নিয়েছে বা নেয়ার পথে। কিন্তুযৌন-সমস্যার ক্ষেত্রে সমাজ বিংশশতাব্দীর শুরুতেও যেখানে ছিল আজওপড়ে আছে সেই তিমিরেই। এর কারণ,ভণ্ডচিকিৎসকেরা বিজ্ঞানেরসুফলকে কাজে লাগিয়ে নিজেদেরস্বার্থ চরিতার্থ করছে। বিশেষ করে,স্বার্থ হাসিলের মাধ্যমহিসেবে পত্রিকা আরটেলিভিশনকে লাগাতে পেরেছেসুচারুভাবে।আমাদের সমাজে সবচেয়ে বড়কুসংস্কার যৌনতা নিয়ে।আরো নির্দিষ্ট করে বললে—হস্তমৈথুনও স্বপ্নদোষ নিয়ে। এগুলো শুরু হয়বয়োসন্ধিক্ষণে, শেষ হয় না কখনো।ছেলেদের ক্ষেত্রে বয়োসন্ধিক্ষণেরশুরু ১৩-১৪ বছর বয়সে, মেয়েদেরক্ষেত্রে দু-এক বছর এদিক ওদিকহতে পারে। এসময় হঠাৎ করেইছেলেমেয়েদের শারীরিক গঠনেরদ্রুত পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। পরিবর্তনআসে যৌন-সংশ্লিষ্ট বিশেষঅঙ্গগুলোতেও। সেই সাথে আগমনঘটে যৌন অনুভূতির।মেয়েরা ঋতুপ্রাপ্ত হয়, ছেলেরা হয়বীর্যবান। কিন্তু হঠাৎ শরীরেরপরিবর্তন বেশ জোরালো প্রভাবফেলে কিশোর-কিশোরীদের মনে।নানা-রকম জিজ্ঞাসা, চিন্তা আচ্ছন্নকরে করে তোলে তাদের মনকে।কিন্তু প্রশ্নগুলির উত্তর দেবে কে?বাবা? তিনি ভীষণ রাশভারী মানুষ।তবে কি মা? ছিঃ ছিঃ কী লজ্জা,তাঁর কাছে এসব জিজ্ঞেস করা যায়!তাহলে কি চাচা-চাচি, খালা,মামা? উহু, এসব কথা মুখে আনতেইলজ্জা, তো জিজ্ঞেস করবে কি!দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানিকে অবশ্য অনেকে জিজ্ঞেসকরতে পারে। কিন্তু তাদেরকাছে সঠিকউত্তরটা যে পাওয়া যাবে তারগ্যারান্টিই বা কে দেবে? বন্ধু-বান্ধবিকে জিজ্ঞেসকরা যেতে পারে। কিন্তু একইসমস্যা তো তাদেরও।তাহলে উপায়?উপায় বাতলাতে পারে হাটের হকার,গাঁয়ের কবিরাজ কিংবা রাস্তারমোড়ে ‘কামসূত্র’ জাতীয় যেসবচটি বই পাওয়া যায় সেগুলো।সুতারাং এরাই ভরসা।কিন্তু কী শেখায় এরা?একটা তালিকা করে ফেলতে পারি—১. সাত ফোঁটা (মতান্তরে ৭০ফোঁটা) রক্ত থেকে একফোঁটা বীর্য তৈরি। তাই বীর্যেরঅপচয় মানে রক্তের অপচয়।২. যেহেতু হস্তমৈথুন আরবা স্বপ্নদোষের ফলে বীর্যের অপচয় হয়,তাই এতে যারা অভ্যস্ততারা অচিরেই রক্তস্বল্পতায় ভুগবে।৩. যারা হস্তমৈথুনে অভ্যস্তবা স্বপ্নদোষে আক্রান্ত তাদেরমুখোমণ্ডল ভেঙে যায়, চোখগর্তে বসে যায়, চোখেরনিচে কালি পড়ে।৪. হস্তমৈথুন চালিয়ে গেলে বা স্বপ্নদোষ বন্ধ না হলে, ভবিষ্যতে কিছুকঠিন রোগের আক্রান্ত হবারসম্ভাবনা ১০০%। যেমন, গণোরিয়া,সিলিফিস, যৌনাঙ্গে পাথর,ডায়াবেটিস, ধ্বজভঙ্গ ইত্যাদি।