কিয়ামতের কঠিন দিনে মানুষ অস্থির হয়ে
উঠবে। দিশেহারা পাখির মতো ছোটাছুটি করবে
একটু সুপারিশের আশায়। লোকজন বলতে
থাকবে আল্লাহ যেন আমাদের বিচার শুরু করেন।
হাশরের এ কঠিন মাঠ আর সহ্য করতে পারিছি
না। বিচার শেষে তিনি যা ফায়সালা করবেন,
আমরা তাই মেনে নিব।
কিয়ামতের বিচার শুরু হওয়ার পর যখন আমাদের
ডাক পড়বে, তখন প্রতিটি মানুষকে নিয়ে একা
আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ সামনে দাঁড় করানো হবে।
সেদিন আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ প্রত্যেকের সাথে
সরাসরি কথা বলবেন। তাঁর ﺗﻌﺎﻟﻰ এবং
আমাদের মাঝে কোনো অনুবাদক, পির, নবি,
ওলি —কেউ থাকবে না।
তারপর তিনি ﺗﻌﺎﻟﻰ আমাদের বিচার শুরু
করবেন। সারাজীবন আমরা যত খারাপ কাজ
করেছি, সেগুলোর জন্য জবাব চাইবেন, তাঁর
ﺗﻌﺎﻟﻰ অসীম অনুগ্রহে হয়ত ক্ষমা করে
দেবেন। আর যত ভালো কাজ করেছি, সেগুলো
তিনি ﺗﻌﺎﻟﻰ আমাদেরকে দেখাবেন।[৩১৯]
কিয়ামত হচ্ছে আমাদের সব পাপের ফয়সালা
করে, আমাদেরকে পবিত্র করে জান্নাতের জন্য
তৈরি করার জায়গা।
জান্নাত পবিত্র মানুষদের জায়গা। সেখানে
অপবিত্রদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। যারা
কিয়ামতের বিচারে পাশ করে আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ
অনুগ্রহে পবিত্র হয়ে জান্নাতে যেতে পারবেন,
তাদের জন্য বিরাট সুখবর। আর যাদের এত পাপ
জমে থাকবে যে, বিচার শেষেও তাদের পাপের
পাল্লা ভারি থাকবে, তাদের পরিণতি হবে
জাহান্নাম।[সূরা আল-ক্বারিয়াহ]
কিন্তু কিয়ামতের দিন একদল লোক থাকবেন,
যাদের সাথে আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ সেদিনও কোনো
কথা বলবেন না। তারা যতই অনুনয়, বিনয় করুক
না কেন, আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ কোনো উত্তর
দেবেন না। তারা কিয়ামতের এই পবিত্র করার
প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে না। এই চরম
অপরাধীরা হচ্ছে—
তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ
কথা বলবেন না
আরবি হাদিস ﻭَﻋَﻦ ﺃَﺑﻲ ﺫَﺭٍّ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ،
ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﷺ ، ﻗَﺎﻝَ: « ﺛَﻼَﺛَﺔٌ ﻻَ ﻳُﻜَﻠِّﻤُﻬُﻢُ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ، ﻭَﻻَ ﻳَﻨْﻈُﺮُ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻢْ، ﻭَﻻَ
ﻳُﺰَﻛِّﻴﻬِﻢْ، ﻭَﻟَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﺃَﻟِﻴﻢٌ ». ﻗَﺎﻝَ :
ﻓَﻘَﺮَﺃَﻫَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﷺ ﺛَﻼَﺙَ ﻣِﺮَﺍﺭٍ ، ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ
ﺫﺭٍّ: ﺧَﺎﺑُﻮﺍ ﻭَﺧَﺴِﺮُﻭﺍ ! ﻣَﻦْ ﻫُﻢْ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ
ﺍﻟﻠﻪِ ؟ ﻗَﺎﻝَ: « ﺍﻟﻤُﺴْﺒِﻞُ ، ﻭَﺍﻟﻤﻨَّﺎﻥُ، ﻭَﺍﻟﻤُﻨْﻔِﻖُ
ﺳِﻠْﻌَﺘَﻪُ ﺑِﺎﻟﺤَﻠِﻒِ ﺍﻟﻜﺎﺫِﺏِ ». ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ .
ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻟَﻪُ: « ﺍﻟﻤُﺴْﺒِﻞُ ﺇﺯَﺍﺭَﻩُ » . বাংলা
হাদিস আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির সাথে
কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের
দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) তাকাবেন না, তাদেরকে
পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য থাকবে
যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। বর্ণনাকারী বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
উক্ত বাক্যগুলি তিনবার বললেন। আবূ যার্র
বললেন, তারা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হোক!
তারা কারা? হে আল্লাহর রসূল!
তিনি বললেন, (লুঙ্গি-কাপড়) পায়ের গাঁটের নীচে
যে ঝুলিয়ে পরে, দান করে যে লোকের কাছে
দানের কথা বলে বেড়ায় এবং মিথ্যা কসম খেয়ে
যে পণ্য বিক্রি করে। তাঁর অন্য বর্ণনায় আছে,
যে লুঙ্গি ঝুলিয়ে পরে। [মুসলিম ১০৬, তিরমিযি
১২১১, নাসায়ি ২৫৬৩, ২৬৫৪, ৪৪৫৮, ৪৪৬৯,
৫৩৩৩, আবু দাউদ ৪০৮৭, ইবন মাজাহ ২২০৮,
আহমদ ২০৮১১, ২০৮৯৫, ২০৯২৫, ২০৯৭০,
২১০৩৪, দারেমি ২৬০৫
হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, আমি এক
দাওয়াতে নবী করীম (সা.) -এর সাথে ছিলাম।
এক সময় তিনি বললেন, আমি কিয়ামতের দিন
সকলের সর্দার হব। সে কঠিন দিনে কষ্ট
সাইতে না পেরে মানুষ অস্থির হয়ে যাবে এবং
কার দ্বারা সুপারিশ করলে আল্লাহ কবুল
করবেন সেরূপ লোক তালাশ করতে থাকবে।
অতঃপর অন্যান্য নবীগণ থেকে ব্যর্থ হয়ে
সবশেষে লোকজন আমার কাছে এসে বলবে,
আপনি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, আমাদের
কষ্ট তো আপনি দেখেছেন, এখন আল্লাহর
নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন যাতে
আমাদেরকে পরিত্রাণ দেয়া হয়।
নবীজি (সা.) বলেন, আমি তখন আল্লাহর
আরশের নিচে এসে সিজদায় পড়ে কান্নাকাটি
করতে থাকব। অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে
বলা হবে, আপনি মাথা উঠান এবং ফরিয়াদ পেশ
করুন। আপনার ফরিয়াদ কবুল করা হবে।
আমি তখন মাথা উঠিয়ে বলব, হে প্রভু! তুমি
আমার উম্মতগণকে ক্ষমা কর। আল্লাহ তায়ালা
বলবেন, হে আমার প্রিয় নবী! আমার বেগুনাহ
বান্দাদেরকে বেহেশতের ডান দিকের দরজা দিয়ে
প্রবেশ করান। অন্য দরজা দিয়েও ইচ্ছে করলে
ঢুকাতে পারেন। সেদিন শুধু মাত্র আমাদের প্রিয়
নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ই সুপারিশ করতে
পারবেন। (আল-হাদিস)
হযরত আউফ বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত,
নবী করীম সা. বলেন, ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে
একজন দূত এসে আমাকে জানালেন যে, আল্লাহ্
তায়ালা আমাকে দুটি প্রস্তাব দিয়ে পাঠিয়েছেন।
এ দুটির মধ্যে থেকে যেকোনো একটি গ্রহণ
করতে হবে।
প্রস্তাব দুটি হলো: ১. আমার অর্ধেক
উম্মতকে বিনা হিসেবে বেহেশতে দেয়া হবে। ২.
আমি যেকোনো উম্মতের জন্য আমার
ইচ্ছেমতো সুপারিশ করতে পারব। আমি
সুপারিশ করার ক্ষমতাটাকেই গ্রহণ করেছি।
কাজেই অমি মুশরিক ব্যতীত সকলের জন্য
শাফায়াত করব। (আল-হাদিস)
Home »
Islamic Story amp; Hadis
» কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির সাথে আল্লাহ কথা বলবেন না!