অলিভ অয়েল এর উপকারিতা বহুদিন ধরেই বিশ্ব জুড়ে সমাদৃত। ত্বক ও চুলের ব্যবহার ছাড়াও দৈনন্দিন নানা কাজেও অলিভ অয়েল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আপনার ঘরে যদি অলিভ অয়েল থাকে তাহলে প্রতিদিনের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন শুধুমাত্র অলিভ অয়েল ব্যবহার করেই। ভোজ্য তেল হিসেবে অনেক ধরনের তেল ব্যবহৃত হয়। তবে সারা বিশ্বে যত রকম ভোজ্য তেল রয়েছে তার মধ্যে স্বাস্থ্যকর তালিকার দিক থেকে শীর্ষস্থান দখল করে আছে অলিভ অয়েল। সুস্থ ও ফিট দেহের জন্য অলিভ ওয়েলের চাহিদা অত্যন্ত ব্যাপক। অনেক দেশে অলিভ অয়েল সাধারণত কেবল সালাদের তেল হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। আবার অনেক দেশের রান্নার জরুরি উপকরণ এটি। তবে কেবল রান্নাই নয়, বিশেষজ্ঞদের মতে এই অলিভ অয়েলকে আরও নানা প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। আসুন জেনে নেই, সালাদ বা রান্নার কাজ ছাড়াও অলিভ অয়েলের কিছু উপকারিতা।
অলিভ অয়েল এর উপকারিতা
১.শেভ করার কাজেঃশেভ করতে গেলেন আর দেখলেন শেভিং ক্রিম শেষ তখন কি হবে? শেভিং ক্রিমের বদলে ব্যবহার করুন অলিভ অয়েল। মসৃণ শেভ হবে এবং ত্বকও রুক্ষ হবে না।
২. স্ক্রাবার হিসাবেঃ
ওটমিল, সামান্য ক্রিমের সঙ্গে অলিভ ওয়েল মিশিয়ে তা মুখ পরিষ্কারের স্কার্ব হিসাবে ব্যবহার করুন।
৩. মরিচা রোধেঃ
লোহার যন্ত্রপাতি বা গ্রিলের মরিচা প্রতিরোধ করতে অলিভ ওয়েল ব্যবহার করুন।
৪. বেবি ম্যাসাজ অয়েলঃ
বাচ্চাদের ম্যাসাজের জন্য অলিভ ওয়েলকে সেরা বলে ধরা হয়।
৫.স্টেইনলেস স্টিল চকচকে করতেঃস্টেইনলেস স্টিলের থালা বাসন চকচকে করতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন। স্টেইনলেস স্টিলের যেই অংশে দাগ পরে গিয়েছে সেই স্থানে কিছুক্ষন অলিভ অয়েল ঘষে নিলে অনায়াসেই দাগ উঠে যায়।
৬.আসবাবপত্র পলিশ করতেঃ
এক কাপ অলিভ ওয়েলের সঙ্গে এক কাপ ভিনেগার মিশিয়ে একটি স্প্রে বোতলে নিন। আসবাবপত্র পরিষ্কারের কাজে একে ব্যবহার করুন।
৭. হাতের কালশিটে ভাব দূর করতে অলিভ ওয়েল ব্যবহার করুন।
৮. ওয়াক্সিংয়ের পর হাত ও পায়ের চিটচিটে ভাব দূর করতে অলিভ ওয়েল মাখুন।
৯. চুলকে স্থির করে রাখতে চাইলে অলিভ ওয়েল ব্যবহার করুন চুলে। মনে হবে যেন জেল দিয়েছেন।
১০. লিপজেলঃ
মৌচাক থেকে প্রাপ্ত মোমের সঙ্গে সামান্য অলিভ ওয়েল মিশিয়ে একটি কৌটায় রেখে দিন। এটি পরে লিপজেলের কাজ করবে।
১১. হেয়ার কন্ডিশনারঃ
চুলের কন্ডিশনার হিসাবে অলিভ ওয়েল দারুণ কাজে দেয়। চুলে মেখে একটি গরম তোয়ালে পেঁচিয়ে রাখুন।
১২. ব্রাশগুলোকে চকচকে রাখতে এগুলো ধুয়ে অলিভ ওয়েলে পলিশ করুন।
১৩. মেকআপ রিমুভারঃ
মেকআপ মুছতে রিমুভার হিসেবে অলিভ ওয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
১৪. দাঁতের যত্নেও দারুণ এক উপাদান অলিভ ওয়েল।
১৫. বেবি র্যাশ দূর করতেঃ
শিশুদের নিতম্ব থেকে র্যাশ দূর করতে সামান্য অলিভ ওয়েল মাখিয়ে দিন।
১৬. নাক ডাকা বন্ধ করতেঃঅলিভ অয়েল নাক ডাকা বন্ধ করতে সাহায্য করে থাকে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক চুমুক অলিভ অয়েল খেয়ে নিন। এটি আপনার গলার পেশীকে পিচ্ছিল করে থাকে এবং নাক ডাকা বন্ধ করে দেয়।
