অধরার কথাটা যেন কেমন লাগলো আমার কাছে।কথাটা শুনে কষ্ট লাগলো।

-তুমি কি রেগে আছো আমার উপর?
.
কথাটা বলে অধরার দিকে তাকালাম।অধরা কথাটা শুনা মাত্রই আমার পাশ থেকে অনেকটা রাগীভাব নিয়ে চলে গেল।আমি মনে মনে ভাবতে থাকলাম আমি কি করেছি যে আমার উপর এতো রাগ দেখাচ্ছে অধরা।নাহ!
কিছুই তো মনে পড়ছে না।আচ্ছা অধরা কি কিছু চেয়েছে আর আমি দেই নি? নাহ! তাও না। সদ্য কিছু চায়নি যে আমি দেই নি।সুতরাং এইটা বাদ।
.
অধরার সাথে খারাপ আচরণ! এখানে দুইমিনিট ভাবতে হবে।অতীতে অনেক খারাপ আচরণ করেছি।ইচ্ছে করেই করেই রাগাতাম।অভিমানী মুখটা দেখার জন্য। রাগতো, আবার আপনা আপনি রাগ চলে যেত।আমি সবসময় রাগ ভাঙ্গাবো। এমন ছেলে আমি নই।আমিও উল্টো অভিমানী হয়ে যাই।ফলাফল অধরা নিজের রাগ ভুলে গিয়ে আমার রাগ ভাঙ্গানোয় ব্যস্ত হতো।অবশ্য সর্বদা এমন যে হবে তা নয়।মাঝেমাঝে আমিও রাগ ভাঙ্গাই।
আজ কি ভাঙ্গাবো? না আমি উল্টো রাগবো? উল্টো রাগারো একটা মোড থাকা উচিৎ।অধরার মোডটা আমার মোটেও ভালো ঠেকছে না।
.
.
গতকাল রাতে যখন অফিস শেষে বাসায় ফিরি অধরা অনেকক্ষণ পরে দরজা খুলে।খুলতেই পারে। হয়তো কাজে ব্যস্ত ছিল।কিন্তু অধরা আমার দিকে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ বড় বড় চোখে তাকিয়ে তারপর বললো...
--বেল টা কি দেখার জন্য? দরজা কিলিয়ে কি ভেঙ্গে ফেলবে?
আজব তো! আমি প্রায়শই বেল বাজাই না।দরজায় ধাক্কা দেই।অভ্যাস হয়ে গেছে।এমন করে ধাক্কা দেইনি যে দরজা ভেঙ্গেই যাবে!
আমি কিছু না বলে অধরাকে সামনে থেকে সরিয়ে ভিতরে চলে আসি।সারাদিন অফিসে একঘেয়েমি কাজ করার পর আর সেই মোড থাকেনা যে কে রাগলো না রাগলো দেখার।কিছুক্ষণ পর অধরা পাশে এসে বসলো। হাতে এক কাপ চা ছিল।প্রতিদিন অফিস শেষে চা না খেলে একঘেয়েমি মোড যায় না।আমি অধরার দিকে একবার আড়চোখে তাকালাম।অধরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ব্যাপারটা কি?
থাক।আমার হাতে টেকাপয়সা তেমন নাই।এসব ভেল্কিতে পাত্তা দেওয়ার সময় অনেক আছে।অধরা উঠে গেল।আমি আড়চোখে তাকালাম। চায়ের কাপটা নিয়েই চলে যাচ্ছে।দিলো না! আজব তো!
.
"খাবে না?
অধরা যাবার পর আমি শুয়ে পড়ছিলাম।তারপর অনেকক্ষণ পর এসে অধরা খেতে যেতে বলছে।
.
অন্যসময় আমি যদি শুয়ে থাকি অধরা এসে বলবে,,,"এই খাবে চলো।অফিসে কি এমন কাজ করেছো যে ঘুমাতে হবে এসেই।বুঝা যাচ্ছে আর মানুষে কাজ করে না।গরম ভাত ঠান্ডা হয়ে যাবে।উঠো,উঠো।" এই সেই বলে জোরজবরদস্তি করে উঠাবে।তবে আমি সাধারণত অফিস শেষ করে বাসায় এসে টিভি দেখবো নয়তো ছাদে গিয়ে বসে বসে মোবাইলে গান শুনবো।অধরা এভাবে বলছে কেন?
