যাদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ ইসলামে

সব ধর্মেই নারী-পুরুষের বিবাহের কথা বলাহয়েছে। এক জন পুরুষ ও আর একজন নারী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েই মূলত একটি সভ্য সমাজেরগোড়া পত্তন করে। যদি বিয়ের বন্ধন না থাকেতবে, সমাজের কঠামো মজবুত হয়না। থাকেনাপারিবারিক বন্ধন। আবার একজন পুরুষ বা নারী যাকেখুশী তাকেই বিয়ে করতে পারেনা। সমাজের কিছুবিধি নিষেধ মেনে চলতে হয়। ইসলামী শরিয়তেওরয়েছে তারই এটি দিক নির্দেশনা। আলোচ্যআয়াতটির মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা কিছু নারীকেপুরুষের জন্য বিয়ে করাকে চিরতরে হারামকরেছেন। একে মোহার্রামাতে আবাদী বলে।২৩/ ﺣُﺮِّﻣَﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺃُﻣَّﻬَﺎﺗُﻜُﻢْ ﻭَﺑَﻨَﺎﺗُﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺧَﻮَﺍﺗُﻜُﻢْ ﻭَﻋَﻤَّﺎﺗُﻜُﻢْﻭَﺧَﺎﻻَﺗُﻜُﻢْ ﻭَﺑَﻨَﺎﺕُ ﺍﻷَﺥِ ﻭَﺑَﻨَﺎﺕُ ﺍﻷُﺧْﺖِ ﻭَﺃُﻣَّﻬَﺎﺗُﻜُﻢُ ﺍﻟﻼَّﺗِﻲﺃَﺭْﺿَﻌْﻨَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺧَﻮَﺍﺗُﻜُﻢ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﺮَّﺿَﺎﻋَﺔِ ﻭَﺃُﻣَّﻬَﺎﺕُ ﻧِﺴَﺂﺋِﻜُﻢْﻭَﺭَﺑَﺎﺋِﺒُﻜُﻢُ ﺍﻟﻼَّﺗِﻲ ﻓِﻲ ﺣُﺠُﻮﺭِﻛُﻢ ﻣِّﻦ ﻧِّﺴَﺂﺋِﻜُﻢُ ﺍﻟﻼَّﺗِﻲ ﺩَﺧَﻠْﺘُﻢﺑِﻬِﻦَّ ﻓَﺈِﻥ ﻟَّﻢْ ﺗَﻜُﻮﻧُﻮﺍْ ﺩَﺧَﻠْﺘُﻢ ﺑِﻬِﻦَّ ﻓَﻼَ ﺟُﻨَﺎﺡَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻭَﺣَﻼَﺋِﻞُﺃَﺑْﻨَﺎﺋِﻜُﻢُ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﻼَﺑِﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻥ ﺗَﺠْﻤَﻌُﻮﺍْ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻷُﺧْﺘَﻴْﻦِ ﺇَﻻَّﻣَﺎ ﻗَﺪْ ﺳَﻠَﻒَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﻏَﻔُﻮﺭًﺍ ﺭَّﺣِﻴﻤًﺎঅর্থাৎ;-তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছেতোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদেরবোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃ-কন্যা(ভাইঝি), ভগিনী-কন্যা(ভাগ্নি), তোমাদের সেমাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্য পান করিয়েছে,তোমাদের দুধ-বোন, তোমাদের স্ত্রীদেরমাতা(শ্বাশুড়ী), তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছসে স্ত্রীদের কন্যা, যারা তোমাদের লালনপালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করেথাক তবে এ বিবাহে তোমাদের কোন গোনাহনেই, তোমাদের ঔরষজাত পুত্রদের স্ত্রী, দুইবোনকে বিবাহে একত্রি করণ, কিন্তু যা অতীতহয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকারী দয়ালু।ভাই বোন নয় অথচ একই নারীর দুধ উভয়ে পানকরে থাকলে তাকে দুধ বোন বলে। বিয়েরক্ষেত্রে নিজের বোন ও দুধ বোন সমান।