কি ভাগ্য? - Love story

-বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছেন।
-হুম
-আমি চাই না তুমি আমার সাথে আর যোগাযোগ রাখো।
-হুম
-আমাদের আর দেখা হবে না । ভাল থেকো!
-হুম
কথা গুলো বলে উঠে চলে যাচ্ছে নুপুর। নয়ন এক পলকে
তাকিয়ে আছে।নুপুর এর দিকে নয় আকাশের দিকে।নয়নের
পাচঁ বছরের ভালবাসার সম্পর্ক নুপুর দুই মিনিটে ভেঙ্গে
দিয়ে চলে যাচ্ছে।নয়নের এতে দুক্ষ পাওয়ার কথা
কিন্তু,নয়ন কোন দুক্ষই পাচ্ছে না।হয় তো নয়ন অধিক
শোকে পাথর হয়ে গেছে নয় তো ওর কষ্ট পাবার
ক্ষমতাটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
.
নয়ন এতিম খানাই মানুষ হয়েছে।বাবা-মায়ের ভালবাসা,
আদর-স্নেহ কি নয়ন তা জানে না।ছোট বেলা থেকে সে
একাই থাকে।একটা বাড়িতে সে এখন থাকে সেই বাড়ির
মাষ্টার হিসেবে।ঐ বাড়ির ছেলে মেয়েদের পড়াই তাই
নয়নের খাওয়া দাওয়া আর পড়ালেখার খরচ ওখান থেকেই
হয়ে যাই।
.
ছোট বেলা থেকে নয়ন একা থাকতেই ভালবাসে।
দুক্ষ-সুখ,আনন্দ-বেদনা কোন কিছুই যেন তার হৃদয় কে স্পর্শ
করে না।নয়নের পচিশ বছর জিবনে নয়ন শুধু এক দিন দুক্ষ
পেয়েছিল আর সেদিন সে প্রথম কেদেঁছিল।
নয়নের একমাত্র বন্ধু যেদিন মারা যাই সেদিন।
কিভাবে মারা গেছিল সেটা না হয় অন্য দিন বলা যাক।
.
নয়ন আকাশ পানে তাকিয়ে ভাবছে,"নুপুর কেনই বা আমার
শুন্য জীবন পুরন করতে এসেছিল,আর কেনই বা আবার শুন্য
করে দিয়ে চলে যাচ্ছে।"
.
সন্ধ্যা নেমে আসছে।
চারিদিক ঢেকে যাচ্ছে কাল অন্ধকারে।
শহর কে পুরোপুরি অন্ধকার ঢেকে দেয়ার আগেই
জ্বলে উঠছে ল্যম্প পোস্টের হলুদ আলো গুলো।
নয়ন আকাশের পানে এখোন চেয়ে আছে।
আকাশে আজ কোন তারা নেয়।
শুধু চাদঁ টা মাঝে মাঝে কাল জলে ডুব দিয়ে আবার
ভেসে উঠছে।আজ মনে হয় বৃষ্টি হবে।
নয়নের সাথে নুপুর এর প্রথম দেখা বৃষ্টির দিনে।
.
সেদিন নয়ন কলেজ থেকে ফির ছিল।নয়ন আকাশে মেঘ
দেখে বুঝতে পেরেছিল সেদিন বৃষ্টি হবে।একটা দোকান
থেকে পলিথিন নিয়ে সে বই গুলো পলিথিন এ ঢুকিয়ে
হেটে হেটে বাসাই ফিরছিল। কলেজ থেকে কিছুদুর
আসার পর শুরু হল বৃষ্টি।
নয়ন ভিজতে ভিজতেই আসছিল।হঠাৎ খেয়াল করল তার
মাথার উপর কোন বৃষ্টি পরছেনা।
কারন তার পাশে একটা মেয়ে হাটছে এবং সেই মেয়েটি
নয়নের মাথায় ছাতা ধরে রেখেছে।
নয়ন মেয়েটিকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করা তো দুরে
থাক। মেয়েটির দিকে তাকালোই না।
মেয়েটি নিজে থেকেই কথা বলা শুরু করল।
-হাই,আমি নুপুর।এই কলেজে নতুন এসেছি।এখানে আমার
কোন বন্ধু নেয়। আর কাউকে দেখে আমার ভালও লাগে নি
যে তাকে বন্ধু
বানাবো।আপনাকে আমার অনেক ভাল লেগেছে আপনি
আমার বন্ধু হবেন?
শেষ কথা টা শোনার পর দাড়িয়ে পরল নয়ন।
কারন আজ পর্যন্ত নয়নের সাথে কেউ বন্ধুত্ত করতে চাই
নি।না করার অনেক কারন আছে তার মধ্যে একটি
হল,নয়নের পোশাক তেমন একটা ভাল না।
নয়ন নুপুরের দিকে অপলকে তাকিয়ে ছিল।
নয়নের কাছে মনে হচ্ছিল তার সামনে একটা বৃষ্টিতে
ভিজা অপ্সরি দাড়িয়ে আছে।নয়ন সেদিন কোন কথায়
বলে নি নুপুর কে।নুপুর প্রতিদিন নয়ন এর সাথে এসে কথা
বলত কিন্তু নয়ন কিছুই বলত না।শুধু শুনত।সাত দিন এই ভাবে
চলার পর নয়ন প্রথম নুপুরের সাথে কথা বলে।নয়ন যখন প্রথম
কথা বলেছিল তখন নুপুর তো পুরোই অবাক।নুপুর কয়েক
মিনিট হা করে নয়নের দিকে তাকিয়ে ছিল।
.
