নিয়মিত মাসিক হয় না কেন?এর জন্য কী কোন ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন

নারীর জীবনে দু’তিনটে পর্বে পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে
যেতে পারে। মেনার্কি বা মেন্সট্রয়েশন শুরুর সময়ে। এ সময়
ওভারি ততটা পরিপক্ব হয়ে ওঠে না বলে তার পূর্ণ কর্মক্ষমতা
দেখা যায় না। খেয়াল করে দেখবেন ডেলিভারির পর ৩-৪ মাস
পিরিয়ড একটু অনিয়মিত থাকে। তবে সন্তানকে ব্রেস্ট ফিডিং
করালে এ পর্ব আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। এ তো সবারই জানা
যে মধ্য বা শেষ চল্লিশে ওভারি প্যাক আপ করার জন্য তৈরি হয়।
মেনোপজের আগে তাই পিরিয়ড অনিয়মিত হয়।
পিরিয়ড ইরেগুলার বা অনিয়মিত কিনা বুঝবেন কীভাবে? উপরে
উল্লেখ করা সময় ছাড়া যদি দুই পিরিয়ডের মধ্যে ৫ সপ্তাহের
বেশি ব্যবধান হয় তবেই বুঝবেন সমস্যা হয়েছে। তবে
জীবনে অনেক ঘটনা আছে যা যৌন হরমোনের ব্যালান্স নষ্ট
করতে পারে। তাতেও পিরিয়ড বিঘ্নিত হয়। প্রিয়২৪.কম
স্ট্রেস :
মানসিক চাপ রিপ্রোডাকটিভ সিস্টেমকে সহজেই প্রভাবিত করে।
পরীক্ষার সময় এমন হয়, খেয়াল করেছেন? পিরিয়ডে একটু
গোলমাল। কখনও নিকটাত্মীয় মারা গেলে বা দারুণ অসুস্থ হলে।
বাড়ি বদলালে অথবা চাকরি চেঞ্জ করলেও দেখবেন প্যাটার্নটা
বদলে যায়। স্বাভাবিক সুস্থ জীবনে ফিরে গেলেই কিন্তু সব
ঠিক হয়ে যায়।
বডি ওয়েট :
ওজন ধুম করে বাড়লে বা কমলে নর্মাল সাইকল ব্যাহত হয়।
আগে যা শরীরের ওজন ছিল, সেখানে ফিরে গেলেও
পিরিয়ড আবার আগের মতো স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগে।
ডায়েট :
হঠাৎ ভেজিটেরিয়ান হয়ে গেলেন বা ক্র্যাশ ডায়েট প্রোগ্রাম
শুরু করলেন। আপনি অবশ্যই সমস্যা ডেকে আনলেন। পিরিয়ড
ধুম করে বন্ধ হতে পারে কিংবা একেবারে অনিয়মিত হয়ে
যেতে পারে।
এক্সারসাইজ :
কথা নেই বার্তা নেই, প্রচুর ব্যায়াম শুরু করে দিলেন। পিরিয়ডের
যে নিয়মিত চক্র, তা বিঘিœত হতে পারে। আসলে বডি ফ্যাট হঠাৎ
কমলে হরমোনে বৈষম্যের ফলে ওভারির ফাংশন পরিবর্তিত হয়।
ক্রনিক অসুখ :
কিছু অসুখ আছে যা লম্বা সময় ধরে ভোগায়। যেমন ডায়াবেটিস,
থাইরয়েড, অ্যাজমা, টিবি বা যক্ষ্মা, ক্যান্সার। পিরিয়ড বন্ধ হয়েও
যেতে পারে, কমতে তো পারেই। প্রিয়২৪.কম
ড্রাগ :
অনেক ওষুধ রয়েছে যা নর্মাল পিরিয়ডকে ব্যাহত করে। যেমন
অ্যান্টি-ডিপ্রেসান্ট। লিভারে প্রতিক্রিয়ার জন্য হরমোন
লেভেলে রদবদল হয়। যেসব কন্ট্রাসেপটিভে
প্রজেস্টোরেন রয়েছে তা থেকেও কিন্তু পিরিয়ড অনিয়মিত
