______ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে প্রথমে যে ভাইটির রুমে গিয়ে পরিচয় হয়েছিলাম, সে ভাইটি এখনো হলে আছেন। সব সময় রুমের মধ্যেই থাকেন। ছোট ছোট একটি হাড়ি আর একটি কড়াই কিনেছেন। সেগুলোতেই টুক টুক করে রান্না করেন আর খান। একটি ডিম একবার ভেজে অর্ধেক করে খান আর বাকীটুকু আরেকবারের জন্য রেখে দেন। ভাইয়ের চেহারা বেশী দেখা যায় না। মাঝে মাঝে বাথরুমে দেখা যায়। বন্দী দশাকে আপন করে নিয়েছেন।
.
ভাই গত ৪ বছর ধরে চাকরীর পরীক্ষা দিচ্ছেন। প্রায়ই ঢাকায় যান বিভিন্ন চাকরীর পরীক্ষা দিতে। পরীক্ষা দেয়া পর্যন্তই। চাকরী হয় না। সবসময় ভাইকে দেখা যায় রুমে পড়াশোনা করতে। পড়তে পড়তে চোখের নিচে কালো দাগ পরে গেছে।মনে হয় কতদিন ধরে ঘুমায় না। মাঝে মাঝে চুল দাড়ি কাটার কথাও ভুলে যান। সম্ভব হলে ৩ টাকা দিয়ে ব্লেড এনে কলমকে রেজার বানিয়ে সাবান মুখে মেখে কোনোমত চেছে ফেলেন।
.
ভাই বলেছেন, তার একটি চাকরী খুবই দরকার। বাসায় বৃদ্ধ অসুস্থ বাবা আছেন। প্রায়ই ফোন করে বলেন, কিরে কিছু ব্যাবস্থা হলো? ভাইয়ের তখন কোনো উত্তর থাকে না। ফোন রাখার পর বুঝতে পারেন চোখের কোনায় এক ফোটা পানি জমা হয়েছে। বাম হাত দিয়ে সে জল মুছে আবার পড়তে বসেন। মাঝে টেবিলের সামনে বাতির সাথে একা একাই বির বির করে কথা বলেন।
.
ভাইয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, কলেজের হোস্টেল মেস গুলোতে লাখ লাখ গ্রাজুয়েট করা ছেলেমেয়েরা পরে আছে শুধুমাত্র একটি চাকরীর জন্য। তাদের পরিবারও তাদের দিকে তাকিয়ে আছে, কবে আমার ছেলেটা বা মেয়েটা একটি চাকরী পাবে, পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু চাকরী কই? এবার বিসিএস সাড়ে তিন লক্ষ আবেদন করেছে, এরা সবাই বেকার, এদের মধ্যে মাত্র ৮৬০ জন চাকরী পাবে, বাকীরা কি করবে। এরা তো আবারো বেকার হয়ে যাবে। বেকার বেকার বেকার।
.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যারা চাকরী পেয়েছে তাদের এতো এতো সুযোগ সুবিধা না করে, বেতন দ্বিগুন তিনগুন চারগুন বৃদ্ধি না করে এই বেকার ছেলেমেয়েগুলার দিকে একটু তাকান, এদের কর্মসংস্থান এর সুযোগ করে দিন, কিছু একটা ব্যবস্থা করে দিন, দেখবেন এই লক্ষ লক্ষ বেকার ছেলেমেয়েগুলো আপনাকে মন থেকে দোয়া করে দিবে।
Home »
উপদেশমুলক গল্প
» ভাই গত ৪ বছর ধরে চাকরীর পরীক্ষা দিচ্ছেন