আমি কিছু না বলে উঠে খেতে গেলাম।খেতে খেতে আড়চোখে অধরাকে দেখছি।খাচ্ছে না।ভাত নাড়াচাড়া করছে।আমি বললাম...
--তোমার সমস্যাটা কী? কখন থেকে দেখছি কিছুতেই মনযোগী নও তুমি।
কথাগুলো অনেকটা জোরেই বলে ফেললাম।অধরা আমার দিকে আশ্চর্য চোখে তাকালো।আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। তারপর অধরা বললো...
--মনযোগী না? তাহলে কোনকাজটা বাকি পড়ে আছে।বলো? বলো বলছি?
অধরা অনেকটা চিৎকার করেই বললো।
-- তুমি খাচ্ছ না।অন্যমনষ্ক হয়ে আছো।তাই বললাম।
.
অধরার চোখগুলো যেন কিছুক্ষণ আগে যেমন ছিল তার চেয়েও খারাপ অবস্থা ধারণ করলো।কিছু না বলেই হাত ধুয়ে চলে গেল।আমি অধরার চলে যাওয়া দেখে আবার খাওয়ায় মনযোগ দিলাম।
রুমে এসে দেখি অধরা সোফায় শুয়ে আছে।অধরা এবার বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছে।আমি কি এমন করছি যে আমার সাথে এমন আচরণ করছে!
আমি লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম।
.
.
গতকালের আচরণ দেখে আজ জানতে চাইলাম আমার উপরে রেগে আছে কি না।কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না।
.
-- কালো বলে সংসার করা যায় না?
অফিসের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম।অধরা এসে একথা বললো।আমি অধরার দিকে অনেকটা অবাক চোখে তাকালাম।আমি শুধু জানি অধরা কোনো কারণে কোন বিষয়ে সম্ভবত আমার উপর রেগে আছে।মন খারাপ। কিন্তু এমন করুণ কণ্ঠে আবদার করার কারণ কী? এমন আচরণ কেন করছে অধরা? এসব মনে মনে ভাবতে ভাবতেই অবাক চোখে অধরার দিকে তাকালাম।অধরা আবার বললো....
-- আমি দেখতে পঁচা, মানুষ পঁচা।বিয়ের সময় মনে ছিল না?
.
আমি অধরার দিকে আশ্চর্য চোখে তাকালাম। এতক্ষণে বুঝলাম অধরা কেন আমার উপরে রেগে আছে , কেন আমার সাথে এমন আচরণ করছে!
সেইদিন আমার কথাগুলো শুনে সত্যি সত্যি ভেবে বসেছে পাগলিটা।সেখান থেকে আমার উপর এক আকাশ অভিমান নিয়ে পড়ে আছে!
.
-- শুনেছি মেয়েরা অবলা গাধী জাতিবিশেষ।তোমাকে না দেখলে বুঝতাম না।আসলেই মানুষ যা বলে মিথ্যা বলেনা।
অধরা রান্নাঘর থেকে পেয়াজ কাটতে কাটতে আমার কথা শুনে আমার দিকে আড়চোখে তাকালো।আবার চোখ ফিরিয়ে নিলো।রাগ,অভিমান যে এত দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এই মেয়েকে বউ হিসেবে না পেলে বুঝতাম না।
অফিস থেকে এসে টিভি দেখছি আর অধরার সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করছি।তবে পাত্তা পাচ্ছিনা।
-- অফিস ফিরত স্বামীর সেবা করতে হয়।সেটাও ভুলে যাচ্ছ দিন দিন।অন্ততপক্ষে এক কাপ চা দেওয়াই যায়,নাকি?
আমি অধরার সাড়া না পেয়ে আবার বললাম।অধরা এখন তাকানোর প্রয়োজনই মনে করলো না,কি সাংঘাতিক! কি দেমাগ!
.
অবশ্য রেগে থাকার কথাই।আমি মজা করতে করতে কখন যে অধরাকে হার্ট করে ফেলেছি,নিজেই বুঝিনি।গ

Total Pageviews