এমন শীতের দিনে কী লেখতে মন যায়?
.
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি যে,যেদিকে যতদূরে
দৃষ্টি যায় সমগ্র দিকে কুয়াশায় ভরেগেছে।চোখ যতো
দূরে অবলোকন করছি,সবদিকে শুধু সাদা মেঘের মতো
রাস্তাঘাট আবৃর্ত করে রাখছে।সে ধারা এতো সুক্ম নয়
যে চোখ এড়িয়ে যাবে।আবার এতো স্তুল নয় যে তা চোখ
জুড়ে থাকে। আর কানে আসছে তার একটানা আওয়াজ;
সে আওয়াজ কখনো মনে হয় নদির কুলু ধ্বনি,কখনো মনে হয়
তা পাতার মর্ম।
.
এমন দিনে মানুষ যে অন্যমনস্ক হয় তার কারন তার সকল মন
তার চোখে আর শরীরে এসে ভর করে।আজকের আকাশ
দেখে মনে হচ্ছে, ছায়ার রংয়ের কোন পাখির পালক
দিয়ে সাদা করে আগাগোরা মুড়িয়ে দিয়েছে,
তাই তার স্পর্শ আমাদের চোখের কাছে এত নরম,এত
মোলায়েম।
.
সমস্তরাঘাট নিরব নিস্তব্ধতারর মাজে। নেই কোন
মানুষের কোলাহল। নির্ভয় ভাবে রাস্তার পাশে শুয়ে
আছে কুকুর গুলো।ওদের চোখের চাহনি দেখে মনে হচ্ছে
এখনো সুর্যমামার কোন দেখাযায়নি।সত্যিকথা বলতে
এখনো রাস্তার দিকে তাকালে মনে হয় সুর্যিমামা
পৌঁছায়নি, কারন হলো কুয়াশায় সমস্তরাঘাট ভরা।
সকালটাকে আমি আবার খুব ভালো করেই ইনজয় করি।
.
আর যাই হোক,আজ আমার কানে শুধু রবিঠাকুরের এর
গানের সুরলেগে নাই।সেই সংগে তিনি কুয়াশার ও বর্ষার
যেসব ছবি একেছেন সেই সব চিত্র বায়োস্কোপের ছবির
মতো আমার চোখের সমুখ দিয়ে একটির পর আর-একটি চলে
যাচ্ছে।
.
আমি রাস্তার টং এর দোকানের পাশে
বসাছিলাম,তখনো রাস্তায় কোন মানুষজন হাটা-চলা শুরু
করেনি,তাই আমি ও বসে উপোভোগ করছিলাম কুয়াশার
ভোগ। হঠাৎ কিছু একটা শব্দের মাধ্যমে আমার কল্পনার
জগত বেংগে গেল। ফিরে আসলাম বাস্তব জীবনে।
শব্দটা আসছিলো যুবতি একটি মেয়েলি কন্ঠ। আমি আবার
আমার কাজে মোন দিলাম,কারন আমি ভাবছিলাম,এত
সকালবেলা এখানে মেয়েলী কন্ঠ আসবো কোথা দিয়া??
প্রশ্নই আসেনা।
তবুও একটু মনের মাজে খুত খুত করা শুরু করেদিলো,আমি
জায়গা পরিবর্তন করে চোখ বড়ো বড়ো করে চারোদিকে
তাকাইতে থাকলাম।আর খুজতে থাকলাম,শব্দটার উৎস!!
আমার চোখ গেলো একটা টং এর দোকান(চা এর দোকান)
।
আমি ছোট ছোট পা-বাড়িয়ে মেয়েটির কাছে গেলাম।
.
.
-কি হয়েছে আপনার? কান্না করছেন ক্যানো? আমাকে
কিন্ত বলতে পারেন।
-আপনার কাছে বল্লে আপনি কি করবেন?? সর্বউচ্চো
সান্তনা দিবেন।আরতো কিছুই পারবেন্না। তার চেয়ে
ভালো,আপনার কাজ আপনি করেন।
-আরেহ,বলবেন,তারপরতো দ্যাখবো।কি করা যায়।
-আপনার এত্ত শোনার ইচ্ছা?? আমাকে সময় দিতে হবে।
পারবেন??
-হ্যা,পারবো,আপনি বলেন।
-আচ্ছা,শুনুন;
.
.
আমাদের অনেক সুন্দর একটি পরিবার ছিলো,আব্বু একটি
জব করতো।আম্মু মোটামুটি কৃষিকাজ করে আমাদের
প্রয়োজনীয় শাক-সবজি গুলো তুলতেন। আমার ২বোন,আর
১ভাই ছিলো।
.
বলতেগেলে আমাদের পরিবার টা অনেক ভালোই ছিলো।
কোনকিছুতেই কষ্ট ছিলোনা। কিন্ত যখন আমি ইন্টার
মিডিয়েট পাস কম্পিলিট করলাম। তখনি আমাদের
পরিবারে নেমে আসে দু:খের ঘন্টা।
.
