অন্যরকম ভালোবাসা

অন্যরকম ভালোবাসা
,,,,,,,,,লেখা»জোবাইর খন্দকার ,,,,
:দেখ আকাশ তুই কি কখনো সিরিয়াসলি হবি না?
:কেন তোর আবার কি হল?
:তুই কেন বুঝতে পারছিস না যে এই মন কি চায়?
:দেখ বৃষ্টি তুই যেটা ভাবতেছিস সেটা কোনও দিনও সম্ভব না।তুই শুধু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
:কেন সম্ভব না তুই কি আমাকে ভালবাসিস না
:হ্যা ভালবাসি তবে সেটা বন্ধুর মত।এর বেশি নয়।বন্ধু হিসাবে তোর জন্য আমি জীবনটাও বিলিয়ে দিতে পারি কিন্তু জীবন সাথী করতে পারবোনা।
:ওকে ঠিক আছে, থাক তুই। তোকে জীবন দিতে হবেনা আজকের পর থেকে আর তোর সামনে ভালবাসার দাবি নিয়ে আসবো না।
:আচ্ছা যা এবার একটু শান্তিতে থাকতে দে।
এভাবে বলার পর মেয়েটি চলে গেল ।
~~~
আমি আকাশ কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ি আর এই যে মেয়েটি দেখলেন বৃষ্টি ও হচ্ছে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু,১ম যেদিন কলেজে আসি সেদিন বাসে মেয়েটির সাথে পরিচয় কথা বলার পর জানতে পারি যে আমরা একই বিভাগের আর তারপর থেকেই একসাথে কলেজ আসা যাওয়া ঝগড়া মারামারি এবং হাজারো খুনসুটি মান অভিমানের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছিল আমাদের বন্ধুত্ব।এভাবে ১ম বর্ষের দিনগুলি শেষ করে ২য় বর্ষে যাবার পর বৃষ্টি প্রপোজ করে যে ও নাকি আমাকে অনেক ভালবাসে,ওর চিন্তা চেতনা সব নাকি আমাকে ঘিরে।
আমাকে ছাড়া ও নাকি মুল্যহীন আরো অনেক কথা সেগুলো না হয় অজানাই থাক।কিন্তু আমি তো ওকে ভালবাসিনা ওর জন্য আমার মনের মাঝে কোন ভালবাসার অনুভুতি সৃষ্টি হয় না।যা অনুভুত হয় তা শুধুই বন্ধুত্ব।মেয়েটা দেখতেও অনেক মায়াবী কি সুন্দর টানা টানা চোখ কাজল কাল ভ্রু,মাথায় এক ঝাক কালো চুল,যখন বাতাসে চুল ছড়ায়ে দেয় তখন মনে হয় যেন এক টুকরো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। কত যে ওকে ভালবাসার চেষ্টা করেছি কিন্তু না আমি সফল হতে পারিনি।তাই তো আজ কলেজ শেষে ওকে উপরের কথাগুলো বললাম।
~~
বাসায় এসে রাতে শুয়ে ভাবতে লাগলাম যে আজ মেয়েটাকে এভাবে বলা কি ঠিক হল?ও তো শুধু ভালবাসা চেয়েছিল আর আমি স্বার্থপরের মত মেয়েটাকে বকা দিলাম।ভালো নাহয় না বাসতে পারি তাই বলে এভাবে চলে আসতে বলাটা ঠিক হয়নি অন্যভাবে বুঝিয়ে বললেও তো হতো।ওকে সরি বলতে হবে ভাবতেই ফোনটা হাতে নিলাম আর ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে বলতে লাগলো আপনার কাংখিত নম্বরটিতে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা।এরপর ফেসবুকে লগইন করে সরি বলতে গিয়ে দেখি আইডি ডি এ্যাক্টিভ।কাল কলেজে গিয়ে সরি বলবো ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম।
~~
পরদিন কলেজ গেলাম কিন্তু বৃষ্টিকে দেখতে পাচ্ছি না,ভাবলাম হয়তো রাস্তায় জ্যামে আটকে পড়েছে।আমার ভাবনাটা ছিল ভুল বৃষ্টি ঐ দিন
কলেজে আসিনি।আবার ২য়দিন কলেজ গেলাম গিয়ে দেখি আজও বৃষ্টি আসেনি পরে ১বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারলাম ও নাকি গতকাল কলেজ এসেছিল এবং টি সি এর জন্য আবেদন করে গেছে।কথাটা শুনে ভাল লাগলো যে এখন আর বৃষ্টির জ্বালাতন সইতে হবে না।
~~
এরপর কয়েকটাদিন ভালভাবে কেটে যাবার পর আকাশ কি যেন একটা মিস করতে থাকে কোন কিছু তেই মন বসাতে পারেনা কেমন যেন একটা শুন্যতা বিরাজ করছে।কলেজ গেলেও কলেজটা কেমন যেন অচেনা লাগতেছে।আর বৃষ্টির সাথে কাটানো মহুর্তগুলো বেশ মনে পড়ছে।আকাশ ভাবতেছে তবে কি আমি বৃষ্টির প্রেমে পড়ে গেলাম আর পড়েই যদি থাকি তবে এর আগে কেন বুঝলাম না।(আসলে কোন এক গুনীজন বলেছেন যে যাকে ভালবাসা যায় সে কাছে থাকলে তার প্রতি তেমন কোন অনুভুতি থাকে না,যখন সে দুরে যায় তখন বোঝা যায় যে সে রিদয়ের কতটা জুড়ে আছে)আর সেটাই হয়তো আমারো হয়েছে।
