রাত ১+...
.
বালিশের নিচে ফোনের ক্রিং ক্রিং শব্দে ঘুম ভাঙে
নিধীর। রায়হান ফোন করেছে। এত রাতে রায়হানের ফোন
পেয়ে কিছুটা অবাকই হয়। এমন সময় তো ওর ফোন আসার
কথা না। কোন সমস্যা হল কিনা কে জানে। অতঃপর তাই
তারাতারিই রিসিব করে ঘুম ঘুম চোঁখে বলে,
.
- এত রাতে ফোন,কি ব্যাপার?
- আরে না। কোথায় তুই এখন?
- আমি তো মঙ্গল গ্রহে বাতাস খাচ্ছি।
- ঐ ফান বাদ দে,কোথায় বল।
- আরে এত রাতে বাসায় ছাড়া আর কোথায় থাকবো।
- কাল আমার সাথে দেখা করবি বিকাল ৪ টায়।
- কি ব্যাপার হঠাৎ এত জরুরি তরফ।
- হু একটা সারপ্রাইজ দিবো তোকে।
- কি সারপ্রাইজ দিবি বলনা?
- ঐ সালি সারপ্রাইজ তো সারপ্রাইজই, বলে দিলে কি
আর সারপ্রাইজ থাকে নাকি?
- তাও তো একটা কথা, আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু আসবোটা
কোথায়?
- যেখানে সব সময় দেখা করি সেখানে।
- আচ্ছা চলে আসবো।
- হু এখন রাখি তাহলে বাই,সময় মত চলে আসিস কিন্তু।
.
টু টু শব্দে রায়হান ফোন কেটে দেয়। নিধী ফোনটা পূনরায়
যথাস্থানে রেখে আবার ঘুমিয়ে পরে।
.
পরের দিন বিকাল ৪ টা-
.
নিধী অনেকক্ষন যাবোৎ কর্নফূলী পার্কের কোনার
ব্যাঞ্চটিতে বসে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে। ঘড়িতে
সময় প্রায় পাঁচটা ছুইছুই। রায়হানের আসার কোন খবর নেই,
এদিকে ফোনও রিসিব করছেনা। খুব রাগ হচ্ছে নিধীর।
.
একটা মেয়ে উনার জন্য সেই কখন থেকে বসে আছে, আর
নবাবজাদার আসার কোন খবর নেই। আজ আয় তোর একদিন
কি আমার একদিন হারামি। তোরে যদি আজ ভর্তা না
করছি। আয় তুই আজ। রাগে ফেটে মনে মনে আরও বিভিন্ন
কথা বলেই চলছে।
.
ইচ্ছে করছে উঠে চলে যেতে কিন্তু গেলে তো এতটা সময়
অপেক্ষা করাটাই মাটি হয়ে যাবে, তাই যেতেও পারছে
না।
অল্প কিছুক্ষন পরই রায়হানের উপস্থিতী বুঝতে পারে।
পিছন থেকে ঘারে কেউ হাত রেখেছে। কে হতে পারে তা
আর বুঝতে বাকি থাকে না।
.
নিধী পিছন সজরে পিছনে ঘুরে বলে উঠে, সয়তান, বান্দর,
কু..........এতটুকু বলেই চুপ হয়ে যায়। রায়হানে পাশে অচেনা
কাউকে দেখা যাচ্ছে। নিধী কিছু বলার আগেই রায়হান
হাঁসতে হাঁসতে বলে উঠে,
.
- কিরে থামলি কেন? আবার শুরু কর, অচেনা কারো কাছে
নিজের বন্ধুকে অপমান করার সময় থামতে নেই, বলনা।
- ঐ তুই একদম হাঁসবি না বলে দিলাম। তোর হাঁসি দেখে
আমার শরীর জ্বলছে।
- ভায়ার সার্ভিস ডাকবো?
- ঐ ফান করবি না বলে দিলাম।
- আচ্ছা আর করবো না। আয় পরিচয় করিয়ে দিই।
.
রায়হান পাশে থাকা মানুষটির সাথে নিধীর পরিচয়
করিয়ে দেয়, দোস্তত ও অপর্না। তোকে বলেছিলাম মনে
আছে? আরে ঐ যে ক্যান্টিনে বসে একদিন বললাম না,
একটি মেয়েকে খুব ভালোবাসি,সেই মেয়েই ও। গতকাল
ওর বাবার সাথে ঢাকায় এসেছে।
.
