আমি আর রিমা অনেক ভালো বন্ধু। আমাদের বন্ধুত্ব প্রায় ৫ বছরের। আমাদের নিজেদের ব্যাপারে কোনো কথা জানা বাকি নাই। আমি রিমার মতো বন্ধু পেয়ে আসলেই সত্যি নিজেকে অনেক গর্বিত মনে করি। আসলেই এমন বন্ধু পাওয়া বড়ই ভাগ্যের ব্যাপার। আমরা এতো টাই ঘনিষ্ঠ যে সবাই মনে করে আমরা প্রেমিক/প্রেমিকা। কিন্তু আমরা কখনও অন্যের কথাই কান দেয় নি। আমাদের যেটা ভালো লেগেছে সেটাই করেছি। এমন বন্ধুর জন্যে নিজের জীবন খুশি মনে করে দিলেও কম মনে হবে। সেই আজ আমার জীবন সঙ্গী। ওকে জীবন সঙ্গী হিসেবে আজ নিজেকে অনেক ভাগ্যবান বলে মনে করি।
.
আমি যে বাসায় থাকতাম, রিমা সেই বাসা থেকে অল্প একটু দূরে ওদের বাসা ছিলো। একদিন...
সকাল ৮.৩০ মিনিট পার হয়ে গেছে। ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে ছিলাম তবুও টের পাই নি। হঠাৎ করে ফোন টা ক্রিং ক্রিং ক্রিং করে বাঁজতে থাকে। ঘুমের ঘোরে চোখ মেলে দেখতে পারছি না কে ফোন করেছে। তবুও অতিকষ্টে ফোনটি রিসিভ করে কানে লাগাই। কানে লাগানো মাত্র গালি শুনে লাফিয়ে উঠলাম।
- এতো ক্ষণ ধরে ফোন দিলাম, রিসিভ করলি না কেন রে??
~ আমি ঘুমিয়ে ছিলাম তাই।
- তোর ঘুম বের করছি, এখন কয় টা বাজে সময় দেখছিস।
~ উফফ, সাড়ে ৮ বাজে। এখন আমি কি করি।
- কি আর করবি, ঘুমিয়ে থাক। ভার্সিটি যেতে হবে না।
~ দোস্ত আমার বাসায় একটু আসতে পারবি, আমারে একটু সহযোগিতা কর।
- আমি কি তোর চাকর। ফোন টা রাখ।
সকাল বেলা একটু ঝাড়ি খেয়ে কি আর করি, গোসল দিয়ে এখন রান্না করতে যাবো। এমন সময় কলিং বেলে কে যেনো আওয়াজ দিচ্ছে। দরজা খুলেই দেখি রিমা।
~ আমি জানতাম তুই আসবি।
- আমি না থাকলে কি করবি, আমি যদি অন্য কোথাও চলে যায়, তখন কি করবি??
~ তোকে অন্য কোথাও যেতে দিবো না। প্রয়োজন হলে তোরে বিয়ে করে হলেও কাছে রাখবো।
- হারামী, ফিল্মি ডায়ালগ ভালোই দিতে পারিস তো। নে এ টিফিন বক্সে খাবার আছে, খেয়ে নে তাড়াতাড়ি।
~ তুই দুপুর বেলা কি খাবি??
- আমার চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের চিন্তা কর। দুপুরের খাবার বাইরে খাবো, তার জন্যে তুই তো আছিস।
~ ওহ, আমি তোর তো এটিএম বুথ, তাই না।
- হুম, এতো বক বক করা বাদ দিয়ে খা আগে।
.
ভার্সিটিতে গেলে সবাই আমাদের একটু আলাদা চোখে দেেখ। আমাদের আচারণ দেখে আজ পর্যন্ত আমায় কোনো মেয়ে, বা রিমাকে কোনো ছেলে প্রপোজ করে নি। কারণ সবাই ভাবে জানে আমরা প্রেমিক/প্রেমিকা। এতে আমাদের একটু হলেও ভালো হয়। আমার মনে কয়েক বার প্রেম করার ইচ্ছে জেগে ছিলো, কিন্তু রিমার গালির জন্যে সেটাও হয়ে উঠে নি। একদিন....
~ দোস্ত আমার এক মেয়েরে ভালো লাগে, ওই মেয়েও আমারে পছন্দ করে। আজকে তারে প্রপোজ করমু।
- মেয়ের নাম কি রে? আগে আমি দেখা করি, তারপর প্রপোজ করিস। প্রিয়২৪.কম
আমি নামধাম বলে দিলাম, ও আমাকে রেখে ওই মেয়ের সাথে দেখার করার জন্যে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে আমায় বলে লাইন ক্লিয়ার যা এবার কর গিয়ে প্রপোজ। ওর উৎসাহ দেখে মনে হচ্ছিলো যে আবার কাজ হয়ে যাবে।
ওই মেয়ের সামনে গিয়ে....