বন্ধুত্ত চলার কয়েক মাস পরেই নুপুর নয়ন কে তার
ভালবাসার কথা জানাই।নয়ন প্রথমে কোন ভাবেই রাজি
হয়নি। কিন্তু নুপুর একদিন অনেক গুলো ঘুমের বড়ি খেয়ে
নিয়েছিল।তারপর নয়ন নুপুরের ভালবাসাই সারা দেয়।
.
আজ সেই নুপুর নয়ন কে ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
নয়ন পার্ক থেকে বেড়িয়ে হাটতে শুরু করল।
চাদঁ টা আভছা আলো দিচ্ছে,মৃদু ঠান্ডা বাতাস বইছে।দু
এক ফোটা বৃষ্টি পরতে শুরু করেছে।
.
কিছু ক্ষনের মধ্যে শুরু হয়ে গেল ঝুম বৃষ্টি।
নয়ন বৃষ্টির মধ্যেই হাটছে।
.
নয়ন আসতে আসতে বুঝতে পারছে নুপুর তার জীবনে কি
ছিল।
নয়নের বুক ভরে যাচ্ছে কষ্টে।নয়ন হঠাৎ মাঝ পথে
দাড়িয়ে পরল।হয় তো নয়ন কাদঁছে।
কিন্তু তার চোখের পানি গুলো ধুয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির
ধারাতে।একমাত্র প্রকৃতি ছাড়া কেউ জানে না একটা
মানুষের হৃদয়ে আজ হয়ে যাচ্ছে ঝড়ো হাওয়া।হচ্ছে ভুমি
কম্প।
.
বৃষ্টি শেষ হয়েছে,চাদঁ আলো দিতে শুরু করেছে।বাসাই
চলে এসেছে নয়ন।ঘুমাতে অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু
পারছে না।মন টা বার বার ভাবছে নুপুর এর কথা।নুপুরের
দেয়া মোবাইল টাও আছে নয়নের হাতে কিন্তু এতে আজ
কোন কল আসছে না।কেউ ফোনের ওপাশ থেকে বলছে
না,"তুমি খেয়েছো?"
নয়ন জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে চাদেঁর দিকে।
আর তার চোখ বেয়ে পরছে ঝর্না ধারা।
সারা রাত ঘুমাতে পারল না নয়ন।
নয়ন শুধু একটা কথায় ভাবতে লাগল, "কি ভাগ্য আমার"
.
পরের দিন...
.
সকালে নয়নের বাড়িওয়ালা ডাকতে আসল নয়ন কে
-নয়ন নয়ন...
নয়ন গিয়ে দরজা খুললো..
-কি ব্যাপার কোন সমস্যা কি হয়েছে তোমার মুখটা এমন
দেখাচ্ছে কেন?
-না চাচা কিছুই হইনি..
-আচ্ছা শোন, তাড়া তাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো...আমি নিচে
তোমার জন্য অপেক্ষা করছি..
তাই বলে বারিওয়ালা চলে গেল..
নয়ন ফ্রেশ হয়ে নিচে গেল। বারিওয়ালা তাকে গাড়িতে
করে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে।নয়ন কোন প্রশ্ন করছে
না।কারন তার মাথার ভিতর শুধু নুপুর এর কথা ঘুরপাক
খাচ্ছে।নুপুর কে যে সে আটকে রাখবে তারও কোন
সামর্থ্য নেয় নয়নের।
গাড়ি একটা জায়গায় থামল.
সেটা কোন বাড়ি না অফিস বুঝতে পারল নয়ন
তার পর গাড়ি থেকে নেমে সে বারিওয়ালার পিছন পিছন
চলল।
বাড়িওয়ালা একটা রুমের ভিতর নিয়ে গেল তাকে।
সেখানে গিয়ে নয়ন পুরোপুরি অবাক হয়ে গেল।
এ কি বাংলাদেশের কোটিপতিদের একজন নুপুরের বাবা
দাড়িয়ে আছেন।
আর পাশে দাড়িয়ে আছে নুপুর।
আর এটা একটা কাজী অফিস কিন্তু এখানে কি হবে।
...
...
...
নয়ন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নুপুরের দিকে।
লাল শাড়িতে কি সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে।
বসে আছে একটা ফুলে সাজানো বিছানায়।
-ওভাবে কি দেখো
-তোমাকে!
-যাক আজকে অন্তত হুম বল নি...
-এটা কি করলে তুমি বল তো..
-যা করার ঠিক ই করেছি।আমি অন্য কাউকে বিয়ে
করলেও তো তুমি বাধাঁ দিতে না।কারন তুমি তো আমাকে
ভালই বাস না।
-হুম
-আবার হুম।
-হুম
-দাড়াও দেখাচ্ছি মজা।
নুপুর দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল নয়ন কে।
নয়ন শুধু ভাবতে লাগল
"কি ভাগ্য,কিভাগ্য আমার?"
.
......সমাপ্ত....

Total Pageviews