মুসলমান নর-নারীর সঙ্গমের পরও অপবিত্র হয় না

বীর্য বা ধাতু নাপাক নয় বিভিন্ন হাদীস থেকে তা প্রমাণিত হয়। অনেকে নাপাক বললেও তাদের মতে বীর্য “নাজাসাতে হুকমী” অর্থাৎ তাকাপড়ে লেগে গেলে সে অবস্থায় “মযী” বের হলে পানির ছিটাই যথেষ্ট এবং “মনি” হলে খুঁটিয়ে ফেলে দিলেই যথেষ্ট হবে। এতে মানুষের মল-মূত্রের ন্যায় “নাজাসে আইন” হয়ে যায় না। যেমন-মল-মূত্র কাপড় থেকে উত্তমভাবে ধৌত না করলে ঐ কাপড় পরিধান করে নামায আদায় করলে নামায শুদ্ধ হয় না।বীর্য (মনী) বের হলে সেটা যদি নাপাক না হয় তাহলে গোসল হয় না, যা সহীহ বুখারীর দ্বারা প্রমাণিত।[sc name=”abpb” ]হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদিন আমার সাথে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাক্ষাত হল। তখন আমি (বীর্যপাতের দরুন) নাপাক ছিলাম। তিনি আমার হাতধরলে আমি তাঁর সাথে চলতে থাকলাম যে পর্যন্ত না তিনি বসলেন। তখন আমি চুপি চুপি সরে এসে গোসল করে পুনরায় ফিরে এলাম। তখনও তিনি সেখানে বসা ছিলেন। তিনি বললেন, এতক্ষণ কোথায় ছিলে হে আবু হুরাইরা! আমি তাকে ব্যাপারটি বললাম। মুসলিম শরীফের বর্ণনা “আমি উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বললামঃ যখন আমার সাথে আপনার সাক্ষাত হল, তখন আমি নাপাক ছিলাম। অতএব আপনার সাথে বসাটাকে অপছন্দ করলাম যে পর্যন্ত না গোসল করি। শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ সোবহানাল্লাহ! (কি আশ্চর্য) তাই বলে মোমেন অপবিত্র হয় না। (বুখারী)অন্য এক হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে…আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃনবী করীম (সাঃ)-এর স্ত্রী একটি গামলাতে গোসল করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এ পানি দিয়েই অযু করার ইচ্ছা করলে তাঁর স্ত্রী বলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি নাপাক ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ পানি নাপাক হয় না। (যদি তাঁর হাতে বা শরীরে মল-মূত্রের নাপাকি না থাকে।)(তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)বীর্য নাপাক বলে গোসল ফরয হয়ে যায়না বরং শরীরের ক্লান্তিভাব কাটিয়ে উঠার জন্য গোসল ফরয হয়ে যায়। যেমন লিঙ্গ স্পর্শ করলে অযু ভেঙ্গে যায় অথচ লিঙ্গ শরীরেরই পাক অংশ। এ সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছেঃ “কাইস বিন তালক বিন আলী আলখাফী তাঁর পিতা হতে, তিনি নবী করীম (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন, নবী করীম (সাঃ) প্রশ্নোত্তরে বলেনঃ ঐ লিঙ্গটাতো শরীরেরই একখন্ড গোশত মাত্র।–(তিরমিযী)এখানে পরিস্কার প্রমাণিত হচ্ছে যে, শরীরের অন্যান্য অনগ যেমন নাপাক নয় তেমনিভাবে লিঙ্গ নাপাক নয় বরং শরীরের এক পবিত্র অঙ্গ। অথচ এ অঙ্গে হাত লাগলে অযু ভেঙ্গে যায়।