~ আমি তোমাকে...... বলা মাত্রই গালে একটা ঠাস করে থাপ্পড় দিয়ে বলে গেলো মেয়েটি। আমি কিছুই বুঝলাম না ব্যাপার টা। গালে হাত দিয়ে চলে আসি রিমার কাছে। আমার গালে হাত দেখে ও হেসে যাচ্ছে।
- ইসস, গাল টা তো লাল হয়ে গেছে, রে।
~ আর দরদ দেখাতে হবে না। তুই দেখা করার পরই এই অবস্থা। তুই ওরে কি বলেছিস গিয়ে???
- আমি বলেছি, আমরা দুজনে সম্পর্ক করি অনেক বছর ধরে। আরো ইত্যাদি, ইত্যাদি।
~ তুই কি রে, বন্ধুর প্রেম এভাবে নষ্ট করে দেয় মানুষ।
- তোর ভালোর জন্যেই করেছি। আমি চাই ভালোবেসে তুই কখনও কষ্ট পা। সে কষ্ট সহ্য করতে পারবি না। আর ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিস।
আমি জানি ওর মধ্যে কি আছে, ওর কথা শুনলে খুব ইমোশনাল হয়ে যায়।
.
আমি কয়েকদিন যাবত ভার্সিটিতে যায় নি। ফোন টিও বন্ধ ছিলো, বাসাও ছিলাম না। যখন কয়েক দিন পর বাসায় আছি। ফোনটি খেলা মাত্রই কল আসে। দেখি রিমা কল করেছে ---
- তুই কই??
~ বাসায় আছি।
- বাসায় থাকিস, আমি যাচ্ছি তোর এখানে।
~ ওকে।
কয়েক মিনিট পর রিমা এসে হাজির। আমার কাছে এসে গালে একটা সজোরে যে থাপ্পড় দিলো।
~ থাপ্পড় মারলি কেন??
- তোরে ১ টা নয় ১০ টা মারা উচিত। হারামী এতো দিন কোথায় ছিলি। ফোন বন্ধু ছিলো, বাসায় ছিলি না। কই গেছলি বলেও যাস নাই কেন? আমার কত চিন্তা হয়ে ছিলো জানিস। প্রিয়২৪.কম
~ গ্রামের বাড়ি গিয়ে ছিলাম।
- তুই যে কোথাও যা , আমায় বলে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না। আমারে তুই বন্ধুই ভাবিস না।
~ সরি, ক্ষমা করে দে।
- তোকে ক্ষমা করব না আমি।
~ রাগ করে লক্ষ্মী সোনা,আর মনে নাই। ক্ষমা করে দে না।
- ওকে, ক্ষমা করলাম।
~ আজ তোর জন্যে বড় সারপ্রাইজ আছে রে। চল আমার সাথে।
.
দুজন মিলে একটা কফিশপে গিয়ে বসি। আমি একটু ফুরফুরে মেজাজে আছি। কিন্তু রিমা একটু অন্যরকম ফিল করছে। মুখে একটু হলেও চিন্তার ছাপ পড়েছে।
- কি সারপ্রাইজ বল রে??
~ ওয়েট কর।
- আর ওয়েট সহ্য হচ্ছে না।
~ আমার ফ্যামিলি আমার জন্যে মেয়ে দেখা শুরু করে দিয়েছে। ভালো মেয়ে পেলে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবে।
এ কথা শুনার পর রিমার একটু মন খারাপ করে চুপচাপ চেয়ে আছে।
~ কি চিন্তা করছিস? আমার বিয়ের কথা শুনে তুই খুশি হসনি।
- হুম, অনেক খুশি হয়েছি।
~ আমার একটা মেয়ে পছন্দ আছে। কিন্তু বলতে তেমন একটা সাহস পাচ্ছি না।
- কে আমায় বলতে পারিস। যা বলার আমি বলবো।
~ তোকে বলা যাবে না। তুই আবার আগের মতো করিস যদি।
- না রে, সবসময় ফাজলামি করা টিক নয়।
~ ওহ, তুই হা বললেই হবে।
- ওকে, যা বলিস করব।
~ তুই আমায় বিয়ে করবি??
- সবসময় ফাজলামি করিস না।
~ আমি ফাজলামি করছি না, আমি সত্যি বলছি। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত তোকে ভালোবেসে এসেছি এবং সারাজীবন বেসে যাবো। বল তুই কি আমায় বিয়ে করবি??
রিমার চোখে জল। শুধু কেঁদে যাচ্ছে রিমা।
- ভালোবাসিস বলিস নি কেনো আগে? আমিও তোকে ভালোবাসি।
~ আমাদের বন্ধুত্বে জন্যে বলতে পারি নি। ওসব বাদ দে। আমার পরিবারে তোর কথা বলেছি। কয়েক দিনের মধ্যে দিনতারিখ টিক করতে আসবে।
- আই লাভ ইউ
~ লাভ ইউ 2. এবার চল নিউজ টা সবাইকে দিয়ে ফেলি আমাদের বিয়ে হচ্ছে।
- যা ইচ্ছে হয়।
.
কয়েক দিন পর আমাদের ধুমধাম করে বিয়ে হয়। আজ আমরা সুখে আছি। কারণ দুজন দুজনে আগে থেকেই জানি। আমাদের মাঝে কোনো বিষয় অজানা নাই। যার কারণে আমাদের বাকী জীবনে আমরা ঝামেলা ছাড়াই পার করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।