এবার অপর্নাকে বলে, ও আমার সবচেয়ে কাছের দোস্ত
নিধী। আজ চার বছর ধরে একই সাথে হাঁসি আড্ডায় মেতে
আছি।
.
নিধীর রায়হানের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে।
অপর্না নিধীর দিকে কখন হাঁত বাড়িয়ে দিয়েছে
খেয়ালই করেনি। অতঃপর ২য় ডাকে ঘোর কাটে,
.
- এই যে আপু,বলোনা কেমন আছো? (অর্পনা)
.
নিধী অপর্নার হাতে হাত মিলিয়ে চাপা হাঁসি দিয়ে
উত্তর দেয়,
.
- এইতো আপু অনেক ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
- হু অনেক ভালো। তোমার কথা রায়হান আমাকে অনেক
বলেছে। আসলেই তুমি অনেক ভালো।
- তাই না। (চাপা হাঁসি দিয়ে)
.
পাশে থেকে এবার নিধীকে উদ্দেশ্য করে রায়হান বলে
উঠে, কিরে দোস্ত সাপ্রাইজটা কেমন হল?
.
- হু সত্যিই খুব বিষ্মিত হয়েছি কেননা আমি তো
ভেবেছিলাম তুই ফান করে বলিছিস কিন্তু সবই যে সত্যি
তা তো বুঝতেই পারিনি বা সেইভাবে বলিসওনি কখনও।
- আরে সিরিয়াস মুডে বললে তো সাপ্রাইজটা আর দেয়া
হত না।
- এই শোন, বাবা না আমাকে ফোন করেছিলো এখনই
আমায় বাসায় যেতে বলেছে। বাসায় নাকি মেহমান
এসেছে।
.
- এখনই যাবি?
- হ্যাঁরে, তোরা গল্প কর এতদিন পর দেখা তোদের, আমি
বরং ঐদিকটা সামলাই গিয়ে।
- তাহলে আর আটকাবো না। কাল কিন্তু ভার্সিটিতে
আসবি।
- আচ্ছা দেখা যাবে এখন যাই
.
নিধী এবার অপর্নার দিকে এগিয়ে বলে,
.
- আজ আসি আপু, অন্য একদিন দেখা হবে আবার। এই
সয়তানটাকে সামলে রেখো।
- ওকে আপু টা টা।
.
নিধী পিছন ঘুরে হাঁটা দেয়।
বুকের বাম পাশটায় হঠাৎ কেমন যেন চিনচিনে ব্যাথা
অনুভব করছে। পা ও অবশ হয়ে আসছে, সামনে কিছুতেই
এগুতে চাইছে না। সমস্ত পৃথিবী যেন ক্রমান্বয়ে ঘুরপাক
খাচ্ছে। চোঁখ দুটোও ঝাঁপসা হয়ে আসছে। বুঝতে পারছে
চোঁখের কোনে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অশ্রু বিন্দু একের পর এক জমা
হচ্ছে। যে কোন সময়ে অঝড়ে ঝড়ে পরতে পারে। বার বার
তাই নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করেই চলেছে। লাভ
হচ্ছেনা।
.
কিন্তু এমন কেন হচ্ছে তা বুঝতে পারছেনা। নিজেকেই
তাই বার বার প্রশ্ন করে চলছে, রায়হানের ঐদিন
ক্যান্টিনে বলা মেয়েটা কি তাহলে আমি ছিলাম না?
না আমি থাকবো কেন? ওটা তো অপর্না ছিল। দূর ছাই
এসব কি চিন্তুা করছি আমি?
.
কিন্তু এমন কেন লাগছে আমার তাও তো বুঝতে পারছিনা।
আমি কি রায়হান কে ভালোবেসে ফেলেছি? না না
তাহলে তো রায়হান বুঝতো। কিন্তু লক্ষন কি এর? আমার
কেন এমন লাগবে? এটা কি তাহলে রায়হানকে না
পাওয়ার পূর্নতা? নাকি হারানোর শূন্যতা?
.
[ মনের মাঝে নিজের অজান্তেই কখন কার প্রতি
ভালোবাসা বন্ধন তৈরি হয় বুঝা খুব মুশকিল]