স্ত্রীর অন্য স্বামীর ঔরষজাত কন্যাকে রাবিবাবলে। সহবাসের আগেই যদি ঐ স্ত্রী বা রাবিবারমায়ের সাথে তালাক হয়ে গিয়ে থাকে তবে,রাবিবাকে বিয়ে করা হারাম নয়। স্ত্রী অবস্থায় একবোন থাকতে অপর বোনকে বিয়ে করা হারাম।তবে একের মৃত্যু বা তালাক হয়ে গিয়ে থাকলেঅন্য টিকে বিয়ে করা হারাম নয়। এ আয়াতেরসাথেসঙ্গতি রেখে আরও দুটি দৈত সম্পর্ককেবিয়েতে একত্রীকরণ হারাম করেছেন; তা হলফুফু ও ভাইঝি আর খালা ও বোনঝি।২৪/ ﻭَﺍﻟْﻤُﺤْﺼَﻨَﺎﺕُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﻣَﻠَﻜَﺖْ ﺃَﻳْﻤَﺎﻧُﻜُﻢْ ﻛِﺘَﺎﺏَﺍﻟﻠّﻪِ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻭَﺃُﺣِﻞَّ ﻟَﻜُﻢ ﻣَّﺎ ﻭَﺭَﺍﺀ ﺫَﻟِﻜُﻢْ ﺃَﻥ ﺗَﺒْﺘَﻐُﻮﺍْ ﺑِﺄَﻣْﻮَﺍﻟِﻜُﻢﻣُّﺤْﺼِﻨِﻴﻦَ ﻏَﻴْﺮَ ﻣُﺴَﺎﻓِﺤِﻴﻦَ ﻓَﻤَﺎ ﺍﺳْﺘَﻤْﺘَﻌْﺘُﻢ ﺑِﻪِ ﻣِﻨْﻬُﻦَّﻓَﺂﺗُﻮﻫُﻦَّ ﺃُﺟُﻮﺭَﻫُﻦَّ ﻓَﺮِﻳﻀَﺔً ﻭَﻻَ ﺟُﻨَﺎﺡَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓِﻴﻤَﺎ ﺗَﺮَﺍﺿَﻴْﺘُﻢﺑِﻪِ ﻣِﻦ ﺑَﻌْﺪِ ﺍﻟْﻔَﺮِﻳﻀَﺔِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠِﻴﻤًﺎ ﺣَﻜِﻴﻤًﺎঅর্থাৎ;-তোমাদের স্বত্বাধীন যেসব দাসীরয়েছে তাদের ছাড়া সকল সধবা নারীকেতোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে। এ হলআল্লাহর বিধান। এদের ছাড়া অন্য সকল নারীকেতোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। এ শর্তেযে তোমরা তাদের অর্থের বিনিময়ে তলবকরবে। ঘর-সংসার করার জন্য, আনন্দ-ফূর্তী করারজন্য নয়। বিয়ের মাধ্যমে তোমরা যে নারীদেরসম্ভোগ করবে, তাদের নির্ধারিত মোহর দিয়েদেবে। আর তোমাদের কোন গোনাহ হবেনাযদি মোহর নির্ধারণের পর কোন বিষয়ে পরষ্পরসম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ হলেন সর্বোজ্ঞহেকমত ওয়ালা।ﺍﻟْﻤُﺤْﺼَﻨَﺎﺕُ শব্দটি এ আয়াতে অন্যের স্ত্রী যিনিস্বামীর আয়ত্বে আছেন, যাকে সধবা বলাহয়েছে। অন্যের বিবাহীত স্ত্রী বিয়েরপাত্রী হিসাবে হারাম। তবে মোহার্রামাতে আবাদীনয়, আরজি বলে। তৎকালীন সামাজিক অবস্থারপ্রেক্ষিতে স্বত্বাধিকারী দাসীদের কথাটিএসেছে। পবিত্র কোরআন চলমান অবস্থা হতেসহনশীলতার মাধ্যমে ইসলামী শরিয়তকে বহালকরেছে। তাই একদা যা ছিল এখন যদি তা না থাকে,তাকে নতুন করে সৃষ্টি করতে কোথাও বলা হয়নি।অযথা তর্কেরও অবকাশ থাকেনা।বিয়ে হতে হবে সংসার করার জন্য, অভিসার বা ফূর্তীকরার জন্য নয়, তাই প্রকাশ্যেই হতে হবে। মোহরও আদায় করতে হবে। আয়াতের শেষে বলাহয়েছে, মোহর নির্ধারণের পর স্বামী স্ত্রীউভয়ে সম্মত হয়ে যদি মোহরে কমবেশী বাপুনঃনির্ধারণ করে তাতে দোষের কিছু নেই।