যেমন বর্ণিত হচ্ছেঃবুসরা বিনতে সাফওয়ান (রাঃ) বলেন—রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেলছেনঃ যখন তোমাদের কেহ আপন লিঙ্গ স্পর্শ করবে তখন অযু করবে। (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আহমাদ)দারকুতনী ও শাফেযী থেকে আরো প্রমাণিত হয়ঃআবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যখন তোমাদের কেউ নিজ পুরুষাঙ্গের প্রতি হাত বাড়াবে, আর হাত ও পুরুষাঙ্গের মধ্যে কাপড় ইত্যাদি কোন আড় থাকবে না, তখন সে যেন অযু করে।তিরমিযীর আরও একটি হাদীসে বর্ণিতহয়েছে…রাসূল (সাঃ) বলেন, যে কেউ তাঁর লিঙ্গকে (কাপড়ের নীচ দিয়ে) স্পর্শকরে সে যেন অযু করে নামায পড়ে।”অতএব যখন কেহ লিঙ্গ স্পর্শ করবে তখনই তাঁর স্বাভাবিক অবস্থার পরিবর্তন হবে। হয়তো বা লিঙ্গ উত্তেজিত হয়ে যাবে। মনের পরিবর্তন ঘটবে এবং কামভাব প্রকাশপাবে। তখন তাঁর স্বাভাবিক অবস্থাত ফিরে আসার জন্য এবং মনের কামভাব দূরীভূত করার জন্য অযু করতে হবে। যেমন বীর্য বের হলে তাঁর ক্লান্তিভাব কাটিয়ে উঠার জন্য গোসল করতে হয়।বীর্য নাপাক বলে যদি গোসলের হুকুম থাকত, তাহলে গোসলের পূর্বে অযুর হুকুম হত না। কারণ একজন নাপাক ব্যক্তি মুখে অযুর জন্য অযুর দো’আ কিভাবে পাঠ করতে পারে? যখন গোসলই করেনি। যদি গোসলের পূর্ব পর্যন্ত মানুষ নাপাকই থাকত,তাহলে নিশ্চয়ই গোসলের পরে অযু করার নির্দেশ দেয়া হত গোসলের আগে নয়। এ বিষয়টি নিম্ন বর্ণিত হাদীসগুলো থেকেও প্রমাণিত হয়—(১) ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন (আমার পিতা)ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলেন যে, রাতে যখন বীর্যপাত হয়ে জানাবাতে পতিত হয় (তখন তাঁর কি করা উচিৎ)? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তখন তুমিঅযু করে তোমার পুরুষাঙ্গ ধুয়ে ফেলবে, অতঃপর ঘুমাবে।–(বুখারী ও মুসলিম)(২) মা আয়েশা (রাJ বলেনঃ রাসূল (সাঃ) যখন জুনুবী হতেন আর এ অবস্থায় খাবার ও ঘুমাবার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি নামাযের অযুর ন্যায় অযু করতেন।–(বুখারী ও মুসলিম)(৩) আবু বকর বিন আবদূর রহমান বিন হারেস বিন হিশাম (রাঃ) বলেন যে, আয়েশা ও উম্মে সালমা (রাঃ) বলেন যে,রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জুনুবী (সহবাসের পর বিনা গোসলের) অবস্থায়ফযর হয়ে যেত, তিনি তাড়াতাড়ি সাহরী খেয়ে পরে গোসল করে ফযরের নামায আদায় করতেন এবং রোযা রাখতেন।–তিরমিযী)(৪) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যখন তোমাদের কেউ আপন পরিবারের সাথে সহবাস করে, অতঃপর পুনঃরায় তাহা করতে ইচ্ছা রাখে সে যেন মধ্যখানে অযু করে।–(মুসলিম)উল্লেখিত হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে, গোসলের পূর্বে খাওয়া-দাওয়া, শোয়া বা পুনঃ সহবাসের ইচ্ছা পোষণ করলে মধ্যখানে পুরুষাঙ্গ পরিস্কার করে অযু করাই যথেষ্ট হবে।