নীলপরীর গল্প . প্রথম পর্ব

অনেক দিন হয়ে গেল সিয়াম কে নিয়ে বেড়াতে যাই না।
দেখি আজ রাতে নিয়ে যাবো রাতের শহর টা দেখাতে।
ছেলেটা আমার কি করে যেন সব কষ্ট বুঝে ফেলে।কোন
বায়নাও ধরে না।একদম ওর মায়ের মত হইছে।ওর মা ও ঠিক
এমন ছিল আমার কোন কিছু হলে কিভাবে যেন বুঝে
ফেলত।ইনকাম কম ছিল তাই বেশি কিছু চাইতো ও না।
.
সিয়ামের আম্মু মানে ইরা নিল চুরি খুব পছন্দ করত।আর
সেই পছন্দের নিল চুরিই আমি বেশি দিতাম।আর মাঝে
মাঝে রাতে রিক্সা করে শহর টা দেখতাম বাসায় আসার
আগে ফুসকা খাওয়াতাম।এতে ইরা অনেক খুশি হত।তখন
নিজেকে এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ মনে হত।
.
ইরার সাথে আমার বিয়েটা হয়েছিল আমার আম্মুর জন্য
আমার আম্মু ইরাকে পছন্দ করত।আম্মুর বান্ধবীর মেয়ে
ছিল
ইরা।দেখতে অনেক সুন্দর ছিল ইরা আবার বাসার সব
কাজকর্ম একাই সামলাতে পারত ইরা।শুনেছিলাম ইরা
নাকি আমার আম্মুকে অনেক সম্মান করত আর ভালবাসত।
সেই জন্য আমার আম্মু ইরা মেডামকে আমার জন্য পছন্দ
করেছিল।
.
একমাত্র ছেলে বলে কথা নিজেই দেখেশুনে বিয়ে
করাবেন।আর আমার আব্বু তো আম্মুর পছন্দই পছন্দ করতেন।
তাই আব্বুরও মত ইরাকেই আমার সাথে বিয়ে দিবেন।
আমিও বাধ্য ছেলের মত আম্মু আব্বুর কথা শুনতাম।তাই
তাদের কথার মধ্যে ভেটো দেয়ার সাহস ছিল না।কারন
আব্বু অনেক রাগি ছিলেন।তাই সব কিছু মেনে নিতে
হয়েছে হাসি মুখে।
.
--বাবা সাগর,সাগর।
--হ্যা আম্মু।
--আজ বিকেলে তোর কোন কাজ আছে?
--না তো আম্মু কেন?
--বিকেলে একটু ইরাকে নিয়ে যাবি তো ঘুরতে।
--কেন আম্মু ঘুরতে নিয়ে যাব কেন।
--এত্ত প্রশ্ন না করে বিকেলে যাবি ইরা তোকে ফোন
দিবে।
--আমি পারব না।
--এই আর একটাও কথা বলবিনা।বিকেলে ইরাকে নিয়ে
যাবি এটাই ফাইনাল।
--আচ্ছা।
প্রিয়২৪.কম
.
ধ্যাত আম্মু এটা কি করল।ইরাকে নাম্বার দিয়ে দিয়েছে।
আবার বিকেলে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে।মেজাজটাই গরম
হয়ে গেল আমার।কি জানি কেমন মেয়ে হয়।আমি এমনেই
লজ্জা বেশি পাই।মেয়েদের সামনে কথাই বলতে
পারিনা।আজ ঘুরতে নিয়ে যাবো।।এই সব ভাবতে ভাবতে
বিকেল হয়ে গেল।হঠাৎ আমার মোবাইকে ফোন আসল….
.
--হ্যালো।
--হ্যালো কেমন আছেন।
--কেক কে আআআপনি।
--তোমার বউ।
--আআআ রেএএ আ আরে আপনি কাককার বউ।
--বাসার নিচে আসেন দেখে যান কার বউ।
.
এই বলে ফোনটা কেটে দিল।আসলে আমি অনেক ভয়
পেয়েছিলাম।জীবনে প্রথম এভাবে কোন মেয়ের সাথে
কথা বললাম।আবার ইরার কন্ঠটা অনেক মিস্টি ছিল।
ফোনে আমার আম্মু আর আন্টিদের ছাড়া অন্য কোন
মেয়েদের সাথে সাধারনত কথা বলিনি।তাই একটু ভয়
পেয়ে গেছিলাম।রেডি হয়ে বাসার নিচে গেলাম।ইরাকে
দেখেই তো আমি অবাক হয়ে গেলাম।আমার আম্মুর চয়েজ
আছে বলতে হবে।মনে হচ্ছে আকাশ থেকে পরি নেমে
এসেছে।একটা নিল শাড়ি পরেছে ইরা অনেক সুন্দর
লাগছে ইরাকে।
প্রিয়২৪.কম
.
--এত্ত ক্ষন লাগল কেন আসতে
--রেএএডি হতে দেদেএএরি হয়ে গেএএছে
--এই আপনি কি তুতলা নাকি।
--ধ্যাত।কে বলছে আমি তুতলা।
--তো তুতলামি করছেন কেন
--একটু নার্ভাস লাগছে তো তাই।
--আন্টি তো বলেছিল আপনি একটু বলদ টাইপের।এখন
দেখছি আপনাকে বলদ বললে বলদদের অপমান করা হবে।
--আপনি আমাকে অপমান করছেন কিন্তু।
--তুতলামি না করলে আর বলব না।এখন রিক্সায় উঠেন।
--হুম।
.
এই বলে রিক্সায় উঠলাম।ইরা রিক্সাওয়ালাকে পার্কের
দিকে যেতে বলল।আমি কোন কথা না বলে কাচুমাচু হয়ে
রিক্সায় বসে আসি।ইরা ও কিছু বললনা শুধু বলল,,ঠিক করে
বসো,এভাবে কেউ রিক্সায় বসে নাকি।
.
পার্কের সামনে চলে এসেছে রিক্সা।ইরা নামতে বলল
আমাকে।আমি কোন কিছু না বলে চুপ করে করে কথামত
নেমে গেলাম।ইরা আমাকে নিয়ে পার্কের একটা
বেঞ্চিতে বসল।আমি একটু দুরে বসতেই একটা ধমক দিয়ে
বলল,,এত্ত দুরে কেউ বসে একেবারে বেঞ্চের শেষ মাথায়
পড়ে যাবেন তো এদিকে আসেন।হবু বউ এর কাছে এসে
বসেন এত্ত লজ্জা থাকতে নেই ছেলেদের।
.
আমি কোন কথা না বলে হাল্কা কাছে এসে বসলাম।আর
ইরার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।আর ভাবছি এই
নিল পরি কি আমার হবে।আমাকে ভালবাসবে,আমাকে
বিয়ে করবে বিশ্বাস হচ্ছে না।আমার এই অগোছালো
জীবনটাকে সাজাতে পারবে তো।মনে মনে আম্মুকে
ধন্যবাদ দিতে লাগলাম।(চলবে)

Last 7 Days Visitors