এগুলো থেকে ভবিষ্যতে আরো দুটিভয়ঙ্কর রোগেরনিশ্চয়তা ভণ্ডরা দেবে।কিডনি বিকল ওযৌনাঙ্গে ক্যান্সার। আর ফলফল ১০০%অকাল মৃত্যু!৫. হকাররা মুখে বলবে যৌনরোগেরশেষ পরিণতি কিডনি বিকলহয়ে যাওয়া রোগিদের শতকরা ১০০জনই অকাল মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে, কিন্তুউদাহরণ দেয়ার সময়সারা দেশেরে সব হকার শুধুএকটা নামই বলবে। চিত্র-নায়ক জাফরইকবাল।পাঠক, চিত্র-নায়ক জাফর ইকবালকিডনি বিকল হয়ে মরেছিলেন বটে।আজ থেকে বছর বছর বিশেক আগে।কিন্তু তার মৃত্যুর কারণ হস্তমৈথুনবা স্বপ্নদোষ ছিল না, তা ধ্রুব তারারমতো সত্যি। আসলে অতি জনপ্রিয়তায়বুঁদ হওয়া মানুষদের কেউ কেউসে জনপ্রিয়তা হজম করতে পারেন না।অনিয়ন্ত্রিত উশৃঙ্খল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। জাফরইকবালের মৃত্যর কারণও জনপ্রিয়তা।তখনকার পত্রিকাগুলোরকোনো কপি উদ্ধারকরতে পারলে আমার কথারসত্যতা মিলবে।সাতফোঁটা রক্তথেকে একফোঁটা বীর্য তৈরি হয়—এতথ্যটা একদম ভুঁয়া। বীর্যের উৎসস্থলঅণ্ডকোষ। ব্রেন থেকে একধরনের হরমননিঃসরণ হয় অণ্ডকোষে। সেই হরমনথেকেই বীর্যকণার সৃষ্টি। আর ওই হরমনতৈরি হয় শরীরের আর সব উপাদানযা দিয়ে তৈরি অর্থাৎ খাদ্য ওপানি দিয়ে। রক্ত শুধু সেইহরমনকে মস্তিষ্কথেকে অণ্ডকোষে চালানকরতে পারে, বীর্য তৈরি করে না।বয়োসন্ধিক্ষণের পরে শরীরে আর সবউপাদানের মতোই নিয়মিত বীর্যরসতৈরি হয়। স্বাভাবিকভাবেইযৌনানুভূতি প্রবল হতে শুরু করে। কিন্তুসামাজিক আর ধর্মীয় অনুশাসনতো ছেলেমেয়েদের অবাধযৌনমিলন অনুমোদন করে না।তাহলে কোথায়যাবে বীর্যথলি বা অণ্ডকোষে জমাহওয়া বীর্যকণাগুলো? নিশ্চয়সেগুলো এমনি এমনি শরীরথেকে লোপাট হয়ে যাবে না। অনবরতজমা হতে থাকলে অণ্ডকোষের ধারণক্ষমাতাও ফুরিয়ে যাবে একসময়।ফলে তখন আরো তীব্রহবে যৌনানুভূতি। তখন হয়তাকে হস্তমৈথুন করে বের করতে হবে,নয়তো রাত্রে ঘুমেরঘোরে স্বপ্নদোষেরমাধ্যম্যে বেরিয়ে যাবে। আরযারা বেশি দুর্ভাগা, যাদেরস্বপ্নদোষ হয় না নিয়মিত; হকার,কবিরাজ পরামর্শে বা সামজিকঅনুশাসনেরভয়ে যারা হস্তমৈথুনে অপারগ,তাদের বীর্যপাতের একটাই রাস্তা—কোনো সুখানুভূতি ছাড়াই প্রসাবেরসাথে বীর্য বেরিয়ে আসা। হকার-কবিরাজরা তখন এর গালভরা নাম দেয়‘ধাতুভাঙা রোগ’।এ নাকি ভয়ঙ্কর এক রোগ। যারা একবারআক্রান্ত হয় তাদের জীবনথেকে নাকি চিরতরে নির্বাসিত হয়যৌনসুখ। তার ভবিষ্যত দাম্পত্য জীবনওস্থায়ী হওয়ার সম্ভবনা ০%!