পবিত্র মাহে রমজানে পাপ থেকে মুক্তির সহজ উপায়!

স্রেফ অজ্ঞতার কারণে যে পাপ করা হয় আল্লাহ তা ক্ষমা করবেন। কিন্তু আমরা কখনও জেনে-শুনেও পাপ করছি ঈমানের দুর্বলতার কারণে। ঈমানের দুর্বলতার বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। যেমন, আমরা জানি যে মৃত ব্যক্তি মানুষের কোনো ক্ষতি করতে পারে না, কিন্তু তারপরও রাতের বেলায় একটি লাশের পাশে একাকী থাকতে আমরা ভয় করি।ঠিক তেমনি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও আমরা পাপ করার মুহূর্তে আল্লাহ যে আমাদের দেখছেন তা হৃদয় দিয়ে অনুভব করি না।এক ব্যক্তি ইমাম হুসাইন (আ.)’র কাছে আরজ করল, হে রাসূলের সন্তান, আমি গোনাহর মধ্যে জর্জরিত। আমার এ অবাধ্যতা থেকে পালানোর কোনো পথ নেই। আপনি আমাকে উপদেশ দিন। ইমাম (আ.) বললেন, “পাঁচটি কাজ করার পর বা ৫ টি বিষয়ে নিশ্চিন্ত হওয়ার পর যত ইচ্ছা পাপ কর।প্রথমত: আল্লাহর রিজিক না খেয়ে যত ইচ্ছা পাপ কর।দ্বিতীয়ত: এমন স্থানে চলে যাও যেখানে আল্লাহর কর্তৃত্ব নেই এবং সেখানে যত ইচ্ছা পাপ কর।তৃতীয়ত: এমন জায়গায় যাও যেখানে আল্লাহ তোমাকে দেখবেন না, সেখানে যতপার গোনাহ কর।চতুর্থত: যখন মালেকুল মওত বা মৃত্যুর ফেরেশতা তোমার রুহ বা প্রাণ নিতে আসবে তখন তুমি নিজেকে রক্ষা করতে পারলে যত ইচ্ছা গোনা হ কর।পঞ্চমত: যখন আজাবের ফেরেশতা তোমাকে আগুনে নিক্ষেপ করবে তখন যদি তা থেকেবাঁচতে পার তাহলে এখন যত খুশি পাপ করে যাও।”পাপ থেকে মুক্ত থাকার জন্য সাধনা, অধ্যবসায় ও একনিষ্ঠতা জরুরি। কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা সত্যকে গ্রহণ ও মিথ্যাকে বর্জন কর সেটা যতইকঠিন হোক না কেন।’ কিন্তু শয়তান আমাদের বলতে চায় যে, তুমি তো আর নবী-রাসূল বা ইমামদের মত জ্ঞানী নও যে সব বুঝে সঠিক পথটি বাছাই করতে পারবে বা তাঁদের মতই মহান আল্লাহর প্রিয়পাত্র নও যে আল্লাহ তোমাকে ইসলামের পথে ত্যাগ স্বীকারের জন্য অলৌকিকভাবে সহায়তা করবেন, তাই সবক্ষেত্রে ঈমান ও ইসলামের পথে থাকার চেষ্টা করে লাভ নেই! এর উত্তর হল আসলে প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই রয়েছে অসীম সম্ভাবনা।একটি হাদিসে কুদসির বর্ণনা অনুযায়ীযে কোনো সাধারণ মু’মিন বা মুসলমান মানুষ নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহরএত বেশি নৈকট্য অর্জন করতে পারে যে সে তখন যা চায় তা-ই করতে পারে বৈধ আশার ভিত্তিতে।আল্লামা ইকবালও তার এক কবিতায় এ বিষয়ে ইঙ্গিত করে বলেছেন, তোমার আত্মাকে এতোটা উন্নত কর যে স্বয়ং আল্লাহই যেন তোমাকে প্রশ্ন করেন যে,বান্দা তুমি কি চাও বা কিসে তোমার সন্তুষ্টি?পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন ‘যে ব্যক্তি আমার রাস্তায় চলার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়, তাকে আমি অবশ্যই পথ দেখাই।’