১৭.পোষা প্রাণীর যত্নে ব্যবহারেঃ
পোষা প্রাণীর গোসলের পানিতে ১/৪ চা চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। তাহলে পোষা প্রাণীর লোম ও ত্বক ভালো থাকবে।
১৮. স্ট্রেচ মার্ক দূর করতেঃ
ডার্মাটোলজিস্টগণ ত্বকের ফাটা দাগ বা স্ট্রেচ মার্ক-এ অলিভ অয়েল ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এ সব ফাটাদাগে নিয়মিত ম্যাসাজ করলে দাগগুলো ধীরে ধীরে হালকা হয়ে যায়। শুরু থেকেই রাতে শোবার আগে ও গোসলের পর পেট ওথাই-এ অলিভ অয়েল ব্যবহার শুরু করতে পারেন। যা অ্যান্টি স্ট্রেচ মার্ক ক্রিম হিসেবে কাজ করবে।
১৯. নখ ভাঙ্গা রোধেঃ
হাত পায়ের নখে অলিভ ওয়েল ম্যসাজ করলে নখ ভাঙ্গা রোধ হয়।
২০. মেকআপ ভাল রাখতেঃ
শুষ্ক ত্বকে মেকআপের সময় ফাউন্ডেশন ব্যবহারের আগে ১/২ ফোঁটা অলিভ ওয়েল মুখে মেখে নিন। এতে মেকআপ বসবে ভালো এবং মেকআপের পর ত্বক উজ্জ্বল দেখাবে।
২১. হাত পা নরম ও সতেজ রাখতেঃ
প্রতিদিন ঘুমানোর আগে হাতে ও পায়ে অলিভ ওয়েল ম্যাসাজ করুন। এতে পা ফাঁটা দূর হবে এবং হাত পা নরম এবং সতেজ থাকবে।
অলিভ অয়েল সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর
অলিভ অয়েল কি সরাসরি মাথার চুলে ব্যবহার করা যায়?
উত্তরঃ
চুলের যত্নে অলিভ অয়েল অনেক বেশি উপকারি। এটি সরাসরিও চুলে ব্যবহার করা যায়, এতে কোনোপ্রকার ক্ষতি হয় না। তবে কিছু স্বাস্থ্যকর উপকরণের সাথে ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
যেভাবে ব্যবহার করবেন :
১. একটি চিরুনি অলিভ অয়েলের মধ্যে ডুবিয়ে নিন তারপর ফ্রিজি চুলে আঁচড়ে নিন। এতে চুল ময়েশচার হয়ে ফ্রিজিনেস কেটে যাবে।
২. শ্যাম্পু করার পর হাতের তালুতে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল নিয়ে ভালো ভাবে দুই হাতে ঘষে ফেলুন। তারপর চুলে কন্ডিশনারের বদলে লাগিয়ে ফেলুন।
৩. সপ্তাহে অন্ততপক্ষে একবার হালকা গরম অলিভ অয়েল চুলে ভালো ভাবে ম্যাসাজ করে লাগান। এভাবে ২/৩ ঘণ্টা চুলে তেল লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করুন। তারপর নিজেই লক্ষ করবেন শাইনি আর স্বাস্থ্যকর চুলের বাহার।
৪. সমপরিমাণ জলপাই তেল আর বাদামের তেল একসাথে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এভাবে ৩ সপ্তাহ করলে খুশকি অনেকটা কমে আসবে।
৫. মাথায় অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে গরম পানিতে ডুবানো তোয়ালে দিয়ে মাথা পেঁচিয়ে নিতে হবে। খেয়াল রাখবেন তাপমাত্রা যেন সহ্য ক্ষমতার মধ্যে থাকে। তোয়েল ঠাণ্ডা হয়ে গেলে মাইক্রোওয়েভে আবার গরম করে নিন। এভাবে কয়েকবার করুন।
৬. একটি ডিমের কুসুমের সাথে ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ৫ ফোঁটা লেবুর রস মেশান। চুলে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন তারপর ধুয়ে ফেলুন। আপনার চুল হয়ে উঠবে নরম আর উজ্জ্বল। ধন্যবাদ
আশাকরি আমাদের পোস্ট টি আপনাদের ভাল লেগেছে। অলিভ অয়েল এর উপকারিতা গুলো আপনাদের জীবন যাপন করে তুলুক আরও আনন্দময়। ভাল থাকুন আর আপনার ভাল লেগে থাকলে অন্যদের সাথেও শেয়ার করবেন ।