কী অদ্ভুত আবিষ্কার! একবার ভাবুনতো, ধর্ম-সমাজ, কুচিকিৎসারভয়ে আপনি হস্তমৈথুন করবেন না, স্বপ্নদোষ যাতে না হয় সেজন্য তাবিজ-কবচনেবেন, পানিপড়া খাবেন আবারপ্রস্রাবের সাথে বীর্য নির্গত হলেওতাকে ‘মহারোগ’ আখ্যায়িত করবেন—তাহলে বেচারা বীর্যকণাগুলো যাবেকোথায়?আগেই বলেছি ১৩-১৪ বছরবয়সে শরীরে দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। বিশেষকরে উচ্চতা। তাই এই সময় স্বাভাবিকখাবার পর্যাপ্ত খেলেও শরীরেরঅন্যান্য বৃদ্ধিগুলো উচ্চতা বৃদ্ধিরসাথে সাথে তালমিলিয়ে চলতে পারে না। তাই ওইসময়টাতে ছেলেমেয়েরকিছুটা রোগাটে হয়ে যায়। এতে ভয়না পেয়ে,খাদ্যগ্রহণটা পর্যাপ্তভাবে চালিয়েগেলেই আর কোনো টেনশন করারদরকার নেই। আর চোখমুখবসে যাওয়া কিংবা চোখেরনিচে কালি পড়া হলো অনিদ্রা আরদুশ্চিন্তার মিলিত ফল। সামাজিককিংবা ধর্মীয় অনুশাসনের জন্যইহস্তমৈথুনের পর একটা অপরাধবোধকাজ করে বয়োসন্ধিক্ষণেরছেলেমেয়েদের। একদিকে তীব্রযৌনানুভূতিরকারণে তারা হস্তমৈথুনকে ছাড়তেওপারছে না, অন্যদিকে এটাকে অপরাধবা ভবিষ্যতে যৌনরোগের আমন্ত্রকমনে করে দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুমহারাম করছে। হস্তমৈথুনকে জীবনেরআর দশটা স্বাভাবিক কাজমনে করলেই এই শারীরিকক্ষতিটা কিন্তু এড়ানো যায়।ডাক্তাররা রোগ নির্ণয়করতে রোগিকে যেমন প্রশ্ন করেন,তেমনি কিছু প্যাথলজিকাল টেস্টেরশরণাপন্ন হন। কিন্তু হকার-কবিরাজেরকাছে প্যাথলজিকাল যন্ত্র দূরে থাক,পেটে বিদ্যেই নেই! তাই কিছুছকবাঁধা প্রশ্নের আশ্রয় নেয় তারা।এখন আমরা চোখবুলিয়ে নিতে পারি কী সেইপ্রশ্নগুলোbr /> ১.আপনি কি বর্তমানে হস্তমৈথুনে অভ্যস্থ? অথবা আগে কখনো অভ্যস্থ ছিলেন?২. বসে থাকা অবস্থা থেকে হঠাৎউঠে দাঁড়ালে কি চোখে অন্ধকারদেখেন, মাথা ঝিম ঝিম করে?৩. দিনে কি তিন বারেরবেশি প্রস্রাব হয়?৪. প্রস্রাবে কি জ্বালা-পড়া আছে?বা কখনো ছিল?অথবা মাঝে মাঝে জ্বালাপোড়াকরে?৫. নির্গত হওয়ার সময় প্রস্রাব কি দুইধারায় পড়ে?৬. প্রসাবের শেষদিকে এসে কি শরীরে ঝাঁকুনি দেয়?৭. প্রস্রাবের শেষদিকে এসে কি প্রসাব ফোঁটায়ফোঁটায় পড়ে?৮. পানি দেখলে কিংবা পানিতেনামলে কি প্রস্রাবের বেগ আসে?৯. আপনার বীর্য কি অতি তরল?কিশোর ও তরুণ পাঠক একবার বুকে হাতদিয়ে বলুন তো, প্রশ্নগুলোর উত্তরআপনি কী দেবেন? আমারধারণা যদি ভুল না হয় অধিকাংশই এইনয়টি প্রশ্নের একই উত্তর দেবেন।সেটা হলো, ‘হ্যাঁ।’