আমাদের মুখে অনেক সময়ই লাল ছোট ছোট গর্তের মত
হয়ে যায়। এতে করে খুব ব্যাথা ও জ্বালাপোড়া হয় ঐ
স্থানে। আস্তে আস্তে ব্যাথা বেড়ে তীব্র হয়ে অংশটি
সাদা রঙ ধারণ করে পড়ে ৪-৫ দিনের মজাহেই সেরে যায়।
যদিও আমাদের মনে হতে পারে এটা তেমন কোন কিছু না।
অল্প কিছু দিনেই যেহেতু সেরে যায় সুতরাং এটি নিয়ে
মাথা ঘামানোর কিছুই নাই।
মুখের ঘা এর বিভিন্ন ধরনের হয়। যেমন- মাইনর এপটাস
আলসার, মেজর এপটাস আলসার ও হারপেটিফরম এপটাস
আলসার।
মাইনর এপটাস আলসারঃ
১০ জনের মধ্যে ৮ জনেরই এই আলসার দেখা দেয়। এই
ধরনের আলসার আকারে ছোট, গোল, দেখতে হলুদ এবং
চারপাশে লাল হয়। এটি ৭ দিনের মধ্যে চলে যায়। এটা ১
টা থেকে ৫ টা মুখের ভেতরে হতে পারে। তুলনামুলক
ভাবে অন্য মুখের আলসার এর থেকে ব্যথা কম।
মেজর এপটাস আলসারঃ
খুবই ব্যথা যুক্ত এই আলসার ১০ জনের মধ্যে ১ জনের হয়।
আকারে অনেক বড় থাকে। এটি ২ সপ্তাহ থেকে ১ মাস
থাকতে পারে। ব্যথার জন্য শরীরে জ্বর এসে যায়,কিছু
খাওয়া কষ্ট হয়। সাধারণত এই আলসার তাদের হয় যাদের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, Diabetes আছে তাদের
ক্ষেত্রেও এটা দেখা যায়।
হারপেটিফরম এপটাস আলসারঃ
এটি আকারে ছোট হয় কিন্তু একসাথে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক
গুলো হয়। ১ মাস থেকে ২ মাস পর্যন্ত থাকে। এই আলসার
প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জনের হয়।
মুখের এই ঘা হয়ার কারণ কি তা জানা গেলে এটি
প্রতিরোধও করা যেত। আসুন জেনে নেই মুখে এই আলসার
হওয়ার কারন কি –
১। ভিটামিন ও আয়রনের স্বল্পতার কারণে। যেমন
ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২ অথবা অন্য কোন
ভিটামিন।
২। হরমোনাল কারণেও এটি হতে পারে। অনেক সময়
মেয়েদের মাসিক এর আগে অথবা পরে এই আলসার হয়।
মেনোপজ এর পরেও এই আলসার হতে থাকে।
৩। মুখের মাড়ি আঘাতগ্রস্ত হইয় অনেক সময় যার কারণে
এই ঘা হয়। জোরে জোরে দাঁত ব্রাশ করলে এটি হয়।
৪। ধূমপান, নেশা জাতীয় জিনিস, পান, মদ খেলেও মুখে
ঘা হয়।
৫। যাদের এইডস, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার এমন রোগ আছে
তাদের হয়।
৬। রাতে ঘুম না হলে অথবা দেরি করে ঘুমালে, পর্যাপ্ত
পরিমাণ ঘুম না হলে অনেক বেশি দুশ্চিন্তা করলে মুখে
ঘা হতে পারে।
৭। বংশ গত কারনেও মুখের ভিতর আলসার হয়।
৮। মুখে অ্যালার্জি থাকলে তাও ঘা-এর কারণ হতে
পারে।
৯। ঠাণ্ডা লাগলে মুখে ঘা হতে পারে।
কিভাবে মুখের ঘা থেকে প্রতিকার সম্ভব –
১। রাস্তা ঘাট কিংবা বাইরের পানীয় না খাওয়া।
২। রাতে কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমান।
৩। ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নেওয়া।
৪। নরম দাঁত ব্রাশ ব্যবহার করুন যেটায় চাপ বা ঘষা লাগবে
না।
৫। সাধারণত ৭ দিনের মধ্যে এই ঘা ভালো হয়ে যায়। যদি
না হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ মাফিক কিছু পেস্ট বা
জেল ব্যবহার করুন। মাউথ ওয়াশ মুখের ব্যথা দূর করতে
সাহায্য করে। এটিও ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬। ঘরে বসে গরম পানিতে লবন অথবা বেকিং সোডা
দিয়ে কুলি করলে আরাম পাবেন। তাছাড়া ১ চিমটি
বেকিং সোডা আর একটু পানি নিয়ে মিশিয়ে ঘা এর উপর
লাগিয়ে রাখতে পারেন।
ঘা এর উপর পিয়াজ দিলে খুব তাড়াতাড়ি উপকার পাবেন,
কিন্তু অনেক ব্যথা বাড়বে। ভিটামিন ই ক্যাপসুল ঘা এর
উপর ভেঙ্গে দিন। অথবা টি ব্যাগ ঘা এর উপর রেখে দিন।
এতেও দ্রুত নিরাময় হয়।
৭। মিল্ক অফ মেগ্নেসিয়া ঘা এর উপর দিলে অনেক
ভালো হয়। এটি মুখের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
৮। প্রতিদিন টক দই খাবেন।
৯। মসলা যুক্ত খাবার পরিহার করা।