-------অামরা 3বন্ধু ছোট থেকে একসাথে বড় হয়েছি। অামি সানজিমুল অার রায়হান। অামরা একে অপরের যেন পরিপুরক। কেউ কাওকে ছাড়া চলতে পারিনা। সেই প্রাইমারি থেকে একসাথে পড়া শুরু করি।একসাথে প্রাইবেট পড়তাম,খেলতাম,ঘুরতাম। সব কিছু একসাথে করতাম। কতই না সুন্দর ছিল সেই দিন গুলো।
.
তারপর অাস্তে অাস্তে বড় হতে লাগলাম। প্রাইমারি শেষ করে সবাই একসাথে ক্লাস সিক্স এ ভর্তি হলাম।খৃুব মজা করে দিন গুলো কাটিয়ে দিতাম।
.
যাইহোক,ওগুলো ত কেবলই স্মৃতি। অামরা এখন কলেজে পড়ি।
.
3জন মেসে উঠলাম।প্রতিদিন কলেজ যাই।খৃুব মজা করি।সানজিমুল অাবার একটূ ফাযিল মেয়েদের সমানে প্রপোজ করে।কিন্তু প্রেম করেনা।প্রপোজ করার মাঝেই ও কি যেন একটা মজা পায়।
অামি অার রায়হান ভদ্র। কিন্তু নিজেদের মাঝে খুব ফাইজলামি করি।
.
মেসে উঠার পর ভালোই চলছিল দিন গুলো।সময় মত পড়তাম। অাবার বিকালে ঘুরতে বের হতাম। শহর টা ঘুরে ঘুরে দেখতাম।খুব ভালো লাগত।
.
কয়েকদিন পর গ্রাম থেকে এসে অারেকটা ছেলে অামাদের মেসে উঠল। যেহেত অামাদের রুমে একটা সিট খালি ছিল।তাই ওর জায়গা অামাদের রুমেই হল। ওর নাম মাহফুজ।দেখতে খুব সুন্দর,ভদ্র একটি ছেলে।
.
মাহফুজের বাবা যাওয়ার সময় অামাদের বললেন।
বাবারা তোমরা অামার ছেলেটাকে দেখে রাইখ:
অামরা বললাম চিন্তা কইরেন না অাঙ্কেল। ওকে অামরা অামাদের ভাইয়ের মত করে দেখে রাখব।অাপনি চিন্তা করবেন না। তারপর মাহফুজের বাবা চলে গেলেন।
.
সবাই মাহফুজের সাথে পরিচিত হলাম অামাদের কলেজেই অামাদের সাথে পড়ে।
কিন্তু ছেলেটা ত একটু বেশিই ভদ্র দেখা যাচ্ছে।সারাদিন পড়ে। রাত্রে অামরা ঘুমাই পড়তাম অার ও লাইট জালিয়ে পড়ত।মেজাজ টা খৃুব খারাপ হত। এত পড়ে কি হবে।অামরা খৃুব বকা দিতাম ।
কিন্তু তারপরেও ও হাসিমুখে অামাদের দিকে তাকাত।কিন্তু কিছু বলত না।
.
4-5দিনের মাঝেই মাহফুজকে অামাদের মত করে ফেললাম।এখন ও অামাদের মতই পড়ে। এক টাইমে সবাই ঘুমাতে যাই।বিকালে একসাথে ঘুরতে যাই। অার চা এর দোকানে 2টা চা কে 4টা কাপে করে খেতাম।
মাহফুজ কে অামাদের সবার খুব ভাল লাগত।যদিও প্রথমে অসহ্য লাগছিল,বেশি ভদ্র হওয়ার কারণে।
.
অামরা প্রতিদিন কলেজ যাইতাম । মাহফুজ একটা মেয়েকে প্রথম দেখাতেই ভালবেসে ফেলে। ও অাবার খুব ভিতু। অামাদের যখন মেয়েটার কথা বলে। অামরাই মেয়েটার সব তথ্য সংগ্রহ করি।
মেয়েটার নাম তুরা।অামাদের সাথেই পড়ে।দেখতে যে খুব সুন্দরি তা নয়।কিন্তু চেহারাটা খুব মায়াবি।
.
মাহফুজ জীবনেও ওর মনের কথা বলতে পারবে না তা অামরা ভালো করেই জানি।তাই অামরাই বলে দিলাম তুরাকে।তুরা তো রেগে অাগুন।অাবার এমন কিছু বললে নাকি স্যার কে বলে দিবে।অামরা ভয় পেয়ে গেলাম।কারণ প্রিন্সিপাল স্যার খুব রাগি মানুষ।জানতে পারলে কি যে করবেন!! তাই তুরাকে অার কিছু বললাম না।
.
