থ্রিজির চেয়ে ফোরজি হবে ১০ গুণ বেশি গতির

দেশে শিগগিরই চালু হচ্ছে ফোরজি নেটওয়ার্ক। সম্প্রতি সরকারের তরফ থেকে ফোরজির লাইসেন্সের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়েছে। মোবাইল অপারেটগুলিও ফোরজি নেটওয়ার্ক স্থাপনের প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ফলে আশা করা যায় আগামীবছরের শুরুতেই ফোরজি নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে বাংলাদেশ।ফোরজি হল চতুর্থ প্রজন্মের ব্রডব্যান্ড সেলুলার নেটওয়ার্ক টেকনোলজি। ইন্টারন্যাশনাল টেলিকম্যুনিকেশন ইউনিয়ন-রেডিও কম্যুনিকেশনস সেক্টর (আইটিইউ-আর) কর্তৃক নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী ফোরজি সার্ভিসে হাই মোবিলিটি কম্যুনিকেশন (ট্রেনে বা গাড়িতে চলার সময়) ও লো মোবিলিটি কম্যুনিকেশনসের ( স্থির অবস্থা বা হাঁটাচলার সময়) জন্য ইন্টারনেটের গতি হতে হবে যথাক্রমে সেকেন্ডে ১০০ মেগাবিট ও ১ গিগাবিট।সাধারণভাবে ধরা হয় ফোরজি নেটওয়ার্কে ইন্টারনেটের গতি থ্রিজি নেটওয়ার্কের তুলনায় ১০ গুণ বেশি। তবে ফোর-জির নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। বর্তমানে বিটিআরসি কর্তৃক নির্ধারিত ফোর-জির গতি সেকেন্ডে ২০ মেগাবিট।নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির বিবর্তনের একটি ধাপ হল ফোরজি। ১৯৮০ ও ৯০ এর দশকে ব্যবহৃত ওয়ানজি ও টুজি মূলত ভয়েস ও সাধারণ ডিজিটাল ডেটা ট্রান্সমিশনে সক্ষম ছিল। পরবর্তীতে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সেবা প্রদানে সক্ষম থ্রি-জি ও ফোর-জি নেটওয়ার্কের যাত্রা শুরু হয় যথাক্রমে ১৯৯৮ ও ২০০৮ সালে।ফোর-জি প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করা গেলে তা দেশের তথ্যপ্রযুক্তিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। ফোরজির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল দ্রুতগতির ইন্টারনেট। ফলে এটি চালু হলে ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন সার্ভিস ব্যবহার করা যাবে অত্যন্ত সহজে। সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে ফোর-জি হতে পারে অন্যতম প্রধান সহায়ক।ফ্রিল্যান্সিংসহ অন্যান্য ইন্টারনেটভিত্তিক পেশার সাথে জড়িতদের জন্যও ফোর-জি হতে পারে অত্যন্ত উপযোগী। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইন্সটিটিউটের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যার দিয়ে সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এই সমীক্ষাই প্রমাণ করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দ্রুত গতির ইন্টারনেট কতো বড় ভূমিকা রাখতে পারে। দেশের প্রতিটি প্রান্তে ফোরজি পৌঁছে গেলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে নেওয়ার সুযোগ পাবে।দেশে ক্রমশ মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিটিআরসির ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৬৩.১২ মিলিয়ন। দেশের যেসব স্থানে ব্রডব্যান্ড সার্ভিস পৌঁছায়নি সেসব স্থানে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রধান মাধ্যম এখনও মোবাইল। তাই স্বাভাবিকভাবেই ফোর-জি দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।দেশের টেলিকম অপারেটরগুলি ইতোমধ্যে ফোরজি নেটওয়ার্ক স্থাপনের বিষয়ে তাদের আগ্রহ ও প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। তবে এ জন্য সরকারের তরফ থেকে বিনিয়োগ বান্ধব নীতিমালা প্রত্যাশা করছে তারা।এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলালিংকের ডিরেক্টর অব কম্যুনিকেশনস আসিফ আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরে ফোরজি একটি বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করি। আধুনিক প্রযুক্তির এই নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। নীতিমালা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আমরা দ্রুতই গ্রাহকদের কাছে ফোর-জির সুবিধা পৌঁছে দিতে চাই।’তবে ফোরজির বাস্তবায়ন আগামীতে কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির এই নেটওয়ার্ক স্থাপন অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ একটি প্রক্রিয়া। ফোরজি চালু হয়েছে এমন দেশগুলির সব স্থানকেও এখনো এর আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। মূলত শহর ও জনবহুল অঞ্চলেই ফোর-জি সেবা চালু করা হয়ে থাকে। তাছাড়া এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ফোর-জি উপযোগী মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা অপ্রতুল। দেশের স্মার্টফোন ব্যবকারীদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ ফোরজি উপযোগী স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকেন।ফোর-জির বাস্তবায়নে কিছু সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ থাকলেও সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমেসেগুলি মোকাবেলা করা সম্ভব। বিশ্বের বহু দেশের মতো বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নেও ফোর-জি ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।ঢাকাটাইমস

Total Pageviews