গল্প: অভিশাপ মুক্তো

গ্রামের দিনমজুর আফজাল হোসেন দিন আনে দিন খায়।
তার তিন ছেলের পর একমাত্র আদরের মেয়ে মিতু। সে
পড়াশোনায় অনেক মেধাবী। মিতু এবার ৭ম শ্রেনীতে
উত্তীর্ণ হয়েছে। বরাবরের মতো মিতু এবারো শ্রেনীতে
প্রথম স্থান অধিকার লাভ করেছে। পাশাপাশি মিতু
বাড়িতে মায়ের কাজেও সদা সহযোগীতা করে।
.
দরিদ্র ঘরের মেয়ে হলেও মিতু দেখতে শুনতে যেমন বেশ
সুন্দরী তেমন বুদ্ধিমতীও বটে। সবেমাত্র চোদ্দ পেরোনো
মিতুর জন্য বেশ ভালো ভালো ঘর থেকে সম্বন্ধ আসতে শুরু
করেছে। কিন্তু মিতুর সেসবে কোন মাথাব্যথা নেই। মিতু
পড়াশোনা করে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক হতে চায়।
এজন্য সে বিয়ে নামক জটিল বন্ধনে এতো কম বয়সে
আবদ্ধ হতে চায় না।
.
দিনেদিনে মিতুর উপর বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগের মাত্রা
প্রবল আকার ধারন করে। কিন্তু মিতুর সেই এক কথা
যতোদিন পর্যন্ত না সে নিজের পায়ে দারাচ্ছে ততোদিন
সে বিয়ে করবে না। মিতুর এতোসব যুক্তি মানতে নারাজ
বাড়ির লোকেরা। তারা চায় অল্প বয়সে মেয়েকে অন্যের
ঘরে তুলে দিয়ে দায়ভার থেকে মুক্তি হতে। কিন্তু মিতু
অন্যের ঘরে গিয়ে বোঝা হয়ে বাঁচতে চায় না। মিতু
নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আত্বসন্মানবোধ নিয়ে বাঁচতে
চায়।
.
মিতু তার সিদ্ধান্তে অটল, যে করেই হোক সে এখন বিয়ে
করবে না। বাল্যবিবাহ নামক অভিশাপের বিষে সে পুড়ে
মরবে না। কারণ সে স্কুলগামী হওয়ায় ভালো করে জানে
বাল্যবিবাহের ফলে থমকে যাবে তার অগ্রযাত্রা। অল্প
বয়সে গর্ভধারনের ফলে সে পড়বে মৃত্যু ঝুঁকিতে। তার
গর্ভে আগত সন্তানও নিশ্চয়তা পাবে না পৃথিবীর আলো
দেখার। পড়াশোনা করা মিতু বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর
দিক সম্পর্কে অবগত হওয়ায় সে যে করেই হোক এ
অভিশাপের কাছে নিজেকে জরাবে না বলে নিজের
কাছে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মিতু তার বাড়ির লোকদের
বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বুঝানোর বৃথা
চেষ্টা করে। বিপরীতে তার বাড়ির লোকেরা উলটো
তাকে বিয়ে করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
.
ছেলে ভালো ঘরের, ওই ছেলের সাথে বিয়ে হলে তুই
ভালো থাকবি আফজাল হোসেন এসব কথায় তার মেয়ের
মন গলাতে পারে না।
আচ্ছা গরীবের ঘরে মেয়ে হয়ে জন্মা কি পাপের?
- যদি নাহয় তাহলে মিতুকে কেনো বাল্যবিবাহ নামক
অভিশাপের কাছে জলাঞ্জলি দিয়ে নরকে পুরতে হবে।
মিতুর অমতেই তার বাড়ির লোকেরা সম্ভ্রান্ত পরিবারের
এক ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করে। যথারীতি বিয়ের দিন
এগিয়ে আসে। শেষ সময়ে মিতু বিয়েতে নিজের মত প্রসূন
করে। তাকে লাল টুকুটুক শারিতে অপরূপ সাজে সাজানো
হয়। যথারীতি বর পক্ষ বিয়ের আসরে এসে হাজির।
কাজীকে দু'পক্ষ মিলে ঘুষ দিয়ে বিয়ে পড়ানোর জন্য
রাজী করানো হয়।
.
কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করতে যাবে এমন সময় ওই
এলাকার ইউএনও আচমকায় পুলিশ নিয়ে হাজির বিয়ের
আসরে। মুহূর্তেই সবাই প্যান্ডেল ছেরে যে যার মতো
পালাতে শুরু করে। পণ্ড হয়ে যায় বাংলার গ্রামগঞ্জ
থেকে একটি বাল্যবিবাহ। পরে ইউএনও বর পক্ষ ও কনে
পক্ষের অভিভাবকবৃন্দের শাস্তি প্রদান করেন। সাথে
কথিত কাজী সাহেবকে করা হুশিয়ারী করা হয়।
.
. বিডিলাভ২৪.কম
সেদিনকার ছোট্ট সেই মিতু আজ অনেক বড় হয়েছে। সে
তার অধরা স্বপ্ন আজ পূরণ করতে পেরেছে। সে একজন
মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে নিজেকে শিক্ষক গড়ে
তুলতে পেড়েছে।
আজ তারমিনা জাহান মিতু তার নিজ গ্রামে""স্বপ্নের
ঠিকানা""" নামে একটি স্কুলে প্রতিষ্ঠা করেছে। স্কুলের
ভিত্তিপ্রস্তরস্থাপন অনুষ্ঠানে এতক্ষণ সে তার নিজ
জীবনে ঘটতে যাওয়া সেই দূর্ঘটনার কথা গল্পের ছলে
বলে কিশোরীদের সচেতন করার লক্ষে বক্তব্য প্রদান
করছিলো। হঠাৎ এ মিতু ম্যামের চোখ বেয়ে জল ঝরতে
দেখে তার ছাত্রীরা। তার এ অশ্রুজল নয় বেদনার, নয়
হতাশার। এ যে শুধুই সফলতার ও স্বার্থকতার।
.
[একটু পিছু ফিরে যাওয়া যাক, সেদিন মিতুর বিয়ের
দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পর তাকে জোরকরে ঘরবন্দি করা হয়।
কি করবে আর কি না করবে ভেবে কুলকিনারা না পাওয়া
মিতু হঠাৎ এ বেলকনি দিয়ে বান্ধবী শান্তার নিকট তার
ফোনটা ধার নেয়। তারপর সে স্কুল পর্যবেক্ষনে এসে নিজ
নাম্বার দেওয়া ইউএনও স্যারের ফোনে একটা মেসেজ
দেয়।
""""স্যার আমি মিতু, কেবল সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি। আমি
পড়াশোনা করতে চাই, আমি এখন বিয়ে করতে চাই না।
কিন্তু বাড়ি থেকে জোরপূর্বক আমার অমতেই আমার
বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। দয়া করে স্যার আমাকে এ
অভিশপের হাত থেকে মুক্তো করুন, আমার স্বপ্ন পূরনের
রাস্তা গুলো প্রশস্ত করুন।"
.
ফিরতি মেসেজে সেই ইউএনও মিতুকে অাসস্ত করে
তাকে বাল্যবিবাহ নামক এ অভিশাপ থেকে মুক্তো
করবে। সাথে ইউএনও মিতুকে কৌশলগত কারনে বিয়েতে
রাজী হতে বলে। যাতে করে প্রসাসনের কঠোরতা দেখে
গ্রামের অসচেতন অভিভাবকবৃন্দ সজাগ হতে পারে। যার
ফলে তখনকার দিনেদিনে মহামারির রূপ ধারন করা
বাল্যবিবাহ আজ অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে, সাথে
অনেক মেধাবী কিশোরী হতে পেরেছে বাল্যবিবাহ
নামক এ অভিশাপ থেকে মুক্তো।।।।।।।।]

Last 7 Days Visitors