পরথেকে দেখতাম মাহফুজ সবসময় তুরার পাশের ব্রেঞ্চে বসত।প্রায় সবসময়ই তাকিয়ে থাকত তুরার দিকে।অামরাও খুব চেষ্টা করতাম,যাতে ওদের রিলেশন টা হয়ে যায়। কিন্তু তুরা কিছুতেই রাজি হচ্ছে না।রাজি হবে বলেও মনে হয়না।অামাদের ও খুব খারাপ লাগত।মাহফুজের সাথে রিলেশন করলে এর কি এমন ক্ষতি হয়।তাছাড়া মাহফুজ দেখতেও খুব সুন্দর।কিন্তু তুরার কাছে মাহফুজ ওর দু:চোখের কাটা।
.
অামরা মাহফুজ কে অনেক বুঝালাম,তুরা কে ভুলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু মাহফুজ এসব কথা শোনেই না। যে করেই হোক তুরার সাথে ও প্রেম করবেই।
.
যাইহোক,অামরা সেই অাগের মতই চলছিলাম। তুরা সাভজেক্ট টা নতুন যোগ হয়েছে অামাদের মাঝে।তুরাকে কিভাবে বুঝানো যায় এইটা নিয়ে অনেক প্ল্যান করতাম।কিন্তু অামাদের সব প্ল্যান'ই ব্যর্থ হত।কিন্তু অামরা হাল ছাড়তাম না। অামরা 3জন নিয়ত করেই ফেলেছি।যে করেই হোক মাহফুজের সাথে তুরার রিলেশন টা করিয়ে দিবই।
.
.
.
এখন মাঝে মাঝে দেখতাম তুরাও মাহফুজের দিকে তাকায়। কিছু বললে অাগের মত রাগ দেখায় না।অনেক সময় নিজ থেকেই অামাদের সাথে কথা বলতে অাসে।মাহফুজ ত খুব খুশি।কারণ পজিটিব কিছু ঘটতেছে। না হলে তুরা এত ভালো ব্যবহার শুরু করবে কেন।হয়তো মাহফুজ কে ভালবেসে ফেলেছে। অামরাও এতে খুব খুশি হতাম।যাক অামাদের মনের অাশা কিছুটা হলেও পুরণ হয়েছে।এভাবে চলতে থাকলে তুুরার সাথে মাহফুজের রিলেশন হয়েই যাবে।অার অামরা ত মাহফুজ কে অাগেই বলে নিছি।তুরার সাথে রিলেশন হলে অামাদের 3জনকে অনেক কিছু খাওয়াতে হবে।ও অামাদের কথা দিছে খাওয়াবে।
যদিও খাওয়ার কথাটা অামরা মজা করেই বলেছি।
.
.
.
কয়েকদিন পর অামরা একটা জরুরি কাজে গ্রামে গেলাম। মাহফুজ কে অনেক রিকোয়েস্ট করলাম অামাদের সাথে যেতে কিন্তু রাজি হলনা।
তবে বলছে এর পরের বার যাবে।অামরাও অার কিছু বললাম না।কারণ অামরা কালকেই চলে অাসব।পরের বার গিয়ে কয়েকদিন থাকব। তখন ওকে জোর করেই নিয়ে যাব।
তো অামরা তিন জন গ্রামে চলে গেলাম।
.
পরদিন সকালে রেডি হচ্ছি চলে অাসব।তো সানজিমুলের একটা কাজ পড়ে যাওয়াতে একটু দেরি করেই অাসতে হল।হঠাত মাহফুজ ফোন দিল।
.
ফোন দিয়েই বলল: দোস্ত একটা খুশির খবর।
অামি : কি!!!!বল???
মাহফুজ: না না বলা যাব না । বললে তো শেষই। তোদের জন্য এটা সারপ্রাইজ।অার অাজকে তদের সবাই কে খাওয়াব।
অামি: ঐইই হারামি তারমানে তুরা রাজি হইছে!!!
মাহফুজ: অার কিছু বলব না।তারাতারি অায়।এই বলেই ফোন কেটে দিল।
.
অামি বুঝেই ফেলছি তুরা রাজি হয়ে গেছে।অামার খুব খুশি লাগছিল।
তারাতারি রায়হান কে গিয়ে বললাম।রায়হান শুনে খুশিতে এমন একটা লাফ দিল ইয়ে। মনে হল ওকে যায়া বলছি: রায়হান কাল তোর বিয়ে।এটা শুনে খুশিতে লাফাচ্ছে।
.
সানজিমুল কে বললাম ও বলল
সবাই রিলেশন করতে পারেনা অাবার পারেও।
.
ওই মিয়া কি সব উল্টাপাল্টা বলতেছ!!
অাসলে ও অার একটু বেশিই খুশি হয়ে গেছে।যার জন্য কি বলতেছে খেয়াল ই নাই।
.
অাসলে কলেজে উঠার পর অামাদের মনে হচ্ছে।অাজকের মত খুশি অাগে কখনো হয়নি।কারণ অামরা তো অাগে থেকেই তিন জন খুউউউব ভালো বন্ধু।অার মাহফুজকেও অামরা খুব অাপন করে নিয়েছি।যার জন্য অামাদের এত খুশি লাগছে।
.