*
এটুকু পর্যন্ত বলেই আকাশ ভাই একটু থামলেন।
এরপর কি হল ভাই?প্রশ্ন করলাম আমি।
এরপর আর বৃষ্টিকে অনেক খুজেছি কিন্তু পাইনি ওর অনুপস্থিতি আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল দেখতে দেখতে আমার অনার্স শেষ হয়ে গেল মাষ্টার্সে ভর্তি হয়ে গেলাম।কিন্তু বৃষ্টিকে ভুলতে পারিনা ও যে আমার দেহের শিরায় উপশিরায় বইছে।কলেজ যাবার পথে প্রতিদিন রাস্তায় চেয়ে
থাকতাম কিন্তু বৃষ্টি যে আমাকে ছেড়ে গেছে সে আসবে কি করে।অবশেষে মাষ্টার্স শেষ করে বাবার জোড়াজুড়িতে আমাদের কোম্পানীতে বসলাম।।দিনগুলি অনেকটা ভালভাবেই কাটছিলো। হঠাৎ একদিন বাবা বললেন যে তাঁর ছোট বেলার বন্ধুর মেয়ের সাথে আমার বিবাহ অতি শীঘ্র হতে যাচ্ছে আমাকে প্রস্তুতি নিতে বললেন।আমি সেদিন বাবার মুখের উপর না করতে পারিনি,পারিনি বলতে যে আমি বৃষ্টিকে ভালবাসি।পারিনি বলতে বৃষ্টি ছাড়া আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা।কিভাবেই বা বলতাম বৃষ্টিতো আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে।
এসব ঘোরের মধ্য কেটে গেল কয়েকদিন।বাবা বলেছিল মেয়ে দেখে আসতে আমি যাইনি এরপর বিয়েটা করেই ফেললাম এবং এসে গেল সেই কাংখিত বাসর রাত।বন্ধুদের ঠেলাঠেলিতে বাসর ঘরে প্রবেশ করলাম।দরজাটা দিয়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলাম লালবেনারসি শাড়ি পড়া ১টা মেয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।আমি তাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলাম দেখেন আমি বাবার কথা রক্ষার্থে আপনাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি,আমি আপনাকে প্রয়োজনীয় সব দিতে পারবো কিন্তু স্বামীর আদর সোহাগ ভালবাসা দিতে পারবোনা,কারন আমি ১টা মেয়েকে ভালোবাসি তার নাম বৃষ্টি আর ও ছাড়া কাউকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবোনা।এভাবে বলার পর ঘোমাটার আড়াল থেকে বেড়িয়ে
এল মেয়েটি আর বলতে লাগলো
:কুত্তা শালা এত যদি ভালোবাসতি আমায়, তবে সেদিন ওভাবে বলিছিলি কেন?আমাকে এত কষ্ট দিলি কেন বলেই আমার পান্জাবির কলার চেপে ধরলো।
:একি বৃষ্টি তুই এখানে?শুনলাম যে তারপর তোর নাকি বিয়ে গেছিল(একটু রাগানোর জন)তাই আর বলা হয়নি।
:হ্যা হয়েছে তো আজ আর আমার বর ১টা গর্দভ ,তাই তো এতদিন পর কাছে পেয়েও প্রপোজ না করে তুই তুই করতেছে।
তারপর আমিও বাসর ঘরে হাটু গেড়ে দু হাত বাড়িয়ে বলতে লাগলাম
:এই যে ও মেয়ে তুমি কি হবে আমার সকাল সাঝে ঝগড়া করার সাথি?দেবে কি তোমার সুখ দুঃখ ভাগ করে নেবার অধিকার?হবে কি আমার বাবা মায়ের দুষ্ট দাদু ভাইয়ে আম্মু?
কথাটা শেষ হতেই বৃষ্টি আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে বলতে লাগলো আমিতো সেই কবে থেকে তোমার মেয়ের আম্মু হতে রাজি।
।জানিস জোবাইর তোর ভাবি সেদিন বাসর রাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক্ষন কেদেছিল এ কান্না নাকি তার সুখের কান্না।
বলে আকাশ ভাই একটু থামলেন।
**এরপর সেদিন আর কোন কথা হয় নি?আমি প্রশ্ন করলাম।
:এরপর বাকিটা ইতিহাস।যাই রে তোর ভাবি অপেক্ষা করছে দেরি হলে আবার রুমে ঢুকতে দিবেনা আজ আমাদের বিয়ের ১বছর পূর্ন হবে তো তাই ওর ইচ্ছা ডিনারটা বাইরে করবে।
সমাপ্ত
উৎসর্গ:বৃষ্টি ভেজা আকাশ।

Total Pageviews