- (২৯: ৬৯)পাপকে গভীরভাবে ঘৃণা করেন এমন ব্যক্তিরা মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলে মহান আল্লাহ অনেক সময় তাদেরকে অলৌকিকভাবে সাহায্য করেন। মানুষের উচিত যখন তারা কোনটি পাপ বা পাপ নয় কিংবা কোনো কাজ কি সাওয়াবের কাজ না পাপের কারণ- তা বোঝা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না, এরকম ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর সাহায্য চাওয়া যেমনটি চান মহাপুরুষরা।কেউ যখন সৎ থাকার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালায় ও পাপকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ়-সংকল্প থাকে এমন ব্যক্তিকেই আল্লাহ জটিল বিপদের সময়তথা যখন বোঝা যায় না যে কোন্ পথটি সঠিক তখন সহায়তা করেন নানা পন্থায়।এ প্রসঙ্গে দু-একটি ঘটনা উল্লেখ করাযায়। যেমন, আল্লামা জাফরি একবার পশ্চিমা এক দেশে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন প্রবাসী ইরানি মুসলমানদের মাধ্যমে। তাদের একজন এইমনীষীর সম্মানে ভোজ-সভার আয়োজন করেছিল।খাবারের সময় হলে আল্লামা কেন জানি খেতে চাইলেন না। আল্লামার ছেলে বাবাকে বার বার বোঝাতে চাইলেন, যে ভোজ-সভা আপনার সম্মানেই আয়োজিত হয়েছে সেখানে আপনার না খাওয়াটা ঠিক হবে না। কিন্তু তিনি বললেন, না, আমার ইচ্ছে হচ্ছে না, কারণ আমার মনে হচ্ছে না খাওয়াটাই ভালো হবে। পিতা ওপুত্র আয়োজকের কাছে ক্ষমা চেয়ে বিদায় নেন।পরে আল্লামার পুত্র ফোন করে আবারও দুঃখ প্রকাশ করতে গেলে সেই ভোজ-সভারআয়োজক বললেন, আল্লাহ আপনার বাবাকে খুবই ভালবাসেন বলে তিনি গতকাল এখানে খাননি! কারণ, যে মুরগি রান্না করা হয়েছিল তা হালালভাবে জবাই করা হয়নি!একজন খোদাভীরু নারীর কথাও এ প্রসঙ্গে বলা যায় যিনি সব সময় হিজাবকরে চলতেন এবং এ ব্যাপারে খুবই সচেতন থাকতেন। কিন্তু একবার তার এমন অসুখ হলো যে তাকে অস্ত্রোপচার করার দরকার হল।আর এ কাজের জন্য কোনো মহিলা ডাক্তারছিলেন না। মহিলা হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.)’র ওসিলা দিয়ে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে বললেন, হে আল্লাহ! হয় আমাকে সুস্থ করে দিন, নতুবা মৃত্যু দিন কিন্তু পরপুরুষেরসামনে যেন শরীরের অংশ অনাবৃত করতে না হয়!মহান আল্লাহ তার দোয়া কবুল করলেন। এরপর ওই মহিলা ডাক্তারকে বললেন, আমিপুরোপুরি সুস্থতা অনুভব করছি, আপনারা পরীক্ষা বা টেস্ট করে দেখুন। ডাক্তারি পরীক্ষায় দেখা গেলওই মহিলার অসুখ পুরোপুরি ভালো হয়ে গেছে। এ ঘটনায় চিকিৎসকরা মহা-বিস্মিত হন।এবারে পড়া যাক অর্থসহ সপ্তম রোজার দোয়াbr /> ﺍﻟﯿﻮﻡ ﺍﻟﺴّﺎﺑﻊ : ﺍَﻟﻠّـﻬُﻢَّ ﺍَﻋِﻨّﯽ ﻓِﯿﻪِ ﻋَﻠﻰ ﺻِﯿﺎﻣِﻪِ ﻭَﻗِﯿﺎﻣِﻪِ، ﻭَﺟَﻨِّﺒْﻨﯽ ﻓﯿﻪِ ﻣِﻦْ ﻫَﻔَﻮﺍﺗِﻪِ ﻭَﺁﺛﺎﻣِﻪِ، ﻭَﺍﺭْﺯُﻗْﻨﯽ ﻓﯿﻪِ ﺫِﮐْﺮَﮎَ ﺑِﺪَﻭﺍﻣِﻪِ، ﺑِﺘَﻮْﻓﯿﻘِﮏَ ﯾﺎ ﻫﺎﺩِﯼَ ﺍﻟْﻤُﻀِﻠّﯿﻦَ .হে আল্লাহ ! এ দিনে আমাকে রোজা পালন ও নামাজ কায়েমে সাহায্য কর । আমাকে অন্যায় কাজ ও সব গুনাহ থেকে রক্ষা করো । তোমার তৌফিক ও শক্তিতে সবসময় আমাকে তোমার স্মরণে থাকার সুযোগ দাও । হে পথ হারাদের পথ প্রদর্শনকারী।-ইকনা

Total Pageviews