অতঃপর ইউসুফের পরিবার যখন তার কাছে
পৌঁছল তখন সে তার মাতা-পিতাকে নিজের
একান্তে স্থান দেয়। সে বলল, আপনারা
আল্লাহর ইচ্ছায় নিরাপদে মিসরে প্রবেশ করুন।
[সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৯৯ (দ্বিতীয় পর্ব)]
তাফসির : হজরত ইউসুফ (আ.) শহর থেকে
বেরিয়ে উপশহরে চলে গিয়েছিলেন
আত্মীয়স্বজনকে অভ্যর্থনা জানানোর
লক্ষ্যে।
পিতা ইয়াকুব (আ.) ও পরিবারের অন্য অনেকেই
প্রথমবারের মতো মিসরে এসেছে। এ কারণে
তাদের মধ্যে ইতস্তত বোধ করা খুব স্বাভাবিক
বিষয় ছিল। তাই ইউসুফ (আ.) পরিবারের সবার
উদ্দেশে বলেন, আল্লাহর নামে আপনারা সবাই
মিসরে প্রবেশ করুন। এখানে কোনো ভয় নেই।
বিশেষ কোনো বিধিনিষেধও নেই।
ইনশাল্লাহ, এ শহরে আপনারা নিরাপদে ও
শান্তিতেই থাকবেন। এখানে লক্ষ করার বিষয়
হলো, হজরত ইউসুফ (আ.) শহরের নিরাপত্তা
ও শান্তিতে থাকার আশ্বাস দিচ্ছিলেন
আত্মীয়স্বজনকে। এ ক্ষেত্রে তিনি
‘ইনশাল্লাহ’ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন।
ভবিষ্যতের সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো
কাজকর্মের সঙ্গে ‘ইনশাল্লাহ’ শব্দের ব্যবহার
করা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এরও
আদর্শ। মানবীয় সব প্রস্তুতি পর্যাপ্ত
পরিমাণে থাকলেও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের
ইচ্ছা ও অনুগ্রহ নিশ্চিত না হলে কোনো
কাজই কারো পক্ষে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।
তাই ভবিষ্যতের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিটি কাজে
‘ইনশাল্লাহ’ বলার বিধান রয়েছে।
প্রকৃত ঈমানদার এ কথা বিশ্বাস করে যে
আল্লাহ তাআলা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
তিনি যা চান, তা-ই করেন। তাঁকে বাধ্য করার
মতো কেউ নেই। আর তিনি কোনো কিছু
করতে বাধ্যও নন। ঈমানের দাবি হলো,
ভবিষ্যতের কোনো কাজ সম্পাদন হওয়া না
হওয়ার ব্যাপারটি সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর
মর্জির ওপর ছেড়ে দেওয়া এবং বলে দেওয়া
‘ইনশাল্লাহ’।
ইনশাল্লাহর অর্থ হলো, যদি আল্লাহ ইচ্ছা
করেন। আল্লাহ বান্দার পূর্বাপর সব কিছু
জানেন। তিনি ভালোমন্দ সব ব্যাপারে পূর্ণ
অবগত। সুতরাং কোনো বিষয় বান্দার জন্য
মঙ্গলজনক হলে তিনি তা সম্পাদন করে দেবেন,
আর অকল্যাণকর হলে এর থেকে তাঁকে দূরে
সরিয়ে রাখবেন।
যেখানে ইনশাল্লাহ বলা নিষিদ্ধ
বৈধ কাজে ইনশাল্লাহ বলা ফজিলতপূর্ণ হলেও
অবৈধ কাজ করার আশা করে ইনশাল্লাহ বলা
নিষিদ্ধ। যেমন—চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার,
দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার ইচ্ছা করে
ইনশাল্লাহ বলা সম্পূর্ণ হারাম। এমনকি
কোনো কোনো বৈধ কাজেও ইনশাল্লাহ বলা
নিষিদ্ধ। যেমন—এভাবে দোয়া করা নিষিদ্ধ, ‘হে
আল্লাহ, তুমি চাইলে আমাকে অমুক জিনিসটি
দান করো। তোমার মর্জি হলে আমাকে
আরোগ্য দান করো। তুমি চাইলে আমাকে
ক্ষমা করো ইত্যাদি। ’
কারণ এর মধ্যে এক ধরনের অবজ্ঞা ও দোয়ায়
নিজের দুর্বলতার দিকটি প্রতিভাত হয়। রাসুল
(সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন
দোয়ায় এভাবে না বলে—হে আল্লাহ, তুমি
চাইলে আমাকে ক্ষমা করো। তুমি চাইলে
আমার প্রতি দয়া করো। বরং দৃঢ়তার সঙ্গে
দোয়া করবে। কেননা আল্লাহ যা চান, তা-ই
করেন। তাঁকে বাধ্য করার মতো কেউ নেই।
Home »
Islamic Story amp; Hadis
» ভবিষ্যতের কোনো কাজে ইনশাল্লাহ বলার গুরুত্ব, যেখানে ইনশাল্লাহ বলা নিষিদ্ধ!