[ইসলামিক]আবু বকর সিদ্দীক ( রা ) এর একটি ঘটনা এবং আমাদের জন্যে শিক্ষা

রহমান রহীম আল্লাহ্ তায়ালার নামেআবু বকর সিদ্দীক (রা) এরএই ঘটনাটি মোটামুটি আমরা সবাই জানি,কিন্তু ঘটনাটির মাঝে একটিগুরত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে যা আমাদেরঅনেকেরই নজর এড়িয়ে গেছে। ইনশাল্লাহ, সেইবিষয়েই এখানে আলোকপাত করব। আহমদ ইবনে হাম্বলরহিমাহুল্লাহ কর্তৃক বর্ণিত, জাবিরবিন আব্দুল্লাহ (রা) এই হাদীসটিবর্ণনা করেছেন। রাসূল ﷺ মিরাজ থেকে ফিরেএসেছেন। সকালবেলা তিনি যখন মক্কার কুরাইশদের মিরাজেরঘটনাটি বললেন তখন কুফ্ফার সম্প্রদায় হাসি-তামাশায় লিপ্তহয়েছিল। মক্কার এই কুরাইশ সম্প্রদায়ের কুফ্ফারগণ ছিলেনঅনেকটা বস্তুবাদি। যা দেখা, যায় ধরাযায়, ছোয়া যায় শুধু তাইতারা আমলে নিত। রাসূল ﷺ এর মিরাজেরঘটনাটিকে তারা একটাহাতিয়ার হিসেবে ধরে নিল আর এর মাধ্যমে মিরাজেরঘটনাটিকে মিথ্যা প্রমাণ করতে চাইল।কুফ্ফার সম্প্রদায়ের কিছুলোক আবু বকর সিদ্দীক (রা) এর নিকট গেলেন। তিনিবাণিজ্য থেকে কিছুক্ষণ আগে ফিরে এসেছেন, তাইতখনও রাসূল ﷺ এর সাথে দেখা করতে পারেননি। কুফ্ফারসম্প্রদায় তাকে বলল, শুনেছ কি তোমারসঙ্গী কি সব বলাশুরু করেছে? সে বলছে, সে নাকি এক রাতের মধ্যেমক্কা থেকে বাইতুল মাকদাস (জেরুজালেম) যেয়ে আবারমক্কায় ফিরে এসেছে। আবু বকর (রা) বললেন, এইকথাগুলো কি তিনি বলেছেন? তারা জবাব দিল, হ্যাঁ। এরপর আবুবকর (রা) বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, যদি তিনি সত্যিই বলেথাকেন, তাহলে তিনি সত্য বলেছেন। কুফফার সম্প্রদায়েরবিস্ময়ে চোখ কপালে উঠে গেল। তারা বলল, তুমি বিশ্বাসকর সে বৃহত্তর সিরিয়ায় যেয়ে আবার একরাতের মধ্যেফিরে এসেছে! আবু বকর (রা) বললেন, আমি তাকে বিশ্বাসকরি বরং এর চেয়েও বেশী বিশ্বাস করি ঐসব বিষয়েযেগুলো তাঁর নিকট ওহী হিসেবে এসেছে। মোটামুটিএই ঘটনাটুকু আমরা সবাই জানি, কোন বইতে পড়ে কিংবা কারোনিকট থেকে এই ঘটনা শুনে আমরা পুলকিতহই কিন্তু এই ঘটনারমাঝে গুরুত্বপূর্ণ একটি হিকমা রয়েছে যা আমাদেরঅনেকেরই নজর এড়িয়ে গেছে। কুফ্ফার সম্প্রদায় যখনআবু বকর (রা) কে রাসূল ﷺ এর মিরাজ সম্পর্কিত কথাটি বললতখন, আবু বকর (রা) এর যদি দূর্বল ঈমানথাকত তাহলে তিনিবলতেন, না এই ঘটনাটি সত্য নয় অথবা, আবু বকর (রা) যদি এমনহতেন যাকে খুব সহজেই কথার চাতুরী দ্বারা অভিভূত করা যায়তাহলে তিনি বলতেন ঘটনাটি সত্য। আবু বকর (রা) চমৎকারভাবেউত্তর দিয়েছিলেন, মাশাল্লাহ। তিনি ঘটনাটি শুনেছেনকুফ্ফারদের নিকট থেকে আর তাই আবু বকর (রা) বললেন,যদি তিনি সত্যিই বলে থাকেন, তাহলে তিনি সত্য বলেছেন।এর দুইটি অংশ রয়েছে, প্রথমত, ‘যদি তিনি সত্যিই বলেথাকেন’ – হাদীস বিশেষজ্ঞগণ এই পদ্ধতীতে কাজকরেন, অর্থাৎ যদি উৎস সত্যিই রাসূল ﷺ এর নিকট থেকেআসে- দ্বিতীয়ত, তাহলে তা সত্য। সেটা হচ্ছে ওহী,আল্লাহর নিকট থেকে রাসূল ﷺ এর উপর নাযিলকৃত। অর্থাৎসহীহ হাদীস পাওয়া গেলে তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা,সেই অনুযায়ী কর্তব্য পালন করা ঈমানী দায়িত্ব, কারণ সেটাওহী। এমন কথা বলা যাবে না যে, এটা তো আমার যুক্তিতেটিকল না বা আমার বাপ- দাদাদের কখনও এমন কিছু বলতে বাকরতে দেখিনি কিংবা আমার মাযহাবে এমনটি সমর্থন করে না’।আবু বকর সিদ্দীক (রা) এর এই ঘটনা থেকে আমাদের জন্যগুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এটাই, রাসূল ﷺ এর কথাসহীহভাবে আমাদের নিকট পৌছালে বিনা বাক্য ব্যয়ে তামেনে নিতে হবে, তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবেএবং সেই অনুযায়ী কর্ম পালন করতে হবে। সেটা আমারনিকট যুক্তিতে টিকুক আর না টিকুক, আমার চারপাশে লোকজনসেটা মানুক আর না মানুক আমাকে রাসূলﷺ এর কথায় বিশ্বাসস্থাপন করতেই হবে এবং তার যথাসাধ্য অনুসরণ করতে হবে।আল্লাহ তাআলা আমাদের রাসূল ﷺ এর সাহাবীদের মতোকরে দ্বীন ইসলামকে বুঝার তৌফিক দান করুন এবং সেইঅনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

Total Pageviews