আমার আব্বু হঠাৎ অসুস্ত হয়ে পড়ে। ডাক্তার এর কাছে
নিয়েগেলাম। ডাক্তার বল্লো আব্বুর দুটো কিডনি
একসাথে ড্যামেজ হয়েগেছে। তখন আমার মাথায় আকাশ
ভেংগে পড়লো। আমি তখনি বেহুশ হয়ে পড়েগেলাম
মাটিতে। প্রায় ২ঘন্টা পড়ে আমার হুশ আসে। আর আম্মুকে
দেখি কাদতে কাদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলছে।
আমাদের আপনজন বলতে কেহো ছিলোনা। যতো টাকা
ছিলো,তা ওখানেই শেষ হয়ে গেলো। ছোট ভাই বোন
দুটির দিকে তাকিয়ে দেখি ওরাও মোন খারাপ করে বসে
আছে। ওদেরকে এইরকম আমি কখনো দেখিনায়,কারন
ওদেরকে আব্বু সবসময় হাসিখুশি রাখতো। কখনো কাদতে
প্রর্যন্ত দেয়নি।
তারপর আব্বু যখন মারাযাবে,তার আগে আমাকে
বলেগেছিলো "তোর ছোট ভাই,বোন দুটির প্রতি ক্ষেয়াল
রাখিস।ওদেরকে কখনো কষ্ট দিবিনা। তোর আম্মুকে সকল
কাজে সহোযোগিতা করিস"।
.
এইরকম টাকার অভাবে আব্বু মারাগেলো চোখের
সামনে,কিছুই করতে পারলামনা বাবার জন্য।
যে আমাকে এই পৃথিবীতে আসতে সাহায্য করছিলো।
.
.
তার কয়েকমাস পরে দেখলাম, আমি যদি ঘরে বসে
থাকি,তাহলে আমাদের সংসারটা বন্ধো হয়েযাবে।
তাই সিদ্বান্ত নিলাম আমি ঢাকা যাবো, ঢাকা গিয়ে
কোন ছোটখাটো জব করবো।
.
কিন্ত আমি ঢাকা এসে আস্তে আস্তে মানুষ চেনা
শুরুকরলাম।
কিভাবে মানুষের কাছে মানুষ প্রতারিত হয়,অপাদস্ত হয়।
হায়রে মানুষ!!
.
একটা জব এর জন্য মা,ছোট ভাই বোন ২টিকে রেখে শহরে
পারি জমালাম, যেখানে ছোট ভাই,বোন দুটিকে পাশে
না পাইলে আমার ঘুম আসতোনা প্রতিটি রাতে।
অনেকদিন খোজাখুজি করার পরে যান্ত্রিক শহরে একটি
চাকরি পেলাম। মাইনিটা মোটামুটি আমার নিজের
চলতে সুবিধা হয়,কিন্ত পরিবার চালাবো কিভাবে?? এটা
ভাবতে ভাবতে আমার অনেক গুলো দিন কেটেগেলো।
.
তারপর আমার ম্যাসের একটা মেয়ের সাথে কথা বল্লাম।
ওরে দেখি প্রতিদিন অনেক টাকা নিয়ে বাসায় ফিরে
প্রতিদিন,আমিতো বুজতামনা কিছুই।
ওরে আমি দেখি প্রতিদিন সন্ধার পরে সুন্দর সুন্দর কাপর
পরে কোথায় যানো যায়।আবার রাত ১২টার দিকে বাসায়
আসে।
.
আমি জিজ্ঞাসা করলাম,তুমি এতো টাকা পাও
কোথায়?? আর এই সুন্দর সুন্দর কাপড় গুলো পাও কই??
(তখন মেয়েটি সব আমার কাছে বল্লো)
.
দেখলাম তখন, মেয়েটির জীবনেও আমার মতো অনেক
বিপদ গেছে।
ভাবলাম,শিক্ষিত হয়ে কি লাভ হলো??কিছুই হলোনা।
পরিবারকে বাচানোর জন্য সেই থেকে
হয়েগেলাম "নিশিকন্যা"। যেটা আপনাদের মুখে
শোভাপায় "বেশ্যাগিরি"
.
আমি এখন আমার পরিবারকেও টাকা দিতে পারি। কিন্ত
মানুষের মন বলতে তো কিছু আছে। সেটাকে তো আর
আড়াল করে রাখাযায়না। মানুষ আজকে আমার দেহ কে
টাকার বিনিময় কিনেনিচ্ছে। যেখানে আমার
কথাবলারো কোন মুখ থাকেনা।
তাই বরিশালের মানুষ ঢাকার শহর কে একটা কথা বলে
-১টাকা দিয়া পানি খাই,আর ৫টাকা দিয়া প্রশাব করতে
যাই। এর নাম ঢাকার শহর।
.
.
.
এবার বলেন আমার জন্য আপনি কি করতে পারবেন??
কিছুই করতে পারবেন্না,জানি। ভালো থাকেন। কালকে
হয়তো আবার এই উত্তারায় আসতে পারি। দেখা হলে কথা
বলবো। এখন কেউ আমাকে দেখলে আপনারো
সমস্যা,আমারো সমস্যা। বায়।
.
.
মেয়েটির কথা গুলো শুনে আমার মনটা খুব খারাপ
হয়েগেলো। কারন আমিও মানুষ,আমার মাজেও মনুষত্ব
আছে। আমি ছেলে,তাই মোন কাদলেও চোখ কাদতে
পারেনা।
তাই সবাইকে বলবো,চোখের সামনে আমারা হাজারো
রকমের মানুষ দেখতে পাই,তাই বলবো কাউকেই কু-নজরে
দেখতে হয়না। হয়তো সে ওই রকম কোন বড়ো বিপদে পড়েই
খারাপ পথে নামতে বাধ্য হয়েছে।
সবাইকে তার উপযুক্ত সম্মান দিবার চেষ্টা করবেন।
Home »
ভালবাসার গল্প - Bangla Love Story
» গল্পো: কু|য়া|শা|ভে|জা| সকাল।