হতে পারে। পিরিয়ড বন্ধও হয়ে যায় অনেক সময়।
মনে রাখতে হবে হরমোনের ভারসাম্যের জন্যও কিন্তু
ওভ্যুলেশন ডিসঅর্ডার দেখা দিতে পারে।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম :
ওভ্যুলেশনের জন্য প্রয়োজনীয় ডিম্বাণু আদৌ ম্যাচিওর করে
না। আসলে এসব মহিলার একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্নে এগ বা ডিম্বাণু তৈরি
হয় না। পলিসিস্টিক কেন? একটা আলট্রাসাউন্ড করলেই দেখা যাবে
ওভারিকে ঘিরে রেখেছে অসংখ্য ফলিকল বা সিস্ট। ঠিক যেন
মুক্তোর মালার মতো। ডিম্বাণুর অনিয়মিত বৃদ্ধির জন্যই পিরিয়ড
বিঘ্নিত হয়। সময়ের ঠিক থাকে না, কবে হবে জানাও যায় না। এরা
ওভারওয়েট। ব্রণ থাকবে, তৈলাক্ত ত্বক, মাথার চুলও কমবে।
শরীর বেশ রোমশ হয়ে যায়। ওভারিতে হরমোনের ব্যালান্স
নষ্ট হয়, পুরুষ হরমোন অ্যান্ড্রোজনের মাত্রা বাড়ে। তাই যত
বিভ্রাট।
প্রিয়২৪.কম
হাইপারপ্রোল্যাকটিনিমিয়া :
চাইল্ডবার্থের পর পিটুইটরি গ্ল্যান্ড তৈরি করে প্রোল্যাকটিন।
উদ্দেশ্য মিল্ক সিক্রিশন বাড়ানো। ব্রেস্ট ফিড করান না এমন
মহিলার যদি প্রোল্যাকটিন বেড়ে যায়, তাহলে পিরিয়ড বিঘ্নিত
হবে। বুকে দুধও অস্বাভাবিকভাবে তৈরি হয়। এসব মহিলার পিটুইটারিতে
ছোট বিনাইন টিউমার থাকাও অসম্ভব নয়। তাতে মাথাব্যথা হবে,
চোখে দেখার সমস্যাও হতে পারে।
প্রি-ম্যাচিওর মেনোপজ :
৪৫ থেকে ৫০, এটাই মেনোপজের গড় বয়স। ১ থেকে ২%
মহিলার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অনেক তাড়াতাড়ি ঘটতে পারে। এরা
অসুস্থ, এমনটা ভাবার কারণ নেই। এরা আসলে ওভারিতে কম সংখ্যক
এগ নিয়ে জন্মান। তবে ক্রোমোজমে বৈষম্য, ইনফেকশন,
সিস্ট/টিউমার, সার্জারি, রেডিয়েশন অথবা কেমোথেরাপিতে
ওভারিয়ান ফেলিওর ত্বরান্বিত হয়।
হেভি অথবা অনিয়মিত পিরিয়ড কিন্তু আপনার ওয়েক-আপ কল। দ্রুত
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য নিন। সঙ্গে ওবেসিটি, অস্বাভাবিক
হেয়ার গ্রোথ, মিল্ক সিক্রিশন বা মাথা ব্যথা হলে একদম দেরি না।
ওভ্যুলেশন প্রবলেম থাকলে যে নারী কনসিভ করার চেষ্টা
করছেন, তাকে তো অবিলম্বে পরামর্শ নিতেই হবে।
লেখক পরিচিতি
প্রখ্যাত প্রজনন বিশেষজ্ঞ ও গাইনোকোলজিক্যাল
এন্ডোস্কোপিক সার্জন। ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্টে দক্ষতা
বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।
লিখেছেন-
ডা. গৌতম খাস্তগীর
চেম্বার : বার্থ, ৩৬ বি, এলগিন রোড, কলকাতা

Total Pageviews