এ বিষয়ে আরও একটি সহীহ হাদীস….হযরত আনাস (রাঃ) বলেনঃ রাসূল (সাঃ) তাঁর একাধিক বিবির নিকট গমন করতেন একই গোসলে। (মধ্যখানে গোসল করতেন না, অবশ্য অযু করতেন।)বর্ণিত হাদীসগুলো থেকে পরিস্কার জানা যায় যে, ফরয গোসলের পূর্বে অযু করে খাওয়া-দাওয়া, উঠা-বসা, স্ত্রীলোকের পাক করা, অন্যের সাথেকরমর্দন, কোলাকুলি সবই জায়েয। এমনকি নিজে ফরয গোসল করে স্ত্রীর সাথে বিছানায় একত্রে শোয়াও জায়েযবলে সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়।আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফরয গোসল করতেন। অতঃপর আমাকে জড়িয়ে ধরে শরীর গরম করতেন, আমার গোসল করার পূর্বেই। (ইবনে মাজাহ, তিরমিযী)তিরমিযীর আর এক বর্ণনায় উল্লেখিতহয়েছেঃহযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কখনও কখনও রাসূল (সাঃ) ফরয গোসল করে আমার শরীরে তাঁর শরীর লাগিয়ে গা গরম করতে চেয়েছেন। তখন আমি তাঁকে আমার কাছে জড়িয়ে নিয়েছি অথচ তখনও আমি গোসল করিনি।–(তিরমিযী)এতে প্রমাণিত হয় যে, সহবাসের পর স্বামী গোসল করে স্ত্রীর গায়ে গা মিলিয়ে তাঁর শরীর গরম করতে পারে। যদিও ফরয গোসল না করে থাকে, তবুও। তাছাড়া এ থেকে আরও বুঝা যায় যে সহবাসের পর ফরয গোসলের পূর্বে অন্য লোককে স্পর্শ দোষনীয় নয়।হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ পুরুষ যখন নারীর চার শাখার মধ্যে বসে সংগম সম্ভোগ করে, তখন অবশ্যই তাঁর উপর গোসল ফরয হয়। (বুখারী)“নারীর চার শাখা” অর্থাৎ স্ত্রী চিৎ হয়ে শুয়েছে। স্বামী স্ত্রীর উপর মুখোমুখি হয়েছেন। স্ত্রীর উরু দু’টির ঠিক মাঝখানে।আরও একটি হাদীস…হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, স্বামী-স্ত্রী যখন চার শাখা মিলিয়ে বসে ও পুরুষের লিঙ্গ স্ত্রীর লিঙ্গের সাথে মিলিত হয়, তখনই গোসল ফরয হয়ে যায়।–(মুসলিম, তিরমিযী, আহমাদ।)প্রশ্ন হতে পারে, যৌন সঙ্গম পুরাপুরি হলে গোসল ফরয হবে, না শুরু হওয়া মাত্র গোসল ফরয হয়? এ পর্যায়ের বহু সহীহ হাদীস হতে প্রমাণিত হয় যে, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের লিঙ্গ মিলিত হলেই গোসল ফরয হয়। যেমন তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ থেকে প্রমাণিতঃহযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ যখন পুরুষাঙ্গ স্ত্রীর যৌন অঙ্গের ভিতরে প্রবেশ করবে তখনই গোসল ফরয হয়। এ কাজটি আমি এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) করেছিলাম। অতঃপর আমরা দু’জনই গোসল করেছি। (তিরমিযী, ইবনেমাজাহ।)