হকার কবিরাজরা কিন্তু আপনার ‘হ্যাঁ’শুনে একেবারে আকাশ থেকে পড়ারভাণ করবে। মুখোমণ্ডলে আতংকেররেখা ফুটিয়ে বলবে, ‘বলেনকি মশায়? নির্ঘাত আপনারমুত্রনালীতে পাথর হয়েছে। ছোট্টছোট্ট পাথর।’এরপর সে যুক্তি দেখিয়ে বলবে,মুত্রনালীতে পাথরআটকে আছে বলেই প্রসাব দুই ধারায়বের হয় এবং শেষদিকে এসে ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ে।রোগি যুক্তি শুনে ভাববেন, ঠিকইতো! কিন্তু হকারের যুক্তিতে মুগ্ধরোগি একবারও ভাববেন না, এইযুক্তিতে না হয় প্রসাবের দুইধারা কিংবা প্রসাব ফোঁটায়ফোঁটায় পড়ারব্যাখ্যা পাওয়া গেল।বাকি প্রশ্নগুলোর পেছনেরকারণগুলো কী? হকার তার কথারমারপ্যাঁচে, নানা গল্প শুনিয়ে প্রসঙ্গএমন দিকে নিয়ে যায় রোগির তখনঅতশত ভাবার অবকাশ থাকে না।মজমা থেকে হকারের ওষুধনিয়ে তবে বাড়ি ফেরেন।এখন আমরা প্রশ্নগুলোরব্যাখ্যা করা যায়কিনা দেখতে পারিbr /> প্রথমেই আসা যাকবসা থেকে উঠে দাঁড়ানোরব্যাপারটায়। মানুষ যখন একভঙ্গিতে বসে থাকে, তখন শরীর ওমনের একটা স্থিরতা আসে। সেইঅবস্থা থেকে হঠাৎ যখন উঠে দাঁড়ায়তখন সেই স্থিরতায় ব্যাঘাত ঘটে।ফলে ব্রেন ও মনের বোঝাপড়ায়সাময়িক ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।ফলে নিউরণে তালগোলপাঁকিয়ে যায়। এব্যাপারাটা অনেকটা থেমে থাকাবাসে বসে থাকা যাত্রীদের মতো।থেমে থাকা বাস হঠাৎ চলতে শুরুকরলে যেমন যাত্রীরা ভারসাম্যহারিয়ে পেছনেরদিকে হেলে পড়ে, এখানেও শরীর-মনের ভারসাম্যে ব্যাঘাতেরকারণে মাথা ঝিম ঝিম করে,চোখে সাময়িক অন্ধকারদেখা বা সর্ষেফুল দেখারমতো ঘটনা ঘটে।এরপর হলো, দিনে আপনি কতবার প্রসাবকরবেন? আপনার যদি ডায়েবেটিসনা থাকে, তবে দিনে তিনবারেরবেশি কেন, বহুবার প্রস্রাব করলেওতেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।আসলে ডায়েবেটিসছাড়া আরো কয়েকটা কারণে ঘন ঘনপ্রস্রাব হতে পারে। যেমন শরীরচড়া হওয়া,পানি বেশি খাওয়া বা কম খাওয়া।বেশি পানি খেয়ে যদি বেশিপ্রস্রাব হয় তাতে ক্ষতির তো কিছুদেখি না। আবার পানি কম খেলেওঘন ঘন প্রস্রাব হয়। কথাটা অদ্ভুতশোনালেও কিন্তু সত্য।আপনি কয়েকদিন যদি পানি কম খানতো খেয়াল করবেন, আপনার প্রস্রব হলুদহলুদ হবে, প্রস্রাব একবারে অনেকপরিমাণে নির্গতনা হয়ে বারে বারে প্রস্রাবের বেগপাবে এবং প্রস্রাবে জ্বালাপোড়াকরবে। এক্ষেত্রে একটুবেশি পানি খেলেই সমস্যারসমাধান!পুরুষের যৌনাঙ্গের ছিদ্রটা নলেরমতো গোল নয়, বরং চ্যাপ্টা। তাইযৌনাঙ্গের ছিদ্রটামুখটাওচ্যাপ্টা ধরনে

Total Pageviews