তো অামরা বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দিলাম।
পথে মাহফুজ অাবার ফোন দিছে।তারাতারি যাইতে বলল। অামাদের নাকি খুব বড় একটা সারপ্রাইজ দিবে।অামাদের ত অার সহ্য হচ্ছিল না।
.
তো অামরা সিএনজি দিয়ে যাচ্ছি। অামি ভাবছি,কি সারপ্রাইজ হতে পারে।
তো মেসে প্রায় চলে অাসছি।তখন রাস্তায় দেখলাম খুব ভির।বুঝলাম না এখানে তো কখনো এত ভির হয়না।অাজ এত ভির কেন। যেহেতু এসেই পড়ছি।
তাই ভাড়া দিয়ে নেমে গেলাম।1মিনিট হাটলেই মেসে চলে যাব।
.
কিন্ত এত ভিরের কারণ খুজে পাচ্ছিলাম না।
সামনে যত যাচ্ছি।হার্টবিট কেন জানি বেড়ে যাচ্ছে।
অনেকেই অনেক কথা বলতেছে:-
লালা জামা পড়া......
রাস্তা পার হতে ছিল....
ছেলেটা খু্ব সুন্দর....ইত্যাদি ইত্যাদি।
.
অামার নি:শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিল।
কিন্তু যখন দেখলাম দুইটা দেহ রক্তে লাল হয়ে রাস্তায় পড়ে অাছে। অামার মনে হল। অামার শরীরে 4টা কলিজা অাছে।1টা কলিজা জোর করে কেউ বের করে নিল।
.
কারণ একটা দেহ মাহফুজের অারেকটা দেহ তুরার।কি দেখছি অামি। স্বপ্ন দেখছি না তো।
ওরা নাকি রাস্তার ওই পাশ থেকে এই পাশে অাসতেছিল। একটা ট্রাকে চাপা দিছে।সঙ্গে সঙ্গেই দু-জন চিরতরে না ফেরার দেশে চলে গেছে।তাই হয়তো কেউ অার হসপিটালে নিয়ে যায়নি।
.
অামার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে।নি:শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। সবার সামনেই অামার বন্ধুকে জড়াই ধরে চিতকার করে বলতেছি। দোস্ত ফিরে অায়।অামাদের সারপ্রাইজ লাগবেনা। ফিরে অায় তুই। অামাদের খাওয়াতে হবেনা দোস্ত। অামরাই তকে খাওয়াব।প্লিজ ফিরে অায়।
.
মনে হচ্ছে চারপাশে কে যেন বলছে: তুই হাজার কাদলেও ও অার ফিরে অাসবেনা।
রায়হান,সানজিমুলের অবষ্থাও অামার মত হয়ে গেছে।
মনে হচ্ছে,জিবনের প্রথম এত কষ্ট হচ্ছে।
.
হ্যা রে দোস্ত তুই অাজ অামাদের সত্যিই সারপ্রাইজ দিলি।এত বড় সারপ্রাইজ অামরা কখনোই অার পাইনি।এত বড় সারপ্রাইজ যে তুই দিবি।তা কল্পনাও করতে পারিনাই।
.
.
.
প্রিয়২৪.কম
.
.
.
মাহফুজ অামাদের ছেড়ে চলে গেছে অাজ 3মাস হল।
অামরা এখন অার কলেজে যাইনা।অামাদের মনের অানন্দ টাও উড়ে চলে গেছে। সানজিমুল এখন অার মেয়েদের প্রপোজ করেনা।রায়হান ও অার সারাদিন গান শুনেনা।অামাদের সবার দুষ্টুমি ভাব টা চলে গেছে।
দোকানে যখন চা খেতে চাই।মনের অজান্তেই মুখ থেকে বের হয়ে অাসে মামা 2কাপ চা কে 4কাপে করে দাও।
.
মাহফুজ অাগে অাকাশের তারা দেখত। অামাদের দেখতে বলত।কিন্তু অামরা বলতাম এটা দেখার কি হল। তুই ই দেখ।
.
নারে দোস্ত এখন কেউ অামাদের অাকাশ দেখতে বলেনা। কিন্তু অামরা নিজেরাই অাকাশ দেখি।যখন দেখি 2টা তারা একসাথে তখন মনেহয়।তুরা অার তুই অামাদের দিকে তাকিয়ে হাসতেছিছ।অার অনেক গুলো তারা একসাথে দেখলে কি মনেহয় জানিস?? মনেহয় ওগুলো তদের ছেলেমেয়ে।
.
দোস্ত তকে হারানোর ব্যাথা অামাদের মনে দাগ কেটে গেছে।কোন দিনও তকে ভুলতে পারব না।যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস।
(সমাপ্ত)