এ হাদীস থেকে জানা যায় যে, যখন স্বামী-স্ত্রীর লিঙ্গদ্বয় (যৌন অঙ্গে) একত্রিত হয় অর্থাৎ পরস্পর মিলে অর্থাৎ যখন পুংলিঙ্গ স্ত্রীর যৌন অঙ্গের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে, উভয় লিঙ্গের একত্রে সমাবেশ ঘটলে তখনই গোসল ফরয হয়। পুংলিঙ্গের অগ্রভাগটুকু স্ত্রীরযৌন অঙ্গের অভ্যন্তরে ঢুকলেই গোসল ফরয হবে। এতে বীর্যপাত হোক, আর নাই হোক।শরীয়তের এ জরুরী মাসআলাটি লজ্জাজনক হলেও হযরত আয়েশা (রাঃ) উম্মতের কল্যাণার্থে কথা প্রকাশ করতে বাধ্য হলেন।বুখারী ও মুসলিম শরীফে আরও হাদীস।আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ স্ত্রীলোকের চার শাখার (দু’হাত ও দু’পায়ের) সন্মুখে বসে (সঙ্গম করা) বীর্যপাতের চেষ্টা করে, তখন নিশ্চয় গোসল ফরয হয়, যদিও সে বীর্যপাত না ঘটায়। (বুখারী, মুসলিম)যৌন সঙ্গম সম্পূর্ণতা লাভ না করলেও শুধুমাত্র লিঙ্গদ্বয় পরস্পরের সাথে মিলিত হলেই গোসল ফরয হয়ে যায়। তবে একটি অঙ্গ অপর অঙ্গের উপর শুধু রাখা হলেই গোসল ফরয হবে না। গোসল ফরয হওয়ার জন্য আরো কিছু অগ্রসর হওয়া আবশ্যক। যেমন লিঙ্গের শুধুমাত্র অগ্রভাগটুকু প্রবেশ করিয়ে সাথে সাথে লিঙ্গ বাইরে বের করে আনলেও গোসল ফরয হয়ে যায়।হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ এক ব্যাক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে এসে বলল, আমি ফরয গোসল করেও ফযরের নামায আদায় করেছি, অতঃপর দেখি এক নখ পরিমাণ জায়গায় পানি পৌঁছে নাই। (আমার গোসল হয়েছে কি?) রাসূলুলাহ (সাঃ) বললেনঃ তুমি যদি তখন ঐ জায়গায় তোমার (ভিজা) হাত ঘষেদিতে তাহলেই তোমার ফরয গোসল আদায় হয়ে যেত। (ইবনে মাজাহ)এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, ফরয গোসল এমনভাবে করতে হবে যেন শরীরের কোন জায়গা শুকনা না থাকে। এমনকি নখ পরিমাণ জায়গায়ও পানি না পৌঁছলে তাঁর ফরয গোসঅল আদায় হবে না। তবে গোসল করার পর যদি কেহ দেখেশরীরের কোন জায়গায় পানি পৌঁছেনি, তখন শুধুমাত্র ঐ ষুকনা জায়গায়টুকু ধুলে অথবা ভিজা হাত ঘষে দিলেই যথষ্ট হবে। এর জন্য পুনরায় আর গোসল করতে হবে না।এ বিষয়ে সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়।হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি জানাবাতের (ফরয) গোসলে এক চুল পরিমাণও ছেড়ে দিবে অর্থাৎ পানি পৌঁছাবে না (কিয়ামতের দিন) তাঁর সাথে আগুনের অমুক ব্যবস্থা করা হবে। (আবু দাউদ, আহমাদ, দারেমী)হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন ফরয গোসল করতে ইচ্ছা করতেন, তখন পানির পাত্রে হাত না ঢুকিয়ে আগে হাত দু;টি ধুয়ে তারপর লজ্জাস্থান ধুয়েনামাযের ন্যায় অযু করতেন। এরপর তাঁর মাথায় তিন অঞ্জলি পানি ঢালতেন। (তিরমিযী)হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ফরয গোসলের সময় হেলাবের (হেলাব এমন পাত্র যাতে চার সেরের মত পানি ধরে) মত একটি মাত্র চেয়ে নিতেন। তারপর আঁজলা ভরে পানি নিয়ে প্রথমে মাথার ডান দিক ও পরে ব

Total Pageviews