২৫/ ﻭَﻣَﻦ ﻟَّﻢْ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻊْ ﻣِﻨﻜُﻢْ ﻃَﻮْﻻً ﺃَﻥ ﻳَﻨﻜِﺢَ ﺍﻟْﻤُﺤْﺼَﻨَﺎﺕِﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕِ ﻓَﻤِﻦ ﻣِّﺎ ﻣَﻠَﻜَﺖْ ﺃَﻳْﻤَﺎﻧُﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﻓَﺘَﻴَﺎﺗِﻜُﻢُ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕِﻭَﺍﻟﻠّﻪُ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﺑِﺈِﻳﻤَﺎﻧِﻜُﻢْ ﺑَﻌْﻀُﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﺑَﻌْﺾٍ ﻓَﺎﻧﻜِﺤُﻮﻫُﻦَّ ﺑِﺈِﺫْﻥِﺃَﻫْﻠِﻬِﻦَّ ﻭَﺁﺗُﻮﻫُﻦَّ ﺃُﺟُﻮﺭَﻫُﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ ﻣُﺤْﺼَﻨَﺎﺕٍ ﻏَﻴْﺮَﻣُﺴَﺎﻓِﺤَﺎﺕٍ ﻭَﻻَ ﻣُﺘَّﺨِﺬَﺍﺕِ ﺃَﺧْﺪَﺍﻥٍ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺃُﺣْﺼِﻦَّ ﻓَﺈِﻥْ ﺃَﺗَﻴْﻦَﺑِﻔَﺎﺣِﺸَﺔٍ ﻓَﻌَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﻧِﺼْﻒُ ﻣَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﺤْﺼَﻨَﺎﺕِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏِﺫَﻟِﻚَ ﻟِﻤَﻦْ ﺧَﺸِﻲَ ﺍﻟْﻌَﻨَﺖَ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻥ ﺗَﺼْﺒِﺮُﻭﺍْ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَّﻜُﻢْ ﻭَﺍﻟﻠّﻪُﻏَﻔُﻮﺭٌ ﺭَّﺣِﻴﻢٌঅর্থাৎ;-তোমাদের মধ্যে যাদের পুরো সংগতিনেই যা দিয়ে সম্ভ্রান্ত মুমিন মেয়েদেরবিয়েকরতে পারে, তারা নিজেদের মুমিন বাঁদীদেরমধ্যে কাউকে বিয়ে করবে। আল্লাহ তোমাদেরইমান সম্পর্কে ভাল ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন।তোমরা পরষ্পর অভিন্ন, সুতরাং তাদেরকে তাদেরমালিকের অনুমতি ক্রমে বিয়ে কর এবং নিয়মানুযায়ীতাদের মোহর প্রদান কর। যেন স্ত্রী হিসেবেবসবাসকারিনী হয়, প্রকাশ্য অনাচারিনী কিংবা গোপনঅভিসারিনী না হয়। বিয়ের বেষ্টনিতে আসার পর যদিতারা ব্যভিচার করে, তবে তাদের শাস্তি হবেসম্ভ্রান্ত নারীদের অর্ধেক। এব্যবস্থা তাদেরজন্য যারা ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়ার আশংকাকরে। আরযদি সবর কর তবে তা তোমাদের জন্য উত্তম।আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।এ আয়াতে মুহসানাত শব্দটি সম্ভ্রান্ত ঘরেরমেয়েদের বলা হয়েছে। সম্ভ্রান্তমেয়েদের বিয়ে করার যোগ্যতা বলতে এখানেমোহরের স্বল্পতাকেই বোঝানো হয়েছে।যথেষ্ট সামর্থ নেই আবার ব্যভিচার বা অসামাজিককাজে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট আছে, এমতঅবস্থায় যাকে মুমিন বলে সবাইজানে এমনদাসীকে তার মালিকের অনুমতি ক্রমে বিয়েকরতে বলা হয়েছে। তবে সামর্থ অর্জন করাপর্যন্ত ধৈর্যধারণকেই উত্তম বলা হয়েছে।দাসীকে বিয়ে সাময়ীক মৌজ করার জন্য না হয়েসংসার করার জন্যই যেমন হতেহবে তেমনইদাসীও অনাচারিনী বা গোপন অভিসারিনী হতেপারবেনা। যদি এমন কোন অপরাধ করেই বসেতবে তার শাস্তি সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়েদেরশাস্তির অর্ধেক ধার্য হবে। যদিও এখনও শরিয়তেরশাস্তি চুড়ান্ত বিধান আসেনি, তাই সমসাময়ীক শাস্তিইবর্তাবে।

Total Pageviews